আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

মাগরিবের আগে বয়ান

প্রশ্নঃ ১৭২৮. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, ক) কিছুদিন আগে আমাদের মসজিদে মাগরিব নামাযের আযান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ে মসজিদের অস্থায়ী ইমাম মাইকে বয়ান আরম্ভ করেন। যা ইতিপূর্বে করা হয়নি। তাই জানতে চাই, এই সময় বয়ান করা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবা-তাবেয়ীন থেকে প্রমাণিত আছে কি? খ) উক্ত সময় ইমাম সাহেবের বয়ানের বিষয়ে চার মাযহাবের বিধান কী? মাগরিবের নামাযে কোনো কোনো মাযহাবে আযানের পর ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ে নামায পড়ার বিধান আছে। তাই কেউ নামায পড়বে কেউ ইমামের বয়ান শুনবে। এক্ষেত্রে ইমাম সকল মাযহাবের মুসল্লি নিয়ে নামায কীভাবে পড়বেন? ,

২০ জানুয়ারী, ২০২৫

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


ক) ওয়ায-নসীহতদ্বীনী বয়ান ও মাসআলা-মাসাইলের আলোচনা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মুসল্লিগণকে দ্বীনী কথাবার্তা ও প্রয়োজনীয় মাসআলা-মাসাইলের তালিম দেওয়া একজন ইমামের মৌলিক দায়িত্ব। তবে ওয়ায-নসীহতবয়ান ইত্যাদির জন্য মাগরিবের আযান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়টি উপযুক্ত সময় নয়। কেননা মাগরিবের আযান ও ইকামতের মাঝে স্বল্প বিরতি থাকে। যা নামাযের প্রস্তুতির জন্যই প্রয়োজন। এছাড়া এত অল্প সময়ে বয়ানে বা মাসআলার উপস্থাপনায় মুসল্লিদের কাছে অনেক বিষয় অস্পষ্ট থেকে যেতে পারে। দ্বিতীয়ত আযান-ইকামতের মধ্যবর্তী এ সময়টি হাদীসের নির্দেশনা অনুযায়ী দুআ কবুলের সময়। তাই এ সময় ওয়ায করা বা মাসআলা বলার জন্য উত্তম সময় নয়। অবশ্য ইমাম চাইলে কোনো দিন প্রয়োজনে এ সময়ও কোনো বিষয় বা মাসআলা আলোচনা করতে পারেন। কেননা এ সময় অল্পস্বল্প কিছু বলা তো নিষিদ্ধ নয়। তাই কোনো দিন এ সময় আলোচনা করতে চাইলে জামাতের নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বেই আলোচনা শেষ করে দেওয়া উচিত হবে। আর সংক্ষিপ্ত এ সময়ে দুর্বোধ্য ও জটিল কোনো মাসআলা বা বিষয়ের আলোচনা করা থেকেও বিরত থাকতে হবে। জটিল কোনো বিষয়ের আলোচনা করা জরুরি হলে তা ভিন্ন কোনো সময়ে করবে।

খ) মাগরিবের আযান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ে নফল নামায পড়া সুন্নত বা মুস্তাহাব নয়। তবে তা জায়েয আছে। খোলাফায়ে রাশেদীনসহ সাহাবায়ে কেরামের অনেকেই এ সময় কোনো নামায পড়তেন না।

যেমন সুনানে আবু দাউদে বর্ণিত আছে যেআবদুল্লাহ ইবনে উমর রা.কে মাগরিবের ফরযের পূর্বে দুই রাকাত নামায পড়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেনআমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে কাউকে উক্ত নামায পড়তে দেখিনি। -সুনানে আবু দাউদহাদীস : ১২৭৮

মুসান্নাফে আবদুর রাযযাকে সায়ীদ ইবনুল মুসায়্যিব রাহ. থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন,মুহাজির সাহাবীগণ মাগরিবের আগে দুই রাকাত নামায পড়তেন না। আর আনসারী সাহাবীগণ তা পড়তেন। -মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক,হাদীস : ৩৯৮৪

ইবরাহীম নাখায়ী রাহ. বলেন,আবু বকর,উমর ও উসমান রা. মাগরিবের পূর্বে দুই রাকাত নামায পড়তেন না।-মুসান্নাফে আবদুর রাযযাকহাদীস : ৩৯৮৫

হাম্মাদ ইবনে আবী সুলাইমান থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন,আমি ইবরাহীম নাখায়ী রাহ.-কে মাগরিবের পূর্বে নফল নামায সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি আমাকে তা পড়তে নিষেধ করলেন এবং বললেন,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং আবু বকর ও উমর রা. তা পড়েননি। -কিতাবুল আছার ১/১৬৩

সুতরাং খোলাফায়ে রাশেদীনসহ সাহাবায়ে কেরামের অনেকেই যেহেতু এ সময় কোনো নফল নামায পড়তেন না এবং এ সময়ের নফল নামাযের বিশেষ কোনো ফযীলতও হাদীসে বর্ণিত নেইঅন্যদিকে মাগরিবের নামায আযানের পর বিলম্ব না করে দ্রুত আদায় করার কথা অন্যান্য হাদীসে এসেছে তাই এসব বিষয়ের উপর ভিত্তি করে হানাফী,মালেকী ও হাম্বলী মাযহাবের ফকীহগণ উক্ত দু রাকাত নফল নামাযকে সুন্নত বা মুস্তাহাব পর্যায়ের আমল হিসেবে গণ্য করেননি।

আর শাফেয়ী মাযহাবে এ ব্যাপারে দুটি মত রয়েছে। একটি মত অনুযায়ী এ সময় দু রাকাত নফল পড়া মুস্তাহাব। আর অপর মত অনুযায়ী তা জায়েয। যারা মুস্তাহাব বলেন তারা এ সংক্রান্ত একটি হাদীস দ্বারা দলিল পেশ করেন। হাদীসটি হল-

بين كل أذانين صلاة، بين كل أذانين صلاة، ثم قال في الثالثة : لمن شاء

 (অর্থ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনপ্রত্যেক আযান ও ইকামতের মাঝে নামায রয়েছে। প্রত্যেক আযান ও ইকামতের মাঝে নামায রয়েছে। অতপর তৃতীয়বার বললেনযে ব্যক্তি চায়।-সহীহ বুখারীহাদীস : ৬২৭

তবে ভিন্নমতের লোকজন বলেন যে,এটি শুধু জায়েয হওয়ার দলিল,মুস্তাহাব হওয়ার নয়।

এখন প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে যেহেতু আমাদের দেশের মুসল্লিগণ ব্যাপকভাবে হানাফী মাযহাবের অনুসারী আর সে অনুযায়ী মাগরিবের আযানের পর ফরযের পূর্বে যেহেতু নফল নামায পড়ার বিশেষ কোনো বিধানও নেই তাই ইমাম যদি একান্ত প্রয়োজনে মাগরিবের ফরযের পূর্বে কোনো আলোচনা করেন তবে তার এ আলোচনা এ সময়ের নামাযের প্রতিবন্ধক হবে না। অবশ্য কোনো মুসল্লি যদি এ সময় নফল নামাযে দাঁড়িয়ে যায় তবে তার নামাযে যেন ব্যাঘাত না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা সকলের কর্তব্য। অন্যদিকে ইমাম এ সময় কোনো আলোচনা শুরু করে দিলে তখন কারো জন্য নফলে দাঁড়ানোও উচিত নয়। -ফতহুল কাদীর ১/৩৮৮-৩৮৯আদদুররুল মুখতার ২/১৪মাওয়াহিবুল জালীল ২/৩৭০আলমুগনী ২/৫৪৬


والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ মাসিক আলকাউসার

প্রসঙ্গসমূহ:

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

৭৬০১

রেজাখানী বেরেলভী অনুসারীদের পিছনে নামাজ পড়া সহিহ হবে কি?


২৬ অক্টোবর, ২০২৩

জাফলং

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুসলিম বাংলা ইফতা বিভাগ

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy