আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

মহিলা ডাক্তার পুরুষ রোগীর চিকিৎসা করা

প্রশ্নঃ ২৫৪৩৮. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আমার প্রশ্ন হচ্ছে, আমি একজন নার্স, তো প্রযোজনের কারণ পুরুষ রোগীদের হাত ধরে inj দিতে হয়,ওই কাজ করতে আমার নিজেও খারাপ লাগে,,, ওই কাজ করাতে কি আমার বড় কেনো গুনাহ হবে??,

২৬ নভেম্বর, ২০২২

ঢাকা

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


ইসলামী শরিয়ার সাধারণ বিধান হল, কোন নারীর জন্য পরপুরুষকে এবং কোন পুরুষের পর নারীকে স্পর্শ করা জায়েয নয়। তবে একান্ত প্রয়োজন হলে ভিন্ন কথা।
অর্থাৎ পুরুষ ডাক্তার পুরুষ রোগীদের আর মহিলা ডাক্তার মহিলা রোগীদের চিকিৎসা করবে- এটাই ইসলামী রীতি। কিন্তু পরিস্থিতি যদি এমন হয় যে, রোগীর চিকিৎসা জন্য কোন পুরুষ ডাক্তার নাই তাহলে এ অবস্থায় মহিলা ডাক্তার পূর্ণ পর্দা রক্ষা করে এবং যথাসম্ভব ফিতনা সৃষ্টির ব্যাপারে সর্তক থেকে পুরুষ রোগীর চিকিৎসা করতে পারে। কিন্তু পুরুষ ডাক্তার বিদ্যমান থাকা অবস্থায় মহিলাদের জন্য পরপুরুষ রোগীর গায়ে স্পর্শ করা বা পুরুষ ডাক্তারের সহকর্মী হিসেবে থাকা বৈধ নয়। কেননা, এতে ফিতনা সৃষ্টি বা হারামে পতিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

রুবাই বিনত মুআওইয রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
كنا نغزو مع النبي ﷺ فنسقي القوم ونخدمهم ونرد الجرحى والقتلى إلى المدينة
আমরা রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর সাথে বিভিন্ন অভিযানে গমন করতাম। সেখানে আমরা লোকদের পানি পান করাতাম, আহতদের সেবা করতাম এবং শহীদদেরকে মদীনায় নিয়ে আসতাম। (বুখারী ২৭২৬, ২৭২৭)
ইবনু হাজার আসকালানী রহ. বলেন,
فيه جواز معالجة المرأة الأجنبية الرجل الأجنبي للضرورة
এ হাদীস থেকে জানা যায় যে, প্রয়োজনের প্রেক্ষিতে মহিলার জন্য বেগানা পুরুষের চিকিৎসা করা জায়িয হবে। (ইবনে হাজার, ফাতহুল বারী ৬/৮০)
হযরত আনাস ইবনু মালিক রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
كان رسول الله ﷺ يغزو بأم سليم ونسوة من الأنصار معه إذا غزا فيسقين الماء ويداوين الجرحى
রাসূলুল্লাহ ﷺ যখন অভিযানে বের হতেন তখন তিনি উম্মু সুলাইম রাযি. ও কিছু আনসারী মহিলাকে সাথে নিয়ে যেতেন। তাঁরা পানি পরিবেশন করতেন এবং আহতদের চিকিৎসা করতেন। (মুসলিম ১৮১০)
এ হাদীসের ব্যাখ্যায় ইমাম নববী রহ. বলেন,
وهذه المداواة لمحارمهن وأزواجهن ، وما كان منها لغيرهم لا يكون فيه مس بشرة إلا في موضع الحاجة
এ হাদীস থেকে জানা যায় যে, যুদ্ধক্ষেত্রের উদ্দেশ্যে মেয়েদের বের হওয়া এবং পানি পরিবেশন ও চিকিৎসা প্রভৃতি কাজে তাদেরকে খাটানো জায়িয। তারা মাহরাম ও স্বামীদের চিকিৎসা ও সেবা করবে। অন্যদেরও সাধারণভাবে স্পর্শ করা ছাড়া চিকিৎসা করতে পারবে; তদুপরি জরুরতের প্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় স্থান স্পর্শ করতেও কোন অসুবিধা নেই। (নববী, শরহু মুসলিম, পৃ ৫১১)
উল্লেখ্য, এক্ষেত্রে মূলনীতি হল, পুরুষ যাবে পুরুষ ডাক্তারের কাছে, মহিলা যাবে মহিলা ডাক্তারের কাছে। যদি পুরুষ ডাক্তার পাওয়া না যায়, তাহলে মহিলা ডাক্তারের চিকিৎসা নিতে পারবে। অনুরূপভাবে মহিলার জন্যও যদি মহিলা ডাক্তার না পাওয়া না যায়, তাহলে পুরুষ ডাক্তারের চিকিৎসা নিতে পারবে। (সারাখসী, আল-মাবসূত ১০/১৫৬ ; কাসানী,বাদাই ৫/১২২)

তবে বর্তমানে পুরুষ-মহিলা উভয় ডাক্তার যথেষ্ট পরিমাণ বিদ্যমান রয়েছে এবং হাসপাতালগুলোতে লক্ষ্য করে দেখা যায় যথেষ্ট পরিমাণ পুরুষ এবং মহিলা ডাক্তার বিদ্যমান থাকার পরেও, পুরুষ রোগীর জন্য মহিলা ডাক্তার এবং মহিলা রোগীর জন্য পুরুষ ডাক্তারকে ডিউটি দেয়া হয়। এটা সুস্পষ্টভাবে বুঝা যাচ্ছে সুপরিকল্পিতভাবেই মুসলমানদের পর্দার বিধান লঙ্ঘন করার জন্যই এই ক্ষেত্রগুলোকে এভাবে সাজানো হয়েছে। সুতরাং পরিস্থিতি দৃষ্টি আপনার জন্য পুরুষ রোগীদের চিকিৎসা করা জায়েজ হবে না।

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি মোহাম্মদ আমীর হোসাইন
মুহাদ্দীস, শাইখ আবু সাঈদ ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার মোহাম্মাদপুর।

প্রসঙ্গসমূহ:

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

৫০০৫১

ইবনে জুরাইজ এর ঘটনা


২৮ ডিসেম্বর, ২০২৩

বাজিতপুর

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

৮০০৩৪

সাহাবীর নামে মায়ের অসন্তুষ্টির মিথ্যা গল্প!!


৩ ডিসেম্বর, ২০২৪

চট্টগ্রাম

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

৮৮৪৬৫

দুআ কবুল হওয়ার বিশেষ কিছু মুহূর্ত


৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

করিমগাঞ্জ

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী আবু সাঈদ

৮৭৩৫১

আল্লাহ কেন অমুসলিমদেরকে এমন অনেক বিষয় দান করেন যা অনেক সময় মুসলিমরা পায়না?


২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

বগুড়া

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী নাঈম সিদ্দীকী বিন আব্দুস সাত্তার

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy