আল্লাহ কেন অমুসলিমদেরকে এমন অনেক বিষয় দান করেন যা অনেক সময় মুসলিমরা পায়না?
প্রশ্নঃ ৮৭৩৫১. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আমরা অনেক সময় দেখি, হিন্দু ভাই ও বোনেরা পড়াশোনার দিক থেকে, পরিশ্রমী ও মেধাবী হলে চান্স পেয়ে যায়। আমিও তো চেষ্টা করলাম, পরিশ্রমী ছিলাম,আল্লাহকে ডাকলাম,হলো না।ওরা তো আল্লাহ্ কে ডাকে না,মহান আল্লাহ্ পাক তাও কেনো সাহায্য করেন??এ বিষয়ে ইসলাম কি বলে জানতে চাই?
২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫
বগুড়া
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
প্রিয় দ্বীনি বোন! আপনি মূলত জানতে চেয়েছেন, আল্লাহ কেন অমুসলিমদেরকে এমন অনেক বিষয় দান করেন যা অনেক সময় মুসলিমরা পায়না?
এর অনেক কারণ আছে। নিম্নোক্ত কয়েকটি হাদীসের দিকে লক্ষ্য করলে আপনি এই প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন।
১. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, দুনিয়া মুমিনের জন্য কারাগারের মতো আর কাফিরের জন্য স্বর্গের মতো। (সহীহ মুসলিম ২৯৫৬)
২. আনাস ইবনে মালিক (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, কাফির যদি পৃথিবীতে কোন নেক আমল করে তবে এর বিনিময়ে পৃথিবীতেই তাকে কিছু প্রদান করা হয়ে থাকে। আর মুমিনদের জন্য আল্লাহ তাআলা আখিরাতের সঞ্চয় হিসাবে নেকী রেখে দেন। (সহীহ মুসলিম ২৮০৮)
৩. হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ)–এর নিকট উপস্থিত ছিলাম এবং উমর ইব্ন খাত্তাব (রা)ও তাঁর নিকট হাযির ছিলেন। রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) তখন রশির তৈরী খাটের উপর শায়িত ছিলেন এবং খাটের বুননও তাঁর দেহের মধ্যখানে কিছু (বিছানো) ছিলো না। তাঁর দেহ মোবারক ছিলো অত্যন্ত কোমল। তিনি পার্শ্ববদল করলে তাঁর চামড়ায় বা পার্শ্বদেশে রশির বুননের দাগ পরিলক্ষিত হলো। এই অবস্থা দেখে উমর (রা) কেঁদে ফেললেন। রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কাঁদছ কেন ? তিনি বললেন, আল্লাহ্র শপথ! আমি কেবল এ জন্য কাঁদছি যে, আমি জানি, আপনি মহান আল্লাহ্র নিকট (রোম সম্রাট) কায়সার ও (পারস্য সম্রাট) কিস্রার তুলনায় অনেক বেশী সম্মানিত । এই দুইজন বাদশাহ এই পার্থিব জগতে পর্যাপ্ত ভোগ–বিলাসের জীবন যাপন করছে। আর আপনি হলেন আল্লাহ্র রাসূল, অথচ আমি আপনাকে এই অবস্থায় দেখতে পাচ্ছি। নবী (ﷺ) বললেনঃ হে উমর! তুমি কি এনিয়ে সন্তুষ্ট নয় যে, আমাদের জন্য রয়েছে আখিরাতের জীবন আর তাদের (দুনিয়াদারদের) জন্য পার্থিব জীবন! তিনি বললেন, অবশ্যই। (আখলাকুন্নবী (ﷺ) হাদীস নং: ৪৯১)
৪. মুমিনের দোয়া কখনও বৃথা যায় না। তিন পদ্ধতিতে আল্লাহ তাআলা দোয়া কবুল করেন। যখন কোনো মুমিন ব্যক্তির দোয়ায় কোনো পাপ থাকে না, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার বিষয় থাকে না, তাহলে আল্লাহ তিন পদ্ধতির কোনো এক পদ্ধতিতে দোয়া কবুল করেন। পদ্ধতি তিনটি হলো—১. সে যে দোয়া করেছে, হুবহু তা কবুল করে দুনিয়াতে দেওয়া হয়। ২. তার দোয়ার প্রতিদান পরকালের জন্য সংরক্ষণ করা হয়। ৩. দোয়ার মাধ্যমে তার অনুরূপ কোনো অমঙ্গলকে তার থেকে দূরে রাখা হয়।’এই কথা শুনে সাহাবায়ে কেরাম আরয করলেন, তাহলে আমরা বেশি বেশি দোয়া করবো। নবীজি বললেন, আল্লাহ তাহলে আরো বেশি করে দিবেন। (মুসনাদে আহমদ: ১১১৩৩)
উপরোক্ত হাদিসগুলো থেকে এ কথা স্পষ্ট যে, বিভিন্ন কারণে কাফিরদেরকে আল্লাহ তাআলা দুনিয়াতে নেয়ামত দিয়ে থাকেন। কিছু কিছু তো তাদের বিভিন্ন ভালো কাজের প্রতিদান। আবার কিছু কিছু তাদেরকে দুনিয়ার অবকাশ। আখেরাতে তাদেরকে পাকড়াও করা হবে। আর মুমিনদের জন্য আখেরাতই আসল জীবন। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, বস্তুত আখেরাতের জীবনই প্রকৃত জীবন (আল আনকাবুত -৬৪) তাই দুনিয়ায় কিছু পেলে আল্লাহর শোকর আদায় করা উচিত। আর কিছু না পেলেও শোকর করা উচিত। কারণ আখেরাতে এই না পাওয়ার প্রতিদান পাওয়া যাবে। আর আমাদের জন্য কোনটা কল্যাণকর এটা আল্লাহই ভালো জানেন। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, এটা তো খুবই সম্ভব যে, তোমরা একটা জিনিসকে মন্দ মনে কর, অথচ তোমাদের পক্ষে তা মঙ্গলজনক। আর এটাও সম্ভব যে, তোমরা একটা জিনিসকে পছন্দ কর, অথচ তোমাদের পক্ষে তা মন্দ। আর (প্রকৃত বিষয় তো) আল্লাহ জানেন এবং তোমরা জান না। (আল বাকারা - ২১৬)
والله اعلم بالصواب
মুফতী নাঈম সিদ্দীকী বিন আব্দুস সাত্তার
শিক্ষক, হাদীস ও ফিকহ বিভাগ
মারকাযুশ শরীয়াহ আলইসলামিয়া ঢাকা
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন
এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর
মাসায়েল-এর বিষয়াদি
আল কুরআনুল কারীম
৪
হাদীস ও সুন্নাহ
৬
তাসাউফ-আত্মশুদ্ধি । ইসলাহী পরামর্শ
৩
শরীআত সম্পর্কিত
১৪
ফিতনাসমুহ; বিবরণ - করণীয়
২
আখিরাত - মৃত্যুর পরে
৩
ঈমান বিধ্বংসী কথা ও কাজ
৬
ফিরাকে বাতিলা - ভ্রান্ত দল ও মত
২
পবিত্রতা অর্জন
৮
নামাযের অধ্যায়
১৯
যাকাত - সদাকাহ
৫
রোযার অধ্যায়
৬
হজ্ব - ওমরাহ
২
কাফন দাফন - জানাযা
৫
কসম - মান্নত
১
কুরবানী - যবেহ - আকীকা
৪
বিবাহ শাদী
৮
মীরাছ-উত্তরাধিকার
২
লেনদেন - ব্যবসা - চাকুরী
৯
আধুনিক মাসায়েল
৬
দন্ড বিধি
২
দাওয়াত ও জিহাদ
৩
ইতিহাস ও ঐতিহ্য
৬
সীরাতুন নবী সাঃ । নবীজীর জীবনচরিত
৩
সাহাবা ও তাবেঈন
৩
ফাযায়েল ও মানাকেব
৩
কিতাব - পত্রিকা ও লেখক
৩
পরিবার - সামাজিকতা
৭
মহিলা অঙ্গন
২
আখলাক-চরিত্র
২
আদব- শিষ্টাচার
১২
রোগ-ব্যধি। চিকিৎসা
২
দোয়া - জিকির
২
নাম। শব্দ জ্ঞান
৩
নির্বাচিত
২
সাম্প্রতিক
১
বিবিধ মাসআলা
১