আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

ছবি ভিডিও ও ডিজিটাল ছবি

প্রশ্নঃ ২৫২৩০. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আমার প্রশ্ন হলো গ্রাফিক্স ডিজাইনের কাজে ক্যামেরা দিয়ে তোলা প্রাণীর ছবি ব্যবহার করা যাবে কি না? যেমন ইউটিউবের থাম্বেল এ মানুষের ছবিও থাকে সাথে কিছু লেখা থাকে। এ ধরনের সবকিছুর ক্ষেত্রে হুকুম কি, সেটা ফ্লাইয়ার হোক, ফেসবুক এর হোক যে কোনও কিছু। দয়া করে সঠিক বিষয়টা অবগত করবেন। কারণ বিভিন্ন ইসলামিক কর্মকান্ডে ও এসব করা হচ্ছে, যেমন কোনো আলিম বই মেলাতে আসবেন, সেখান উনার ছবি সহ কিছু লেখা এড করে একটা পোস্টার বানানো হচ্ছে। আমার পেশাগত কারণে এটা জানা আমার জন জরুরি। জাজাকাল্লাহু খাইরন।,

২৯ অক্টোবর, ২০২৩

বগুড়া

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


সম্মানিত প্রশ্নকারী!
ছবি, প্রতিচ্ছবি, মূর্তি, ডিজিটাল ছবি ভিডিও ইত্যাদির চারটি পর্যায় রয়েছে।
১. প্রাণীর মূর্তি, ভাস্কর্য, ত্রিমাত্রিক ছবি:
যেকোনো উদ্দেশ্যেই হোক, কোনো অবস্থাতেই প্রাণীর মূর্তি, ভাস্কর্য ও ত্রিমাত্রিক ছবির বৈধতা ইসলামে নেই। (তবে নিষ্প্রাণ ও জড়বস্তুর ভাস্কর্য সন্দেহাতীতভাবে জায়েয।)

২. প্রাণীর স্থিরচিত্র, (ইন্দ্রিয় গ্রাহ্য বস্তু যেমন কাগজ, কাপড়, দেয়াল ইত্যাদিতে) অঙ্কিত ছবি।
বহুসংখ্যক হাদীসের আলোকে এসব ছবি হারাম, নাজায়েয।
তবে বিশেষ প্রয়োজনে যেমন আইডি কার্ড, পাসপোর্ট ইত্যাদির প্রয়োজনে জরুরত পূরণের ঐ গণ্ডির মধ্যে ছবি অঙ্কন করা, তোলা ও সংরক্ষণ করা নাজায়েয নয়। (তবে নিষ্প্রাণ ও জড়বস্তুর ছবি তোলা শোপিস হিসেবে দেয়ালে বা আলমারিতে সংরক্ষণ করা সন্দেহাতীতভাবে জায়েজ।)

৩. প্রাণীর ডিজিটাল ছবি ভিডিও:
প্রাণীর ডিজিটাল ছবি হার্ডডিস্ক বা মেমরিতে থাকা পর্যন্ত এইসব ছবির ব্যাপারে ওলামাদের মধ্যে দুইটি মতামত রয়েছে।
ক. কিছুসংখ্যক ওলামাদের দৃষ্টিভঙ্গি হল, এসব ছবিও (হাদীসে উল্লেখিত) হারাম ও নাজায়েযের অন্তর্ভুক্ত। যেহেতু ইচ্ছে করলে এখান থেকে ছবি প্রিন্ট করা যায়।

খ. পাকিস্তানের দারুল উলুম করাচি, আরব বিশ্বসহ বর্তমান যুগের বহুসংখ্যক ওলামায়ে কেরামের দৃষ্টিভঙ্গি হল, প্রাণীর ডিজিটাল ছবি ঢালাওভাবে জায়েয নয়। আবার সম্পূর্ণ নাজায়েযও নয়। ছবি ও ভিডিওর বিষয়বস্তু এবং উদ্দেশ্যের বিচারে ডিজিটাল ছবি ভিডিও জায়েয হবে। আবার নাজায়েযও হতে পারে। তারা ডিজিটাল ছবি ভিডিওকে اجتهادي (ইজতিহাদী) বিষয় সাব্যস্ত করেন।

ডিজিটাল ছবি একদিক থেকে আয়নায় দেখা যাওয়া প্রতিচ্ছবির মত। যেহেতু এসব ছবি সরাসরি ইন্দ্রিয় গ্রাহ্য নয়। এর অস্তিত্ব প্রমাণ করার জন্য ইলেকট্রিক সিগন্যাল ও ডিসপ্লে আবশ্যক। ব্যক্তির প্রতিচ্ছবি দেখানোর জন্য আয়না যেমন সামনে থাকতে হবে, ডিজিটাল ছবি দৃশ্যমান করার জন্য ইলেকট্রিক সিগন্যাল লাগবে। তাই এসব ছবি আয়নার প্রতিচ্ছবির মত।
এই আলোকে এসব ছবি তারা জায়েয মনে করেন।
যেসব ব্যক্তিদেরকে (গাইরে মাহরাম) এবং ব্যক্তিদের যেসব দৃশ্য (সতর) সরাসরি দেখা জায়েয নয়, ছবি ভিডিওতেও সেসব ব্যক্তিদেরকে এবং ব্যক্তির সেসব দৃশ্যকে দেখা জায়েয নয়।
অন্যভাবে বললে এভাবে বলা যাবে, যা-কিছু সরাসরি দেখা নাজায়েয, ডিজিটাল ছবি ভিডিওতেও তা নাজায়েয।
সুতরাং অন্যায় অশ্লীলতা কোন অবস্থাতেই দেখা জায়েয নয়। সরাসরি হোক কিংবা ডিজিটাল ছবি ভিডিওতে হোক কোনো অবস্থাতেই তা দেখা জায়েয নাই। এসবের ছবি-ভিডিও ধারণ করাও জায়েয নয়।

৪. পানি, আয়না ইত্যাদিতে প্রতিচ্ছবি ও প্রতিবিম্ব।
আয়নার ছবি জায়েয। এব্যাপারে কারো দ্বিমত নেই।
তবে আয়নার ছবি দেখার বিষয়ে মাসআলা হলো, যাদেরকে (মাহরাম) সরাসরি দেখা বৈধ এবং যাদের যেসব দৃশ্য (সতর ছাড়া বাকি সব) সরাসরি দেখা অবৈধ নয়, আয়নাতেও তাদেরকে এবং তাদের সেসব দৃশ্য দেখা যাবে। (আয়নায় গায়রে মাহরামকেও দেখা যাবে না এবং মাহরাম ব্যক্তিদের সতরও দেখা যাবে না।)

এর আলোকে বড় বড় আলেম ওলামাদের সামাজিক যোগাযোগে ছবি-ভিডিও আপলোডের বিষয়ে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি হল, আল্লাহর বান্দাদের হিদায়াতের উদ্দেশ্যে যদি তারা ওয়াজ-নসিহতমূলক কোনো ছবি-ভিডিও আপলোড করেন, তবে সেসব ছবি-ভিডিও নাজায়েয বলা উচিত হবে না।

সম্মানিত প্রশ্নকারী!
উপরোক্ত বিবরণে থেকে আপনার প্রশ্নের সমাধান হলো, যেসব জিনিস সরাসরি দেখা জায়েজ প্রয়োজনের খাতিরে সেগুলোর ছবি যুক্ত করা , কাটছাঁট বা এডিটিং করার অবকাশ আছে। কিন্তু যেগুলো সরাসরি দেখা জায়েজ নাই সেগুলোর ছবি যুক্ত বা এডিট করাও জায়েজ নাই।
তবে বর্তমানে যত্রতত্র ডিজিটাল ছবির যেই মহামারি শুরু হয়েছে প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে, খাহেশ পূরনার্থে, কিংবা যেখানে ছবি না হলেও চলে এমন ক্ষেত্রেও ছবির অযাচিত ব্যবহার কিছুতেই জায়েজ হতে পারে না। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে হেফাজত করুন। আমিন।

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি
শিক্ষক, জামিয়া ইসলামিয়া ইবরাহিমিয়া দারুল উলুম মেরাজনগর, কদমতলী, ঢাকা।

প্রসঙ্গসমূহ:

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

৭৭৭৮৭

জিমেইল ফেসবুক আইডি বিক্রি প্রসঙ্গ


২১ ডিসেম্বর, ২০২৪

গাজীপুর

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

৫৪৬৩০

সরকারী চাকুরী কি জায়েয?


২ মে, ২০২৪

হাটহাজারী

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ শাইখ উমায়ের কোব্বাদী

৭৯৩৮৪

টাকা দিয়ে মিথ্যা ব্যাংক স্টেটমেন্ট বানানো কি জায়েয?


২০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

Narayanganj

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী নাঈম সিদ্দীকী বিন আব্দুস সাত্তার

৮৭২৭৪

আনসার বাহিনীতে চাকুরিরত ব্যক্তির জন্য বিশেষ লোন নেওয়া কি জায়েয?


২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

ব্রাহ্মণবাড়িয়া

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী নাঈম সিদ্দীকী বিন আব্দুস সাত্তার

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy