আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

প্রশ্নঃ ২৬৫. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, এক সপ্তাহ আগে আমার মেয়েকে তার বাবা বিবাহ দিয়ে দেয় লন্ডনপ্রবাসী এক ছেলের সঙ্গে। বিয়ে পড়ানো থেকে নিয়ে বিয়ের যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা তিনি সম্পন্ন করেন মেয়েকে কোনো কিছু জানানো ছাড়াই। মেয়ের অনুপস্থিতিতে এ বিয়ে অনুষ্ঠিত হয় সিলেটে আমার শ্বশুর বাড়িতে। আমি ও আমার মেয়ে তখন ঢাকায়। এক দিন পর বিয়ের কাবিননামাসহ মেয়ের এক চাচা ও ছেলে পক্ষের বেশ কয়েকজন আমাদের ঢাকাস্থ বাসায় আসেন কাবিননামায় মেয়ের স্বাক্ষর নেওয়ার জন্য। তারা যতক্ষণ ছিলেন মেয়ে তাদের সামনে বা আড়ালে সম্মতিসূচক কোনো কথা বলেনি। এমনকি কাবিননামাতেও স্বাক্ষর করেনি। একপর্যায়ে কাবিননামার পত্রটি তারা ওভাবেই টেবিলের উপর রেখে চলে যান। আমি সেটা তুলে রাখিÑ মেয়ের বাবা এলে তাকে ফেরত দেওয়ার জন্য। এর দুই দিন পর মেয়ের বাবা ও বড় চাচা এবং ছেলে ও ছেলে পক্ষের আত্মীয়স্বজন রীতিমত উপস্থিত হয়ে বিবাহ উত্তর পর্বগুলোর জন্য তাগাদা দিতে থাকে। কিন্তু মেয়ে বা আমার দিক থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে তারা সামনাসামনি বসার প্রস্তাব দেয়। বসার পর ছেলে বলে, ‘মৌনতাই সম্মতির লক্ষণ। তোমার কাছে তো বিয়ে অনুষ্ঠিত হবার খবরসহ কাবিননামা পৌঁছেছে। তখন তো কিছু বলনি বা কাবিননামার কাগজ ফেরত দাওনি?’ জবাবে মেয়ে বলে, আমি তো এ বিয়ে কবুল করিনি। কাবিননামা ফেরত নিতে না বলার অর্থই কি বিয়ে মেনে নেওয়া? উল্লেখ্য, এ বিয়েতে তার এবং আমার অনাগ্রহের বড় কারণ ছেলের বয়স। মেয়ের বয়স ২৪  বছর আর ছেলের বয়স হল ৩৮। তাছাড়া আমরা চাচ্ছি, ধার্মিক কোনো দেশী ছেলের সঙ্গে সম্বন্ধ করতে। অপরদিকে মেয়ের বাবা ও চাচাদের ইচ্ছা, প্রবাসী ব্যবসায়ী কোনো ছেলের সঙ্গে মেয়েকে বিবাহ দেওয়া। এই বিবাহে মেয়ের সম্মতিসূচক স্পষ্ট কোনো বক্তব্য না পাওয়া সত্ত্বেও মেয়ের বাবা এবং ছেলে পক্ষের লোকেরা বলছেন, বিয়ে হয়ে গেছে। মেয়েকে আমরা নিয়ে যাব। এখন আপনার কাছে জানতে চাচ্ছি, এই বিয়ে কি আদৌ সংঘটিত হয়েছে? শরীয়ত কী বলে? সঠিক উত্তর জানিয়ে আশ্বস্ত করবেন।

৯ অক্টোবর, ২০২০

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


প্রশ্নোক্ত বিবাহ সহীহ হয়নি। সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন প্রাপ্তবয়স্ক নারীর অনুমতি ছাড়া তার পিতা বা অভিভাবক তাকে বিবাহ দিলে তা কার্যকর হওয়া নির্ভর করে মেয়েটির অনুমোদনের উপর। প্রশ্নকারীর দেওয়া বিবরণ অনুযায়ী এই বিয়ের ব্যাপারে মেয়ে যেহেতু অনুমতি দেয়নি এবং স্পষ্টভাবে অসম্মতি জ্ঞাপন করেছে তাই এই বিবাহ সংঘটিত হয়নি। এক্ষেত্রে ছেলের কথিত দাবি ঠিক নয়। কাবিননামা বাসায় আসার পর চুপ থাকা অনুমতি (إذن) হিসাবে ধর্তব্য হতে পারে না।

প্রকাশ থাকে যে, মেয়ের বিবাহদানের ক্ষেত্রে শরীয়ত বাবাকে অভিভাবক বানিয়েছে বলেই তার এ অধিকার নেই যে, তিনি মেয়ের সম্মতি নেওয়া বা তাকে অবগত করা ছাড়াই বিবাহ দিয়ে দেবেন। হযরত ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত এক হাদীসে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনÑ

وَالْبِكْرُ يَسْتَأْذِنُهَا أَبُوهَا فِي نَفْسِهَا.

আর কুমারী নারীর বিবাহের ব্যাপারে বাবা তার অনুমতি নেবে। Ñসহীহ মুসলিম, হাদীস ১৪২১

অতএব প্রাপ্তবয়স্ক কুমারী মেয়েকে তার বাবা মেয়ের অবগতি ও সম্মতি ছাড়া কেবল নিজের পছন্দমতো কোথাও বিয়ে দিয়ে  দেওয়া ঠিক হবে না। এটা শরীয়ত প্রদত্ত অধিকারের ভুল ব্যবহারের অন্তর্ভুক্ত হবে।


والله اعلم بالصواب

মাসিক আলকাউসার

মন্তব্য (0)

কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!

মন্তব্য করতে লগইন করুন