আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

হবু ব‌উয়ের সাথে বিয়ের আগে কথা বলার বিধান

প্রশ্নঃ ২৬৮০৪. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আমার জন্যে মেয়ে ঠিক হয়েছে আজ প্রায় চার মাস চলমান ৷ কিন্তু এখনো বিবাহের তারিখ ঠিক হয়নি ৷ আক্বদ হয়নি ৷ কারণ আমার আরেক চাচাতো ভাই আছে ৷ তার জন্যেও মেয়ে দেখতেছে ৷ এখনো মেয়ে ঠিক হয়নি ৷ ওর জন্যে মেয়ে ঠিক হলে আমাদের একসাথে বিবাহের তারিখ ঠিক করবেন পরিবারের মুরুব্বীগণ ৷ এখন আমার জানার বিষয় হলো, আমার জন্যে যে মেয়ে ঠিক হয়েছে তার সাথে তো বিবাহ হবে সেটা নিশ্চিত ৷ এমতাবস্থায় আমি ওর সাথে মোবাইলে বা ম্যাসাজের মাধ্যমে কথা বলতে পারব কিনা? কথা বলাটা শরীয়ত সম্মত হবে কিনা? যেহেতু এখনো আক্বদ হয়নি ৷ বিষয়টার শরয়ী সমাধান জানিয়ে বাধিত করবেন ৷ আল্লাহ পাক আপনার ইলমে বারাকাহ দান করুক ৷,

২০ ডিসেম্বর, ২০২২

ঢাকা

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


প্রিয় ভাই! সর্বদা একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, আমরা আল্লাহ তাআলার বান্দা। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে যেভাবে আদেশ করেছেন, সেভাবেই জীবন যাপন করতে হবে। জীবনের সর্ব ক্ষেত্রে ইসলামকে সবার আগে প্রাধান্য দিতে হবে। নিজের পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র, এমনকি আন্তর্জাতিক বিষয়াদির মধ্যেও ইসলামকে প্রাধান্য দিতে হবে। ইসলাম সবকিছুর আগে রেখে অন্যসব কাজ আঞ্জাম দিবো।

আমাদের সমাজের বড় বড় ব্যাধি সমূহের মধ্য হতে একটি ব্যাধি হলো, বিবাহের ক্ষেত্রে ইসলামের চাইতেও সমাজকে বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকি। যার ফলে একটি বিবাহকে কেন্দ্র করে এত বেশি সামাজিক গুনাহে লিপ্ত হ‌ই যা বলার অপেক্ষা রাখে না। এটা খুবই আফসোসের ব্যাপার। তাই আমরা খেয়াল রাখবো, সর্বক্ষেত্রে ইসলামকে আমাদের সামনে রাখব।

ইসলাম আমাদেরকে বলে, যখন ছেলে মেয়ের বিবাহ নিশ্চিত হয়ে যাবে, তখন যত দ্রুত সম্ভব তাদের মধ্যে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ করিয়ে দেয়া। যদি দেরি করা হয়, তাহলে ছেলের জন্য‌ও ক্ষতি। মেয়ের জন্য ক্ষতি। ছেলে বিভিন্ন নাজায়েজ জিনিসের কল্পনা করে। আর মেয়েও বিভিন্ন কষ্টে ভুগতে থাকে। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত আলী রা. কে বলেন,
يَا عَلِيُّ ، ثَلَاثٌ لَا تُؤَخِّرْهَا : الصَّلَاةُ إِذَا آنَتْ ، وَالجَنَازَةُ إِذَا حَضَرَتْ ، وَالأَيِّمُ إِذَا وَجَدْتَ لَهَا كُفْئًا
হে আলী! তিনটি জিনিস দেরী করো না।
১. নামায, যখন তার ওয়াক্ত হয়।
২. জানাযা, যখন তা উপস্থিত হয়।
৩. অবিবাহিতাদের যোগ্য পাত্র মিলে যায়।

তাই এসব ক্ষেত্রে নিজের অন্য ভাইয়ের বিবাহ কিংবা সমাজের অন্য কোন ব্যক্তির জন্য গুনাহকে প্রশ্রয় দেওয়া মোটেও ঠিক হবে না। আপনার অভিভাবকের জন্য উচিত হবে, তারা যেন অতি শীঘ্রই আপনাকে বিবাহ করিয়ে দেন। বেশি প্রয়োজন হলে অনুষ্ঠান কিছু দেরি করা যেতে পারে। কিন্তু মূল বিবাহ আগে হয়ে গেলে আর কোন নাজায়েজ কাজের সম্ভাবনা থাকে না।
বিবাহ হওয়ার আগ পর্যন্ত অর্থাৎ স্বামী স্ত্রী কবুল বলার আগ পর্যন্ত তারা একজন অপরজনের অপরিচিত মানুষ। ইচ্ছে করলে স্বামী আরেকজন মেয়েকে বিবাহ করতে পারবে। আর ওই মেয়েও অন্য কোন ব্যক্তির কাছে বিবাহ বসতে পারে। তাই বেগানা নারী পুরুষের মধ্যে যদি কথাবার্তা হয়, তাহলে তাদের মাঝখানে শয়তান প্রবেশ করে। আমাদের প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন
ألا لا يخلون رجل بامرأة إلا كان ثالثهما
الشيطان
শুনে রাখ, কোন পুরুষ যেন কোন মহিলার সঙ্গে নিভৃতে একত্রিত না হয়। অন্যথায় শয়তান অবশ্যই তৃতীয় জন হিসাবে হাযির থাকে।

তাই আপনার জন্য উচিত হবে কোনভাবেই তার সাথে কথাবার্তা না বলা। কারণ বিবাহ নিশ্চিত হওয়া এক বিষয়, আর বিবাহ করা আরেক বিষয়। বিবাহ নিশ্চিত হওয়ার বিষয়টি শরীয়তের মধ্যে একটি ওয়াদার মত অর্থাৎ আপনি উনাকে বিবাহ করার ওয়াদা করেছেন। কিন্তু তা বলে তিনি আপনার বিবি হয়ে যাননি। সুতরাং তার সাথে কথাবার্তা বলা থেকে বিরত থাকা অতীব জরুরী। একান্ত কোন প্রয়োজনে যদি কথাবার্তা বলতেও হয়, তাহলে মেয়ে মানুষ কথাবার্তার মধ্যে কোন নম্রতা অবলম্বন করতে পারবে না। বরং প্রয়োজনীয় কথাবার্তা বলেই শেষ করে দিবে। নিজের কন্ঠস্বর মোটা রাখবে। অন্যথায় যাদের অন্তরের মধ্যে ব্যাধি আছে, তারা তার প্রতি ঝুঁকে যেতে পারে। এই বিষয়ে মহান রব্বুল আলামীন বলেন
فَلَا تَخۡضَعۡنَ بِالۡقَوۡلِ فَیَطۡمَعَ الَّذِیۡ فِیۡ قَلۡبِہٖ مَرَضٌ وَّقُلۡنَ قَوۡلًا مَّعۡرُوۡفًا
সুতরাং তোমরা কোমল কণ্ঠে কথা বলো না, পাছে অন্তরে ব্যাধি আছে এমন ব্যক্তি লালায়িত হয়ে পড়ে। আর তোমরা বলো ন্যায়সঙ্গত কথা।

নিম্নে বিস্তারিত আয়াত হাদীসের লিংক ও শর‌ঈ দলীল সমূহ উল্লেখ করা হলো
https://muslimbangla.com/sura/33/tafsir/32

https://muslimbangla.com/hadith/37523
في الموسوعة الفقهية الكويتية
"المخطوبة تعتبر أجنبية من خاطبها، فتحرم الخلوة بها كغيرها من الأجنبيات، وهذا باتفاق

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী সিরাজুল ইসলাম
খতীব, বাইতুল মামুর জামে মসজিদ, মিরাশপাড়া গাজীপুর

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

৩৩৭৪০

তাওবা করার পরেও কি ভালো স্ত্রী পাওয়া যাবে না?


২৯ মে, ২০২৩

ঢাকা

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ শাইখ উমায়ের কোব্বাদী

৩৫০৩৬

সংসার ভেঙ্গে যাওয়ার ভয়ে বিয়ে না করার সিদ্ধান্ত কি সঠিক?


৯ জুলাই, ২০২৩

ময়মনসিংহ

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ শাইখ উমায়ের কোব্বাদী

৯০৫১৯

মেসেঞ্জারে বিবাহ করলে‌ কি তা হয়


২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

Gazirchat

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী

৯০৭৭২

রমাযান মাসে বিবাহ করা


২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

চুয়াডাঙ্গা

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী মাহমুদুল হাসান

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy