আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

মাজার জিয়ারত করার বিধান

প্রশ্নঃ ২৪৫৬৭. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, মাজার সম্পর্কে কিছু জানতে চায়। এটা আমাদের জন্য কতটা সঠিক।মানে মাজার জিয়ারত এর বেপার টা।,

৮ নভেম্বর, ২০২২

Tongi, Dhaka, Bangladesh

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


কবর শব্দের অর্থ দাফনস্থল অর্থাৎ যে স্থানে মৃত ব্যক্তিকে দাফন করা হয়। আর মাযার শব্দের অর্থ দুটি : যিয়ারত করা এবং যিয়ারত স্থল। তাই যে কোনো মুসলমানের দাফনস্থলকে যেমন কবর বলা যায় তেমনি যে কোনো মুসলমানের কবরকে আভিধানিক অর্থে মাযারও বলা যায়। কেননা, সকল মুসলমানের কবরই যিয়ারত করা বৈধ। বুযুর্গ, নেককার ও ওলিদের দাফনস্থলকে কবর বলা যাবে না এমন কোনো বিধান শরীয়তে নেই। ওলি-বুযুর্গদের কবরের জন্য কুরআন-হাদীসে কোথাও মাযার শব্দ ব্যবহার হয়নি। হাদীসে সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ নবীদের দাফনস্থলকেও কবর বলা হয়েছে। এমনকি হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কবরকেও কবর শব্দেই উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন, সহীহ বুখারীতে বর্ণিত একটি হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন- ‘ইহুদী ও নাসারাদের উপর আল্লাহর লা’নত, কারণ তারা তাদের নবীদের কবরগুলোকে সিজদার স্থান বানিয়েছে। (সহীহ বুখারী ১/১৮৬) এই হাদীসে নবীদের দাফনস্থলকে কবর বলা হয়েছে। অন্য এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর নিজের ব্যাপারেই বলেন, আমার কবরকে তোমরা উৎসবের স্থান বানিও না। (সুনানে আবু দাউদ ১/২৭৯) সুতরাং বোঝা গেল, যত সম্মানিত ব্যক্তিই হোক তার দাফনস্থলকে কবর বলা দোষণীয় নয়। তাই ওলি-বুযুর্গদের দাফনস্থলকেও কবর বলা যাবে। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দাফনস্থলকে রওযা বলার কারণ হল, রওযা শব্দের অর্থ বাগান। এখানে রওযা দ্বারা উদ্দেশ্য, ‘জান্নাতের একটি বাগান।’ যেহেতু তাঁর কবরটি জান্নাতের নেয়ামতে ভরপুর একটি পবিত্র বাগান। তাই এ অর্থে তাঁর কবরকে ‘রওযা আতহার’ (পবিত্র বাগান) বলা হয়। দ্বিতীয় প্রসঙ্গ হচ্ছে কবরের সঙ্গে কৃত আচরণ কবর ইবাদত বা উপাসনার স্থান নয়। কবর সংক্রান্ত যে সব বিষয় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিক্ষা দিয়েছেন (যথা যিয়ারত, সালাম ও দুআ) সেগুলো ছাড়া অন্য কোনো কিছু করা বৈধ নয়। কবরকে সিজদা করা, চুমু খাওয়া, তাতে বাতি জ্বালানো-এগুলো বড় গুনাহ ও শিরকী কাজ। এ বিষয়ে শরীয়তের অনেক দলীল রয়েছে। নিম্নে এ সংক্রান্ত কয়েকটি হাদীস বরাতসহ পেশ করা হল। সহীহ মুসলিমের এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমাদের পূর্ববর্তী কতক উম্মত নিজ নবী ও বুযুর্গদের কবরকে সিজদার স্থান বানিয়েছে। সাবধান! তোমরা কবরকে সিজদার স্থান বানাবে না। আমি তোমাদেরকে এ কাজ করতে নিষেধ করছি। (সহীহ মুসলিম ১/২০১) অন্য এক হাদীসে কবরের উপর যারা বাতি জ্বালায় তাদের উপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অভিসম্পাত করেছেন। (সুনানে তিরমিযী ১/৭৩) আরেক হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত আলী রা.কে এই ফরমান দিয়ে পাঠালেন যে, কোনো উঁচু কবর দেখলে তা সমান করে দিবে এবং কোনো মূর্তি দেখলে তা চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিবে। (জামে তিরমিযী ১/২০৩) ফিকহে ইসলামীর প্রসিদ্ধ কিতাব তাহতাবী আলা মারাকিল ফালাহ পৃ. ৩৪১ বলা হয়েছে, কবর মুছবে না, কবরে চুমু দিবে না এবং কবরকে স্পর্শ করবে না। কেননা, এটা নাসারাদের রীতি। (সামনে এ সংক্রান্ত আরো বরাত উল্লেখ করা হয়েছে।) উল্লেখ্য কবরে চুমু খাওয়া, সিজদা করা, তাওয়াফ করা, কবরের উপর ইমারত বানানো, গিলাফ চড়ানো, মোমবাতি-আগরবাতি জ্বালানো ইত্যাদি একদিকে যেমন শরীয়তের দৃষ্টিতে গর্হিত কাজ, অপরদিকে তা কবরবাসী ওলীদের প্রতি চরম অবিচার। কেননা, তাঁরা পুরো জীবন শিরক-বিদআতের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন অথচ মৃত্যুর পর তাদরে প্রতি ভক্তি নিবেদনের নামে ওই সব কাজ-ই করা হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে সাহাবা, তাবেয়ীন এবং ওলি-বুযুর্গদের পথ-নির্দেশনা অনুযায়ী নিজের ঈমান-আমল ঠিক করা, তাওহীদ ও সুন্নাহ্কে আঁকড়ে ধরা এবং শিরক-বিদআত ও সকল প্রকার কুসংস্কার থেকে বেঁচে থাকার মাধ্যমেই তাদেরকে প্রকৃত সম্মান করা যায়। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে দ্বীনের সঠিক বুঝ দান করুন। কবর যিয়ারতের মাসনূন তরীকা কবর যিয়ারতের সুন্নত তরীকা হচ্ছে কবরের কাছে গিয়ে সালাম দিবে। এরপর কবরকে পিছনে রেখে কিবলামুখী হয়ে দাড়িয়ে নিজের জন্য এবং কবরবাসীর জন্য মাগফিরাতের দুআ করবে। এছাড়া কুরআন মজীদ থেকে কিছু অংশ তেলাওয়াত করে কবরবাসীর জন্য ইসালে ছওয়াব করা যেতে পারে।- দেখুন : (কবর অর্থ :) লিসানুল আরব ১১/৯; আলকামুসুল মুহীত ২/১৬০; তাজুল আরূস ৩/৪৭৮; তাহযীবুল লুগাহ ৭/১৪৮ মাযার অর্থ : লিসানুল আরব ৬/১১১; তাজুল আরূস ৩/২৪৫; (দাফনস'লকে কবর বলা :) সহীহ বুখারী ১/১৮৬; সহীহ মুসলিম ১/২০১; মুসনাদে আহমদ ২/২৪৬, ৩৬৭; কবরকে রওযা বলা : জামে তিরমিযী ২/৭৩; (কবরে নিষিদ্ধ কার্যাবলি :) সহীহ বুখারী ১/১৮৬; সহীহ মুসলিম ১/২০১; জামে তিরমিযী ১/৭৩; সুনানে নাসাঈ ১/২২২; সুনানে আবু দাউদ ২/৪৬১; সহীহ ইবনে হিব্বান ৭/৪৫২-৪৫৪; রূহুল মাআনী ৮/২৩৮; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪৩৯; আলবাহরুর রায়েক ২/২৯৮; হাশিয়া তাহতাবী আলাল মারাকী পৃ. ৩৪১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৬৭; আননাহরুল ফায়েক ২/৪২; ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৬/৩৭২; মাদখাল ইবনুল হাজ ৩/২৭৩-২৭৪; ইগাছাতুল লাহফান ১/২২২ (কবর যিয়ারতের সঠিক পদ্ধতি :) সহীহ মুসলিম ১/৩১৩; শরহু মুসলিম নববী ৭/৪৩; হিলইয়াতুল আওলিয়া ১/১৬৯; শরহুস সুদূর পৃ. ৩১১; রদ্দুল মুহতার ২/২৪২; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩৫০; আলবাহরুর রায়েক ২/১৯৫-১৯৬; ইলাউস সুনান ৮/৩৩০-৩৪৩ ((আল কাউসার))

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী মুহাম্মাদ রাশেদুল ইসলাম
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, মদিনা মুনাওয়ারা ৷

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

৩৭৮৯৫

আজকের শিশুরা কেন অতিরিক্ত বদমেজাজী?


১৬ আগস্ট, ২০২৩

West Bengal ৭১৩৪০৫

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

৩৯৬৭৬

আলেম শব্দের অর্থ


৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

গোকুন্ডা

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি মোহাম্মদ আমীর হোসাইন

৪৯৪৩০

সফর ও মুসাফিরের নামাজ


২২ ডিসেম্বর, ২০২৩

ঢাকা

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

৯০২১৪

রজব শব্দটি মুনসারিফ নাকি গায়রে মুনসারিফ?


২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

৮P৩C+GV৭

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী নাঈম সিদ্দীকী বিন আব্দুস সাত্তার

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy