আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

মেয়েদের ইসলামী সঙ্গীত

প্রশ্নঃ ১৪২৩৯. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, ইসলামে গান বাজনা হারাম এটা জানি। কিন্তু অনেক গজল আছে, মেয়েরা গায়, সারাবিশ্বে শোনে। মেয়েদেরও তো কন্ঠের পর্দা আছে। ছেলেরা কি মেয়েদের গাওয়া এসব গজল শুনতে পারবে? বা ছেলেরা যেসব গজল গায়, অনেক সুন্দর কন্ঠ। এখানেও তো নফ্স থেকে খারাপ করে ভাবা শুরু করতে পারে, যেমন ইস আমি যদি এমন একজনকে পেতাম, এত সুন্দর কন্ঠ! তো, মেয়েদের জন্য কি ছেলেদের এসব গজল শোনা জায়েজ হবে? আর একটা বিষয়, অনেক গজলেই বাজনা ব্যবহার করে। বলে দফ এর ব্যবহার নাকি হালাল। এসব কি শোনা যাবে? দফ নামক বাদ্যযন্ত্র কি হালাল?,

১৭ অক্টোবর, ২০২৪

টঙ্গী

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


প্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ে বা প্রাপ্ত বয়স্ক হবার নিকটবর্তী মেয়েদের পরপরুষের সামনে গজল গাওয়া যেমন জায়েজ নেই, তেমনি গায়রে মাহরাম কারো জন্য এসব মেয়েদের গজল শোনাও জায়েজ নয়।

يَا نِسَاءَ النَّبِيِّ لَسْتُنَّ كَأَحَدٍ مِّنَ النِّسَاءِ ۚ إِنِ اتَّقَيْتُنَّ فَلَا تَخْضَعْنَ بِالْقَوْلِ فَيَطْمَعَ الَّذِي فِي قَلْبِهِ مَرَضٌ وَقُلْنَ قَوْلًا مَّعْرُوفًا [٣٣:٣٢

হে নবী পত্নীগণ! তোমরা অন্য নারীদের মত নও;যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর,তবে পরপুরুষের সাথে কোমল ও আকর্ষনীয় ভঙ্গিতে কথা বলো না,ফলে সেই ব্যক্তি কুবাসনা করে,যার অন্তরে ব্যাধি রয়েছে, তারা তোমাদের প্রতি আকৃষ্ট হবে। বরং তোমরা সঙ্গত কথাবার্তা বলবে। [সূরা আহযাব-৩২]

وَاسْتَفْتَتْهُ جَارِيَةٌ شَابَّةٌ مِنْ خَثْعَمٍ، فَقَالَتْ: إِنَّ أَبِي شَيْخٌ كَبِيرٌ قَدْ أَدْرَكَتْهُ فَرِيضَةُ اللهِ فِي الحَجِّ، أَفَيُجْزِئُ أَنْ أَحُجَّ عَنْهُ؟ قَالَ: حُجِّي عَنْ أَبِيكِ. قَالَ: وَلَوَى عُنُقَ الفَضْلِ، فَقَالَ العَبَّاسُ: يَا رَسُولَ اللهِ، لِمَ لَوَيْتَ عُنُقَ ابْنِ عَمِّكَ؟ قَالَ: رَأَيْتُ شَابًّا وَشَابَّةً فَلَمْ آمَنِ الشَّيْطَانَ عَلَيْهِمَا.

(হযরত আলী রাঃ থেকে বর্ণিত একটি দীর্ঘ হাদীসের একাংশে এসেছে) এরকম সময় তাকে [রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে] খাসআম গোত্রের এক যুবতী ফাতাওয়া জিজ্ঞাসা করল, আমার বাবা খুবই বয়স্ক ব্যক্তি। আল্লাহ্ তা’আলার নির্ধারিত হাজ্জ তার উপর ফরয হয়েছে। তার পক্ষ হতে আমি হাজ্জ আদায় করলে সেটা কি তার জন্য যথেষ্ট হবে? তিনি বললেনঃ তোমার বাবার পক্ষ হতে হাজ আদায় কর। আলী (রাঃ) বলেন, তিনি এমন সময় ফাযলের ঘাড় অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিলেন। আব্বাস (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার চাচাতো ভাইয়ের ঘাড় কেন ঘুরিয়ে দিলেন? তিনি বললেনঃ আমি লক্ষ্য করলাম এরা দুইজন যুবক-যুবতী। সুতরাং তাদেরকে আমি শাইতান হতে নিরাপদ মনে করিনি। [সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-৮৮৫, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৫৬২]

قوله: “إن صوتها عورة” هو ما في النوازل وجرى عليه في المحيط والكافي حيث عللا عدم جهرها بالتلبية بأن صوتها عورة قال في الفتح وعلى هذا لو قيل إذا جهرت بالقراءة في الصلاة فسدت كان متجها لكن قال ابن أمير حاج الأشبه أنه ليس بعورة وإنما يؤدي إلى الفتنة واعتمده في النهر أفاده السيد وظاهر هذا ان الخلاف في الجهر بالصوت فقط لا في تمطيطه وتليينه وهو ينافي ما قاله المصنف (حاشية الطحطاوى على مراقى الفلاح-242)

إذَا قُلْنَا صَوْتُ الْمَرْأَةِ عَوْرَةٌ أَنَّا نُرِيدُ بِذَلِكَ كَلَامَهَا؛ لِأَنَّ ذَلِكَ لَيْسَ بِصَحِيحٍ فَإِنَّا نُجِيزُ الْكَلَامَ مَعَ النِّسَاءِ الْأَجَانِبِ وَمُحَاوَرَتِهِنَّ عِنْدَ الْحَاجَةِ إلَى ذَلِكَ وَلَا نُجِيزُ لَهُنَّ رَفْعَ أَصْوَاتِهِنَّ وَلَا تَمْطِيطَهَا وَلَا تَلْيِينَهَا وَتَقْطِيعَهَا لِمَا فِي ذَلِكَ مِنْ اسْتِمَالَةِ الرِّجَالِ إلَيْهِنَّ وَتَحْرِيكِ الشَّهَوَاتِ مِنْهُمْ وَمِنْ هَذَا لَمْ يَجُزْ أَنْ تُؤَذِّنَ الْمَرْأَةُ. اهـ. (رد المحتار، كتاب الصلاة، باب شروط الصلاة، مطلب فى ستر العورة-1/406، منحة الخالق على البحر الرائق، كتاب الصلاة، باب شروط الصلاة-1/285



দফ-এর এক পাশ খোলা থাকে। বাজালে ঢ্যাব ঢ্যাব আওয়াজ হয়। প্লাস্টিকের গামলা বাজালে যেমন আওয়াজ হবে তেমন। আসলে দফ কোনো বাদ্যযন্ত্রের পর্যায়ে পড়ে না।

আওনুল বারী গ্রন্থে দফ-এর পরিচয় দিতে গিয়ে লেখা হয়েছে যে, এর আওয়াজ স্পষ্ট ও চিকন নয় এবং সুরেলা ও আনন্দদায়কও নয়। কোনো দফ-এর আওয়াজ যদি চিকন ও আকর্ষণীয় হয় তখন তা আর দফ থাকবে না; বাদ্যযন্ত্রে পরিণত হবে।-আওনুল বারী ২/৩৫৭

আর দফ-এর মধ্যে যখন বাদ্যযন্ত্রের বৈশিষ্ট্য এসে যাবে তখন তা সর্বসম্মতিক্রমে নাজায়েয বলে পরিগণিত হবে।-মিরকাত ৬/২১০

দফ বাজানোর বিধান সম্পর্কে উলামায়ে কেরামদের মাঝে মতবিরোধ রয়েছে।
কিছু উলামায়ে কেরামগন পুরোপুরি জায়েজ বলেন,কিছু উলামায়ে কেরাম শুধু মাত্র বিবাহের অনুষ্ঠান উপলক্ষে জায়েজ বলেন।

কিছু উলামায়ে কেরামগন নিষেধ করেন।

হাদীস শরীফে এসেছেঃ
আব্দুল্লাহ ইবন আমর রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
أَنَّ نَبِيَّ اللَّهِ ﷺ نَهَى عَنِ الْخَمْرِ وَالْمَيْسِرِ وَالْكُوبَةِ وَالْغُبَيْرَاءِ وَقَالَ كُلُّ مُسْكِرٍ حَرَامٌ
রাসূলুল্লাহ ﷺ শরাব পান করতে, জুয়া খেলতে, ঢোল বা তবলা বাজাতে এবং ঘরের তৈরী শরাব পান করতে নিষেধ করেছেন। আর বলেছেন, প্রত্যেক নেশা সৃষ্টিকারী বস্তুই হারাম। (আবু দাউদ ৩৬৪৪)

সাহল ইবন সা’দ রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,

سَيَكُوْنُ فِيْ آخِرِ الزَّمَانِ خَسْفٌ وَقَذْفٌ وَمَسْخٌ ، قِيْلَ: وَمَتَى ذَلِكَ يَا رَسُوْلَ اللهِ ؟ قَالَ: إِذَا ظَهَرَتِ الْمَعَازِفُ وَالْقَيْنَاتُ

অচিরেই শেষ যুগে দেখা দিবে ভূমি ধস, নিক্ষেপ ও বিকৃতি। রাসূলুল্লাহ ﷺ কে জিজ্ঞাসা করা হলো, হে আল্লাহ্’র রাসূল! তা কখন? তিনি বললেন, যখন বাদ্যযন্ত্র ও গায়ক-গায়িকারা বেশি হারে প্রকাশ পাবে। (ইবনু মাজাহ্ ২/১৩৫০)

বুখারী শরীফের এক হাদীসে এসেছে যে আমার উম্মতের মধ্যে কিছু লোক এমন আসিবে,যারা যেনা,রেশম,মদ,গান বাজনাকে হালাল আখ্যায়িত করবে।

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّهُ قَالَ: «الدُّفُّ حَرَامٌ، وَالْكُوبَةُ حَرَامٌ، وَالْمِزْمَارُ حَرَامٌ
হযরত আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, দফ হারাম। বাদ্যযন্ত্র হারাম। মদের পেয়ালা হারাম। বাঁশী হারাম। [সুনানে সুগরা লিলবায়হাকী, হাদীস নং-৩৩৫৯, সুনানে কুরবা লিলবায়হাকী, হাদীস নং-২১০০০
বাইহাকী ১০/২২২)]

এসব হাদীসের উপর ভিত্তি করে কিছু উলামায়ে কেরামগন বলেছেন যে সতর্কতামূলক দফ বাজানো সম্পুর্ন নিষেধ।

★ তবে হানাফী অনেক উলামায়ে কেরামগন উলামায়ে কেরামগন বিবাহের ক্ষেত্রে দফ বাজানো জায়েজ বলে থাকেন।
তবে কেহ কেহ মতবিরোধও করেছেন।

হাদীস শরীফে এসেছে
وَعَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ : قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ : «أَعْلِنُوا هٰذَا النِّكَاحَ وَاجْعَلُوهُ فِى الْمَسَاجِدِ وَاضْرِبُوا عَلَيْهِ بِالدُّفُوفِ»
আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা বিবাহকার্য প্রকাশ্য ঘোষণার মাধ্যমে মসজিদে সম্পন্ন কর এবং তাতে দফ বাজাও।
তিরমিযী ১০৮৯, ইবনু মাজাহ ১৮৯৫, য‘ঈফাহ্ ৯৭৮, য‘ঈফ আল জামি‘ ৯৬৬।
,
أَخْبَرَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ، قَالَ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ جَعْفَرٍ، عَنْ مَعْمَرٍ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنْ عُرْوَةَ، عَنْ عَائِشَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم دَخَلَ عَلَيْهَا وَعِنْدَهَا جَارِيَتَانِ تَضْرِبَانِ بِدُفَّيْنِ فَانْتَهَرَهُمَا أَبُو بَكْرٍ فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم " دَعْهُنَّ فَإِنَّ لِكُلِّ قَوْمٍ عِيدًا "
কুতায়বা ইবনু সাইদ (রহঃ) ... আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক দিন তার কাছে গেলেন। তখন তাঁর সামনে দুইটি বালিকা দফ বাজাচ্ছিল। আবূ বকর (রাঃ) তাদের নিষেধ করলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাদের নিষেধ করো না। কেননা প্রত্যেক জাতির জন্যই একটি আনন্দ স্ফূর্তির দিন থাকে।

[সহীহ। বুখারী ৯৮৭, ৩৯৩১, মুসলিম (ইসলামিক সেন্টার) হাঃ ১৯৪০]
,
ফুকাহায়ে আহনাফগন শুধু বিবাহের ক্ষেত্রে বিবাহের এলানের জন্য দফ বাজানোকে জায়েজ বলে আখ্যা দিয়েছেন।
(ফাতাওয়ায়ে দারুল উলুম দেওবন্দ ৭/১২৫)

তবে দফে স্টিলের পাত থাকলে সেটা বাজানো জায়েজ নেই।

ফাতাওয়ায়ে শামীতে আছেঃ

و یندب اعلانہ ای اظہارہ والضمیر راجع الی النکاح بمعنی العقد لحدیث الترمذی اعلنوا ہذا النکاح واجعلوہ فی المساجد واضربوا علیہ بالدفوف (ردالمحتار کتاب النکاح ص ۳۵۹ ج ۲۔ط۔س۔ج۳ص۸)
বিবাহের ক্ষেত্রে ইলান করা মুস্তাহাব, দফ দ্বারাও সেটি ছহীহ আছে।

''(قَوْلُهُ: وَالْمَلَاهِي) كَالْمَزَامِيرِ وَالطَّبْلِ، وَإِذَا كَانَ الطَّبْلُ لِغَيْرِ اللَّهْوِ فَلَا بَأْسِ بِهِ، كَطَبْلِ الْغُزَاةِ وَالْعُرْسِ، لِمَا فِي الْأَجْنَاسِ: وَلَا بَأْسَ أَنْ يَكُونَ لَيْلَةَ الْعُرْسِ دُفٌّ يُضْرَبُ بِهِ لِيُعْلِنَ بِهِ النِّكَاحَ''۔ (٦/ ٥٥)
যার সারমর্ম হলো বিবাহের ক্ষেত্রে দফ বাজানো জায়েজ আছে।


শরীয়তের বিধান হলো দফ-এর মধ্যে যখন বাদ্যযন্ত্রের বৈশিষ্ট্য এসে যাবে তখন তা সর্বসম্মতিক্রমে নাজায়েয বলে পরিগণিত হবে।
সুতরাং সতর্কতা মূলক নাসীদ বা গানে দফ বাজানো যাবেনা।
উলামায়ে কেরামগন নিষেধ করেছেন।
والله اعلم بالصواب

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ মোহাম্মদ আমীর হোসাইন, মুফতি ও মুহাদ্দীস,
শাইখ আবু সাঈদ ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, মোহাম্মাদপুর।

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

৯০৪৯৮

ইমামের সাথে একজন /দুইজন মুকতাদী কিভাবে দাড়াবে?


২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

Bethua

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী

৯০৫১৯

মেসেঞ্জারে বিবাহ করলে‌ কি তা হয়


২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

Gazirchat

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী

৮০০৩৪

সাহাবীর নামে মায়ের অসন্তুষ্টির মিথ্যা গল্প!!


৩ ডিসেম্বর, ২০২৪

চট্টগ্রাম

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

৯০৫৮৩

ভিন্ন দেশ থেকে ৩০ রোযা রেখে বাংলাদেশে গেলে রোযা রাখতে হবে? রাখলে ৩১টা হয়ে যায়। করণীয় কি?


২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

대한민국 경기도 파주시 월롱면 통일로৬২০번길 ৮৯-৫৩ (KR)

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy