আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

কিবলার দিকে পা ছড়িয়ে দেওয়ার শরঈ দৃষ্টিভঙ্গি

প্রশ্নঃ ২৭৭৮৪. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, ইউটিউবে বিভিন্ন আলেমদের বয়ানে দেখলাম পশ্চিম/কিবলার দিকে পা দিয়ে ঘুমানো জায়েজ। না জায়েজ মনে করা গুণাহ। আমার প্রশ্ন হল, পশ্চিম/ কিবলার দিকে পা দিয়ে ঘুমানোর ব্যাপারে নবী- রাসুল, সাহাবা, তাবেয়ীগনের আমল/ দৃষ্টিভঙ্গি কেমন ছিল?,

২৪ জানুয়ারী, ২০২৩

ঢাকা ১০০০

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


পশ্চিম দিকে পা দেয়া না দেয়া গৌণ।মূল হল কিবলাহ।এটা ইসলামের নিদর্শন এটা মর্যাদার দাবি রাখে।রাসুল সা.কিবলাহ মুখী হয়ে প্রাকৃতিক প্রয়োজন সারতে নিষেধ করেছেন।

ঘুমন্ত বা জাগ্রত অবস্থায় কিবলাহ/ কাবার দিকে ইচ্ছাকৃত পা লম্বা করা মাকরূহ। অনিচ্ছাকৃত হলে সমস্যা নেই।
{ফাতাওয়া হিন্দিয়া-৫/৩১৯, আল মুহিতুল বুরহানী-৮/১০, ফাতওয়ায়ে মাহমুদিয়া-২৯/১৭৪}

কারণ, এতে করে আদবের পরিপন্থী কাজ করা হয়। আর পবিত্র কুরআনে আল্লাহর নিদর্শনাবলীকে সম্মান করতে উৎসাহ প্রদান করা হয়েছেঃ
وَمَن يُعَظِّمْ شَعَائِرَ اللَّهِ فَإِنَّهَا مِن تَقْوَى الْقُلُوبِ [٢٢:٣٢
কেউ আল্লাহর নামযুক্ত বস্তুসমূহের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করলে তাতো তার হৃদয়ের আল্লাহভীতি প্রসূত। [সূরা হাজ্জ্ব-৩২]

বিস্তারিতঃ

কিবলার দিকে পা ছড়িয়ে দেওয়ার শরয়ি দৃষ্টিভঙ্গিঃ

আল্লাহ তাআলা বিশেষ কিছু স্থান, কিছু কাজ এবং কিছু বস্তুকে সম্মানিত করেছেন এবং সেগুলোকে তাঁর কুদরত ও আযমতের চিহ্ন সাব্যস্ত করেছেন। সেগুলোকে ইসলাম ও মুসলমানদের নিদর্শন ঘোষণা করেছেন। আল্লাহ তাআলার আদেশের কারণে এগুলো বিশেষ মর্যাদা লাভ করেছে। শরিয়তের পরিভাষায় এগুলোকে বলা হয় শাআইরুল্লাহ। এগুলোর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা অপরিহার্য। কুরআন কারিমে ইরশাদ করা হচ্ছে :
ذَلِكَ وَمَنْ يُعَظِّمْ شَعَائِرَ اللَّهِ فَإِنَّهَا مِنْ تَقْوَى الْقُلُوبِ
“এটা শ্রবণযোগ্য কেউ আল্লাহর নামযুক্ত বস্তুসমুহের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করলে তা তো তার হৃদয়ের আল্লাহভীতি প্রসূত।” [সুরা হজ্জ : ৩২]
শাআইরুল্লাহর মধ্যে অন্যতম হলো কিবলা বা বাইতুল্লাহ। সুতরাং বাইতুল্লাহর প্রতি সম্মানপ্রদর্শন করা প্রতিটি মুসলমানের জন্য অনিবার্য দায়িত্ব।
হাদিসে রাসুলে কিবলার প্রতি সম্মান প্রদর্শনের তাকিদ :
নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিবলার প্রতি সম্মানপ্রদর্শন বিষয়ে সাহাবিদের সর্বদা সতর্ক করেছেন। কিবলামূখী হয়ে মল-মূত্র ত্যাগ করা, কিবলার দিকে থুথু ফেলা ইত্যাকার কাজ থেকে কঠোর ভাষায় নিষেধ করেছেন।
পেশাব-পায়খানার সময় কিবলার দিকে মুখ অথবা পিঠ করতে নিষেধ করে নবিজি বলেছেন :
صحيح البخاري ط الشعب (1/ 109)
394- عَنْ أَبِي أَيُّوبَ الأَنْصَارِيِّ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلى الله عَلَيهِ وسَلمَ قَالَ : إِذَا أَتَيْتُمُ الغَائِطَ فَلاَ تَسْتَقْبِلُوا القِبْلَةَ، وَلاَ تَسْتَدْبِرُوهَا، وَلَكِنْ شَرِّقُوا أَوْ غَرِّبُوا، قَالَ أَبُو أَيُّوبَ: فَقَدِمْنَا الشَّامَ فَوَجَدْنَا مَرَاحِيضَ بُنِيَتْ قِبَلَ القِبْلَةِ، فَنَنْحَرِفُ، وَنَسْتَغْفِرُ اللهَ تَعَالَى.
অর্থ : আবু আইউব আনসারি রা. থেকে বর্ণিত, নিশ্চয়ই নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : যখন ইস্তিঞ্জা করতে যাবে তখন কিবলার দিকে মুখ ফিরিয়ো না, কিবলার দিকে পিঠ ফিরিয়ো না। পূর্ব বা পশ্চিম দিকে মুখ করে বসো (যেহেতু মদিনা থেকে বাইতুল্লাহ দক্ষিণ দিকে অবস্থিত)। আবু আইউব বলেন : আমরা শামে এসে দেখি টয়লেটগুলো কিবলামূখী করে বানানো হয়েছে। আমরা (কিবলার দিক থেকে) ঘুরে বসি এবং ইস্তিগফার করতে থাকি। [সহিহ বুখারি, হাদিস নং – ৩৯৪]
কিবলার দিকে থুথু ফেলা সম্পর্কে নবিজি কঠোর ভাষায় সতর্ক করে বলেন :
سنن النسائي (2/ 51)
724 - عَنِ ابْنِ عُمَرَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَأَى بُصَاقًا فِي جِدَارِ الْقِبْلَةِ فَحَكَّهُ، ثُمَّ أَقْبَلَ عَلَى النَّاسِ فَقَالَ: «إِذَا كَانَ أَحَدُكُمْ يُصَلِّي فَلَا يَبْصُقَنَّ قِبَلَ وَجْهِهِ؛ فَإِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ قِبَلَ وَجْهِهِ إِذَا صَلَّى»
ইবনু উমর রা. থেকে বর্ণিত, নিশ্চয়ই নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (একবার) মসজিদের কিবলার দিকের দেয়ালে থুথু দেখতে পেলেন। ঘষে ঘষে সেটি তিনি তুলে ফেললেন। অতঃপর সবার দিকে ফিরে বললেন : তোমার কেউ যখন নামাজ পড়ে তখন সামনের দিকে যাতে থুথু না ফেলে। কেননা, সে যখন নামাজ পড়ে তখন আল্লাহ তাআলা কিবলার দিকে থাকেন। [সুনানুন নাসায়ি, হাদিস নং – ৭২৪]
سنن النسائي (2/ 52)
728 - عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ: رَأَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نُخَامَةً فِي قِبْلَةِ الْمَسْجِدِ، فَغَضِبَ حَتَّى احْمَرَّ وَجْهُهُ، فَقَامَتِ امْرَأَةٌ مِنَ الْأَنْصَارِ فَحَكَّتْهَا وَجَعَلَتْ مَكَانَهَا خَلُوقًا، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا أَحْسَنَ هَذَا»
আনাস ইবনু মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (একবার) নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মসজিদের কিবলার দিকে কফ দেখতে পেলেন। দেখে রেগে গেলেন। রাগে চেহারা লাল হয়ে গেল। আনসারি এক মহিলা দাঁড়িয়ে ঘষে ঘষে সেটি তুলে ফেলল এবং জায়গাটিতে সুগন্ধি লাগিয়ে দিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, বাহ, কী সুন্দর! [সুনানুন নাসায়ি, হাদিস নং – ৭২৮]
হাদিসটি আরও বিস্তারিতভাবে আবু সাইদ খুদরি রা. থেকে সহিহ ইবনু খুযাইমাহতে সংকলিত হয়েছে :
صحيح ابن خزيمة (2/ 63)
926 - عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ : رَأَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نُخَامَةً فِي قِبْلَةِ الْمَسْجِدِ، فَاسْتَبْرَأَهَا بِعُودٍ مَعَهُ، ثُمَّ أَقْبَلَ عَلَى الْقَوْمِ، يَعْرِفُونَ الْغَضَبَ فِي وَجْهِهِ، فَقَالَ: «أَيُّكُمْ صَاحِبُ هَذِهِ النُّخَامَةِ؟» فَسَكَتُوا، فَقَالَ: «أَيُحِبُّ أَحَدُكُمْ إِذَا قَامَ يُصَلِّي أَنْ يَسْتَقْبِلَهُ رَجُلٌ فَيَتَنَخَّعُ فِي وَجْهِهِ؟» فَقَالُوا: لَا قَالَ: «فَإِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ بَيْنَ أَيْدِيكُمْ فِي صَلَاتِكُمْ، فَلَا تُوَجِّهُوا شَيْئًا مِنَ الْأَذَى بَيْنَ أَيْدِيكُمْ، وَلَكِنْ عَنْ يَسَارِ أَحَدِكُمْ أَوْ تَحْتَ قَدَمِهِ»
আবু সাইদ খুদরি রা. বলেন, (একবার) নবি করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মসজিদের কিবলার দিকের দেয়ালে কফ দেখতে পেলেন। হাতে থাকা একটি লাঠি দ্বারা তিনি সেটা পরিষ্কার করলেন। অতঃপর সবার দিকে ফিরলেন। সবাই তার চেহারায় রাগ দেখতে পাচ্ছিল। রাসুল বললেন, এই কফ কার? সবাই চুপ করে থাকলো। নবিজি বললেন, তোমাদের কেউ কি পছন্দ করবে, সে নামাজে দাঁড়িয়েছে এমন অবস্থায় কেউ তার সম্মুখে দাঁড়িয়ে তার চেহারায় থুথু মারুক? সবাই বললো, না। তিনি বললেন, তোমাদের নামাজের সময় আল্লাহ তাআলা তোমাদের সম্মুখে থাকেন। সুতরাং কষ্টদায়ক কোনকিছু সামনের দিকে ফেলো না। হয় বাঁ দিকে ফেলো বা পায়ের নিচে। [সহিহ ইবনু খুযাইমাহ, হাদিস নং – ৯২৬]
صحيح ابن خزيمة (2/ 62)
925 - عَنْ حُذَيْفَةَ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : «مَنْ تَفَلَ تُجَاهَ الْقِبْلَةِ جَاءَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَتَفْلَتُهُ بَيْنَ عَيْنَيْهِ»
অর্থ : হুজাইফা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে কিবলার দিকে থুথু ফেলবে, কিয়ামতের দিন তাকে এমন অবস্থায় আগমন করবে যে, তার দুই চোখের মাঝখানে সেই থুথু ঝুলতে থাকবে। [সহিহ ইবনু খুযাইমাহ, হাদিস নং – ৯২৫]
উপরোক্ত আয়াত ও হাদিসসমূহ থেকে বোঝা যায়, কিবলার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা অত্যন্ত জরুরি এবং কিবলাকে অসম্মান করা মারাত্মক অপরাধ ও গুনাহ; যদ্বরুণ কিয়ামতের দিন কঠিন আজাবের মুখে পড়তে হবে। আল্লাহ তাআলা আমাদের হিফাজত করুন।
কিবলার দিকে পা ছড়িয়ে দেওয়া
আমরা জানি, সম্মানিত বা মুরুব্বি স্থানীয় কোনো ব্যক্তির দিকে পা ছড়িয়ে দেওয়াকে বেয়াদবি ও ধৃষ্টতা হিসেবে গণ্য করা হয়। এটাকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি নিজের অপমান হিসেবে গণ্য করেন। তবে যদি কোনো ওজর বা সমস্যার কারণে পা ছড়িয়ে থাকে তাহলে ‘অনন্যোপায়’ হিসেবে ছাড় দেওয়া হয় এবং একে বেয়াদবি হিসেবে গণ্য করা হয় না।
কিবলা অত্যন্ত সম্মানিত ও কিবলার দিকে কষ্টদায়ক বস্তু ফেলা বা কিবলার মানহানি করে এমন কাজ যেমন পেশাব পায়খানা করা নিষিদ্ধ কাজ। এটা কিবলার মর্যাদা ও উচ্চ-সম্মানকে প্রমাণ করে। উপরন্তু কিবলার দিকে থুথু ফেলা সংক্রান্ত হাদিস থেকে অনুমিত হয়, কিবলাকে অসম্মান করা বা কিবলার দিকে কষ্টদায়ক বস্তু ফেলাকে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খুবই অপছন্দ করেছেন এবং এমন আচরণের কারণে রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে গেছেন। এখান থেকে কিবলার প্রতি আমাদের কেমন সম্মান প্রদর্শন করা কর্তব্য তা স্পষ্ট হয়ে যায়।
ফুকাহায়ে কেরাম তাই কিবলার আযমত ও বড়ত্বের প্রতি খেয়াল করে এবং কিবলার প্রতি সম্মানপ্রদর্শনের জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে কিবলার দিকে পা ছড়িয়ে দেওয়াকে মাকরুহে তাহরিমি বলেছেন; এমনটা করলে গুনাহগার হবে। অনিচ্ছাকৃত বা ওজরের কারণে হলে তাতে গুনাহ হবে না; তবে যথাসাধ্য কিবলার সম্মান বজায় রাখার চেষ্টা করতে হবে।{ফাতাওয়া হিন্দিয়া-৫/৩১৯, আল মুহিতুল বুরহানী-৮/১০, ফাতওয়ায়ে মাহমুদিয়া-২৯/১৭৪}
النافع الكبير شرح الجامع الصغير (ص: 82)
ويكره مد الرجلين إلى الكعبة في النوم وغيره عمدا من غير عذر
الفتاوى الهندية (5/ 319)
ويكره مد الرجلين إلى الكعبة في النوم وغيره عمدا

# হানাফী ফিকহ

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ মুসলিম বাংলা ইফতা বিভাগ

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

৯৪৯১৯

মোবাইলের ব্লুটুথে মাগরিবের আজান চালিয়ে দিয়ে ইফতার করতে চাওয়া


১১ মার্চ, ২০২৫

সিন্দুর পুর

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ ইসহাক মাহমুদ

৪১১৫৬

বিয়ের আগে যিনা করা নারীকে বিয়ে করা কি আবশ্যক?


২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

Al-Madinah al-Munawwarah ৪২৩১৬

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

৩৪০১৭

নিজের হক আদায়ে জন্য মিথ্যা বলার হুকুম।


৯ জুন, ২০২৩

ত্রিশাল

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী আবু সাঈদ

৬৬৮৫৫

যিনাকারীর শাস্তি


৯ জুলাই, ২০২৪

ঢাকা

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী সিরাজুল ইসলাম

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy