আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

পিতৃপরিচয় অস্বীকার করার পরিণতি

প্রশ্নঃ ৩১২২৪. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, হুজুর আমার জানার বিষয় হলো জে আমাকে ছোট থেকেই আমার আপন মামা মামি আমাকে নিয়ে আসে কারন তাদের কোনো সন্তান নেই,,, আমি ও তাদের কে বাবা মা ডাকি তারাও আমাকে নিজের আপন সন্তান হিসেবেই, বড় করচে,, এখন আমি জতো টুকু জানি জে আপন বাবা মা ছাড়া অন্য কাওকে বাবা মা ডাকলে জান্নাত হারাম আমি হুজুর দের মুখে শুনেছি,, এখন আমার করো নিও কি জদি বলতেন খুব উপকৃত হতাম,,,আর আমার জারা আপন বাবা মা ভাই বোন তাদের সাতে জদি আমি কোনো সম্পর্ক না রাখি তাহলে কি আমার গুনাহ হবে ,,, কারন তারা ত কখনো বলে না জে আমি ও তাদের সন্তান ,,, তাহলে আমি কেন,,, পরি চয় দিবো,, আমার ও ভাই বোন আচে কিন্তু এখন আমাকে কেও জিগ্যেস করলে জে তুমরা ভাই বোন কয়জন আমি বলি জে আমার কোনো ভাই বোন নাই এটা কি আমি ভুল করছি,,, হজরত দয়া করে জদি একটু পরামর্শ দিতেন খুব উপকৃত হতাম,, আসসালামু আলাইকুম,

১০ এপ্রিল, ২০২৩

ঢাকা

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


সম্মানিত প্রশ্নকারী!
আপনার প্রশ্নে অনেকগুলো বিষয় আছে।
১. নিজের বংশ পরিচয় গোপন করে অন্যের পরিচয়ে পরিচিত হওয়া বা বাবার নামের অংশে জন্মদাতা পিতা ছাড়া অন্যকারো নাম ব্যবহার করা জায়েজ নাই। কেননা মানবজাতির বংশপরম্পরা সংরক্ষণের জন্য ইসলাম পিতৃ-পরিচয় সংরক্ষণকে আবশ্যক করেছে। নিজের পিতাকে ছাড়া অন্য কাউকে পিতা স্বীকৃতি দিলে পিতৃ-পরিচয় বিপন্ন হয় এবং প্রকারান্তে মায়ের ওপর ব্যভিচারের অপবাদ দেওয়া হয়। তাই ইসলাম পিতা ছাড়া অন্য কাউকে পিতার স্বীকৃতি দেওয়া নিষিদ্ধ করেছে। রাসুল (সা.) বলেন,
مَنِ ادَّعَى إِلَى غَيْرِ أَبِيهِ، وَهْوَ يَعْلَمُ أَنَّهُ غَيْرُ أَبِيهِ، فَالْجَنَّةُ عَلَيْهِ حَرَامٌ ‘যে ব্যক্তি অন্যের পিতাকে নিজের পিতা বলে, অথচ সে জানে যে, সে তার পিতা নয়, সেই ব্যক্তির জন্য জান্নাত হারাম। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩৯৮২) ৬৩৮৫
হাদিসের লিংকঃ https://muslimbangla.com/hadith/7053


২. আপনাকে যারা লালনপালন করেছেন (মামা-মামি) সম্মানার্থে তাদের আপনি “বাবা-মা” বলে ডাকতে পারেন। এতটুকু নিষেধ নয়; বরং এটি তাদের অবদানের স্বীকৃতি এবং সৌহার্দ্য ও উত্তম আচরণের নিদর্শন।
কেননা বংশপরিচয় প্রকাশ করা উদ্দেশ্য না হলে বরং কোন সন্মানিত ব্যক্তিকে সন্মানপ্রদর্শণ উদ্দেশ্য হলে তাঁকে বাবা কিংবা মা বলার নজির কোরআন-সুন্নাহয় রয়েছে। যেমন পবিত্র কোরআনে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রীদেরকে মুমিনদের মা এবং ইব্রাহিম আলাইহিসসালামকে মুসলিম-উম্মাহর বাবা বলা হয়েছে।

النَّبِيُّ أَوْلَى بِالْمُؤْمِنِينَ مِنْ أَنفُسِهِمْ وَأَزْوَاجُهُ أُمَّهَاتُهُمْ
নবী মুমিনদের নিকট তাদের নিজেদের অপেক্ষা অধিক ঘনিষ্ঠ এবং তাঁর স্ত্রীগণ তাদের মা ।(সূরা আহযাব ৬)

مِّلَّةَ أَبِيكُمْ إِبْرَاهِيمَ هُوَ سَمَّاكُمُ الْمُسْلِمينَ
এটা তোমাদের বাবা ইব্রাহিমের মিল্লাত (ধর্মাদর্শ); তিনি পূর্বে তোমাদের নামকরণ করেছেন ‘মুসলিম’। (সূরা হাজ্জ ৭৮)

অনুরূপভাবে হাদীস এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর চাচী আবু তালিবের স্ত্রী আলী রাযি.এর মাকে মা বলে ডেকেছেন। তাঁর নাম ছিল ফাতিমা বিনতে আসাদ বিন হাশিম রাযি.। ফাতিমা যখন মারা যান তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ঘরে এসে তাঁর মাথার কাছে বসেন এবং বলেন,

رحِمَك اللَّهُ يا أمِّي كنتِ أمِّي بعدَ أمِّي تجوعينَ وتُشبِعينَني وتَعرَينَ وتُكسينني وتمنعينَ نفسَك طيِّبَها وتطعمينَني تريدينَ بذلِك وجهَ اللَّهِ

অর্থাৎ, ও আম্মা! আল্লাহ আপনার ওপর রহম করুন। আমার মায়ের পর আপনিই আমার মা ছিলেন। আপনি ক্ষুধার্ত থেকেও আমাকে পেট ভরে খাইয়েছেন, আপনি নিজে কাপড় না পরেও আমাকে কাপড় পরিয়েছেন, নিজেকে না দিয়ে আপনি আমাকে ভালো খাবার খাইয়েছেন, আপনি শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি ও আখেরাত চেয়েছিলেন। (মাজমাউযযাওয়াইদ ১৫৩৯৯)

উল্লেখ্য, যেসব হাদীসে অন্যকে বাবা বলতে নিষেধ করা হয়েছে, (যেমনটি উপরোল্লিখিত হাদিসে আছে) এ জাতীয় হাদীস দ্বারা উদ্দেশ্য হল, বংশপরিচয় প্রকাশ করার ক্ষেত্রে আসল পরিচয় গোপন রেখে নিজের বাবার নাম উল্লেখ না করে, অন্যের নাম উল্লেখ করা। যেমন-আইডি কার্ড, পাসপোর্ট, জন্মনিবন্ধন অথবা এমন কোনো দলিল বা স্থান যেখানে কোনো ব্যক্তির জন্মদাতা বাবার নাম উল্লেখ করা জরুরি হয়, সেখানে যদি অন্য কারো নাম উল্লেখ করা হয় তাহলে তা হারাম হবে। এবং সে ওই হাদিসে বর্ণিত হুশিয়ারির আওতাভুক্ত হবে।

৩. ইয়াহইয়া ইবনে বুকায়র (রাহঃ) ... জুবাইর ইবনে মুতইম (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি নবী (ﷺ) কে বলতে শুনেছেনঃ আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।
حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ بُكَيْرٍ، حَدَّثَنَا اللَّيْثُ، عَنْ عُقَيْلٍ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، أَنَّ مُحَمَّدَ بْنَ جُبَيْرِ بْنِ مُطْعِمٍ، قَالَ إِنَّ جُبَيْرَ بْنَ مُطْعِمٍ أَخْبَرَهُ أَنَّهُ، سَمِعَ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ " لاَ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ قَاطِعٌ

আর আত্মীয়তার সম্পর্ক বলতে রক্ত সম্পর্কের আত্মীয় উদ্দেশ্য। যেমন ভাই, বোন, চাচা, ফুফু, খালা, মামা ইত্যাদী।

সম্মানিত ভাই! যেখানে রক্ত সম্পর্কের আত্মীয়দের ব্যাপারে এই হুশিয়ারি সেখানে জন্মদাতা পিতা এবং গর্ভধারিনী মায়ের ব্যাপারে সতর্কবাণী কি-ই হতে পারে!? কাজেই তাদের সাথে সম্পর্ক নষ্ট করার কোনো প্রশ্নই আসে না। করলে সেটা হারাম হবে।

৪. হাদিস শরীফে বর্ণিত আছে, ‘মা-বাবার পায়ের নিচে সন্তানের জান্নাত। এর মর্ম হলো, মা-বাবার সঙ্গে সদাচরণ ও তাদের সন্তুষ্ট করার মাধ্যমেই সন্তানরা জান্নাতের উপযুক্ত হবে। এ ক্ষেত্রে বিধান হলো, মা-বাবা সৎকর্মশীল হোক বা পাপী ও হত্যাকারী হোক, এমনকি কাফিরই হোক, তবু তাদের সঙ্গে সদাচরণ করা সন্তানের ওপর অপরিহার্য। যদিও মা-বাবা স্ব স্ব পাপের শাস্তি আল্লাহ তাআলার নিকট ভোগ করবে। কিন্তু সন্তানদের পাপী মা-বাবার সঙ্গেও অসদাচরণ করা বৈধ হবে না।

কাজেই আপনার বাবা-মা যদি আপনার পরিচয় নাও দেয় তবুও আপনি তাদের পরিচয় দিয়ে যাবেন। তাঁদের খোঁজ-খবর রাখবেন। সম্ভব হলে তাদের খেদমত করবেন। আর অন্যান্য ভাই-বোনদের সাথেও সুসম্পর্ক বজায় রাখুন। ইনশাআল্লাহ আল্লাহ তায়ালা আপনাকে মহান পুরস্কারে পুরস্কৃত করবেন।

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি
শিক্ষক, জামিয়া ইসলামিয়া ইবরাহিমিয়া দারুল উলুম মেরাজনগর, কদমতলী, ঢাকা।

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

৮৮৮২৯

তাহাজ্জুদের ফযীলত


১২ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

Tamil Nadu ৬২৮৪০২

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী আবু সাঈদ

৯০৪৯৮

ইমামের সাথে একজন /দুইজন মুকতাদী কিভাবে দাড়াবে?


২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

Bethua

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী

৮৫৯৭৬

স্ত্রীর সাথে কথা বন্ধ রাখা


২২ জানুয়ারী, ২০২৫

১৭০২

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী আবু সাঈদ

৮৮৫৩৫

মুসলিম বাংলা অ্যাপে আরবি তারিখ কেন দুইটি দেখায়?


১০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

১৮২২

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy