আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

আগে সুন্নাত নাকি আগে ফজরের জামাত? যদি সুন্নাত ছুটে যায় তাহলে পড়বে কখন?

প্রশ্নঃ ২৪৮১১. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, হুজুর প্রশ্নটি হচ্ছে, কেউ যদি ফজরের জামাতে এসে দেখে জামাত শুরু হয়ে গেছে। সে সুন্নাত না পরে জামাতে শরিক হয়ে গেলো। জামাত শেষ করার পর পিছনে গিয়ে একা সুন্নাত পড়ে। তখন একজন বাধা দিলো যে, ভাই, ফজরের জামাতের আগে সুন্নাত পড়বে। না পারলে সূ্র্যোদয়ের পরে পড়বে। তখন সে বলে, এটা ভুল। আমি জানি যে, মসজিদে আসা হয় ফরজ সালাত আদায় করার জন্য। এখন যদি জামাত চলাকালীন সময়ে তুমি সুন্নাত পড়ো, তাহলে ফরজকে নিচু করা হলো! তাই আগে ফরজের জামাত শেষ করে সূর্যোদয়ের পূর্বে সুন্নাত পড়ে নিলে অসুবিধে নেই! সে বলে, সূর্যোদয়ের পরে সুন্নত পড়বে কেন? তখন তো ওয়াক্ত শেষ হয়ে যায়! তাই জামাতের আগে সুন্নাত পড়বে না হয় জামাত শেষ করে সুন্নাত পড়বে। বিষয়টি ভালোভাবে বুঝিয়ে দিলে অনেক উপকৃত হবো যে, কিভাবে সুন্নাত পড়বে? (এবং রেফারেন্স দিলে অনেক ভালো হবে।)

৪ নভেম্বর, ২০২২
সিলেট

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


এক. প্রিয় প্রশ্নকারী ভাই, কোনো ব্যক্তি যদি ফজর নামাযের পূর্বে সুন্নত পড়তে না পারে তাহলে এক্ষেত্রে দলীল-প্রমাণের আলোকে শক্তিশালী মত হল, এ ব্যক্তি ফজরের সুন্নত সূর্যোদয়ের পর আদায় করবে। ফরযের পর সূর্যোদয়ের পূর্বে আদায় করবে না। কেননা, রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
مَنْ لمْ يُصَلِّ ركعتَي الفجْرِ ، فلْيُصلِّها بعدَ ما تَطلُعُ الشمْسُ
যে ব্যক্তি ফজরের দুই রাকাআত সুন্নাত (ফরযের পূর্বে) আদায় করতে পারেনি সে সূর্য উঠার পর তা আদায় করবে। (তিরমিযী ৪২৩)
অপর হাদীসে এসেছে, উমর ইবনুল খাত্তাব রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন,
أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ نَهَى عَنِ الصَّلاَةِ بَعْدَ الْفَجْرِ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ وَعَنِ الصَّلاَةِ بَعْدَ الْعَصْرِ حَتَّى تَغْرُبَ الشَّمْسُ
রাসূলুল্লাহ ﷺ ফযরের নামাযের পর সূর্য উদয় না হওয়া পর্যন্ত এবং আসরের নামাযের পর সূর্যাস্ত না যাওয়া পর্যন্ত অন্য কোন নামায আদায় করতে নিষেধ করেছেন। (তিরমিযী ১৮৩)
এ হাদীসে ব্যাপকভাবেই নিষেধাজ্ঞা এসেছে। এ নিষেধাজ্ঞার অধীনে ফজরের সুন্নতও শামিল। এ থেকে ফজরের সুন্নতকে বাদ দেয়ার সহীহ ও নির্ভরযোগ্য কোনো হাদীস নেই। ইমাম তিরমিযী রহ. এ হাদীস বর্ণনা করার পর বলেন,
وَهُوَ قَوْلُ أَكْثَرِ الْفُقَهَاءِ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ ﷺ وَمَنْ بَعْدَهُمْ أَنَّهُمْ كَرِهُوا الصَّلاَةَ بَعْدَ صَلاَةِ الصُّبْحِ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ وَبَعْدَ صَلاَةِ الْعَصْرِ حَتَّى تَغْرُبَ الشَّمْسُ وَأَمَّا الصَّلَوَاتُ الْفَوَائِتُ فَلاَ بَأْسَ أَنْ تُقْضَى بَعْدَ الْعَصْرِ وَبَعْدَ الصُّبْحِ
অর্থাৎ, সাহাবা ও তাদের পরবর্তী অধিকাংশ ফকীহের মত হল,তারা ফজর ও আসরের পর সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের পূর্বে ফরযের কাযা ছাড়া অন্য কোনো নামায পড়াকে মাকরূহ মনে করতেন।

দুই. নিয়ম হল, ফজরের জামাত শুরু হয়ে গেলেও সুন্নত পড়ে যদি জামাতের সাথে দ্বিতীয় রাকাতও পাওয়া যায় তাহলে সুন্নত পড়ে নিবে। আর দ্বিতীয় রাকাত পাওয়ার সম্ভাবনা না থাকলে সুন্নত পড়বে না; বরং জামাতে শরিক হয়ে যাবে এবং সূর্যোদয়ের পর তা পড়ে নিবে।
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ, আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস ও আবু দারদা রা.-এর মতো বিশিষ্ট সাহাবীদের থেকে বর্ণিত আছে যে, তারা ফজরের জামাত শুরু হয়ে গেলেও সুন্নত পড়ে নিতেন। যেমন আবু দারদা রা. ফজরের সময় মসজিদে প্রবেশ করে লোকজনকে ফজরের জামাতে কাতারবদ্ধ পেলে মসজিদের এক কোণে (ফজরের) সুন্নত পড়তেন। অতপর মানুষের সাথে জামাতে শরিক হতেন। (শরহু মাআনিল আছার, তহাবী ১/২৫৬)

والله اعلم بالصواب

শাইখ উমায়ের কোব্বাদী সিনিয়র মুহাদ্দিস, মাদরাসা দারুর রাশাদ, মিরপুর খতীব, বাইতুল ফালাহ জামে মসজিদ, মিরপুর

মন্তব্য (0)

কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!

মন্তব্য করতে লগইন করুন