আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

আযান শ্রবণকালে আঙ্গুলে চুমু খাওয়া যাবে কি ?

প্রশ্নঃ ২৫৬৬১. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, ি ওয়াবারকাতুহু প্রথমে আপনাদের শুভ কামনা করছি তারপরে আমি আপনাদের থেকে জিজ্ঞেস করতে চাই যে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নাম শুনে আজানের সময় শাহাদাত আঙ্গুলি দিয়ে চুমা খেয়ে চোখে কি আঙ্গুল লাগানো যাবে যদি উত্তর না হয় তাহলে আমি একটি কিতাবে হযরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুর আমল আমল পেয়েছি এটি গ্রহণযোগ্য কিতাবের সরাহ যা দরছে নেজামী তে পাঠানো হয় পড়ানো হয় এবং হাদিসটা মারফওয়ান লিখেছেন যদি দুর্বল হয় তবুও তো দুর্বল হাদিসের উপর আমল করা জায়েজ আছে আমি আপনাদের কাছে জানতে চাই এবং আপনারা এই হাদিসটাকে ঠিক করে আমাকে জানাবেন আসলে সমস্যাটা কি এবং মারকাজুদ দাওয় মুফতি সাহেব আল্লামা আব্দুল মালেক সাহেব থেকেও আপনারা সাহায্য নিতে পারেন তিনি আল কাউসার এর মধ্যে এই কথাটি লিখেছেন আমি তারপর পর্যন্ত পৌঁছানোর যোগ্যতা নেই তাই আপনাদের কাছে ই আবেদন রইল যে তা আপনারা তাকে এই মেসেজটা পৌঁছে দেবেন এবং তাহকিক সহকারে একটু জানবার চেষ্টা করবেন এবং যেন সকলের উপকার সেজন্য আল কাউসারের মধ্যেও এটা প্রশ্ন এবং জবাব হিসেবে ছাপানুর চেষ্টা করবেন আমি আপনাদের কে কিতাবের নাম বলতেছি এবং পৃষ্ঠা যদিও মনে নেই তবে বাব বলবো حاشية الطحطاوي علي مراقي الفلاح شرح نور الايضا ح باب الاذان (في اخره) والسلام,

২৪ নভেম্বর, ২০২২

চট্টগ্রাম

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


মুহতারাম, মুআযযিন যখন أشهد أن محمدا رسول الله বলে তখন আযান শ্রবণকারীরা আঙ্গুলে চুমু খেয়ে তা চোখে মুছবে...। এ বিষয়ক বর্ণনা কিছু মহলে প্রসিদ্ধ হলেও প্রমাণিত নয়, যা সুস্পষ্ট জাল বর্ণনা।
এক্ষেত্রে বিগত শতাব্দীর মুহাক্কীক মুহাদ্দিসীনে কিরাম এবং শাঈখুল ইসলাম হযরত আব্দুল মালেক হাফি. র তাহকীকে কোনরূপ বৈপরীত্য নেই। এবং আমরাও আব্দুল মালেক হাফি. র তাহকীকের সাথে একমত পোষণ করছি।
যার সারমর্ম, আযান শ্রবণকালে আঙ্গুলে চুমু খাওয়া একটি গর্হিত বিদআত এবং এ বিষয়ক আবু বকর রা. সম্পর্কিত বর্ণনাটি সরাসরি জাল একটি বর্ণনা।
যা বলা, বিশ্বাস করা ও আমল করা উম্মাহর জন্য জায়েয নেই।
শাঈখুল ইসলাম হযরত আব্দুল মালেক হাফি. 'প্রচলিত জাল হাদীস' ও আল কাউসারের দুজায়গায় বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। আপনার জন্য তা হুবহু উল্লেখ করা জরুরী মনে করছি। মনোযোগ দিয়ে পড়লে বুঝে আসবে, যে বর্ণনার মারফু' হবার দাবী করা হয়ে থাকে, মূলতঃ তা সুস্পষ্ট জাল বর্ণনা।

আল কাউসার থেকেঃ
১-
প্রশ্ন
আমাদের এলাকায় প্রচলন যে, আযান-ইকামতে ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ’ বলার সময় তর্জনীতে চুমু খেয়ে চোখে বুলিয়ে দেওয়া। হযরত আবু বকর রা. নাকি এই আমল করতেন এবং বর্ণনা করতেন যে, যে ব্যক্তি তা করবে তার জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শাফায়াত ওয়াজিব হয়ে যাবে। জানতে চাই এই হাদীসটি সহীহ কি না?

উত্তর
প্রশ্নোক্ত আমলটি এবং এ সম্পর্কিত বর্ণনা মূলত ‘মুসনাদে দাইলামী’তে রয়েছে। প্রখ্যাত হাদীস-বিশারদগণ বর্ণনাটি ভিত্তিহীন ও জাল বলেছেন। হাফেয সাখাভী রাহ. বলেন, এটি প্রমাণিত নয়। (আলমাকাসিদুল হাসানাহ ৪৫০-৪৫৯) আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ূতী রাহ. বলেন, মুআজ্জিনের শাহাদাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নাম শুনে আঙ্গুলে চুমু খাওয়া এবং তা চোখে বুলিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে যাতগুলো রেওয়ায়াত বর্ণিত হয়েছে সবগুলোই বানোয়াট। (তাইসীরুল মাকাল হাদীস : ১২৩; রাহে সুন্নাত ২৪৩) আল্লামা লখনভী রাহ. বলেন, সত্যি কথা হল, ইকামত কিংবা অন্য কোথাও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নাম শ্রবণ করা মাত্রই নখে চুমু খাওয়া (এবং তা চোখে বুলিয়ে দেওয়া) সম্পর্কে কোনো সহীহ হাদীস বা সাহাবীর কোনো আছর বা আমল বর্ণিত হয়নি। যে তা দাবি করবে সে চরম মিথ্যাবাদী। আর এটি একটি নিকৃষ্টতম বিদআত। শরীয়তের কিতাবসমূহে যার কোনো ভিত্তি নেই। (আসসিয়ায়াহ ২/৪৬)

আরো দেখুন : আলমাসনূ ১৬৮-১৭০; তাযকিরাতুল মাওজূআত ৩৪; কাশফুল খাফা ২/২০৬-২০৭; প্রচলিত জাল হাদীস

২- "‘যাল্লাত’ ও বিচ্যুতি দিয়ে দলীল পেশ করলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না" শিরোনামে লিখেনঃ

বাহাদুর সাহেবের আরেকটি নীতি হল, তিনি লেখকদের তাসামুহ ও ভুল-বিচ্যুতি দিয়ে দলীল পেশ করতে থাকেন। মুতীউর রহমান সাহেব হয়তো কোনো লেখকের সঠিক কোনো কথা নকল করেছেন বা কোনো লেখকের দলীল নির্ভর কথার হাওয়ালা দিয়েছেন, তো বাহাদুর সাহেব তার উপর এভাবে ‘এলযাম’ দেন যে, অমুক লেখক তো ঐ রেওয়ায়েতও উল্লেখ করেছেন, সেটা মেনে নিন।

এটি বাহাদুর সাহেবের বড় আশ্চর্য নীতি। সহীহ কথায় কোনো লেখকের হওয়ালা দিলে সেই লেখকের ভুল-বিচ্যুতিও গ্রহণ করতে হবে, ঐ লেখক যদি মওযূ বা মুনকার কোনো রেওয়ায়েত উল্লেখ করে তো সেটাও গ্রহণ করতে হবে- এ আবার কেমন কথা হল?

এ ধরনের একটি উদাহরণ এখানে উল্লেখ করে দেওয়া মুনাসিব মনে হচ্ছে। মুআযযিন যখন أشهد أن محمدا رسول الله বলে তখন আযান শ্রবণকারীরা আঙ্গুলে চুমু খেয়ে তা চোখে মুছবে...। এ বিষয়ক একটি জাল বর্ণনা অনেক প্রসিদ্ধ। এ বর্ণনাটি সম্পর্কে হাফেয শামসুদ্দীন সাখাবী রাহ.-এর একটি ইবারত ভুল বুঝে মোল্লা আলী কারী রাহ. এ কথা বলে ফেলেছেন যে, এ রেওয়ায়েত মারফূআন (তথা রাসূল থেকে) প্রমাণিত না হলেও মাওকুফান (তথা সাহাবী থেকে) যেহেতু প্রমাণিত তো এতটুকুই যথেষ্ট। অথচ এই রেওয়ায়েতের সনদ শুধু একটি। একই সনদে বর্ণিত রেওয়ায়েতের এক অংশ মওকুফ (সাহাবীর আমল) আর আরেক অংশ মারফূ (রাসূলের বাণী)। যদি এই সনদ ছাবেত ও প্রমাণিত না হয় তাহলে মারফু অংশ যেমন ছাবেত হবে না তেমনি মওকুফ অংশও ছাবেত হবে না, কোন অংশই ছাবেত হবে না। কিন্তু মোল্লা আলী কারী রাহ. বিষয়টি খেয়াল করেননি। এখন মোল্লা আলী কারী রাহ.-এর এই বে খেয়ালিকে পুঁজি করে সকল রেজভীরা এ কথাই আওড়াতে থাকে যে, মারফু ছাবেত না হলেও মওকুফ ছাবেত। সব কথা তারা দায়লামী-এর হাওয়ালাতেই বলেন। পিতা দায়লামীর ‘ফিরদাউস’ এবং ছেলে দায়লামীর ‘মুসনাদুল ফিরদাউস’ উভয় গ্রন্থই তো আছে। কোনো আল্লাহর বান্দার যদি হিম্মত হয় তো সে দেখাক যে, এই হল মারফু রেওয়ায়েতের সনদ যা ছাবেত নয় (বাহাদুর সাহেবের কথা অনুযায়ী সহীহ-এর পর্যায়ের নয়) আর এই হল মওকুফ রেওয়ায়েত যার সনদ ছাবেত।

যেখানে বিষয়টি বাস্তবতার নিরিখে তাহকীক সম্ভব সেখানে শুধু সম্ভাবনার ভিত্তিতে কথা কেন? শুধু সম্ভাবনার ভিত্তিতে কি কোনো কিছু ছাবেত করা যায়?

কথা শেষ হয়নি। এ বিষয়ে মাওলানা আব্দুল হাই লাখনবী রাহ.-এরও তাসামুহ হয়ে গেছে তাঁর একটি ফতোয়ায়। লাখনবী রাহ. ‘আন নাফিউল কাবীরে’র ভূমিকা ‘উমদাতুর রিয়াআহ’তে স্পষ্ট বলেছেন, ‘জামিউর রুমুয’ অনির্ভরযোগ্য কিতাব। এমনিভাবে এই কিতাবে এবং তার অপর কিতাব ‘রদউল ইখওয়ান’ এবং ‘যফারুল আমানী’তেও স্পষ্টভাবে বলেছেন, ‘কানযুল উব্বাদ’ ফিকহের অনির্ভরযোগ্য গ্রন্থ এবং এ গ্রন্থে সনদ ছাড়া উল্লেখকৃত রেওয়ায়েতসমূহের কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই। সম্ভবত লাখনবী রাহ. জীবনের শুরুতে এই ফতোয়া দিয়েছিলেন যে, আযানের সময় أشهد أن محمدا رسول الله শুনে আঙ্গুলে চুমু খাওয়া মুস্তাহাব। হাওয়ালা উল্লেখ করেছিলেন ‘জামিউর রুমুয’। ‘জামিউর রুমুযে’ এ কথাটি নকল করা হয়েছে ‘কানযুল উব্বাদ’ থেকে। চিন্তা করুন লাখনবী রাহ.-এর স্পষ্ট বক্তব্য অনুসারেই কথাটি একটি অনির্ভরযোগ্য কিতাবে আরেকটি অনির্ভরযোগ্য কিতাবের হাওয়ালায় এসেছে। এরপর আর এর গ্রহণযোগ্যতা কী? কিন্তু লাখনবী রাহ.-এর মাজমুউল ফাতাওয়া গ্রন্থে এক জায়গায় এই ডাবল অনির্ভরযোগ্য কথাটি চলে এসেছে আর এ হাওয়ালাটিই বাহাদুর সাহেবের খুব পছন্দ হয়েছে। কিন্তু লাখনবী রাহ. তাঁর নির্ভরযোগ্য অপর একটি গ্রন্থ ‘আসসিয়াআহ’-এর মাঝে যে স্পষ্ট বাক্যে দলীলসহ এ বিষয়ে তাহকীক পেশ করেছেন তা বাহাদুর সাহেবের পছন্দ হয়নি। বাহাদুর সাহেব যে গ্রন্থের খণ্ডন করছেন সে গ্রন্থে লাখনবী রাহ.- এর ‘আসসিয়াআহ’ গ্রন্থের ইবারতের শেষ অংশ উল্লেখ করা হয়েছে। যাতে লাখনবী রাহ. এ বিষয়ে তার ফায়সালা কী তা বলেছেন। তিনি বলেন,

والحق أن تقبيل الظفرين عند سماع اسم النبي في الإقامة وغيرها كلما ذكر اسمه عليه الصلاة والسلام مما لم يرو فيه خبر ولا أثر، ومن قال به فهو المفتري الأكبر، فهو بدعة شنيعة لا أصل لها في كتب الشريعة، ومن ادعى فعليه البيان، ولا ينفع الجدال المورث إلى الخسران.

‘সত্য কথা হল, ইকামত কিংবা অন্য কোথাও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাম শ্রবণ করা মাত্রই নখে চুমো খাওয়া (এবং তা চোখে বুলিয়ে দেওয়া) সম্পর্কে কোনো হাদীস বা সাহাবীর কোনো ‘আছার’ বা আমল বর্ণিত হয়নি। যে এরূপ দাবি করবে সে চরম মিথ্যাবাদী এবং এটি একটি ঘৃণ্য ও নিকৃষ্ট বিদআত; শরীয়তের কিতাবসমূহে যার কোন ভিত্তিই নেই। -আসসিয়াআহ, খণ্ড : ২ পৃষ্ঠা : ৪৬

অতএব, এক্ষেত্রে حاشية الطحطاوي علي مراقي الفلاح شرح نور الايضا ح باب الاذان (في اخره) والسلام অথবা মুল্লা আলী কারী সহ যাদেরই রেফারেন্স দেয়া হউক, তা দিয়ে জাল বর্ণনা সঠিক হয়ে যাবে না। মুহাদ্দিসিনের কারো থেকে কোন বিষয়ের তাহকীকে ভূল হওয়াটা স্বাভাবিক, ভূল হলে তা সংশোধনযগ্য, অনুসরণযোগ্য নয়। কোন মাসআলায় কারো বিচ্যুতি দিয়ে দলীল পেশ করলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না।


প্রচলিত জাল হাদীস থেকেঃ

আযান কিংবা ইকামতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাম আসলে কোন কোন লোককে তর্জনী আঙ্গুলদ্বয়ে চুমো খেয়ে তা চোখে বুলিয়ে দিতে দেখা যায় ।

তাদের এই আমলটি মূলত 'মুসনাদে দায়লামী' (যা বাতিল ও মাওযূ রেওয়ায়াতে ভরপুর)-এর নিম্নোক্ত জাল রেওয়ায়াতের উপর নির্ভরশীল :
إن أبا بكر لما سمع قول المؤذن: أشهد أن محمدا رسول الله، قاله، وقبل باطن الأنملتين السبابتين، ومسح عينيه، فقال صلى الله عليه وسلم: من فعل فعل خليلي فقد حلت له شفاعتي

“হযরত আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) যখন মুআযযিনকে 'আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ' বলতে শোনলেন, তখন তিনিও তা বললেন এবং বৃদ্ধাঙ্গুলিদ্বয়ে চুমো খেয়ে তা চোখে বুলিয়ে নিলেন। (তা দেখে) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন : যে ব্যক্তি আমার দোস্তের ন্যায় আমল করবে, তার জন্যে আমার সুপারিশ অবধারিত।

হাফেষ সাখাবী (রাঃ) এ সম্পর্কে বলেন : এটি প্রমাণিত নয়। -আল মাকাসিদুল হাসানাঃ ৪৫০-৪৫১

আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ূতী (রহঃ) এ সম্পর্কে বলেন : الأحاديث التي رويت في تقبيل الأنامل وجعلها على العينين عند سماع اسمه صلى الله عليه وسلم عن المؤذن في كلمة الشهادة كلها موضوعات

“মুআযযিনের শাহাদতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাম শোনে আঙ্গুলে চুমো খাওয়া এবং তা চোখে মুছে দেওয়ার ব্যাপারে যতগুলো রেওয়ায়াত বর্ণিত হয়েছে সবগুলোই জাল ও বানোয়াট।” -তাইসীরুল মাকাল—ইমাদুদ্দীন ঃ ১২৩, প্রকাশকাল ২১ – ১৯৭৮ –রাহে সুন্নত : ২৪৩

এটা জাল হাদীস-শুধু তাই নয়; বরং এ ব্যাপারে কোন সাহাবী, তাবেঈ, তাবে তাবেঈ ও আয়িম্মায়ে মুজতাহিদ থেকেও কিছু বর্ণিত নেই।

মাওলানা আব্দুল হাই লাখনবী রাহ. বলেন,

والحق أن تقبيل الظفرين عند سماع اسم النبي في الإقامة وغيرها كلما ذكر اسمه عليه الصلاة والسلام مما لم يرو فيه خبر ولا أثر، ومن قال به فهو المفتري الأكبر، فهو بدعة شنيعة لا أصل لها في كتب الشريعة، ومن ادعى فعليه البيان، ولا ينفع الجدال المورث إلى الخسران.

‘সত্য কথা হল, ইকামত কিংবা অন্য কোথাও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাম শ্রবণ করা মাত্রই নখে চুমো খাওয়া (এবং তা চোখে বুলিয়ে দেওয়া) সম্পর্কে কোনো হাদীস বা সাহাবীর কোনো ‘আছার’ বা আমল বর্ণিত হয়নি। যে এরূপ দাবি করবে সে চরম মিথ্যাবাদী এবং এটি একটি ঘৃণ্য ও নিকৃষ্ট বিদআত; শরীয়তের কিতাবসমূহে যার কোন ভিত্তিই নেই। -আসসিয়াআহ, খণ্ড : ২ পৃষ্ঠা : ৪৬

আব্দুল মালেক হাফি. র বক্তব্যঃ

যে ভাইদের মধ্যে এ আমলটি প্রচলিত তারা একটু ঠাণ্ডা মস্তিষ্কে আন্তরিকভাবে ভেবে দেখুন, যদি এ আমলটি হাদীস বা সাহাবী কর্তৃক আমলের ভিত্তিতে হয়ে থাকে তাহলে আমাদের বক্তব্য এই যে, হাদীস বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য মোতাবেক এ কথা স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, এ ব্যাপারে কোন সহীহ হাদীস বা সহীহ আসর (সাহাবীদের উক্তি) বর্ণিত নেই; সবই জাল ও বানোয়াট। তাই এ আমল তরক করে মাসনূন আমলের ব্যাপারে যত্নবান হওয়া উচিত। যেমন আযানের জবাব দেওয়া; আযান শেষ হওয়ার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরূদ পাঠ করা। এরপর আযানের দুআ পড়া ।

আর যদি তারা এ আমল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মহব্বত ও শ্রদ্ধা নিবেদনস্বরূপ করে থাকেন তাহলে আমাদের বক্তব্য এই যে, তা মহব্বত ও শ্রদ্ধা নিবেদনের আদব মোতাবেক হতে হবে। আর তাঁর প্রতি মহব্বতের আদব আমাদেরকে তাঁরই শরীয়ত থেকে শিখতে হবে। নতুবা নিজের মনচাহি পদ্ধতিতে যদি মহব্বত নিবেদন শুরু করা হয় তাহলে সুন্নতের বিপরীত কার্যকলাপের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট নিকৃষ্টতম কাজ-বিদআতের শিকার হতে হবে ।

আর যদি অনুমানভিত্তিক এবং মহব্বত প্রকাশের দাবীতেই এ আমল করা হয় তাহলে কেউ এরূপও বলতে পারে যে, নামাযের তাশাহহুদ ও দরূদের যে যে স্থানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাম মুবারক আসবে সেখানেও এ আমল সুন্নত বা মুস্তাহাব হবে। তেমনিভাবে কুরআন মাজীদ তেলাওয়াতের সময়ও সরাসরি বা ইঙ্গিতে যে যে স্থানে তাঁর নাম মুবারক আসবে সেখানেও এ আমল সুন্নত বা মুস্তাহাব হবে?
কেউ এ কথাও বলতে পারে যে, যদি রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাম মুবারকের মহব্বতের ভিত্তিতেই এ আমল করা হয়ে থাকে (এবং প্রত্যেক মুসলমানের ভিতর রাসূলের মহব্বত থাকা জরুরী এবং আছেও) তাহলে মুআবৃষিনের মুখে চুম্বন করা উচিত যার ঠোঁট ও মুখ থেকে এ মুবারক নাম উচ্চারিত হয়েছে। আপন বৃদ্ধাঙ্গুলি থেকে তো তাঁর মুবারক নাম উচ্চারিত হয়নি কিংবা তাতে লেখাও নেই-একে কেন চুম্বন কর

মোটকথা, কেবল অনুমান ও আন্দাজের ভিত্তিতে কোন ইবাদত সাব্যস্ত হয় না। ইবাদত শুধু শরীয়তদাতার শিক্ষা ও হেদায়াতের আলোকেই সাব্যস্ত হতে পারে। তাই এ আমলের ব্যাপারে যখন জাল রেওয়ায়াত ব্যতিরেকে কোন সহীহ হাদীস ও কোন সাহাবীর আসরও নেই তদুপরি এ আমলকে সুন্নত মনে করা বা এ কাজে সাওয়াবের আশা করা কোন আশেকে রাসূল বা আশেকে সুন্নতের পক্ষ থেকে হতে পারে না। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে দ্বীনের সঠিক বুঝ ও জ্ঞান দান করুন এবং নবীর মহব্বত ও ইশকের অসার দাবী নয়, বরং নবীর মহব্বত ও ইশকের হাকীকত দান করুন এবং সুন্নতের অনুসরণের নেয়ামত দ্বারা আমাদেরকে সৌভাগ্যবান করুন। আমীন ।

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ মুসলিম বাংলা ইফতা বিভাগ

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

৩৭৩২৯

গীবত


৩১ জুলাই, ২০২৩

সিলেট

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি মোহাম্মদ আমীর হোসাইন

৪৩৭৫১

আরবি শব্দকে বাংলা বানানে প্রকাশ করা....


২৩ অক্টোবর, ২০২৩

রাজপাড়া

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

৯৫৩১৪

সালামের জবাবে পাল্টা সালাম দেয়া কি ঠিক?


১২ মার্চ, ২০২৫

মুরাদনগর

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী

৪০৪৯১

নিষিদ্ধ সময়ের ঘুম


১ অক্টোবর, ২০২৩

লৌহজং

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy