আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

নামাজে মনোযোগী হওয়ার উপায়

প্রশ্নঃ ৩৫৮৬৪. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আমার নামাজে মনোযোগ না আসলে নামাজ শেষে আল্লাহর কাছে তাওবা করি যে আর কোনোদিন মনোযোগ ছাড়বনা কিন্তু দেখা যায় ঠিকি পরের নামাজে একি ভুল করি তবুও মনোযোগ না পেলেও নামাজ ছাড়ি না কিন্তু কথা হচ্ছে আমিযে বার বার ওয়াদা ভংগ করছি এতে কি নামাযে মনোযোগ আসে না এর সাথে কি ওয়াদা ভংগেরো গুনাহ হচ্ছে? এমন সময় মনের মধ্যেও বাজে চিন্তা আসেযে তাওবা আর কত করব আল্লাহ কি আমার উপর নারাজ........ আবার দেখা যায়যে প্রথম দুই রাকাতে মনোযোগ না আসলেও ৩য় রাকাতে মনোযোগ আনতে পেরেছি কিন্তু তখন মাথায় চিন্তা আসে আল্লাহ নাকি বান্দাকে দুইবার সুযোগ দেয় বান্দা নামাজে মন দাও ৩য় বার নাকি আল্লাহ তায়ালা বলেন তোমার মতন বান্দার নামায আমার দরকার নেই এটা ভেবে মনে আসে যে আর মনোযোগ দিয়েও কি লাভ আল্লাহর সেই দুইবার সুযোগতো কাজে লাগাতে পারলাম না দয়া করে উত্তরটি দিবেন অনেক পেরেশানির মধ্যে আছি।,

১৮ নভেম্বর, ২০২৩

Dhaka, Bangladesh

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


কোনো কাজে মনোযোগ নষ্ট না হলেও নামাজে দাঁড়ালেই নামাজি ব্যক্তির মনোযোগ ছিন্ন হয়ে যায়। এটি শয়তানের কাজ। নামাজের সময় হলে যেমন অন্য কাজের স্পৃহা বেড়ে যায়, তেমনি নামাজে বার বার মনোযোগ ছিন্ন হয়ে যায়। এ থেকে বাঁচতে কিছু আমল করা যেতে পারে। তাহলো-
১. একাগ্রতা
নামাজে একাগ্রতা বা হুজুরে দিল এর বিকল্প নেই। তাই অজুর শুরুতেই স্থির মনোভাব ও নিয়ত পোষণ করতে হবে। মহাবিশ্বের প্রতিপালক আল্লাহ তাআলার দরবারর হাজিরা দেয়ার জন্যই অজু করছেন। শুধু নামাজের সময় এ চিন্তা-চেতনায় দিল তৈরি হবে যে, মহান আল্লাহ সবাইকে দেখছেন। হাদিসে এসেছে-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘আল্লাহর ইবাদত করো এমনভাবে যেন তাঁকে তুমি দেখতে পাচ্ছ। আর যদি দেখতে না পাও, তবে তিনি তোমাকে দেখছেন।’ (বুখারি, মুসলিম)
এ অনুভূতিতে নামাজ পড়ার ফজিলত বর্ণনা করে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও ঘোষণা দেন-
‘যে সুন্দরভাবে অজু করে, এরপর মন ও শরীর একত্র করে একাগ্রতার সঙ্গে দুই রাকাআত নামাজ আদায় করে (যে নামাজে প্ররোচনা স্থান পায় না); তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায় (তার সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়)।’ (নাসাঈ, বুখারি)
২. যথাযথভাবে অজু করা
মনোযোগ ঠিক রাখার বিষয়টি অজু থেকে শুরু হয়। অজু হলো নামাজের সুন্দর প্রস্তুতির প্রথম উৎস। আর নামাজের জন্য অজু করা ফরজ ইবাদত।

৪. মেসওয়াক ব্যবহার করা
অজুর ও নামাজের সময় বেশি বেশি মেসওয়াক ব্যবহারে যত্নবান হওয়া। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, 'যদি না আমার উম্মতের জন্য এটি কষ্টকর মনে করতাম, তবে প্রতি নামাজের সময় তাদেরকে মেসওয়াক করার জন্য নির্দেশ দিতাম।'

৫. নামাজে বিশুদ্ধ তেলাওয়াত করা
নামাজে সুরা ফাতেহা ও কেরাত বিশুদ্ধ উচ্ছারণে পাঠ করা। বিশুদ্ধ তেলাওয়াত অন্তরকে নামাজের প্রতি মনোযোগী করে তোলে। তাই সুরা ফাতেহা ও তাসবিহগুলোর বিশুদ্ধভাবে পড়া করা আবশ্যক। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘স্পষ্টভাবে ধীরে ধীরে কোরআন তিলাওয়াত করো।’ (সুরা : মুযযাম্মিল : আয়াত ৪)

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতিটি সুরা তারতিলের সঙ্গে তেলাওয়াত করতেন। (মুসলিম, তিরমিজি)

৬. অর্থ বুঝে তেলাওয়াত করা
তেলাওয়াত ও তাসবিহগুলোর অর্থ না বুঝলে নামাজে মনোযোগী হওয়া খুবই কষ্টকর। নামাজে যা কিছু পাঠ করা হয়, তা বিশুদ্ধ উচ্চারণের পাশাপাশি সুরা ফাতেহাসহ কেরাত ও তাসবিহগুলোর অর্থ বুঝে নামাজ পড়ার চেষ্টাই মানুষকে নামাজে মনোযোগী করে তোলে।

৭. আন্তরিকতার সঙ্গে নামাজ পড়া
আন্তরিকতার সঙ্গে নামাজ পড়া। নামাজে মহান আল্লাহর প্রতি ভুক্তি-শ্রদ্ধা ও আন্তরিকতা না থাকলে তাতে মনোযোগী হওয়ার কোনো সুযোগই নেই। স্বয়ং আল্লাহ এভাবে নামাজে আন্তরিক হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন –

> ‘তোমরা আল্লাহর সামনে বিনীতভাবে দাঁড়াও।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২৩৮)
> হজরত আবু কাতাদা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘নিকৃষ্টতম চোর হলো সেই ব্যক্তি, যে নামাজে চুরি করে।’ জিজ্ঞাসা করা হলো- হে আল্লাহর রাসুল! নামাজে কীভাবে চুরি করা হয়? তিনি বললেন, ‘যে (আন্তরিকতার সঙ্গে) রুকু-সেজদা পূর্ণভাবে আদায় করে না।’ (মুসনাদ আহমাদ, মিশকাত)

৮. আল্লাহকে ভয় করা
নামাজে দাঁড়ানোর পর মহান আল্লাহকে ভয় করা। মৃত্যুর ভয়ে প্রত্যেক ওয়াক্তের নামাজকেই জীবনের শেষ নামাজ মনে করা। হাদিসে এসেছে-

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক ব্যক্তির উপদেশ কামনায় বলেছিলেন, ‘যখন তুমি নামাজে দাঁড়াবে তখন এমনভাবে নামাজ আদায় করো, যেন এটিই তোমার জীবনের শেষ নামাজ।’ (ইবনে মাজাহ, মিশকাত)

৯. সেজদার স্থানে তাকানো
নামাজে মনোযোগী হতে সেজদার স্থানের দিকে তাকানো খুবই জরুরি। যা মানুষকে নামাজে মনোযোগী করে তোলে। হাদিসে এসেছে-

‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (নিজেই) দাঁড়ানো অবস্থায় সেজদার জায়গায় দৃষ্টি রাখতেন।’ (তাফসিরে তবারি)

নামাজে মনোযোগী হতে এ হাদিসটি মনে রাখা খুবই জরুরি-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ নামাজে দাঁড়ালে সে মূলত তার প্রভুর সঙ্গে কথোপকথন করে। তাই সে যেন দেখে, কীভাবে সে (তার প্রভুর সামনে) কথোপকথন করছে।’ (মুসতাদরাক হাকেম)

উল্লেখিত বিষয়গুলো যথাযথভাবে অনুসরণ ও অনুকরণেই নামাজে মনোযোগী হওয়া সহজ হবে। নামাজে মনোযোগী হতে অজু থেকে শুরু করে নামাজ শেষ পর্যন্ত প্রতিটি কাজ আল্লাহ দেখছেন এ মনোভাব নিয়ে সুন্দরভাবে রুকু-সেজদা আদায়েল মাধ্যমে নামাজ পড়া জরুরি। এ নির্দেশও দিয়েছেন স্বয়ং বিশ্বনবি। তিনি ইরশাদ করেছেন-

‘যে ব্যক্তি নামাজের সময় হলে সুন্দরভাবে অজু করে এবং একাগ্রতার সঙ্গে সুন্দরভাবে রুকু-সিজদা করে নামাজ আদায় করে, তার এ নামাজ আগের সব গুনাহর কাফফারা হয়ে যায়। যতক্ষণ পর্যন্ত না সে কোনো কবিরা গুনাহে লিপ্ত হয়। আর এ সুযোগ তার সারা জীবনের জন্য।’ (মুসলিম)
তারপরও যদি নামাজে মনযোগ ছুটে যায় তাহলে বিচলিত না হওয়া চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া।
আল্লাহ তায়ালা এর বদলে উত্তম বিনিময় দান করবেন।

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি মোহাম্মদ আমীর হোসাইন
মুহাদ্দীস, শাইখ আবু সাঈদ ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার মোহাম্মাদপুর।

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

৬৬৮৫৫

যিনাকারীর শাস্তি


৯ জুলাই, ২০২৪

ঢাকা

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী সিরাজুল ইসলাম

৪২৭৩৩

বান্দার হক নষ্ট করার পর তার পরিচয় ভুলে গেলে ক্ষমা পাওয়ার রাস্তা কি?


১০ অক্টোবর, ২০২৩

৯M৮F+P৯২

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

৫১১৪০

লোগো হিসেবে Caduceus এবং প্রেসক্রিপশনে Rx ব্যবহারের বিধান


৩ জুন, ২০২৪

৯M৮F+P৯২

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী হিফজুর রহমান

৩৪২১৮

তাওবা নাসুহাহ


৬ জুন, ২০২৩

লৌহজং

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি মোহাম্মদ আমীর হোসাইন

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy