আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

ফিলিস্তিনিদের জন্য আলাদা কোন নামাজ পড়া যাবে কিনা?

প্রশ্নঃ ৯৮৪১৯. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, ফিলিস্তিনিদের জন্য আলাদা কোন নামাজ পড়া যাবে কিনা? ফিলিস্তিনিদের জন্য যদি নফল নামাজ নিয়ত করে পড়ি, সে ক্ষেত্রে কি আলাদা কোন নিয়ম আছে? বিস্তারিত জানতে চাচ্ছি।,

৮ এপ্রিল, ২০২৫

সিলেট

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


জি হ্যাঁ। প্রিয় প্রশ্নকারী মুহতারাম!
বর্তমানে সবচেয়ে বিপদ সীমার আওতাভুক্ত গাজা-ফিলিস্তিনের মুসলমানরা। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকে মুসলমানদের বিপদে নফল নামায তথা কুনুতে নাযেলা আদায়ের বিধান রয়েছে।

কুনুতে নাজেলাহ কখন পড়তে হয়?
মুসলমানদের উপর কোন বিপদ আপদ আসলে, ইসলামের শত্রুদের জন্য হেদায়াতের দুআ বা বদদুআ করার জন্য ফজরের নামাযের দ্বিতীয় রাকাতে রুকু থেকে মাথা উঠিয়ে কুনুতে নাজেলা পড়া মুস্তাহাব।সর্বদা ফজরের নামাযের সময় এমনটি করবে না। বাকি যদি কেউ করে, তাহলে সেটিকে বাতিল বলে বাঁধা দেবারও প্রয়োজন নেই। তবে কথা হল, কুনুতে নাজেলা শুধু বিশেষ মুহুর্ত তথা ব্যাপক বিপদ, যুদ্ধকালীন সময় ইত্যাদি মুসিবতের সময় পড়াই মুস্তাহাব।

أَبُو مَالِكٍ، قَالَ: قُلْتُ لِأَبِي: يَا أَبَتِ إِنَّكَ قَدْ ” صَلَّيْتَ خَلْفَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ “، وَأَبِي بَكْرٍ، وَعُمَرَ، وَعُثْمَانَ، وَعَلِيٍّ هَاهُنَا بِالْكُوفَةِ، قَرِيبًا مِنْ خَمْسِ سِنِينَ، أَكَانُوا يَقْنُتُونَ؟ قَالَ: أَيْ بُنَيَّ، مُحْدَثٌ

হযরত আবু মালিক থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আমার পিতাকে বললাম, হে আমার পিতা! নিশ্চয় আপনি রাসূল সাঃ, হযরত আবু বকর রাঃ, হযরত উমর রাঃ, হযরত উসমান রাঃ ও হযরত আলী রাঃ এর পিছনে কুফায় প্রায় পঞ্চাশ বছর নামায পড়েছেন, তারা কি ফজরের নামাযে সর্বদা কুনুত [নাজেলাহ] পড়তেন? তিনি বললেন, হে আমার বৎস! না এটি নতুন করে শুরু হয়েছে। [আগে পড়া হতো না]। {মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৫৮৭৯, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-১২৪১, সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-৪০২, তাহাবী শরীফ, হাদীস নং-১৪৭৪, মিশকাতুল মাসাবীহ, হাদীস নং-১২৯২}

হাদীসটি সহীহ।

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَمْ يَكُنْ يَقْنُتُ إِلَّا أَنْ يَدْعُوَ لِقَوْمٍ عَلَى قَوْمٍ، فَإِذَا أَرَادَ أَنْ يَدْعُوَ عَلَى قَوْمٍ أَوْ يَدْعُوَ لِقَوْمٍ، قَنَتَ حِينَ يَرْفَعُ رَأْسَهُ مِنَ الرَّكْعَةِ الثَّانِيَةِ مِنْ صَلَاةِ الْفَجْرِ

হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাঃ ফজরের নামাযের সময় সর্বদা কুনুত [নাজেলাহ] পড়তেন না। শুধু পড়তেন কোন জাতির জন্য দুআ করতে বা বদদুআ করার প্রয়োজন হলে।তিনি কুনুত পড়তেন যখন ফজরের নামাযের দ্বিতীয় রাকাতের রুকু থেকে মাথা উঠাতেন। {সহীহ ইবনে খুজাইমা, হাদীস নং-১০৯৭, নসবুর রায়াহ, আলমুসনাদুল জামে, আসারুস সুনান-২/২০}

আল্লামা নিমাভী রহঃ বলেন, এ হাদীসের সনদ সহীহ।

عَنِ ابْنِ مَسْعُودٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: «أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَمْ يَقْنُتْ فِي الْفَجْرِ إِلَّا شَهْرًا وَاحِدًا، لَمْ يُرَ قَبْلَ ذَلِكَ، وَلَا بَعْدَهُ يَدْعُو عَلَى أُنَاسٍ مِنَ الْمُشْرِكِينَ»

হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসঈদ রাঃ থেকে বর্ণিত। নিশ্চয় রাসূল সাঃ ফজরের নামাযের সময় কুনুত পড়তেন না, শুধুই একমাস পড়েছিলেন। এর আগে বা পড়ে আর এমনটি করতে দেখা যায়নি। সে সময় তিনি কিছু মুশরিকদের উপর বদদুআ করতে পড়েছিলেন। {মুসনাদে আবী হানীফা বিরিওয়াতে হিসকাফী, হাদীস নং-৩৪}

ان قنوت النوازل لم ينسخ بل هو مشروع اذا نزل بالمسلمين نازلة ان يقنت الامام في الفجر –

অর্থাৎ, কুনুতে নাজেলা রহিত হয়নি বরং তা এখনো বহাল রয়েছে। মুসলমানদের দুর্যোগ কালে ফজরের নামাজে ইমাম কুনুত পড়বে। (এলাউস সুনান – ৬/৮১)

মুসলমানদের উপর যদি ব্যাপক বালা-মুসিবত ও বিপদ আসে, তাহলে সেক্ষেত্রে আল্লাহ তাআলার নিকট সাহায্য কামণার্থে কুনুতে নাজেলা পড়া মুস্তাহাব। রাসূল সাঃ বিপদ আপতিত হলে ফজরের নামাযের দ্বিতীয় রাকাতে রুকু থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বিভিন্ন সময় কুনুতে নাজেলা পড়েছেন। {সহীহ বুখারী-২/৬৫৫, তাহাবী শরীফ-১/১৭৪, সহীহ মুসলিম-১/২৩৭}

তাই হানাফী মাযহাব মতে কাফের, মুশরিক ও জালেমদের পক্ষ থেকে বা আসমানী কোন বিপদ আসলে কুনুতে নাজেলা পড়া উচিত। {ফাতওয়ায়ে শামী ২/৪৪৮-৪৪৯}

কুনুতে নাজেলা পড়ার পদ্ধতি

ফজরের নামাযের ফরজের দ্বিতীয় রাকাতে রুকু থেকে উঠে ইমাম আওয়াজ করে দু’আ পড়বেন, আর মুসল্লিগণ আস্তে আস্তে আমীন বলবেন। দুআ শেষে নিয়ম মোতাবিক সেজদা, শেষ বৈঠক ইত্যাদির মাধ্যমে নামায শেষ করবেন। (এলাউস সুনান – ৬/৮১)

কুনুতে নাজেলার দু'আ

اللَّهُمَّ اهْدِنَا فِيمَنْ هَدَيْتَ ، وَعَافِنَا فِيمَنْ عَافَيْتَ ، وَتَوَلَّنَا فِيمَنْ تَوَلَّيْتَ ، وَبَارِكْ لَنَا فِيمَا أَعْطَيْتَ ، وَقِنَا شَرَّ مَا قَضَيْتَ ، إِنَّكَ تَقْضِى وَلاَ يُقْضَى عَلَيْكَ ، إِنَّهُ لاَ يَذِلُّ مَنْ وَالَيْتَ تَبَارَكْتَ رَبَّنَا وَتَعَالَيْتَ (سنن البيهقى الكبرى، رقم الحديث-2960)

اللَّهُمَّ اغْفِرْ لَنَا ، وَلِلْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ وَالْمُسْلِمِينَ وَالْمُسْلِمَاتِ ، وَأَلِّفْ بَيْنَ قُلُوبِهِمْ ، وَأَصْلِحْ ذَاتَ بَيْنِهِمْ ، وَانْصُرْهُمْ عَلَى عَدُوِّكَ وَعَدُوِّهِمْ ، اللَّهُمَّ الْعَنْ كَفَرَةَ أَهْلِ الْكِتَابِ الَّذِينَ يَصُدُّونَ عَنْ سَبِيلِكَ ، وَيُكُذِّبُونَ رُسُلَكَ ، وَيُقَاتِلُونَ أَوْلِيَاءَكَ اللَّهُمَّ خَالِفْ بَيْنَ كَلِمَتِهِمَ ، وَزَلْزِلْ أَقْدَامَهُمْ ، وَأَنْزِلْ بِهِمْ بَأْسَكَ الَّذِى لاَ تَرُدُّهُ عَنِ الْقَوْمِ الْمُجْرِمِينَ بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ اللَّهُمَّ إِنَّا نَسْتَعِينُكَ وَنَسْتَغْفِرُكَ وَنُثْنِى عَلَيْكَ وَلاَ نَكْفُرُكَ ، وَنَخْلَعُ وَنَتْرُكُ مَنْ يَفْجُرُكَ بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ اللَّهُمَّ إِيَّاكَ نَعْبُدُ ، وَلَكَ نُصَلِّى وَنَسْجُدُ ، وَلَكَ نَسْعَى وَنَحْفِدُ ، نَخْشَى عَذَابَكَ الْجَدَّ ، وَنَرْجُو رَحْمَتَكَ ، إِنَّ عَذَابَكَ بِالْكَافِرِينَ مُلْحَقٌ. (سنن البيهقى الكبرى، رقم الحديث-2962

ইমাম তহাবী রহঃ এবং অন্যান্য মুহাক্কিক উলামায়ে কেরামদের মতে কুনুতে নাজেলাহ ফজরের নামাজের সাথেই খাছ।

ফাতাওয়ায়ে শামীতে এসেছেঃ
ان قنوت النازلۃ عندنا مختص بصلوٰۃ الفجر دون غیر ھا من الصلوٰۃ الجھریۃ اوالسریۃ
(ج۱ ص۶۲۸باب متفرقات صلوٰۃ مطلب فی قنوت النازلۃ)

নিশ্চয়ই কুনুতে নাজেলাহ আমাদের নিকটে ফজরের নামাজের সাথে খাছ, অন্যান্য নামাজে নয়।

তবে কিছু উলামায়ে কেরামগন বলেছেন যে এটা ফজরের নামাজের সাথে খাছ নয়।
বরং ফজর,মাগরিব,ঈশা,জুমআর নামাজেও পড়া যাবে। এজন্য অন্যান্য নামাজেও পড়া যাবে, নিষেধ নেই। (ফাতাওয়ায়ে রহিমিয়্যাহ ৬/২০)

বি:দ্র: শরীয়তের বিধান অনুযায়ী কুনুতে নাজেলাহ মহিলা,এবং মুনফারিদ (একাকি নামাজ আদায় কারীরা) ও পড়তে পারবে। তবে মহিলারা জোড়ে আওয়াজ পড়বেনা। (ফাতাওয়ায়ে রহিমিয়্যাহ ৬/২৪)

মহিলারা ইমাম হয়ে জামাতের সহিত কুনুতে নাজেলাহ পড়বেনা। মহিলাদের ইমামতি মাকরুহে তাহরিমি। তাই তারা একাকি নামাজেই কুনুতে নাজেলাহ পড়তে পারবে।

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী
খতীব, রৌশন আলী মুন্সীবাড়ী জামে মসজিদ, ফেনী

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

৯০৪৯৪

হারাম টাকায় পোষাক বানিয়ে তা পরে ইবাদত করলে ইবাদত কবুল হবে?


২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

G৯FW+M৫W

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী

৭৭৪৮৭

নখ কাটার সুন্নত


৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

রংপুর

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী নাঈম সিদ্দীকী বিন আব্দুস সাত্তার

৯০২৩৩

তোমাদের সন্তানদের সন্ধ্যায় ঘরে আটকিয়ে রাখ এবং কিছু সময়ের পর ছেড়ে দিও এটা কোরান বা হাদীসের কোথাও কি আছে?


২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

ঢাকা

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী নাঈম সিদ্দীকী বিন আব্দুস সাত্তার

৮৭৩৫১

আল্লাহ কেন অমুসলিমদেরকে এমন অনেক বিষয় দান করেন যা অনেক সময় মুসলিমরা পায়না?


২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

বগুড়া

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী নাঈম সিদ্দীকী বিন আব্দুস সাত্তার

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy