সূরা দোহা থেকে শেষ সূরা পর্যন্ত তাকবির বলার বিধান
প্রশ্নঃ ২৬৪৩৮. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, কোরআন শরিফ খতমের করার সময় সূরা দোহা থেকে শেষ সূরা পর্যন্ত নাকি 'সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদুলিল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহূ ওয়াল্লা হুআকবার' পড়তে হয়?? ইহা কি হাদিস দ্বারা প্রমাণিত? এই বিষয়ে জানালে উপকৃত হবো। জাজাকাল্লাহ খাইরান।।
২২ ডিসেম্বর, ২০২২
ঢাকা
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
رَوَيْنَا مِنْ طَرِيقِ أَبِي الْحَسَنِ أَحْمَدَ بْنِ مُحَمَّدِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي بَزةَ الْمُقْرِئِ قَالَ: قَرَأْتُ عَلَى عِكْرِمَةَ بْنِ سُلَيْمَانَ، وَأَخْبَرَنِي أَنَّهُ قَرَأَ عَلَى إِسْمَاعِيلَ بْنِ قُسْطَنْطِينَ وَشِبْلِ بْنِ عبَّاد، فَلَمَّا بَلَغْتُ " وَالضُّحَى " قَالَا لِي: كَبر حَتَّى تَخْتِمَ مَعَ خَاتِمَةِ كُلِّ سُورَةٍ، فَإِنَّا قَرَأْنَا عَلَى ابْنِ كَثِيرٍ فَأَمَرَنَا بِذَلِكَ. وَأَخْبَرَنَا أَنَّهُ قَرَأَ عَلَى مُجَاهِدٍ فَأَمَرَهُ بِذَلِكَ. وَأَخْبَرَهُ مُجَاهِدٌ أَنَّهُ قَرَأَ عَلَى ابْنِ عَبَّاسٍ فَأَمَرَهُ بِذَلِكَ، وَأَخْبَرَهُ ابْنُ عَبَّاسٍ أَنَّهُ قَرَأَ عَلَى أُبَيِّ بْنِ كَعْبٍ فَأَمَرَهُ بِذَلِكَ، وَأَخْبَرَهُ أُبَيٌّ أَنَّهُ قَرَأَ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ ﷺ فَأَمَرَهُ بِذَلِكَ
.
فَهَذِهِ سُنة تَفَرَّدَ بِهَا أَبُو الْحَسَنِ أَحْمَدُ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ الْبَزِّيُّ، مِنْ وَلَدِ الْقَاسِمِ بْنِ أَبِي بَزَّةَ، وَكَانَ إِمَامًا فِي الْقِرَاءَاتِ، فَأَمَّا فِي الْحَدِيثِ فَقَدْ ضَعَّفَه أَبُو حَاتِمٍ الرَّازِيُّ وَقَالَ: لَا أُحَدِّثُ عَنْهُ، وَكَذَلِكَ أَبُو جَعْفَرٍ الْعُقَيْلِيُّ قَالَ: هُوَ مُنْكَرُ الْحَدِيثِ. لَكِنْ حَكَى الشَّيْخُ شِهَابُ الدِّينِ أَبُو شَامَةَ فِي شَرْحِ الشَّاطِبِيَّةِ عَنِ الشَّافِعِيِّ أَنَّهُ سَمِعَ رَجُلًا يُكَبِّرُ هَذَا التَّكْبِيرَ فِي الصَّلَاةِ، فَقَالَ لَهُ: أَحْسَنْتَ وَأَصَبْتَ السُّنَّةَ. وَهَذَا يَقْتَضِي صِحَّةَ هَذَا الْحَدِيثِ.
ثُمَّ اخْتَلَفَ الْقُرَّاءُ فِي مَوْضِعِ هَذَا التَّكْبِيرِ وَكَيْفِيَّتِهِ، فَقَالَ بَعْضُهُمْ: يُكَبِّرُ مِنْ آخِرِ " وَاللَّيْلِ إِذَا يَغْشَى " وَقَالَ آخَرُونَ: مِنْ آخِرِ " وَالضُّحَى " وَكَيْفِيَّةُ التَّكْبِيرِ عِنْدَ بَعْضِهِمْ أَنْ يَقُولَ: اللَّهُ أَكْبَرُ وَيَقْتَصِرُ، وَمِنْهُمْ مَنْ يَقُولُ اللَّهُ أَكْبَرُ، لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَاللَّهُ أَكْبَرُ.
وَذَكَرَ الْفَرَّاءُ فِي مُنَاسَبَةِ التَّكْبِيرِ مِنْ أَوَّلِ سُورَةِ "الضُّحَى": أَنَّهُ لَمَّا تَأَخَّرَ الْوَحْيُ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ ﷺ وَفَتَرَ تِلْكَ الْمُدَّةَ [ثُمَّ](٢) جَاءَهُ الْمَلَكُ فَأَوْحَى إِلَيْهِ: " وَالضُّحَى وَاللَّيْلِ إِذَا سَجَى " السُّورَةَ بِتَمَامِهَا، كَبَّرَ فَرَحًا وَسُرُورًا. وَلَمْ يُرْوَ ذَلِكَ بِإِسْنَادٍ يُحْكَمُ عَلَيْهِ بِصِحَّةٍ وَلَا ضَعْفٍ، فَاللَّهُ أَعْلَمُ(٣)
হযরত ইকরামা (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি হযরত ইসমাঈল ইবনে কুসতুনতীন (রঃ) এবং হযরত শবল ইবনে ইবাদের (রঃ) সামনে কুরআন পাঠ করছিলেন। যখন তিনি (وَالضُّحَى) পর্যন্ত পৌঁছেন তখন তারা উভয়েই বলেনঃ এখান হতে শেষ পর্যন্ত প্রত্যেক সূরার শেষে তাকবীর পাঠ করবেন। আমরা ইবনে কাসীর (রঃ)এর সামনে পাঠ করছিলাম, তিনি মুজাহিদ (রঃ)-এর সামনে পাঠ করলে তিনিও তাকে এই নির্দেশ দেন। তিনি আমাদেরকে অনুরূপ কথা বলেছিলেন। তিনি পাঠ করেছিলেন হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর সামনে। তিনিও তাঁকে এই হুকুম করেছিলেন। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) পাঠ করেছিলেন হযরত উবাই ইবনে কাবের (রাঃ) সামনে। তিনিও তাঁকে এটারই আদেশ করেছিলেন। আর হযরত উবাই (রাঃ) পাঠ করেছিলেন রাসুলুল্লাহর সামনে এবং রাসুলুল্লাহ (সঃ) তাঁকে এরই নির্দেশ দিয়েছিলেন।
ইমামুল কিরআত হযরত আবু হাসানও (রঃ) এই সুন্নাতের বর্ণনাকারী। হযরত আবু হাতিম রাযী (রঃ) এ হাদীসকে দুর্বল বলেছেন। কারণ আবুল হাসান বর্ণনাকারী হিসেবে দুর্বল। আবু হাতিম (রঃ) তাঁর নিকট হতে কোন হাদীসই নিতেন না। অনুরূপভাবে হযরত আবূ জাফর উকাইলীও (রঃ) তাঁকে মুনকারুল হাদীস বলে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু শায়েখ শিহাবুদ্দীন আবু শামাহ (রঃ) শারহি শা'তিবিয়্যায় হযরত ইমাম শাফিয়ী (রঃ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি একজন লোককে নামাযের মধ্যে এ তাকবীর বলতে শুনে বলেনঃ তুমি ভাল কাজই করেছে এবং সুন্নাত পালন করেছে। এ ঘটনায় প্রমাণিত হয় যে, এ হাদীস সহীহ বা বিশুদ্ধ।
এখন এ তাকবীর কোথায় ও কিভাবে পাঠ করতে হবে এ ব্যাপারে কারীদের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে। কেউ কেউ বলেন যে, (وَاللَّيْلِ إِذَا يَغْشَى) এই সূরা সমাপ্ত হওয়ার পর হতে এ তাকবীর পাঠ করতে হবে। অন্যেরা বলেছেন, (وَالضُّحَى) সমাপ্ত হওয়ার পর হতে পড়তে হবে।
আর কারো কারো মতে এটা পাঠের নিয়ম এই যে, শুধু আল্লাহু আকবার বলতে হবে। আবার কেউ কেউ বলেন যে, (اللَّهُ أَكْبَرُ، لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَاللَّهُ أَكْبَرُ) বলতে হবে।
কোন কোন কারী সূরা দুহা হতে এই তাকবীর পাঠ করার কারণ এই বলে উল্লেখ করেছেন যে, রাসূলুল্লাহর (সঃ) নিকট অহী আসা কিছু দিনের জন্যে বন্ধ ছিল। তারপর হযরত জিব্রাঈল (আঃ) এই সূরা নিয়ে আসার পর রাসূলুল্লাহ (সঃ) আনন্দের আতিশয্যে তাকবীর পাঠ করেন। কিন্তু এই বর্ণনা এমন কোন সনদের সাথে বর্ণিত হয়নি যেটা দ্বারা এটাকে বিশুদ্ধ অথবা দুর্বল বলা যেতে পারে। এ সব ব্যাপারে সঠিক জ্ঞানের অধিকারী একমাত্র আল্লাহ।
সম্মানিত প্রশ্নকারী!
ওপরে আপনার প্রশ্ন সংক্রান্ত উত্তরটি তাফসিরে ইবনে কাসির থেকে হুবহু তুলে ধরেছি।
এব্যাপারে কথা হলো, হাদিসটি বিশুদ্ধতা নিয়ে মুহাদ্দিসদের মাঝে দ্বিমত আছে। ইমাম ইবনে তাইমিয়া রা. এর উপর রোজ আপত্তি তুলেছেন। কাজেই আমাদের মতে যেহেতু বিষয়টি অবশ্যকীয় কোনো বিষয় নয়। বরং সর্বোচ্চ মুস্তাহাব পর্যায়ের; তাই চাইলে কেউ আমল করতে পারে। এর কারণে তাকে নিন্দা করা জায়েজ হবে না। আবার কেউ আমল না করলে তাকেও তিরস্কার করা যাবে না। ইমাম ইবনে কাসির রা. এর শেষোক্ত বাক্য থেকেও এমনটিই প্রতিয়মান হয়।
والله اعلم بالصواب
মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি
শিক্ষক, জামিয়া ইসলামিয়া ইবরাহিমিয়া দারুল উলুম মেরাজনগর, কদমতলী, ঢাকা।
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন
এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর
মাসায়েল-এর বিষয়াদি
আল কুরআনুল কারীম
৪
হাদীস ও সুন্নাহ
৬
তাসাউফ-আত্মশুদ্ধি । ইসলাহী পরামর্শ
৩
শরীআত সম্পর্কিত
১৪
ফিতনাসমুহ; বিবরণ - করণীয়
২
আখিরাত - মৃত্যুর পরে
৩
ঈমান বিধ্বংসী কথা ও কাজ
৬
ফিরাকে বাতিলা - ভ্রান্ত দল ও মত
২
পবিত্রতা অর্জন
৮
নামাযের অধ্যায়
১৯
যাকাত - সদাকাহ
৫
রোযার অধ্যায়
৬
হজ্ব - ওমরাহ
২
কাফন দাফন - জানাযা
৫
কসম - মান্নত
১
কুরবানী - যবেহ - আকীকা
৪
বিবাহ শাদী
৮
মীরাছ-উত্তরাধিকার
২
লেনদেন - ব্যবসা - চাকুরী
৯
আধুনিক মাসায়েল
৬
দন্ড বিধি
২
দাওয়াত ও জিহাদ
৩
ইতিহাস ও ঐতিহ্য
৬
সীরাতুন নবী সাঃ । নবীজীর জীবনচরিত
৩
সাহাবা ও তাবেঈন
৩
ফাযায়েল ও মানাকেব
৩
কিতাব - পত্রিকা ও লেখক
৩
পরিবার - সামাজিকতা
৭
মহিলা অঙ্গন
২
আখলাক-চরিত্র
২
আদব- শিষ্টাচার
১২
রোগ-ব্যধি। চিকিৎসা
২
দোয়া - জিকির
২
নাম। শব্দ জ্ঞান
৩
নির্বাচিত
২
সাম্প্রতিক
১
বিবিধ মাসআলা
১