আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

প্রশ্নঃ ১৩৭৭২. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আসসালামুআলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লহি ওয়া বারকাতুহু, 1)কারো নাম উল্লেখ না করে সেই ব্যাক্তির নামে কি কোনো খারাপ কথা বলা যাবে? যেমন - যদি বলি এক ব্যাক্তি অমুক খারাপ কাজ করেছে ।*তাহলে কি তা গিবতের মধ্যে গন্য হবে? যেহেতু নাম উল্লেখ না করে সেই ব্যাক্তির নামে খারাপ মন্তব্য করা হয়েছে।2) মুখে শিস বাজানো বা তালি দাওয়া কি গুনাহ?3)প্রাণীর চিত্রাঙ্কন করা কি শিরক?

১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২২
ঢাকা

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم




১/কারো নাম,পরিচয় উল্লেখ না করলে এতে গীবত হয় না। কিন্তু উপস্থিত লোকেরা যদি বুঝতে পারে যে অমুক ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে তবে তা গীবত বলে গণ্য এবং হারাম হবে।

শরীয়তের বিধান অনুযায়ী গীবত এর সংজ্ঞাঃ

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «أَتَدْرُونَ مَا الْغِيبَةُ؟» قَالُوا: اللهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ، قَالَ: «ذِكْرُكَ أَخَاكَ بِمَا يَكْرَهُ» قِيلَ أَفَرَأَيْتَ إِنْ كَانَ فِي أَخِي مَا أَقُولُ؟ قَالَ: «إِنْ كَانَ فِيهِ مَا تَقُولُ، فَقَدِ اغْتَبْتَهُ، وَإِنْ لَمْ يَكُنْ فِيهِ فَقَدْ بَهَتَّهُ»


হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লম বলেছেনঃ তোমরা কি জান, গীবত কি? তাঁরা বললেনঃ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভাল জানেন। তিনি বললেনঃ গীবত হল তোমার ভাইয়ের সম্পর্কে এমন কিছু আলোচনা করা, যা সে অপছন্দ করে। প্রশ্ন করা হলঃ আমি যা বলেছি তা যদি আমার ভাইয়ের মধ্যে থেকে থাকে, তাহলে আপনি কি বলেন? তিনি বললেনঃ তুমি তার সম্পর্কে যা বলেছ তা যদি তার মধ্যে থাকে, তাহলেই তুমি তার গীবত করলে। আর যদি তা তার মধ্যে না থাকে, তাহলে তো তুমি তার প্রতি অপবাদ আরোপ করলে। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-২৫৮৯, ৭০, সুনানে নাসায়ী কুবরা, হাদীস নং-১১৪৫৪, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৫৭৫৮, শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-৬২৯৩, মুজামে ইবনে আসাকীর, হাদীস নং-১৪১৭, সুনানে কুবরা লিলবায়হাকী, হাদীস নং-২১১৬৩}

গীবতের দুই সুরত। এক হল গীবত করা। আর আরেক হল গীবত শোনা। উভয়ই গোনাহের কাজ।

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اجْتَنِبُوا كَثِيرًا مِّنَ الظَّنِّ إِنَّ بَعْضَ الظَّنِّ إِثْمٌ ۖ وَلَا تَجَسَّسُوا وَلَا يَغْتَب بَّعْضُكُم بَعْضًا ۚ أَيُحِبُّ أَحَدُكُمْ أَن يَأْكُلَ لَحْمَ أَخِيهِ مَيْتًا فَكَرِهْتُمُوهُ ۚ وَاتَّقُوا اللَّهَ ۚ إِنَّ اللَّهَ تَوَّابٌ رَّحِيمٌ [٤٩:١٢]

মুমিনগণ, তোমরা অনেক ধারণা থেকে বেঁচে থাক। নিশ্চয় কতক ধারণা গোনাহ। এবং গোপনীয় বিষয় সন্ধান করো না। তোমাদের কেউ যেন কারও পশ্চাতে নিন্দা না করে। তোমাদের কেউ কি তারা মৃত ভ্রাতার মাংস ভক্ষণ করা পছন্দ করবে? বস্তুতঃ তোমরা তো একে ঘৃণাই কর। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু। {সূরা হুজুরাত-১২}

وَيْلٌ لِّكُلِّ هُمَزَةٍ لُّمَزَةٍ [١٠٤:١]

প্রত্যেক পশ্চাতে ও সম্মুখে পরনিন্দাকারীর দুর্ভোগ, {সূরা হুমাজা-১}

عَنْ أَبِي سَعْدٍ، وَجَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ، قَالَا: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” الْغِيبَةُ أَشَدُّ مِنَ الزِّنَا “، قَالُوا: يَا رَسُولَ اللهِ وَكَيْفَ الْغِيبَةُ أَشَدُّ مِنَ الزِّنَا؟ قَالَ: ” إِنَّ الرَّجُلَ لَيَزْنِي فَيَتُوبُ فَيَتُوبُ اللهُ عَلَيْهِ “وَفِي رِوَايَةِ حَمْزَةَ ” فَيَتُوبُ فَيَغْفِرُ لَهُ، وَإِنَّ صَاحِبَ الْغِيبَةِ لَا يُغْفَرُ لَهُ حَتَّى يَغْفِرَهَا لَهُ صَاحِبُهُ

হযরত আবু সাঈস এবং জাবের বিন আব্দুল্লাহ রাঃ থেকে বর্ণিত। উভয়ে বলেন, রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ গীবত করা ব্যভিচার করার চেয়েও জঘন্য। সাহাবাগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! গীবত করা ব্যভিচারের চেয়ে জঘন্য হয় কি করে? রাসূল সাঃ বললেনঃ নিশ্চয় ব্যভিচারকারী ব্যভিচার করে তওবা করে থাকে, ফলে আল্লাহ তাআলা তাকে ক্ষমা করে দেন।

অন্য বর্ণনায় এসেছে, কিন্তু গীবতকারীকে ক্ষমা করা হয় না, যতক্ষণ না যার গীবত করেছে সে তাকে ক্ষমা করে। {শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-৬৩১৫, আলমুজামুল আওসাত, হাদীস নং-৬৫৯০}

★প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরত "কারো নাম উল্লেখ না করে গীবত করলে এতে গীবত হবে না। কিন্তু উপস্থিত লোকেরা যদি বুঝতে পারে যে অমুক ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে তবে তা গীবত বলে গণ্য এবং হারাম হবে।
,
তাই সর্বাবস্থায় এহেন কাজ থেকে বেঁচে থাকা উচিত।
২/হাত তালি বা শিস দেয়া কি জায়েজ আছে?
~~~~~
হাত তালি দেয়া বা করতালি দেয়া ইসলামী শরীয়তে হারাম নিসিদ্ধ কারন তা বিধর্মীদের অনুসরন। হাত তালি দেয়া মূলত কাফির মুশরিকদের বদ স্বভাব এবং অপকর্মের অন্তর্ভুক্ত। এ প্রসঙ্গে ইরশাদ হয়েছে-
وما كان صلاتهم عند البيت الا مكاء و تصدية فذوقوا العذاب بما كنتم تكفرون
অর্থ: আর কা’বা র নিকট তাদের উপাসনা বলতে শিস আর তালি বাজানো ছাড়া অন্য কোন কিছুই ছিল না। অতএব, এবার তোমরা তোমাদের কৃত কুফরীর আযাবের স্বাদ গ্রহণ করো।’”
( সূরা আনফাল ৩৫ নং আয়াত )
এ আয়াতের মধ্যে শিস দেয়া ও করতালি দেয়া কাফির মুশরিকদের উপাসনা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। নাউযুবিল্লাহ!!
এ প্রসঙ্গে সাঈদ ইবনে যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু তিনি বলেছেন, মুসলমানদেরকে মসজিদে হারাম অর্থাৎ কা’বা শরীফে নামাজ আদায় এবং অন্যান্য দ্বীনি কাজ থেকে বিরত রাখার উদ্দেশ্যে কাফির মুশরিকরা করতালি বা হাত তালি দিতো। এ অপকর্ম তারা হরহামেশাই করতো। ”
তারা যে নিকৃষ্ট সে বিষয়টা প্রকাশার্থে আলোচ্য আয়াত এ শিস ও করতালিকে উপাসনা বলা হয়েছে।
সাঈদ ইবনে যুবাইর রদ্বিয়াল্লাহু আনহু তিনি আরো বলেন, রাসুল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কা’বা শরীফ তাওয়াফ করার সময় বিধর্মী কুরাইশরা বিদ্রূপবশত শিস ও করতালি দিতো। নাউযুবিল্লাহ ! এই প্রেক্ষাপটে উক্ত আয়াত নাযিল হয়।
দলীল-
√ সমূহ তাফসীরের কিতাব।
অতএব , হাত তালি বা করতালি এবং শিস দেয়া এ অপকর্ম গুলো বিধর্মী, কাফির মুশরিকদের বদ স্বভাব এবং উপাসনার শামিল, যা বিজাতিয় রীতির অন্তর্ভুক্ত। আর ইস্লামে বিজাতীর অন্ধ অনুকরন ।
3: কোন প্রাণীর ছবি অঙ্কন করা এটা শিরক নয়, তবে এটা শক্ত কবিরা গুনাহ, যার জন্য আখেরাতে তাকে কঠিন আযাব ভোগ করতে হবে ।সুতরাং কোন প্রাণীর ছবি অঙ্কন করা থেকে বিরত থাকা জরুরি।

والله اعلم بالصواب

মোহাম্মদ আমীর হোসাইন, মুফতি ও মুহাদ্দীস, শাইখ আবু সাঈদ ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, মোহাম্মাদপুর।
প্রসঙ্গসমূহ:

মন্তব্য (0)

কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!

মন্তব্য করতে লগইন করুন