আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

দ্বীনি বিষয়ে অবাধ্য স্ত্রীকে কিভাবে নসিহা করা যায়?

প্রশ্নঃ ২১৪৫৭. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, হযরত আমার একটা প্রশ্ন ছিলো প্রশ্ন টা হলো আমার স্ত্রী আমার কোন কথা শুনে না এবং হালাল হারাম কোনো বিষয় বললে সে মানে না জাহান্নামের ভয় দেখালেও বলে আপনার কোনো কথা আমার পছন্দ হয় না আপনার কথা শুনলে আমার রাগ উঠে এবং আমার কথার চেয়ে সে তার মা বাবার কথায় বেশী গুরুত্ব দেয় তার মা বাবা যেমন বলে সে তেমন চলে জায়েজ না জায়েজ হালাল হারাম কোনো কিছুই সে মানে না আমি কোনো অধিকার খাটাতে গেলে সে বলে আমার উপরে কোনো অধিকার খাটাতে আসবেন না এবং তার মা বাবা আমার কাছে তাকে আসতে নিষেধ করেছে এখন সে আমার কাছে আসবে না এক কথায় সে আমার অবাধ্য এখন আমার কি করার আছে একটু বিস্তারিত জানাবেন,

১ নভেম্বর, ২০২৩

X৭X৫+R২৫

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


সম্মনিত প্রশ্নকারী!
আপনি নিচের ধারাবাহিক পরামর্শগুলো গ্রহন করুন। তবে সেক্ষেত্রে কিছুতেই বাড়াবাড়ী কিংবা সীমাতিরিক্ত করাবেন না।
#পরামর্শ
নারীদের মধ্যে কোনো ক্ষেত্রে বক্রতা বা অবাধ্যতা থাকলেই যে তাকে প্রত্যাখ্যান করতে হবে বা মন চায় মতো তাকে শাস্তি দিতে হবে, এমন নয়; বরং তার মধ্যে অনেক ভাল গুণও আছে। কোন বিষয় হয়তো আপনি অপছন্দ করছেন কিন্তু তাতেই রয়েছে আপনার জন্য প্রভূত কল্যাণ যা আপনি জানেনই না। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেছেন,
وَعَاشِرُوهُنَّ بِٱلۡمَعۡرُوفِۚ فَإِن كَرِهۡتُمُوهُنَّ فَعَسَىٰٓ أَن تَكۡرَهُواْ شَيۡ‍ٔٗا وَيَجۡعَلَ ٱللَّهُ فِيهِ خَيۡرٗا كَثِيرٗا [النساء: ١٩]
আর তোমরা তাদের সাথে সদ্ভাবে বসবাস কর। আর যদি তোমরা তাদেরকে অপছন্দ কর, তবে এমনও হতে পারে যে, তোমরা কোন কিছুকে অপছন্দ করছ আর আল্লাহ তাতে অনেক কল্যাণ রাখবেন। [সূরা আন-নিসা: ১৯]

স্ত্রীর নিকট থেকে কোনো বিরোধিতা বা অপছন্দনীয় বিষয় প্রকাশ পেলে দ্রুত তাকে উপদেশ দিবে নসীহত করবে। আল্লাহর কথা স্মরণ করাবে, তাঁর শাস্তির ভয় দেখাবে। তার আবধ্যতা ও গোঁড়ামীর পরিণতি যে ভয়াবহ সে সম্পর্কে সতর্ক করবে। কিন্তু এরপরও যদি স্ত্রীর মধ্যে অবাধ্যতা, হঠকারিতা ও অসৎ চরিত্র লক্ষ্য করা যায়, তবে তার বিরুদ্ধে শাস্তি মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রেও সীমারেখা রয়েছে যা লঙ্ঘন করা থেকে সাবধান থাকতে হবে। কুরআনুল কারীম এবং সুন্নাতে নববীতে এর একটি সীমারেখা নির্ধারণ করা হয়েছে। মহান আল্লাহ্‌ বলেন,
ٱلرِّجَالُ قَوَّٰمُونَ عَلَى ٱلنِّسَآءِ بِمَا فَضَّلَ ٱللَّهُ بَعۡضَهُمۡ عَلَىٰ بَعۡضٖ وَبِمَآ أَنفَقُواْ مِنۡ أَمۡوَٰلِهِمۡۚ فَٱلصَّٰلِحَٰتُ قَٰنِتَٰتٌ حَٰفِظَٰتٞ لِّلۡغَيۡبِ بِمَا حَفِظَ ٱللَّهُۚ وَٱلَّٰتِي تَخَافُونَ نُشُوزَهُنَّ فَعِظُوهُنَّ وَٱهۡجُرُوهُنَّ فِي ٱلۡمَضَاجِعِ وَٱضۡرِبُوهُنَّۖ فَإِنۡ أَطَعۡنَكُمۡ فَلَا تَبۡغُواْ عَلَيۡهِنَّ سَبِيلًاۗ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ عَلِيّٗا كَبِيرٗا ٣٤ [النساء: ٣٤]
পুরুষরা নারীদের তত্ত্বাবধায়ক, এ কারণে যে, আল্লাহ তাদের একের উপর অন্যকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন এবং যেহেতু তারা নিজদের সম্পদ থেকে ব্যয় করে। সুতরাং পুণ্যবতী নারীরা অনুগত, তারা লোকচক্ষুর অন্তরালে হিফাজতকারিনী ঐ বিষয়ের যা আল্লাহ হিফাজত করেছেন। আর তোমরা যাদের অবাধ্যতার আশঙ্কা কর তাদেরকে সদুপদেশ দাও, বিছানায় তাদেরকে ত্যাগ কর এবং তাদেরকে (মৃদু) প্রহার কর। এরপর যদি তারা তোমাদের আনুগত্য করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কোনো পথ অনুসন্ধান করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সমুন্নত মহান। [সূরা আন-নিসা: ৩৪]

এই আয়াতে অবাধ্য স্ত্রীকে সংশোধন করার জন্য যে নীতিমালা প্রদান করা হয়েছে তা নিম্নরূপ: প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে উপদেশ দেওয়া : এ সম্পর্কে পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে যে, তাকে ভদ্র ও নম্রভাবে বুঝাতে হবে, বিরোধীতা ও হঠকারিতার পরিণাম সম্পর্কে জ্ঞান দান করতে হবে। স্বামী যে সত্য সত্যই স্ত্রীর কল্যাণকামী এ বিষয়টি যেন তার কাছে প্রকাশ পায় এমন ভাষা ব্যবহার করতে হবে। রাগতঃ ভাষায় কর্কষ কন্ঠের কথা কখনো উপদেশ হতে পারে না। স্ত্রীকে সংশোধন করার জন্য কখনই কঠিন ও শক্ত ভাষা ব্যবহার করে উপদেশ দেয়ার চেষ্টা করবেন না। কেননা অন্যায়কে অন্যায় দিয়ে প্রতিহত করা যায় না।

দ্বিতীয় পদক্ষেপ- বিছানায় পরিত্যাগ করা ।
একই বিছানায় তার থেকে আলাদাভাবে শয়ন করা। এমন কথা নয় যে, তাকে ঘরের বাইরে রাখা বা অন্য ঘরে রাখা বা পিতা-মাতার বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ আয়াতে নির্দেশিত বিছানায় পরিত্যাগ করারব্যাখ্যায় বলেছেন,

عَنْ حَكِيمِ بْنِ مُعَاوِيَةَ الْقُشَيْرِيِّ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، مَا حَقُّ زَوْجَةِ أَحَدِنَا عَلَيْهِ؟، قَالَ: «أَنْ تُطْعِمَهَا إِذَا طَعِمْتَ، وَتَكْسُوَهَا إِذَا اكْتَسَيْتَ، أَوِ اكْتَسَبْتَ، وَلَا تَضْرِبِ الْوَجْهَ، وَلَا تُقَبِّحْ، وَلَا تَهْجُرْ إِلَّا فِي الْبَيْتِ»

হাকীম ইবন মুআবিয়া রহ. তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করি, ইয়া রাসূলুল্লাহ্! স্বামীদের উপর স্ত্রীদের কী হক? তিনি বলেন, “যা সে খাবে তাকেও (স্ত্রী) খাওয়াবে, আর সে যা পরিধান করবে তাকেও তা পরিধান করাবে। আর তার (স্ত্রীর) চেহারার উপর মারবে না এবং তাকে গালাগাল করবে না। আর তাকে ঘর হতে বের করে দিবে না। [আবু দাউদ: হাদীস নং ২১৪২।]

বিছানায় আলাদা করে রাখার অর্থ সম্পর্কে আবদুল্লাহ্‌ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, তার সাথে তার বিছানাতেই শুইবে কিন্তু তারসাথে সহবাস করবে না। তার দিকে পিঠ ঘুরিয়ে শয়ন করবে। অন্য বর্ণনা মতে ইবনু আব্বাস বলেন, তার সাথে স্বাভাবিক কথা ছাড়া আর কিছু বলবে না। [তাফসীর ইবন কাসীর, সূরা নিসার ৩৪ নং আয়াতের তাফসীর।]

ইমাম কুরতুবী এই পদক্ষেপের উপকারিতা সম্পর্কে বলেন, স্বামীর প্রতি যদি স্ত্রীর ভালোবাসা থাকে তাহলে এ অবস্থা তার কাছে খুবই অসহনীয়ও কষ্টকর হবে, ফলে সে সংশোধন হবে। কিন্তু ভালোবাসায় ত্রুটি থাকলে বা মনে ঘৃণা থাকলে নিজ অবাধ্যতার উপর সে অটল থাকবে-সংশোধনের পথে অগ্রসর হবে না। [তাফসীরে কুরতুবী, সূরা নিসার ৩৪ নং আয়াতের তাফসীর।]
সংশোধনের এই দ্বিতীয় নীতি ফলপ্রসু না হলে তৃতীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। আর তা হচ্ছে-

তৃতীয় পদক্ষেপ - মৃদু প্রহার করা ।এটি হচ্ছে নিজের পক্ষ থেকে শাসনের সর্বশেষ পর্যায়। আল্লাহ্‌ বলেন ,وَاضْرِبُوهُنَّ এবং তাদেরকে প্রহার করবে। এর তাফসীরে হাফেয ইবন কাসীর [রহ.] বলেন, যদি উপদেশ প্রদান ও আলাদা রাখার পরও কোনো কাজ না হয়, স্ত্রীগণ সংশোধনের পথে ফিরে না আসে, তবে হালকা করে তাদেরকে প্রহার করবে। জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বিদায় হজের ঐতিহাসিক ভাষণে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«فَاتَّقُوا اللهَ فِي النِّسَاءِ، فَإِنَّكُمْ أَخَذْتُمُوهُنَّ بِأَمَانِ اللهِ، وَاسْتَحْلَلْتُمْ فُرُوجَهُنَّ بِكَلِمَةِ اللهِ، وَلَكُمْ عَلَيْهِنَّ أَنْ لَا يُوطِئْنَ فُرُشَكُمْ أَحَدًا تَكْرَهُونَهُ، فَإِنْ فَعَلْنَ ذَلِكَ فَاضْرِبُوهُنَّ ضَرْبًا غَيْرَ مُبَرِّحٍ، وَلَهُنَّ عَلَيْكُمْ رِزْقُهُنَّ وَكِسْوَتُهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ»

তোমরা স্ত্রীদের ব্যাপারে আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর। কেননা আল্লাহর আমানতে তোমরা তাদেরকে গ্রহণ করেছ। আল্লাহর বাণী সাক্ষী রেখে তোমরা তাদের সাথে সহবাস করা বৈধ করেছো। তাদের উপর তোমাদের অধিকার হচ্ছে, তারা তোমাদের গৃহে এমন লোককে প্রবেশ করতে দিবে না যাকে তোমরা পছন্দ কর না। কিন্তু তারা যদি নির্দেশ লঙ্ঘন করে এরূপ করে ফেলে তবে, তাদেরকে প্রহার কর। কিন্তু প্রহার যেন কঠিন ও কষ্টদায়ক না হয়। তোমাদের উপর তাদের অধিকার হচ্ছে, তোমরা সঠিকভাবে নিয়ম মাফিক তাদের খানা-পিনা ও কাপড়ের ব্যবস্থা করবে। [মুসলিম, হাদীস নং ১২১৮।]

হাসান বাসরী [রহ.] এই প্রহারের ব্যাখ্যায় বলেন, প্রহার যেন এমন না হয় যার কারণে শরীরে কোন চিহ্ন দেখা যায় বা শরীর ফুলে-ফুটে যায়। আত্বা [রহ.] বলেন, ইবন আব্বাসকে প্রশ্ন করা হল, উক্ত প্রহার কিরূপ হবে? তিনি বললেন, মেসওয়াক বা অনুরূপ বস্তু দ্বারা প্রহার হতে হবে। (তাফসীরে কুরতুবী)। অন্য হাদীসে প্রহারের ক্ষেত্রে হালকাভাবে হলেও মুখমন্ডলে প্রহার করতে নিষেধ করা হয়েছে।

’মুজামে তাবরানিতে এসেছে- ‘এমনভাবে হালকা প্রহার করবে, যাতে শরীরে কোনো যখম বা আঘাত না হয় এবং মুখে ও লজ্জাস্থানে কখনো প্রহার করবে না।’এখানে প্রহার বলতে হালকা প্রহারের কথা বলা হয়েছে। যাতে শরীরে কোনো ধরনের জখম বা আঘাতের চিহ্ন না পড়ে। আবার মুখ এবং লজ্জাস্থানে কোনোভাবেই প্রহার করা যাবে না।

চতুর্থ পদক্ষেপ- উভয় পক্ষের সালিশ বসানো।
উল্লিখিত দুটি উপায়ে গ্রহণ করার পরও যদি কোনো কাজ না হয় তবে ইসলামের নির্দেশনা হলো- উভয় পক্ষ থেকে এক বা একাধিক সালিসের মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার সমস্যা নিরসনের চেষ্টা করা। আল্লাহ তাআলা বলেন-‘যদি তাদের মধ্যে সম্পর্কচ্ছেদ হওয়ার মত পরিস্থিতিরই আশঙ্কা কর, তবে স্বামীর পরিবার থেকে একজন এবং স্ত্রীর পরিবার থেকে একজন সালিস নিযুক্ত করবে। তারা উভয়ে মীমাংসা চাইলে আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সবকিছু অবহিত।’ (সুরা নিসা : আয়াত ৩৫)

সুতরাং উত্তেজিত বা আক্রোশবশত কোনোভাবেই স্ত্রীর প্রতি অমানবিক আচরণ বা অবিচার করা যাবে না। কুরআনুল কারিমের নির্দেশনা মোতাবেক আচরণেই স্ত্রীরা অবাধ্যতা থেকে ফিরে আসতে বাধ্য। আর তাতে দাম্পত্য জীবন হয়ে ওঠবে সুখ ও শান্তিময়।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে অবাধ্য স্ত্রীদের সঙ্গে সুন্দর-সুসম্পর্ক বজায় রেখে উত্তম জীবন-যাপন করার তাওফিক দান করুন। কুরআনের দিকনির্দেশনা মোতাবেক স্ত্রীর সঙ্গে স্বামীদের উত্তম আচরণ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি
বাইতুল কুরআন মাদারাসা , মোহাম্মাদপুর

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

৬৯৪২৮

সন্দেহযুক্ত/ হারাম টাকায় নির্মিত মসজিদে নামাযের বিধান কি?


২৪ নভেম্বর, ২০২৪

ঢাকা

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী

৭৭৫০৭

ভুয়া/জাল সার্টিফিকেট দেখিয়ে চাকুরী নেয়া যাবে? নিলে ইনকাম হালাল হবে?


৩ নভেম্বর, ২০২৪

ঢাকা

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী

৭১৪৮১

মানুষের কঙ্কাল বিক্রি করার বিধান


২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

নারায়ণগঞ্জ ১৩৬১

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী সিরাজুল ইসলাম

৯১০৫৯

মৃত্যুর পর কি শরীর এর কোনো অঙ্গ মানুষকে দান করা যাবে


২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

Sylhet ৩১০০

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy