আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

খালুকে বাবা ডাকা

প্রশ্নঃ ২৪০১৯. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, কিছু কিছু ফ্যামিলিতে দেখা যায় খালুকে বাবা ডাকা হয়। একাধিক খালু থাকলে ছোট বাবা, বড় বাবা এভাবে ডাকা হয়। আমার ক্ষেত্রেও তাই হচ্ছে। এটা কতটুক শরীয়ত সম্মত কিংবা এক্ষেত্রে শরীয়তের বিধি-বিধান কি তা জানতে চাই।

২৭ অক্টোবর, ২০২২
ঢাকা ১২১৫

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم





আমাদের সমাজে অন্যকে বাবা-মা ডাকার সবচেয়ে পরিচিত ক্ষেত্র হলো,শাশুড়-শাশুড়ি।আমাদের সমাজে ব্যাপকভাবে শাশুড়-শাশুড়ীকে কে বাবা-মা বলে সম্বোধন করা হয়।

তো এক্ষেত্রে বিধান হলো, শশুরকে ‘বাবা’ আর শাশুড়িকে ‘মা’ বলা নাজায়েয হবে না।তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্যই মূলত এমনটা বলা হয়।

কুরআনে আল্লাহ তা'আলা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর স্ত্রীদেরকে আমাদের মা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন যদিও তারা আমাদের জন্মদাত্রী মা নন। এবং ইবরাহীম আ. কে আমাদের পিতা হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন। যদিও তিনি আমাদের জন্মদাতা পিতা নন। যেমন আল্লাহ তা'আলা বলেন,

ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺃَﻭْﻟَﻰ ﺑِﺎﻟْﻤُﺆْﻣِﻨِﻴﻦَ ﻣِﻦْ ﺃَﻧﻔُﺴِﻬِﻢْ ﻭَﺃَﺯْﻭَﺍﺟُﻪُ ﺃُﻣَّﻬَﺎﺗُﻬُﻢْ
নবী মুমিনদের নিকট তাদের নিজেদের অপেক্ষা অধিক ঘনিষ্ঠ এবং তাঁর স্ত্রীগণ তাদের মাতা।(সূরা আহযাবঃ৬নং আয়াতের কিয়দাংশ)

আল্লাহ তা'আলা অন্যত্র বলেন,
ﻭَﺟَﺎﻫِﺪُﻭﺍ ﻓِﻲ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺣَﻖَّ ﺟِﻬَﺎﺩِﻩِ ﻫُﻮَ ﺍﺟْﺘَﺒَﺎﻛُﻢْ ﻭَﻣَﺎ ﺟَﻌَﻞَ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﻓِﻲ ﺍﻟﺪِّﻳﻦِ ﻣِﻦْ ﺣَﺮَﺝٍ ﻣِّﻠَّﺔَ ﺃَﺑِﻴﻜُﻢْ ﺇِﺑْﺮَﺍﻫِﻴﻢَ

তোমরা আল্লাহর জন্যে শ্রম স্বীকার কর যেভাবে শ্রম স্বীকার করা উচিত। তিনি তোমাদেরকে পছন্দ করেছেন এবং ধর্মের ব্যাপারে তোমাদের উপর কোন সংকীর্ণতা রাখেননি। তোমরা তোমাদের পিতা ইব্রাহীমের ধর্মে কায়েম থাক। (সূরা হজ্ব-৭৮)

অনুরূপভাবে ছোটদের প্রতি স্নেহ ও মমতা প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে তাদেরকে ‘ছেলে’ বা বৎস বলার প্রচলিনও রয়েছে।এবং এটি দূষণীয়ও নয়। যেমন হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আনাস রা. কে বলেন,
يَا بُنَيَّ إِذَا دَخَلْتَ عَلَى أَهْلِكَ فَسَلِّمْ يَكُونُ بَرَكَةً عَلَيْكَ وَعَلَى أَهْلِ بَيْتِكَ.
হে আমার বৎস! তুমি যখন বাড়িতে প্রবেশ করবে, তখন বাড়ির লোকদেরকে সালাম দিবে।এটা তোমার জন্য এবং তোমার পরিবারবর্গের জন্য রহমত স্বরূপ।” (সুনানে তিরমিযি-২৬৯৮)

সম্মান প্রদর্শন পূর্বক কাউকে বাবা বা মা বলে সম্বোধন করা জায়েয আছে।তবে কাউকে বাস্তবে বাবা-মার স্থান দিয়ে দেয়া বা নিজ পিতা-মাত ব্যতীত নিজেকে অন্যকারো সন্তান বলে পরিচয় দেয়া, আইডি কার্ড বা পাসপোর্টে নাম দেয়া কখনো জায়েয হবে না।এটা সম্পূর্ণই না জায়েয।

যেমন হযরত সা'দ রাযি থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন আমি রাসূলুল্লাহ সাঃ কে বলতে শুনেছি-
عَنْ سَعْدٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، يَقُولُ: «مَنِ ادَّعَى إِلَى غَيْرِ أَبِيهِ، وَهُوَ يَعْلَمُ أَنَّهُ غَيْرُ أَبِيهِ،
فَالْجَنَّةُ عَلَيْهِ حَرَامٌ»
" যে ব্যক্তি আপন পিতা ছাড়া অন্যকে পিতা বলে মেনে নেয় অথচ সে জানে যে, সে তার পিতা নয়, তার জন্য জান্নাত হারাম। "। (সহীহ বোখারী, হাদীস নং- ৬৭৬৬)

হাদীসের সারমর্মঃ
যে ব্যক্তি নিজের জন্মদাতা পিতা ছাড়া অন্য কাউকে পিতা হিসেবে মেনে নয় বা অন্য কারও সাথে জন্মগত সম্বন্ধ প্রতিষ্ঠার দাবী করে তার জন্য জান্নাত হারাম। অন্য বর্ণনায় এসেছে, সে কুফুরী করল।

সু-প্রিয় পাঠকবর্গ ও প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!

আপনিও আপনার খালুকে সম্মাণ প্রদর্শনপূর্বক বাবা বলে সম্বোধন করে পারবেন। তবে মনে রাখতে হবে খালু গায়রে মাহরামের অন্তর্ভুক্ত। উনি অপরিচিত মানুষের মত।সুতরাং একজন অপরিচিত মানুষের সামনে যেভাবে শরয়ী পর্দা করতে হয় ঠিক সেভাবে উনার সাথেও পর্দা করতে হবে। বাবা ডাকার সুবাদে তাকে কিছুতেই মাহরাম মনে করা যাবে না এবং তার সাথে পর্দা লঙ্ঘণ করা যাবে না। অন্যান্য ননমাহরামের ন্যায় তার সাথেও পর্দা রক্ষা করতে হবে।
আল্লাহ-ই ভালো জানেন।
মুফতী ইমদাদুল হক
(ইসৎ সংযোজিত)

والله اعلم بالصواب

মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি শিক্ষক, জামিয়া ইসলামিয়া ইবরাহিমিয়া দারুল উলুম মেরাজনগর, কদমতলী, ঢাকা।

মন্তব্য (0)

কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!

মন্তব্য করতে লগইন করুন