ইচ্ছাকৃতভাবে বিভিন্ন উপায়ে গর্ভপাত ঘটানো
প্রশ্নঃ ১৪৫২১. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আমার বিবির ছোট্ট দুটো বাচ্চা আছে। একজনের বয়স ৩ বছর ৬ মাস, দ্বিতীয় জনের বয়স ১ বছর ৫ মাস। এখন আবার পেটে বাচ্চা চলে আসছে। এ বাচ্চা কি নষ্ট করা যাবে? গেলে তা কতো দিনের মধ্যে করতে হবে?,
২৯ মে, ২০২৩
ঢাকা
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
গর্ভ থেকে ইচ্ছাকৃতভাবে বিভিন্ন উপায়ে গর্ভপাত ঘটানোকে এবোরশন বলে (Abortion) বলে।
এটি জন্মনিয়ন্ত্রণের বহু পুরাতন একটি পদ্ধতি।জন্মনিয়ন্ত্রণের (Contraceptives) উপায় উপাদানের অনেক উন্নতি সত্ত্বেও আজ অবধি দুনিয়ার বিভিন্ন স্থানে এপদ্ধতি চালু আছে। এ পদ্ধতি নাজায়েয।
তবে যদি মহিলা অত্যাধিক দুর্বল হয়, যার কারণে গর্ভধারণ তার জন্য আশঙ্কাজনক হয় এবং গর্ভধারণের মেয়াদ চার মাসের কম হয়। তাহলে অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শে গর্ভপাতের অবকাশ আছে। তবে মেয়াদ চার মাসের অধিক হলে কোনোভাবেই বৈধ হবেনা।
বর্তমান সমাজে গর্ভপাত বা ভ্রুণহত্যা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ক্লিনিকের আঙিনায় ভিড় করছে অসংখ্য তরুণী! আর কতিপয় ক্লিনিকও যেন হয়ে উঠেছে শিশু হত্যার একেকটা কেন্দ্রস্থল। ব্যাক্তি বিশেষ শরঈ কারণ থাকলেও অধিকাংশ
গর্ভপাতই নষ্ট চরিত্রের ফসল। কেউ করে দারিদ্রের ভয়ে। আবার কেউ করে সমাজে ভয়ে!! ক্রমবর্ধমান এই ব্যাধি এখন সামাজিক মহামারীর আকার ধারণ করেছে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের হেদায়াত ও হেফাজত করুন।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে, ভ্রুণের বয়স যখন তেতাল্লিশ দিনের কম হয় তখন ভ্রুণ একটি রক্তপিন্ড হিসেবে মায়ের গর্ভে অবস্থান করে। তখনও তার কোনো অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দৃশ্যমান হয় না। এই অবস্থায় ভ্রুনটিকে মানুষের
শরীরের একটা অঙ্গ হিসেবে বিবেচিত হবে। আর মানুষের প্রতিটি অংশের মালিক স্বয়ং
আল্লাহ তায়ালা। কাজেই শরীরের অন্যান্য অঙ্গের ন্যায় এটিও নষ্ট করা নাজায়েজ। তবে
যদি স্তন্যদানকারিনী গর্ভবতী হয়ে দুধ বন্ধ হওয়া এবং দুগ্ধপোষ্য শিশুর প্রাণ নাশের আশঙ্কা হয় এবং গর্ভের বীর্য শুধু জমাট রক্ত
কিংবা গোশতের টুকরা আকারে থাকে এবং কোনো অঙ্গ দৃশ্যমান না হয় তাহলে চিকিৎসার মাধ্যমে
গর্ভপাত ঘটানো জায়েজ আছে। (ফতওয়ায়ে কাজিখান : ৩/৪১০)।
ভ্রুণের বয়স যখন তেতাল্লিশ দিন হয়ে যায়, তখন থেকে তার প্রয়োজনীয় অরগ্যান, যেমন ফুসফুস, নাক, হাত ও বিশেষ কিছু হাড় ইত্যাদি প্রস্তুত হওয়া শুরু হয়। অতএব তখন থেকে শুরু করে চার মাস পর্যন্ত গর্ভপাতের মাধ্যমে বা অন্য কোনো প্রক্রিয়ায় ভ্রুণটি নষ্ট করে ফেলা মাকরুহে তাহরিমি। (আদ্দুররুল মুখতার :
১০/২৫৪)।
ভ্রুনের বয়স যখন ১২০ বা চার মাস হয়ে যায়, তখন আল্লাহ তায়ালা তার মধ্যে রুহ দান
করেন। আর রুহ আসার পর বাচ্চা নষ্ট করা কোনো মানুষকে হত্যা করার শামিল। তাই এ সময় ভ্রুণহত্যা সর্বসম্মতিক্রমে হারাম। (ফতহুল আলিয়্যিল মালিক খ. ১/৩৯৯)।
আধুনিক যুগে ভ্রুণহত্যা জাহেলি যুগে কন্যাসন্তানকে
জীবন্ত সমাধিস্থ করার নামান্তর। তখন বাবা নিজ মেয়েকে গর্তে পুঁতে ফেলত; আর এখন আধুনিক যন্ত্রপাতি দ্বারা মায়ের পেটেই শিশুকে মেরে ফেলা হয়। এ দুই হত্যার মধ্যে বাহ্যত কোনো তফাত নেই। এজন্য রাসুলুল্লাহ (সা.) ভ্রুণহত্যাকে ‘গুপ্তহত্যা’ বলে উল্লেখ করেছেন। এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘স্মরণ কর ওই দিনকে, যেদিন জীবন্ত সমাধিস্থ নিষ্পাপ বাচ্চাকে জিজ্ঞেস করা হবে, তোমাকে কোন অপরাধের কারণে হত্যা করা হয়েছে?’ (সূরা তাকয়ির :৮)। অন্যত্র এরশাদ হয়েছে, ‘যে একটি জীবনকে হত্যা করা থেকে বিরত থেকেছে, সে যেন সব মানুষের জীবনকে হত্যা করা থেকে বিরত আর যে একটি আত্মাকে হত্যা করেছে, সে যেন পুরো মানবজাতিকেই হত্যা করেছে।’ (সূরা মায়েদা : ৩০)।
অনেকে মনে করেন, আগত শিশুকে লালনপালন করা তার পক্ষে সম্ভব হবে না। এই ভয়ে ভ্রুণ মেরে ফেলেন। এ কাজটি নিতান্তই নিন্দনীয় ও বোকামি। কেননা যিনি তার বান্দাকে এত যত করে সৃষ্টি করেছেন, তিনি তার রিজিকেরও ব্যবস্থা করবেন। আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, ‘তোমরা তোমাদের সন্তানকে দরিদ্রের ভয়ে হত্যা করো না। আমরা তোমাকে এবং তোমার সন্তানকে দেখেশুনে রাখি। তাই তাদের হত্যা করা সত্যিকার অর্থেই একটি মহাপাপ।’ (সূরা ইসরা : ৩২)।
তবে হ্যাঁ, গর্ভপাত না করলে যদি মায়ের প্রাণ হুমকির মুখে থাকে, তাহলে গর্ভপাত করতে কোনো বাধা নেই। ফিকহ শাস্ত্রমতে, দুটি মন্দ জিনিসের মধ্যে যেটি কম মন্দ, তাকে বেছে নেওয়া উত্তম। এক্ষেত্রে গর্ভপাতকেই কম মন্দ মনে করা হয়। কেননা মা যদি মারা যায়, তাহলে মা ও ভ্রুণ
উভয়েই ক্ষতিগ্রস্ত হলো। আর গর্ভপাত করলে মায়ের জীবনটা বেঁচে যাবে। তাছাড়া মায়ের
জীবন আগে থেকেই প্রতিষ্ঠিত। তিনি পরিবারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। মায়ের অন্যান্য
দায়িত্বও আছে। এসব দিক বিবেচনা করে অপারগ অবস্থায় গর্ভপাত করাকে বৈধতা দিয়েছে
ইসলাম।
সম্মানিত প্রশ্নকারী এই বিস্তারিত আলোচনা থেকে আশা করছি আপনি আপনার উত্তর পেয়ে গেছেন।
والله اعلم بالصواب
বাইতুল কুরআন মাদারাসা , মোহাম্মাদপুর
মন্তব্য (০)
কোনো মন্তব্য নেই।
এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর
১৮৫২৪
১৭ মে, ২০২২
ঢাকা

উত্তর দিয়েছেনঃ মোহাম্মদ আমীর হোসাইন, মুফতি ও মুহাদ্দীস,
১৮৯৯১
কর্মজীবি নারীর ইদ্দত পালন কিভাবে হবে?
১ নভেম্বর, ২০২৩
খুলনা

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী মুহাম্মাদ রাশেদুল ইসলাম
১৬৪২৮
৮ এপ্রিল, ২০২২
গোপালগঞ্জ

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি
১৬৪৮৪
১১ এপ্রিল, ২০২২
শংকরচন্দ্র

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি
সাম্প্রতিক প্রশ্নোত্তর
মাসায়েল-এর বিষয়াদি
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে