সহজে জান্নাতে পাওয়ার আমল
প্রশ্নঃ ২৭৯৪১. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আমি এক গুনাহগার বান্দা। ইসলামের অনেক বিধি নিষেধ ঠিক মতো পালন করতে পারিনা। তারপরও দুনিয়াতে আল্লাহ তায়ালা অনেক দয়া মায়ায় ঘিরে রেখেছেন। কোনো সহজ আমল কি আছে যার উসিলায় মৃত্যুর পরও আল্লাহতায়ালা আমাকে দয়া করবেন?,
৩০ জানুয়ারী, ২০২৩
ঢাকা
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
সম্মানিত ভাই!
জান্নাত পাওয়ার সহজ আমল সম্পর্কে জানতে নিচের প্রবন্ধটি পড়ুন এবং সেই অনুযায়ী নিজেকে প্রস্তুত করুন।
জান্নাত আমার কত কাছে!
মাওলানা মুহাম্মাদ তাওহীদুল ইসলাম তায়্যিব
জীবন টিকিয়ে রাখার জন্য মানুষের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন শ্বাস-নিঃশ্বাস, যে প্রয়োজন পূর্ণ হয় বাতাসের মাধ্যমে। কিছুক্ষণের জন্য সেই বাতাস বন্ধ হয়ে গেলে মানুষ বেঁচে থাকতে পারে না। জীবনের অতি প্রয়োজনীয় এই বস্তুটিকে আল্লাহ তাআলা সবচেয়ে বেশি সহজ করেছেন। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষ অবারিতভাবে এই নিআমত গ্রহণ করছে।
জীবন টিকিয়ে রাখার দ্বিতীয় প্রয়োজনীয় উপাদান হল পানি। পানির মাধ্যমে মানবদেহের প্রায় সবকিছুই নিত্য পরিচালিত হয়। তাই পানি ছাড়া জীবনের একটি দিনও মানুষ সহজে কাটাতে পারে না। পানির অভাবে মানুষের মৃত্যু অবধারিত হয়ে পড়ে। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এই পানিও অত্যন্ত সহজলভ্য করেছেন।
মানুষের শরীরের একেকটা অঙ্গ কত দামী! জন্মসূত্রে পাওয়া মানুষের প্রতিটি অঙ্গ নিঃসন্দেহে বিকল্পহীন। প্রতিটি অঙ্গের, এমনকি দেহের প্রতিটি কোষের কত সূক্ষ্ম-বিরাট কাজ ও কার্যকারিতা, তা বুঝতে গেলেও হয়রান হতে হয়। এর কোনো একটি শরীরে না থাকলে কিংবা কোনোটির কার্যকারিতা একটু কমে গেলে কী কঠিন অবস্থা হয়, ভাবলেই গা শিউরে ওঠে। কিন্তু দয়াময় আল্লাহ আমাদের কোনো পরিশ্রম ছাড়াই এই সবকিছু দিয়ে রেখেছেন। এমনকি পরবর্তীতেও এগুলোর জন্য কোনো দেনা পরিশোধ করতে হয়নি।
এজাতীয় আরো অনেক বিষয়ের দিকে তাকালে বোঝা যায়, আল্লাহ তাআলার নীতি হল, সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয় জিনিসকে তিনি সবচেয়ে বেশি সহজলভ্য করে রাখেন।
যে মহান সত্তার কাছে কোনো জিনিসের অভাব নেই, যার অধীনে আসমান জমিনের সবকিছু এবং যিনি পরম দয়ালু ও চিরদয়াময়, তিনি তাঁর বান্দাদের ক্ষেত্রে এমন ফায়সালা করবেন সেটা খুবই স্বাভাবিক।
এক্ষেত্রে বান্দার প্রথম কাজ হল, আল্লাহ তাআলার দয়া ও করুণা, তাঁর নিআমত ও কৃপা এবং জীবনের অতি প্রয়োজনীয় জিনিসের ক্ষেত্রে তাঁর এই সহজলভ্যতা নীতির প্রতি কৃতজ্ঞতা পোষণ করা। এরপর আল্লাহ তাআলার হুকুম মোতাবেক সর্বোচ্চ সুন্দর ও উত্তম পন্থায় এসব নিআমতকে ব্যবহার করা।
কোন জিনিস মানুষের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন?
বাতাস, পানি ও শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের প্রয়োজনের কথা তো খুব সহজেই বুঝে আসে। একটু গভীরভাবে খেয়াল করলে বুঝে আসে জীবনের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনীয় জিনিসের কথাও। বাস্তবে ইহকালীন ও পরকালীন জীবনে মানুষের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হল, আল্লাহ তাআলার রহমত ও সন্তুষ্টি, জাহান্নাম থেকে মুক্তি এবং জান্নাতে প্রবেশের সৌভাগ্য।
যে বাতাস ছাড়া মানুষের জীবন নিশ্চিত মৃত্যুমুখে। যে পানির অভাবে মানুষের প্রাণ মুহূর্তে ওষ্ঠাগত। যে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ছাড়া মানুষের জীবন প্রতিনিয়তই বিপন্ন। সেই বাতাস, পানি ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের চেয়েও মানুষের বেশি প্রয়োজন জাহান্নাম থেকে মুক্তি। প্রয়োজন জান্নাতে যাওয়ার তাওফীক। কারণ জাহান্নাম থেকে মুক্তি না পেলে জীবনের ব্যর্থতা নিশ্চিত। জান্নাতে যেতে না পারলে দুনিয়া ও আখেরাত বরবাদ। পক্ষান্তরে জান্নাতে যেতে পারলে দুনিয়া ও আখেরাতের হাজারো, লাখো, কোটি দুঃখ-কষ্ট নিতান্ত গৌণ। অগণন চিন্তা পেরেশানীও একেবারে নগণ্য।
কুরআন ও হাদীসে বিভিন্নভাবে একথা বলা হয়েছে যে, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন অত্যন্ত দয়ালু এবং পরম করুণাময়। তিনি তাঁর বান্দাদের কল্যাণ চান। বান্দাদেরকে তিনি কল্যাণ ও সফলতার দিকে ডাকেন। জান্নাতের দিকে ডাকেন। জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়ার পথে আহ্বান করেন।
বিষয়গুলো খেয়াল করলে নির্দ্বিধায় বলা যায়- যে কল্যাণ বান্দার এত প্রয়োজন, যে জান্নাত ছাড়া বান্দার কোনো উপায় নেই এবং যে জাহান্নাম থেকে মুক্তি না পেলে তার কোনো গতি নেই, সেই কল্যাণ ও সফলতাকে তিনি অবশ্যই সহজ করবেন। জান্নাতে যাওয়া ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়াকে বান্দার জন্য অবশ্যই আসান করবেন। চিরকল্যাণ ও প্রকৃত কামিয়াবীর পথে অগ্রসর হওয়াকে তিনি অবশ্যই মসৃণ করবেন।
জান্নাতে যাওয়ার প্রধান মাধ্যম
জান্নাতে যাওয়া কেবল সফলতাই নয়, জান্নাতে যাওয়া মানুষের অপরিহার্য প্রয়োজন। এই প্রয়োজন যেন মানুষ খুব সহজেই পূরণ করতে পারে, বরং অনায়াসেই যেন মানুষ এই সফলতা লাভ করতে পারে, সেই ব্যবস্থাও তিনি করেছেন।
জীবন চলার অতি স্বাভাবিক ও প্রাকৃতিক এবং আরামদায়ক ও স্বচ্ছন্দ পথ-পদ্ধতি তিনি বলে দিয়েছেন। এরপর তাঁর রাসূলের মাধ্যমে সেই জীবনের পূর্ণ নমুনা দেখিয়ে দিয়েছেন এবং নির্দেশ দিয়েছেন জীবনের সকল ক্ষেত্রে তাঁর আনুগত্য করতে। জানিয়েছেন, সেই আনুগত্যের মাধ্যমেই লাভ হবে জান্নাত। কুরআনের ভাষায়-
وَمَنْ يُطِعِ اللهَ وَرَسُولَهُ يُدْخِلْهُ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ وَمَنْ يَتَوَلَّ يُعَذِّبْهُ عَذَابًا أَلِيمًا.
যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করবে, আল্লাহ তাকে এমন জান্নাতে প্রবেশ করাবেন যার তলদেশে প্রবহমান থাকবে নহর। আর যে ব্যক্তি (তা থেকে) মুখ ফিরিয়ে নেবে, তাকে দেবেন যন্ত্রণাময় শাস্তি। -সূরা ফাতহ (৪৮) : ১৭
অর্থাৎ জান্নাতে যাওয়ার প্রধান মাধ্যম হল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দেখানো পথ ও পদ্ধতি অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করা। জীবনের সকল ক্ষেত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবন ও আদর্শকে পুরোপুরি অনুসরণ করা। আর সেটাই হল ঈমান ও ‘আমলে সালেহ’-এর জীবন। যে সম্পর্কে কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে-
وَالَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ أُولَئِكَ أَصْحَابُ الْجَنَّةِ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ.
যেসব লোক ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, তারা জান্নাতবাসী। তারা সর্বদা সেখানে থাকবে। -সূরা বাকারা (২) : ৮২
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দেখানো জীবন ও কর্মপদ্ধতিরই অংশ হিসাবে তিনি কিছু সহজ ও সংক্ষিপ্ত আমল বলে দিয়েছেন, যার মাধ্যমে মানুষ অতি সহজে জান্নাতে যেতে পারে এবং খুব দ্রুত জান্নাতের পথে অগ্রসর হতে পারে। সেই আমলগুলো থেকে কয়েকটি নি¤েœ উল্লেখ করা হল।
জান্নাতে যাওয়ার সহজ আমল
১. আয়াতুল কুরসী তিলাওয়াত
আবু উমামা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
مَنْ قَرَأَ آيَةَ الْكُرْسِيِّ فِي دُبُرِ كُلِّ صَلَاةٍ مَكْتُوبَةٍ لَمْ يَمْنَعْهُ مِنْ دُخُولِ الْجَنَّةِ إِلّا أَنْ يَمُوتَ.
যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরয নামাযের পর আয়াতুল কুরসী পাঠ করবে, মৃত্যু ছাড়া জান্নাতে যাওয়ার পথে তার কোনো বাধা থাকবে না। (অর্থাৎ মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে সে জান্নাতে চলে যাবে।) -সুনানে কুবরা, নাসায়ী, হাদীস ৯৮৪৮; আলমুজামুল আওসাত, তবারানী, হাদীস ৭৫৩২
২. সায়্যিদুল ইসতিগফার পাঠ
শাদ্দাদ ইবনে আউস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, সায়্যিদুল ইসতিগফার হল এই-
اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لاَ إِلهَ إِلّا أَنْتَ، خَلَقْتَنِيْ وَأَنَا عَبْدُكَ، وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ، أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ، أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ، وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي، فَاغْفِرْ لِي، فَإِنَّهُ لاَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلّا أَنْتَ.
যে ব্যক্তি দিনের বেলা এটি পাঠ করবে, সন্ধ্যা হওয়ার আগেই সে মারা গেলে জান্নাতবাসী হবে। আর যে ব্যক্তি রাতের বেলা পাঠ করবে, সকাল হওয়ার আগেই মারা গেলে সে জান্নাতবাসী হবে। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৬৩০৬
৩. ওযুর পর দুই রাকাত নামায
৪. ওযুর পর কালিমা শাহাদাত
উকবা ইবনে আমির রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন সন্ধ্যায় আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে গিয়ে দেখলাম তিনি লোকদের উদ্দেশে দাঁড়িয়ে বয়ান করছেন। আমি শুনতে পেলাম তিনি বলছেন, কোনো মুসলমান যদি উত্তমরূপে ওযু করে, এরপর ধ্যান ও একাগ্রতার সাথে দুই রাকাত নামায আদায় করে, তাহলে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়।
তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই কথা শুনে বলে উঠলাম, বাহ্ কী চমৎকার কথা!
এসময় আমার সামনে থাকা এক ব্যক্তি বললেন, একটু আগে তিনি যা বলেছেন সেটা এর চেয়েও বেশি চমৎকার।
খেয়াল করে দেখলাম, আমার সামনের ব্যক্তিটি হলেন উমর রা.। তিনি আমাকে বললেন, মনে হচ্ছে তুমি মাত্র এসেছ! একটু আগে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ যদি ভালোভাবে ওযু করে, এরপর বলে-
أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلهَ إِلّا اللهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُ اللهِ وَرَسُولُهُ.
তাহলে তার জন্য জান্নাতের ৮টি দরজা খুলে দেওয়া হবে। তখন যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ২৩৪
উল্লেখ্য, হাদীসটি সুনানে আবু দাউদেও বিস্তারিতভাবে বর্ণিত হয়েছে। সেখানে আছে-
তোমাদের কেউ যদি উত্তমরূপে ওযু করে, এরপর বলে-
أَشْهَدُ أَن لّا إِلهَ إِلّا اللهُ وَحْدَه لاَ شَرِيْكَ لَه، وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُه وَرَسُوْلُه.
তাহলে তার জন্য জান্নাতের ৮টি দরজা খুলে দেওয়া হবে। তখন যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১৭০
৫. আযানের উত্তর দেওয়া
উমর ইবনুল খাত্তাব রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
মুয়াযযিন যখন বলে-
اللهُ أَكْبَرُ اللهُ أَكْبَرُ
তার উত্তরে তোমাদের কেউ যদি বলে,
اللهُ أَكْبَرُ اللهُ أَكْبَرُ
এরপর মুয়াযযিন যখন বলে-
أَشْهَدُ أَنْ لا إِلهَ إِلّا اللهُ
তার উত্তরে বলে-
أَشْهَدُ أَنْ لا إِلَهَ إِلّا اللهُ
মুয়াযযিন যখন বলে-
أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَّسُوْلُ اللهِ
তার উত্তরে বলে-
أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ
মুয়াযযিন যখন বলে-
حَيَّ عَلَى الصَّلَاةِ
তার উত্তরে বলে-
لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلّا بِاللهِ
মুয়াযযিন যখন বলে-
حَيَّ عَلَى الْفَلَاحِ
উত্তরে বলে-
لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلّا بِاللهِ
এরপর মুয়াযযিন যখন বলে-
اللهُ أَكْبَرُ اللهُ أَكْبَرُ
তার উত্তরে বলে-
اللهُ أَكْبَرُ اللهُ أَكْبَرُ
মুয়াযযিন যখন বলে-
لَا إِلَهَ إِلّا اللهُ
উত্তরে বলে-
لَا إِلَهَ إِلّا اللهُ
এই উত্তরগুলো যদি কেউ মন থেকে (গুরুত্বের সাথে) বলে, তাহলে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। -সহীহ মুসলিম, হাদীস ৩৮৫; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৫২৭
৬. পাঁচ ওয়াক্ত নামায
উবাদা ইবনুস সামিত রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি-
خَمْسُ صَلَوَاتٍ كَتَبَهُنّ اللهُ عَلَى الْعِبَادِ، مَنْ جَاءَ بِهِنَّ لَمْ يُضَيِّعْ مِنْهُنّ شَيْئًا اسْتِخْفَافًا بِحَقِّهِنّ، كَانَ لَهُ عِنْدَ اللهِ عَهْدٌ أَنْ يُدْخِلَهُ الْجَنّةَ، وَمَنْ لَمْ يَأْتِ بِهِنّ، فَلَيْسَ لَهُ عِنْدَ اللهِ عَهْدٌ، إِنْ شَاءَ عَذّبَهُ، وَإِنْ شَاءَ أَدْخَلَهُ الْجَنّةَ.
আল্লাহ তাআলা বান্দার উপর পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয করেছেন। যে ব্যক্তি এই নামাযগুলো যথাযথভাবে আদায় করবে এবং অবহেলাবশত তাতে কোনো ত্রুটি করবে না, তার সঙ্গে আল্লাহ তাআলার চুক্তি রয়েছে যে, তিনি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। আর যে ব্যক্তি এই নামাযগুলো আদায় করবে না, তার সঙ্গে আল্লাহ তাআলার কোনো চুক্তি নেই। চাইলে তিনি তাকে শাস্তি দেবেন, চাইলে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১৪২০; সুনানে নাসায়ী, হাদীস ৪৬১; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ১৪০১
৭. গুরুত্বের সাথে ফজর ও আসর আদায়
হযরত আবু মূসা আশআরী রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
مَنْ صَلّى البَرْدَيْنِ دَخَلَ الجَنّةَ
যে ব্যক্তি (গুরুত্বের সাথে) ফজর ও আসরের নামায আদায় করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৭৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৬৩৫
৮. তিনটি কাজ
আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সর্বপ্রথম সাক্ষাতের সময় আমি তাঁকে এই কথা বলতে শুনেছি-
يَا أَيّهَا النّاسُ، أَفْشُوا السّلَامَ، وَأَطْعِمُوا الطّعَامَ، وَصَلّوا وَالنّاسُ نِيَامٌ تَدْخُلُونَ الجَنّةَ بِسَلَامٍ
হে লোকসকল! তোমরা সালামের প্রসার ঘটাও, খাবার খাওয়াও, মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন (অর্থাৎ শেষরাতে) নামায পড়; তাহলে নিরাপদে জান্নাতে প্রবেশ করবে। -জামে তিরমিযী, হাদীস ২৪৮৫; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ১৩৩৪
৯. মকবুল হজ্ব
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-
العُمْرَةُ إِلَى العُمْرَةِ كَفّارَةٌ لِمَا بَيْنَهُمَا، وَالحَجّ المَبْرُورُ لَيْسَ لَهُ جَزَاءٌ إِلّا الجَنّةُ.
এক উমরার পর আরেক উমরা মধ্যবর্তী সময়ের জন্য কাফফারা স্বরূপ। আর মকবুল হজ্বের বিনিময় জান্নাত ছাড়া অন্য কিছু নয়। -সহীহ বুখারী, হাদীস ১৭৭৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস ১৩৪৯
১০. দুই জিনিসের হেফাযত
সাহল ইবনে সা‘দ রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
مَنْ يَضْمَنْ لِي مَا بَيْنَ لَحْيَيْهِ وَمَا بَيْنَ رِجْلَيْهِ أَضْمَنْ لَهُ الجَنّةَ.
যে ব্যক্তি জিহ্বা ও লজ্জাস্থান হেফাযতের নিশ্চয়তা দেবে আমি তার জন্য জান্নাতের দায়িত্ব নিব। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৬৪৭৪
১১. তিন আমলের জন্য তিন স্তরের জান্নাত
আবু উমামা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
أنا زعِيم بِبيتِ في رَبَضِ الجنةِ، لمن تركَ المِراء وإن كان مُحِقّا، وببيتٍ في وسَطِ الجنةِ لمن تركَ الكذِبَ وإن كانَ مازحاً، وببيتٍ في أعلى الجنةِ لمن حسّنَ خُلُقَه.
যে ব্যক্তি আপন দাবিতে সত্যবাদী হয়েও (প্রতিপক্ষের সাথে) ঝগড়া ত্যাগ করে, তার জন্য আমি জান্নাতের এক পাশে একটি প্রাসাদের দায়িত্ব নিলাম। যে ব্যক্তি ঠাট্টা-রসিকতা করেও মিথ্যা বলে না, তার জন্য জান্নাতের মধ্যভাগে একটি প্রাসাদের দায়িত্ব নিলাম। আর যে ব্যক্তি নিজের চরিত্র সুন্দর করেছে, তার জন্য জান্নাতের উপরে একটি প্রাসাদের দায়িত্ব নিলাম। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪৮০০
১২. নারীর চার কাজ
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
إِذَا صَلّتِ الْمَرْأَةُ خمسَهَا، وَصَامَتْ شَهْرَهَا، وَحَصَّنَتْ فَرْجَهَا، وَأَطَاعَتْ بَعْلَهَا دَخَلَتْ مِنْ أَيِّ أَبْوَابِ الْجَنّةِ شَاءَتْ.
কোনো নারী যদি পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করে, রমযান মাসে রোযা রাখে, লজ্জাস্থানের হেফাযত করে এবং স্বামীর আনুগত্য করে তাহলে সে জান্নাতের যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা প্রবেশ করবে। -সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস ৪১৬৩; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৬৬১; আলমুজামুল আওসাত, তাবারানী, হাদীস ৪৫৯৮
১৩. দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ধৈর্য ধারণ
আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, আল্লাহ তাআলা বলেছেন-
إِذَا ابْتَلَيْتُ عَبْدِي بِحَبِيبَتَيْهِ فَصَبَرَ، عَوّضْتُهُ مِنْهُمَا الجَنّةَ.
আমি যখন আমার বান্দাকে তার দুটি প্রিয় বস্তুর (অর্থাৎ দুই চোখের দৃষ্টিশক্তি নিয়ে নেওয়ার) মাধ্যমে পরীক্ষা করি আর সে ধৈর্য ধারণ করে, এর বিনিময়ে আমি তাকে জান্নাত দান করি। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৬৫৩
১৪. প্রিয়জনকে হারিয়ে ধৈর্য ধারণ
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তাআলা বলেন-
مَا لِعَبْدِي الْمُؤْمِنِ عِنْدِي جَزَاءٌ إِذَا قَبَضْتُ صَفِيّهُ مِنْ أَهْلِ الدُّنْيَا ثُمّ احْتَسَبَهُ إِلاّ الْجَنّة.
আমি যখন আমার কোনো মুমিন বান্দার অতি প্রিয় ব্যক্তিকে দুনিয়া থেকে উঠিয়ে নিই, অতঃপর সে সওয়াবের আশায় ধৈর্য ধারণ করে, আমার কাছে তার প্রতিদান হল জান্নাত। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৬৪২৪
উল্লেখ্য, অতি প্রিয় বলতে এখানে সন্তান, ভাই বা মানুষ যাকে মহব্বত করে তাকে বুঝানো হয়েছে। (দ্র. ফাতহুল বারী ১১/২৪২)
এভাবে সহজে জান্নাত লাভ করার আরও কিছু আমল হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে। আমাদের উচিত সেই আমলগুলোর প্রতিও বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা এবং যত্নের সাথে আমলগুলো করা। দৈনন্দিন জীবনে ফরয সুন্নত ও মুস্তাহাব আমলের সঙ্গে বিশেষ এই আমলগুলোর প্রতি আলাদা যত্ন নেওয়া। নিশ্চয় এগুলো আমাদের উন্নতির জন্য অনেক বেশি সহায়ক হবে। জান্নাত লাভের ওসিলা হবে।
(মাসিক আলকাউসার)
https://www.alkawsar.com/bn/article/3027/
والله اعلم بالصواب
শিক্ষক, জামিয়া ইসলামিয়া ইবরাহিমিয়া দারুল উলুম মেরাজনগর, কদমতলী, ঢাকা।
মন্তব্য (০)
কোনো মন্তব্য নেই।
এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর
৮০০৩৪
সাহাবীর নামে মায়ের অসন্তুষ্টির মিথ্যা গল্প!!
৩ ডিসেম্বর, ২০২৪
চট্টগ্রাম

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি
সাম্প্রতিক প্রশ্নোত্তর
মাসায়েল-এর বিষয়াদি
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে