কোনোভাবেই গোনাহ ছাড়তে পারি না; কী করবো?
প্রশ্নঃ ২৪৬৪৭. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আমি একজন মাদরাসার ছাত্র হওয়া সত্ত্বেও গোনাহ ছাড়তে পারছি না। বদ অভ্যাস আছে নামাজ পড়ি কোরআন তেলাওয়াত করি তাওবা করি। কিন্তু পুনরায় গোনাহতে লিপ্ত হই। এখন আমি কী করবো?,
৭ নভেম্বর, ২০২২
চাঁপাই নবাবগঞ্জ
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
প্রিয় ভাই, প্রথমেই দোয়া করি, আল্লাহ আপনার অবস্থার পরিবর্তন করে দিন। হক্কানী রাব্বানী আলেম হিসেবে কবুল করে নিন।
আর আপনার রোগের চিকিৎসা নিম্নবর্ণিতভাবে হতে পারে–
এক. একটু ভেবে দেখুন, কোন্ কোন্ পথে গোনাহ হয়ে যাচ্ছে। কোন্ কোন্ দরজা দিয়ে গোনাহ প্রবেশ করছে। ঘরের দরজা বন্ধ না করলে যেমন চোর ঢুকবে, তেমনি গোনাহের দরজা বন্ধ না করলেও অনিচ্ছায় আপনি গোনাহে জড়িয়ে পড়বেন। সুতরাং গোনাহের দরজা যদি বন্ধ করতে পারেন, তাহলে গোনাহ থেকে বাঁচা সহজ হয়ে যাবে। আর যেসমস্ত পথে গোনাহ হয়ে যায় সেগুলো নিয়ে ভাবলে দেখবেন, তালিকার প্রথমেই আসবে অসৎ সঙ্গ বা খারাপ বন্ধু। সুতরাং যে কোনো মূল্যে আপনাকে অসৎ সঙ্গ থেকে বাঁচতে হবে। নইলে তারা আপনাকে গোনাহে জড়িয়েই ছাড়বে। এজন্যই তো প্রবাদ আছে, সৎ সঙ্গে সর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
المرءُ على دينِ خليلِه فلينظرْ أحدُكم مَن يُخاللُ
‘মানুষ তার বন্ধুর দীনের উপর থাকে, অতঃপর কার সাথে বন্ধুত্ব করছ তা বিবেচনা করে নাও’। (সুনান তিরমিযী ২৩৭৮)
গোনাহের আরেকটি দরজা হল, স্মার্ট ফোন। এর সাথে সাথে ইন্টারনেট। এগুলোর নিরাপদ ও নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার করবেন। একান্ত প্রয়োজন হলে এমনভাবে ব্যবহার করবেন যেন সকলের নযরে পড়ে, আর আপনি গোনাহ থেকে বাঁচতে পারেন।
দুই. সব সময় সর্বাবস্থায় ‘আল্লাহ আমার সঙ্গে আছেন’ এই কল্পনা ধরে রাখার চেষ্টা করুন। তিনি তো আমাদের প্রতিটি কাজ দেখছেন, পর্যবেক্ষণ করছেন। ইবনুল আরাবী রহ. বলতেন,
أَخْسَرُ الْخَاسِرِينَ مَنْ أَبْدَى لِلنَّاسِ صَالِحَ أَعْمَالِهِ، وَبَارَزَ بِالْقَبِيحِ مَنْ هُوَ أَقْرَبُ إِلَيْهِ مِنْ حَبْلِ الْوَرِيدِ
সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ ওই ব্যক্তি যে মানুষের সামনে ভালো আমল করে। কিন্তু যে মহান সত্তা তার শাহরগের চেয়েও অধিক নিকটে তাঁর সামনে গুনাহ করে। (তাবাকাতুল আওলিয়া ১/৭৭)
আর উক্ত কল্পনা ধরে রাখার জন্য প্রত্যেক নামাযের পর দৈনিক অন্তত পাঁচ বার কিছু সময়ের জন্য- দুই থেকে পাঁচ মিনিটের জন্য আল্লাহর সান্নিধ্যের মুরাকাবা করুন। মুরাকাবা এভাবে করবেন- চোখ বন্ধ করবেন। তারপর ভাববেন, ‘আমি যেখানেই থাকি না আল্লাহ আমার সাথে আছেন।’ অথবা এই আয়াতের বিষয়বস্তু নিয়ে চিন্তা করবেন, هُوَ مَعَكُمْ اَيْنَمَا كُنْتُمْ ‘তোমরা যেখানেই তিনি তোমাদের সঙ্গে আছেন।’
তিন. এরপরেও যদি গোনাহ হয়ে যায় তাহলে গোনাহর সঙ্গে নিম্নের তিনটি আচরণ অবশ্যই দেখাবেন।
১- হয়ে যাওয়া গোনাহটিকে কখনও ছোট বা হালকা করে দেখবেন না। বরং ভাববেন, আমার একটা বিশাল ক্ষতি হয়ে গেছে। হাদিসের মাঝে এসেছে নবীজী ﷺ বলেন,
إياكم ومُحَقَّراتِ الذنوبِ
তুমি ঐ সকল গোনাহ থেকে বেঁচে থাক যেগুলোকে ছোট বলে ধারণা করা হবে। (সহিহ আলজামি’ ২৬৮৬)
একটা জিনিস চিন্তা করে দেখুন, হাদিসে এসেছে, এক ব্যক্তি একটা বিড়ালকে বেঁধে রাখার কারণে জাহান্নামে চলে গেছে। একজন মুজাহিদ শুধু একটা রশি চুরি করার কারণে জাহান্নামে চলে গেছে। আরো এসেছে, একজন লোক আমল করতে করতে জান্নাতের পাড়ে চলে যায়, তারপর সে হঠাত একটা কথা বলে যার কারণে সে জাহান্নামের পাড়ে চলে আসে।
তাহলে বলুন, কোন গুনাহকে ছোট মনে করে দেখার কোন সুযোগ আছে?!
২- সঙ্গে সঙ্গে তাওবা ও ইস্তেগফার করবেন। কেননা, সাহাবায়ে কেরাম রাযি. বলতেন,
مَا أَصَرَّ مَنِ اسْتَغْفَرَ
যে ব্যক্তি বেশি ইস্তেগফার করে সে গুনাহের উপর অটল থাকতে পারে না।
হাফেজ ইবনু তাইমিয়া রহ. লিখেছেন, এক ব্যক্তি তাঁর শায়েখকে বলল, আমার গুনাহ হয়ে যায় কী করব? শায়েখ বললেন, তাওবা করবে। লোকটি বলল, তাওবা করার পর যদি আবার গোনাহ হয়? শায়েখ বললেন, তাওবা করবে। লোকটি বলল, যদি আবারও গুনাহ হয়? শায়েখ বললেন, এবারও তাওবা করবে। লোকটি বলল, কত বার তাওবা করব? শায়েখ উত্তর দিলেন, إلى أن تُحْزِنَ الشيطان শয়তানকে পেরেশান করা পর্যন্ত তাওবা করতেই থাকবে।
৩- সঙ্গে সঙ্গে একটা নেক আমল করে নিবেন। নবীজী ﷺ বলেন,
إِنَّ مَثَلَ الَّذِي يَعْمَلُ السَّيِّئَاتِ ثُمَّ يَعْمَلُ الْحَسَنَاتِ: كَمَثَلِ رَجُلٍ كَانَتْ عَلَيْهِ دِرْعٌ ضَيِّقَةٌ قَدْ خَنَقَتْهُ, ثُمَّ عَمِلَ حَسَنَةً فَانْفَكَّتْ حَلْقَةٌ, ثُمَّ عَمِلَ حَسَنَةً أُخْرَى فَانْفَكَّتْ حَلْقَةٌ أُخْرَى حَتَّى يَخْرُجَ إِلَى الأَرْضِ
যে ব্যক্তি কোন গুনাহ করার পরপরই নেক আমল করে, সেই ব্যক্তির উপমা এমন একজনের মত যার দেহে ছিল সংকীর্ণ বর্ম; যা তার শ্বাস রোধ করে ফেলেছিল। অতঃপর সে যখন একটি নেক আমল করে, তখন বর্মের একটি আংটা খুলে যায়। তারপর আর একটি পুণ্য করলে আরো একটি আংটা খুলে যায়। ফলে সে সংকীর্ণতার কষ্ট থেকে মুক্তি লাভ করতে পারে। তখন সে হাফ ছেঁড়ে বাঁচে। (মুসনাদ আহমদ ১৭৩০৭)
চার. প্রিয় প্রশ্নাকারী ভাই, চিকিৎসা পেলেন, বাঁচার কৌশলও জানলেন; কিন্তু কেবল জেনেই গেলেন, সতর্ক হলেন না, হিম্মত করলেন না, পদক্ষেপ নিলেন না তাহলে মনে রাখবেন, যদি কেউ নিজের পায়ে কুড়াল মারতে চায় তাহলে তাকে বাঁচাবে কে! কেউ যদি আগুনে ঝাঁপ দিতে চায় তাহলে তাকে কে আছে রক্ষা করবে! এজন্য বিশেষভাবে বলছি, মুজাহাদা করতে হবে, আত্মপ্রত্যয়ী হতে হবে। আল্লাহর উপর পরিপূর্ণ ভরসা করে সামনে বাড়তে হবে। তাহলে ‘ইন শা আল্লাহ’ আল্লাহ তাআলা আপনার প্রতি রহমতের দৃষ্টি দিবেন এবং এই বেড়াজাল থেকে বের হতে পারবেন। কেননা, আল্লাহ তাআলা বলেছেন,
وَٱلَّذِينَ جَٰهَدُواْ فِينَا لَنَهْدِيَنَّهُمْ سُبُلَنَا ۚ وَإِنَّ ٱللَّهَ لَمَعَ ٱلْمُحْسِنِينَ
আর যারা আমার পথে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালায় তাদেরকে আমি অবশ্য অবশ্যই আমার পথে পরিচালিত করব। অবশ্যই আল্লাহ সৎকর্মপরায়ণদের সঙ্গে আছেন। (সূরা আনকাবুত ৬৯)
নিশ্চয় আল্লাহ তাওফীকদাতা।
والله اعلم بالصواب
সিনিয়র মুহাদ্দিস, মাদরাসা দারুর রাশাদ, মিরপুর
খতীব, বাইতুল ফালাহ জামে মসজিদ, মিরপুর
মন্তব্য (০)
কোনো মন্তব্য নেই।
এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর
সাম্প্রতিক প্রশ্নোত্তর
মাসায়েল-এর বিষয়াদি
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে