আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

প্রশ্নঃ ১৩০২১. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আমাদের সকুল ক্লাস চলাকালীন সময়ে বোরকা পরা নিষিদ্ধ। সেক্ষেত্রে কি স্কার্ফ আর মাস্ক দিয়ে পর্দা হবে?,

২৫ জানুয়ারী, ২০২২

ঢাকা

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم





নারীর চেহারাও পর্দার অন্তর্ভূক্ত। করআন সুন্নাহের অসংখ্য বর্ণনার মাধ্যমে সেটা সুপ্রমাণিত। কাজেই স্কার্ফ আর মাস্ক পরলে শরঈ পর্দা হবে না। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক বিধিনিষেধের কারণে আপনি পর্দা করতে পারছেন না সেটা ভিন্ন প্রসঙ্গ। এবং এই পরিস্থিতিতে আপনার করণীয় কি হবে সেটাও আলোচনার বিষয়। নিচের আলোচনা থেকে আশা করি আপনার করণীয় সম্পর্কে সচেতন হতে পারবেন।
***************************

বোরকা : নারীর অস্তিত্বের অধিকার
-আবু তাশরীফ
আলকাউসার: এপ্রিল-২০১২

একের পর এক স্কুলগুলোতে মেয়েদের বোরকা ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আরোপের খবর আসছে। সর্বশেষ খবর হচ্ছে, ঢাকার মিরপুর-১০ নম্বর এলাকায় মেয়েদের একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বোরকা নিষিদ্ধ করে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি হওয়ায়’ স্কুল শাখার কোনো মেয়ে বোরকা বা এ্যাপ্রন পরে স্কুলে ঢুকতে পারবে না। কেউ বোরকা পরে এলেও স্কুল গেটে তা খুলে ভেতরে ঢুকতে হবে। খবরটি ছাপা হয়েছে ২২ মার্চ প্রকাশিত একটি পত্রিকায়।

রিপোর্টারের সঙ্গে কথোপকথনে প্রতিষ্ঠানটির মহিলা প্রিন্সিপাল যেসব কথা বলেন, তার একটি অংশ এখানে তুলে ধরা হল।

তিনি বলেন, আসল ব্যাপার হল, এখানে ছাত্রীরা ভ্যারাইটিজ কালারের হিজাব বা অ্যাপ্রন পরে আসে। এতে কে ছাত্রী আর কে অভিভাবক তা বোঝা যায় না। অনেকে ইচ্ছামতো স্কুলে ঢুকে আবার বের হয়ে যায়। এতে আমাদের অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। তাই নিয়ম করা হয়েছে যে, যারা হিজাব পরে তারা স্কুলের পোশাকের রংয়ের সঙ্গে মিলিয়ে সাদা রংয়ের মাথার হিজাব বা স্কার্ফ পরতে পারবে। আর বোরকা বা অ্যাপ্রন খুলে ব্যাগে নিয়ে স্কুলের ভেতরে প্রবেশ করবে।

তিনি আরও বলেন, ড্রেসের ব্যাপারে আগেই বলা হয়েছে। তাই যারা এই ড্রেস না পরতে চায় তারা অন্য জায়গায় চলে যাক।

বোরকার কারণে ছাত্রীদের চিহ্নিত করা সমস্যা হলে আইডি কার্ড দেখে এর সমাধান করা যায় কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অনেকে আইডি কার্ড না নিয়ে স্কুলে আসে।

সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের দেশে মেয়েদের বোরকা পরার ক্ষেত্রে এই বাধা প্রদান কতটা যুক্তিসঙ্গত-এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অভিভাবকদের কিছু বলার থাকলে তারা বলুক, আমরা শুনব।

প্রায় কাছাকাছি ধরনের অজুহাত পেশ করে এর কয়েক সপ্তাহ আগে ঢাকা-উত্তরার একটি স্কুলে মেয়েদের বোরকা পরার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার খবর প্রকাশিত হয়েছে। ওই স্কুলের বোরকাপরা এক ছাত্রীকে স্কুলে গেট থেকে তখন ফেরত পাঠানো হয়েছিল। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে স্কুলটির পরিচালক ‘ড্রেসকোড’-এর দোহাই দিয়ে বলেছিলেন, আমি নিজে হাজী ও নামাযী মানুষ। কিন্তু স্কুলের ‘ড্রেসকোড’ ভেঙ্গে কোনো মেয়েকে বোরকা পরে আসার অনুমতি দিতে পারি না। কেউ যদি এই ড্রেসকোড অনুসরণ করতে না চায় তাহলে সে অন্য কোথাও চলে যাক।

এ দুটি প্রতিষ্ঠানে ড্রেসকোড বা স্কুলের পোশাকের অজুহাত পেশ করা হলেও গত ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুর দিকে ঢাকা-কামরাঙ্গিরচর-আশরাফাবাদ এলাকার একটি স্কুলে বোরকা নিষিদ্ধের সময় দোহাই দেওয়া হয়েছিল ‘ডিজিটাল যুগের’। স্কুলের পরিচালনা কমিটির সভাপতি স্থানীয় এক ‘মাদবর’ বলেছিলেন, এই ডিজিটাল যুগে বোরকা অচল। তাই স্কুলে কোনো মেয়ে বোরকা পরে আসতে পারবে না।

উপরের তিনটি স্কুলের কর্তৃপক্ষই পরবর্তী সময়ে তাদের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছে। বলা ভালো, সাধারণ ছাত্রী, ছাত্রীদের অভিভাবক এবং বিভিন্ন ইসলামী ব্যক্তিত্ব ও সংগঠনের প্রতিবাদের মুখে তারা সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছে। বোরকা ব্যবহারের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নিয়েছে। কিন্তু এক্ষেত্রে লক্ষ্য করার মতো ব্যাপারটি হচ্ছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বোরকা নিষিদ্ধ করার মতো অকল্পনীয় ও অমার্জনীয় ঘটনাগুলো বন্ধ হচ্ছে না। প্রতি মাসেই দু-একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ জাতীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। পরবর্তী সময়ে হঠকারী সিদ্ধান্তটি টেকাতে না পারলেও উদ্যোগ নিতে পিছপা হচ্ছে না সুযোগসন্ধানী মহল। প্রশ্ন জেগেছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বোরকা নিষিদ্ধ করার এই হিড়িক তৈরি হল কীভাবে?

এদেশে স্বাধীনতার পর চল্লিশ বছর পার হয়েছে। অনেক রকম যুগ ও নেতৃত্ব অতীত হয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগে এ ধরনের হঠকারিতার খবর তো এর আগে পাওয়া যায়নি। আগেও তো স্কুলগুলোর নির্ধারিত ড্রেস এবং ড্রেসকোড ছিল। তখন সমস্যা না হলে এখন সমস্যা হচ্ছে কেন? বোরকা ব্যবহার করে না কিংবা পছন্দ করে না-এমন শ্রেণীর লোক আগেও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান ছিল, এখনও আছে। আগে তারা যা করার চিন্তাও করেনি, এখন সেটিই এত অনায়াসে করার সাহস পাচ্ছে কি করে? এর উত্তর খুঁজে দেখা দরকার ঈমানদার ও দেশপ্রেমিক সব মহলের।

কেউ কেউ বলেন, সম্প্রতি উচ্চ আদালতের একটি বেঞ্চ থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বোরকা ব্যবহারে বাধ্য করা যাবে না-জাতীয় একটি সিদ্ধান্ত দানের পরই এ ঘটনাগুলো ঘটছে। আদালতের ওই সিদ্ধান্তের পর শিক্ষামন্ত্রণালয় থেকেও একই বিষয়ে আরেকটি পরিপত্র জারি করা হয়েছে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। সে পরিপত্রের বক্তব্য-ভাব বোরকার অনুকূলে না গিয়ে গিয়েছে তার বিরুদ্ধে। এ থেকেই সুযোগসন্ধানী মহল আদালত ও সরকারের নীতি নির্ধারকদের অবস্থান বোরকার বিরুদ্ধে চলে এসেছে-ধরে নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে বোরকার বিরুদ্ধে। অনেকেরই মনে পড়তে পারে যে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওই পরিপত্রে ‘বোরকা ব্যবহারে বাধ্য করা যাবে না, কিন্তু বোরকা পরলে বিব্রতও করা যাবে না’ ধরনের নির্দেশনা ছিল। আর এই নির্দেশনা লঙ্ঘিত হলে ব্যবস্থাগ্রহণের হুমকিও ছিল। কিন্তু গত দু’মাস যাবত রাজধানীর কয়েকটি স্কুলে ঘোষণা দিয়ে বোরকা নিষিদ্ধ করা হলেও উচ্চ আদালত কিংবা শিক্ষামন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। যা হয়েছে তা ছাত্রছাত্রী, অভিভাবক ও ধর্মপ্রাণ মানুষের প্রতিবাদের কারণে হয়েছে। এতে কী প্রমাণিত হয়? এতে আদালত ও সরকারের নীতি-নির্ধারকদেরকে বোরকাবিরোধীচক্রের অপকর্মের পক্ষে সহায়ক মনে করার সুযোগ তৈরি হয় কি না-এ প্রশ্নটিই এখন ধর্মপ্রাণ মানুষের মুখে মুখে ঘুরছে।

আসলে বোরকা নিষিদ্ধ করার জন্য ড্রেসকোড একটি ফালতু ও অযৌক্তিক অজুহাত। মুসলমানদের জন্য ইসলামের ফরয হুকুম লঙ্ঘন করতে হয়-এমন কোনো ড্রেসকোড থাকতে পারে না। এখন বাংলাদেশে অনেক নারী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, প্রকৌশলী, অধ্যাপক ও আমলা পর্যন্ত বোরকা বা স্কার্ফ পরেন। তাদের ক্ষেত্রে এতদিন যদি কোনো সমস্যা না হয়ে থাকে তাহলে এখন কেন হবে? এজন্যই বলতে হয়, কোনো কোনো অঙ্গনে বোরকা নিষিদ্ধ করার প্রক্রিয়াটির গোঁড়ায়, পৃষ্ঠপোষকতায় এবং বাস্তবায়নে যারা যেখানে যেভাবেই ভূমিকা রাখছে তারা তাদের অন্তরে লুকায়িত উগ্র ইসলাম-বিদ্বেষের বহিঃপ্রকাশই ঘটাচ্ছে। এটাকে হালকা করে দেখার কোনো সুযোগ আছে বলে আমরা মনে করি না। মনে রাখা দরকার, নারীর জন্য পর্দা করা ফরয। এই ফরয বিধান পালনের জন্য যারা বোরকা পরেন তারা সেটিকে ধর্মীয় অনুশাসন ও স্বভাবগত কারণে তাদের দেহের একটি অঙ্গের মতোই মনে করেন। অপরিহার্য পোশাক মনে করেন। এই পোশাক খুলতে বলা মানে তার দেহের একটি অঙ্গকে খুলে ফেলতে বলা। এটি কি সম্ভব! তাদের জন্য বোরকা তো তাদের অস্তিত্বের অধিকার। যারা বোরকা পরেন না কিংবা যাদের পরিবারে বোরকা পরার প্রচলন কোনো কারণে গড়ে উঠেনি তাদেরও দায়িত্ব বহু সংখ্যক মুসলিম নারীর অস্তিত্বের এই অধিকারের প্রতি সম্মান জানানো, তাদের অধিকারের পক্ষে দাঁড়ানো। পক্ষান্তরে যারা এই অধিকারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে বা দাঁড়াচ্ছে তারা একই সঙ্গে ইসলামী শরীয়তের একটি ফরয বিধান এবং নারীর অস্তিত্বের একটি অধিকারের বিরুদ্ধে নিজেদেরকে দাঁড় করাচ্ছে। আর এর ফল হতে পারে বড়ই ভয়ঙ্কর। মনে ভয় জাগে, ক্ষয়, দুর্ভোগ ও যন্ত্রণার ভবিষ্যত থেকে তাদের কেউ রক্ষা করতে পারবে না।

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি
বাইতুল কুরআন মাদারাসা , মোহাম্মাদপুর

প্রসঙ্গসমূহ:

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

২৬৯৬৯

নারীদের জন্য মাহরাম


২৯ ডিসেম্বর, ২০২২

West Bengal ৭৪৩৩৭৫

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি মোহাম্মদ আমীর হোসাইন

২৩৪০৩

আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, শায়খ আমার বাবা ভাই প্রবাসী। আমি একজন মেয়ে। আমার বাডি গ্রামে বাডিতে আমি আর আমার মা থাকি।...

১০ অক্টোবর, ২০২২

ফুলগাজী সরকারি কলেজ রোড

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

১৯৯৮৪

শাশুড়ী চিরস্থায়ী মাহরাম


৫ ডিসেম্বর, ২০২৪

গুরুদাসপুর

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy