আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

প্রশ্নঃ ১৪৫৬৫. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, কিভাবে জেনা থেকে বাচতে পারি,

২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

ঢাকা ১২০৭

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم





জেনা-ব্যভিচার হত্যাযোগ্য মারাত্মক অপরাধ। কুরআনুল কারিমে জেনা-ব্যভিচারের সুস্পষ্ট শাস্তি ঘোষণা করা হয়েছে। তা থেকে বেঁচে থাকাই আল্লাহর ফরজ নির্দেশ পালনের শামিল। আবার জেনা-ব্যভিচার সম্পর্কিত পাপ থেকে বাঁচতে যেসব উপায়ের নির্দেশ এসেছে কুরআনে তাতেও রয়েছে অনেক কল্যাণ। জেনা-ব্যভিচার থেকে বাঁচার সর্বোত্তম উপায় ও উপকারিতা১. নারী-পুরুষ অবিবাহিত হলে বিয়ে করা।২. বিবাহিত হলে স্বামী তার স্ত্রীর প্রতি এবং স্ত্রী তার স্বামীর প্রতি মনোযোগী হওয়া।

বিয়ে করা সম্ভব না হলে…১. একাকি বসবাস বা থাকা পরিহার করা।২. বেশি বেশি আল্লাহকে স্মরণ করা; তার জিকির করা।৩. জান্নাতের নেয়ামত ও জাহান্নামের শাস্তি সম্পর্কে জানা।৪. সপ্তাহিক (সোম ও বৃহস্পতিব) এবং মাসিক (আরবি মাসের ১৩, ১৪, ১৫ তারিখ) রোজা রাখা। তাতেও বিয়ে ছাড়া থাকতে কষ্ট হলে একদিন পর একদিন রোজা রাখা।৫. বিপরীত লিঙ্গে দিকে না তাকানো ও কথা বলা থেকে বিরত থাকা। অর্থাৎ নারী ইচ্ছাকৃতভাবে পুরুষের দিকে আবার পুরুষ নারীর দিকে না তাকানো। সর্বোপরি পাপ না করার জন্য মনকে দৃঢ়ভাবে স্থির করতে হবে। সব সময় আল্লাহকে ভয় করতে হবে। একান্ত নির্জনে থাকা অবস্থায় জেনা-ব্যভিচার সম্পর্কিত পাপ করার সম্ভাবনা থাকলে দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ার চেষ্টা করা।

বিয়ে করার সুফল ও উপকারিতা জেনা-ব্যভিচাররোধে বিয়ে করার বিকল্প নেই। এ ছাড়াও বিয়ে করার মধ্যে রয়েছে আরো অনেক সুফল ও উপকারিতা। তাহলো-

১. বিয়ে দ্বীন পালনের অর্ধেকপাপমুক্ত জীবন মুমিনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। তাই ইসলামে বিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এটিকে দ্বীনের অর্ধেক বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। মূলতঃ মানুষ অপরাধে সম্পৃক্ত হয় লজ্জাস্থান, মুখের কথা ও পেটে ক্ষুধার কারণে। আর একজন পুণ্যবতী নারীকে সহধর্মিণী হিসেবে পেলে ব্যক্তির অপরাধের সুযোগ কমে যায়। হাদিসে এসেছে-হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘পুণ্যবতী নারীকে স্ত্রী হিসেবে পেলে আল্লাহ তাআলা যেন তাকে দ্বীনের একটি অংশ পালনে সহায়তা করল। অতঃপর সে যেন বাকিটুকু পালনের চেষ্টা করে।’ (তাবারানি)

২. মানসিক শান্তি লাভ বিয়ের মাধ্যমে নারী-পুরুষের অন্তরের প্রশান্তি লাভ হয়। মহান আল্লাহ বলেন-‘তাঁর আরেকটি নিদর্শন হলো, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন, যেন তাদের কাছে তোমরা প্রশান্তি অনুভব করো। তিনি তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও সহমর্মিতা তৈরি করেছেন। নিশ্চয়ই এতে চিন্তাশীল জাতির জন্য অনেক নিদর্শন রয়েছে।’ (সুরা রুম : আয়াত ২১)

৩. অভাব দূর হয় বিয়েতে স্বচ্ছলতা বাড়ে। অভাব দূর হয়ে যায়। যারা অভাব-অসচ্ছলতার কারণে বিয়ে করতে সাহস পায় না, তাদেরকে বিয়ে করার মাধ্যমে অভাবমুক্ত ও স্বচ্ছলতার জীবনের ঘোষণা দিয়েছেন স্বয়ং আল্লাহ তাআলা। কুরআনুল কারিমে এসেছে-‘তোমাদের মধ্যে যারা বিয়ে করেনি; তাদের বিয়ে দিয়ে দাও, এবং তোমাদের সৎকর্মশীল দাস-দাসীদেরও, তারা অভাবগ্রস্ত হলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদের অভাবমুক্ত করবেন, আল্লাহ প্রাচুর্যময় ও সর্বজ্ঞ।’ (সুরা নুর : আয়াত ৩২)

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু তরুণ-তরুণীদের উৎসাহ দিয়ে বলতেন, ‘তোমরা বিয়ে করে আল্লাহর নির্দেশ পালন করো। তিনি তোমাদের দেওয়া অঙ্গীকারও পালন করবেন।’ (তাফসিরে ইবনে আবি হাতে)
মনে রাখা জরুরিবিয়ে শুধু জেনা-ব্যভিচার মুক্ত থাকার উপায়ই নয় বরং বিয়ের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা বান্দাকে অসংখ্য উপকারিতা ও কল্যাণ দান করেন। হাদিসের বর্ণনায় এসেছে, বিয়ে করলে ওই ব্যক্তিকে স্বচ্ছলতা দান করার আল্লাহর জিম্মায় চলে যায়। হাদিসের একাধিক বর্ণনায় আরো এসেছে-১. হজরত আবদুল্লাহ বিন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘তোমরা বিয়ের মাধ্যমে প্রাচুর্যের অনুসন্ধান করো।’ (জামিউত তাবিল)২. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তিন ব্যক্তিকে সাহায্য করা মহান আল্লাহর জিম্মায় চলে যায় বা কর্তব্য হয়ে পড়ে।প্রথমজন : আল্লাহর পথে জিহাদ পালনকারী।দ্বিতীয়জন : মুক্তিপণ আদায়ে কাজ করা চুক্তিবদ্ধ দাস এবংতৃতীয়জন ; পবিত্র জীবন-যাপনের লক্ষ্যে বিবাহকারী।’ (তিরমিজি)

সুতরাং জেনা-ব্যভিচারমুক্ত সমাজ গড়তে, এ সম্পর্কিত পাপ থেকে বেঁচে থাকতে বিবাহযোগ্য সব যুবক-যুবতিদের বিয়ের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা জরুরি। কেননা নিজেদের পার্থিব উন্নতির পেছনে জীবনের বেশির ভাগ সময় ব্যয় করে পাপাচার ও ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা তাদের বেশি।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহসহ বিশ্ববাসীকে জেনা-ব্যভিচারের মহা অভিশাপ থেকে বেঁচে থাকার উপায়গুলো মেনে চলার তাওফিক দান করুন। কুরআন-সুন্নাহর আমলে নিজেদের জীবন সাজানোর তাওফিক দান করুন। আমিন।

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ মুসলিম বাংলা ফাতওয়া বিভাগ

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

৫১১৪০

লোগো হিসেবে Caduceus এবং প্রেসক্রিপশনে Rx ব্যবহারের বিধান


৩ জুন, ২০২৪

৯M৮F+P৯২

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী হিফজুর রহমান

৩৯৭৫৩

স্বামীর পকেট থেকে টাকা নেওয়ার ব্যাপারে ইসলাম কি বলে??


১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

ঢাকা

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী আরিফুর রহমান

৩৬৮৯২

বেনামাজীর হাতের রান্না কি শুকরের মাংসের সমান?


২৭ জুলাই, ২০২৩

সিলেট

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

৪১৮৪৬

চিঠিপত্রে বা ম্যাসেজে পাঠানো সালামের জবাব


৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

নামবিহীন রাস্তা

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy