আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

হারাম খাবার রান্না এবং পরিবেশনের কাজ করা কি জায়েজ?

প্রশ্নঃ ১৬১৬১. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আমি একজন অবিবাহিত মেয়ে। আমার বাবা মারা গেছেন। আমার পরিবারে আমার আম্মু আর আমরা তিন বোন ও এক ভাই।বড় বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। মেজো বোন পড়াশোনা করে আর আমি সবার ছোট। আমার বড় ভাই জাপানে হোটেলে কাজ করে। এখন আমার প্রশ্ন হলো আমার বড় ভাই বিদেশ থেকে যে টাকা পাঠায় তা কি হারাম। কেননা সেখানে তো অনেক হারাম পশু রান্না করা হয়, যদিও আমার ভাই এগুলো খায় না কিন্তু এগুলো ধরা লাগে রান্না করা লাগে। এখন আমার দেহ কি হারাম ভক্ষণ করে বেড়ে উঠছে? তাহলে আমি এখন কি করবো?

২০ মে, ২০২৪
নোয়াখালী

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


কুরআনুল কারিমে ইরশাদ হয়েছে,
تَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَىٰ ۖ وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ
“তোমারা কল্যাণ এবং তাকওয়ার কাজে পরস্পর সহযোগিতা করো। গুনাহ এবং সীমালঙ্ঘনের কাজে সহাযোগিতা করোনা। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে الدَّالَّ عَلَى الْخَيْرِ كَفَاعِلِهِ যে কোনো ভালো কাজের পথ দেখায় সে ওই ভালো কাজ করার সাওয়াব পায়।
মন্দ কাজ করলে মানুষ যেভাবে নিজে গুনাহগার হয় তেমনিভাবে অন্যের মন্দ কাজে সহাযোগিতার মাধ্যমেও মানুষ গুনাহগার হয়। কারো চাকুরি করা সেটাও মালিকের কর্মে বা ব্যবসায় সহযোগিতা করারই সামিল। সেই হিসেবে আপনার ভাই যদিও নিজে হারাম পশুর মাংস আহার করেন না কিন্তু তিনি হারাম ভক্ষণের সহাযোগিত করে গুনাহগান হচ্ছেন। কাজেই তার জন্য উচিত আল্লাহ তায়ালার ওপর ভরসা করে তার কর্ম পরিবর্তন করা। কেউ যদি হারাম ছেড়ে হালালের পথ বেছে নেয় এবং তা সাময়িক কোনো কষ্ট হলেও আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে তা মেনে নেয় তাহলে আল্লাহ তায়ালা তার জন্য রিজিকের অফুরন্ত ফান্ডার খুলে দিবেন। কুরআনুল কামিমের সুরা তালাকের 2 ও 3 নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন-
وَمَن يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَل لَّهُ مَخْرَجًا ويَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ ۚ وَمَن يَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ فَهُوَ حَسْبُهُ ۚ إِنَّ اللَّهَ بَالِغُ أَمْرِهِ ۚ قَدْ جَعَلَ اللَّهُ لِكُلِّ شَيْءٍ قَدْرًا

অর্থ: আর যে কেউ আল্লাহকে ভয় করবে, আল্লাহ তার জন্য সংকট থেকে উত্তরণের কোন পথ তৈরি করে দেবেন। এবং তাকে তার ধারণাতীত জায়গা থেকে রিযিক দেবেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে তার জন্যে তিনিই যথেষ্ট। আল্লাহ তার কাজ পূর্ণ করবেন। আল্লাহ সবকিছুর জন্যে একটি পরিমাণ স্থির করে রেখেছেন।
আপর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন,
وَٱلَّذِينَ جَٰهَدُواْ فِينَا لَنَهْدِيَنَّهُمْ سُبُلَنَا ۚ وَإِنَّ ٱللَّهَ لَمَعَ ٱلْمُحْسِنِينَ
অর্থ: যারা আমার পথে সাধনায় আত্মনিয়োগ করে, আমি অবশ্যই তাদেরকে আমার পথে পরিচালিত করব। নিশ্চয় আল্লাহ সৎকর্মপরায়ণদের সাথে আছেন। (সুরা আনকাবুল: আয়াত, ৬৯)

সম্মানিত প্রশ্নকারী! ওপরোক্ত আলোচনা থেকে আশা করছি আপনি আপনার প্রশ্নের ‍উত্তর পেয়ে গেছেন। সুতরাং এখন আপনাদের জন্য করণীয় হলো, আপনার ভাইকে এই পরার্মশ দেওয়া যেন তিনি তার এই পেশা পরিবর্তন করে অন্য কোনে হালাল পেশায় নিয়োজিত হোন। কেননা হারাম গ্রহনের মাধ্যমে সাময়িক সুখ থাকলেও এর ভায়াবহতা দীর্ঘস্থায়ী। আল্লাহ তায়ালা সবাইকে বুঝার তাওফিক দান করুন। আমিন।

والله اعلم بالصواب

মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি বাইতুল কুরআন মাদারাসা , মোহাম্মাদপুর
প্রসঙ্গসমূহ:

মন্তব্য (0)

কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!

মন্তব্য করতে লগইন করুন