আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং: ইসলামিক দৃষ্টিকোণ

প্রশ্নঃ ২৫৮৬৩. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, মুহতারাম, আমার ব্যাকগ্রাউন্ড সাইন্স, আমি সাইন্স সাব্জেক্টই এপ্লাই করব,,কিন্তু সেটা ইসলামের গন্ডির ভেতর কিনা এটাই আমার পোস্টের উদ্দেশ্য। কারণ, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং হলো জিন বিভিন্নভাবে পরিবর্তন ইত্যাদি রিলেটেট+ক্লোনিং (যেটা ইসলামে বৈধ না বলেই জানি)। আরো কিছু বিষয় আছে,,তাই সাব্জেক্টটা নিয়ে পড়লাম,,পরে এমন কিছুর সাথে ইনভলব হতে হলো যেটা ইসলাম সমর্থিত নয়। জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং কি? কোন জীব থেকে একটি নির্দিষ্ট জিন বহনকারী ডিএনএ (DNA) পৃথক করে ভিন্ন একটি জীবে স্থানান্তরের কৌশলকে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বলে। একে জেনেটিক মডিফিকেশনও বলা হয়। এটি ডিএনএ পরিবর্তন করার একটি প্রক্রিয়া। এটি মূলত উন্নত বৈশিষ্ট্যধারী উদ্ভিদ ও প্রাণী সৃষ্টিতে কাজ করে। ডিএনএ হলো জীবদেহের নীলনকশা। এক কথায় বলা যায়,এটি হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা কোন জীবের জিনোম পরিবর্তন করেন। অর্থাৎ বায়োটেকনোলজির প্রসেসিং ব্যবহার করে কোন জীবের জিনোমকে নিজের সুবিধা অনুযায়ী সাজিয়ে নেওয়ায় হচ্ছে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং। বিজ্ঞানীরা জীবের বৈশিষ্ট্যগুলো বাড়ানোর বা সংশোধন করার জন্য জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যবহার করেন। এটি রিকম্বিন্যান্ট DNA প্রযুক্তি এবং জিন থেরাপির সাথে জড়িত। এর মূল উদ্দেশ্য হলো জিনগুলো পরিবর্তন করা এবং তার ফলাফলগুলো অধ্যয়ন করা এবং জিনগতভাবে পরিবর্তিত এই জিনটি বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করা। এখন আমার প্রশ্ন হল, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং-এ গবেষণা করতে গিয়ে যদি উদ্ভিদ ও প্রাণী সৃষ্টি করে তাহলে সেটা ইসলামে বৈধতা আছে কি?,

১৬ ডিসেম্বর, ২০২২

Kholahati

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


হিউম্যান জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং-এর কিছু দিক রয়েছে উপকারী এবং ইসলাম কর্তৃক অনুমোদিত। যেমন, জেনেটিক সার্জারি বা জিন থেরাপির মাধ্যমে বংশগত রোগ (Genetic Disease) বা জিনবাহিত রোগের চিকিৎসা করা ও জিনের সাধারণ ত্রুটি দূরীকরণে জিন থেরাপি দেওয়া।
বিপরীতে এর কিছু দিক রয়েছে মানবতার জন্য ক্ষতিকর, যা ইসলাম কর্তৃক অনুমোদিত নয়। যেমন, ইউজেনিক্স, যাকে 'Good Birth' অথবা 'Good Creation'-ও বলা হয়। কিংবা মর্জিমাফিক চাহিদা অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যের নবজাতক জন্ম দেয়া বা জিনোম সম্পাদনার মাধ্যমে নতুন প্রাণী তৈরি করা।
প্রিয় প্রশ্নাকারী ভাই, Heredity, Genetic Engineering, the Human Genome and Genetic Medicine: an Islamic Perspective তথা 'বংশগতি, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, হিউম্যান জিনোম এবং জেনেটিক মেডিসিন: ইসলামিক দৃষ্টিকোণ' শিরোনামে কুয়েতে ইসলামিক অর্গানাইজেশন ফর মেডিক্যাল সায়েন্সের এক সিম্পোজিয়ামে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল। ইসলামিক ফিকহ একাডেমী জিদ্দা ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আলেকজান্দ্রিয়া শাখাসহ বিশ্বের বহু ইসলামিক স্কলার, সিনিয়র আইনবিদ, ডাক্তার, ফার্মাসিস্ট, জীববিজ্ঞানী ও মানবাধিকার কর্মীরা উক্ত সিম্পোজিয়ামে অংশগ্রহণ করেন। সেখানে প্রদত্ত সুপারিশগুলোর মধ্যে নিম্নলিখিতগুলো ছিল; আমরা বিষয়টিকে আরো পরিষ্কার করার জন্য সুপারিশগুলো পেশ করছি--
~ সিম্পোজিয়াম জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পর্কে এবং এই শতাব্দীর সত্তরের দশকে এর জন্মের পর থেকে এটিকে ঘিরে থাকা ভয়গুলো নিরীক্ষা করে দেখে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে, এটি যদি কোনো নির্দেশিকা বা বিধিনিষেধ ছাড়াই অনুশীলন করা হয় তবে এটি একটি দ্বি-ধারী তলোয়ার; যা ভালো-মন্দ উভয় ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা যেতে পারে।
~ সিম্পোজিয়াম মনে করে যে, রোগ প্রতিরোধ, চিকিত্সা বা প্রশমিত করার জন্য এটি ব্যবহার করা জায়েয। তা জিন সার্জারির মাধ্যমে যা একটি জিনকে অন্য জিন দ্বারা প্রতিস্থাপন করে বা রোগীর কোষে একটি জিন প্রবেশ করায়, বা প্রতিলিপি করার জন্য অন্য জীবের মধ্যে একটি জিন প্রবেশ করানো হয়। তবে প্রজনন কোষে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যবহার প্রতিরোধ করা উচিত, কারণ এটি শরীয়তে নিষিদ্ধ।
~ সিম্পোজিয়াম মনে করে যে অসৎ উদ্দেশ্যে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যবহার করা বা বিনোদনের উদ্দেশ্যে বা হাইব্রিড প্রাণী তৈরির উদ্দেশ্যে বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে স্বাভাবিক জেনেটিক নিয়ম অতিক্রম করা বৈধ নয়।
~ সিম্পোজিয়াম মনে করে যে, যে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং-কে ইউজেনিক্স বলা হয়, বা কারো কোনো কাজে হস্তক্ষেপ করার উদ্দেশ্যে জেনেটিক কাঠামো পরিবর্তন করার উপায় হিসাবে এটিকে ব্যবহার করা শরিয়াহ অনুমোদিত নয়।
~ সিম্পোজিয়াম শরীয়তের দৃষ্টিতে কৃষি ও পশুপালনের ক্ষেত্রে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যবহারে কোনো সমস্যা দেখে না। তবে সিম্পোজিয়াম সেই কণ্ঠকে উপেক্ষা করতে পারে না যা দীর্ঘমেয়াদী ওই সকল ক্ষতির সম্ভাবনা সম্পর্কে সতর্ক করছে যে, জেনেটিক ও হাইব্রিড খাদ্য পরিবেশ সম্মত না, এটি মাটির উৎপাদন ক্ষমতা নষ্ট করে। এটি স্বাস্থ্যহানিকর এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য ক্ষতিকর। এই প্রযুক্তি কৃষকের বীজ শিল্পকে ধ্বংস করবে।
সুতরাং সিম্পোজিয়াম মনে করে যে, যে সকল কোম্পানি বায়োটেক-এর মাধ্যমে বা হাইব্রিডাইজেশন পদ্ধতিতে ফসল উৎপাদন করে থাকে তাদের উচিত জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বা জেনেটিক পরিবর্তন (GMO) এর মাধ্যমে উত্পাদিত হয়; এটা ক্রেতা বা ভোক্তা সাধারণের কাছে পরিষ্কার করে দেওয়া। যাতে ক্রেতা সে কি কিনছে তা সম্পর্কে সচেতন হতে পারে। (মাজাল্লাতু মাজমাউ'ল ফিকহিল ইসলামী, সংখ্যা ১১, খণ্ড ০৩, পৃষ্ঠা ৫৩৩)

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ শাইখ উমায়ের কোব্বাদী
সিনিয়র মুহাদ্দিস, মাদরাসা দারুর রাশাদ, মিরপুর
খতীব, বাইতুল ফালাহ জামে মসজিদ, মিরপুর

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

৭৭৫০৭

ভুয়া/জাল সার্টিফিকেট দেখিয়ে চাকুরী নেয়া যাবে? নিলে ইনকাম হালাল হবে?


৩ নভেম্বর, ২০২৪

ঢাকা

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী

৭১৩২১

গ্যাসের ফি বিলম্বে দেয়া কি জায়েজ? নাকি সুদ?


২৪ নভেম্বর, ২০২৪

Nayakanda

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী

৭১৪৮১

মানুষের কঙ্কাল বিক্রি করার বিধান


২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

নারায়ণগঞ্জ ১৩৬১

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী সিরাজুল ইসলাম

৯০৪৯৪

হারাম টাকায় পোষাক বানিয়ে তা পরে ইবাদত করলে ইবাদত কবুল হবে?


২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

G৯FW+M৫W

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy