আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

প্রশ্নঃ ১২৯৯২. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, lআসসালামু আলাইকুম, আযানের মধ্যে, কালিমায়ে শাহাদাতের মধ্যে ও বিভিন্ন দোয়ারমধ্যে রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নাম আসলে তো দুরুদ পড়তে হবে। তা না?,

১৭ জানুয়ারী, ২০২২

ঢাকা

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم





لَقَدْ جَآءَكُمْ رَسُوْلٌ مِّنْ اَنْفُسِكُمْ عَزِیْزٌ عَلَیْهِ مَا عَنِتُّمْ حَرِیْصٌ عَلَیْكُمْ بِالْمُؤْمِنِیْنَ رَءُوْفٌ رَّحِیْمٌ . فَاِنْ تَوَلَّوْا فَقُلْ حَسْبِیَ اللهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ عَلَیْهِ تَوَكَّلْتُ وَ هُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِیْمِ.

(হে লোকসকল!) তোমাদের মাঝে তোমাদের মধ্য থেকেই রাসূল আগমন করেছেন, তোমাদের কষ্ট যার নিকট অসহনীয়, যিনি তোমাদের (কল্যাণের) জন্য ব্যাকুল, যিনি মুমিনদের প্রতি অত্যন্ত দয়াপরবশ, পরম মমতাবান। তারপরও যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে (হে নবী) আপনি বলে দিন, আমার জন্য আল্লাহ্ই যথেষ্ট। তিনি ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই। তার উপরই আমি ভরসা করি এবং তিনি মহান আরশের মালিক। -সূরা তাওবা (৯) : ১২৮, ১২৯

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতের প্রতি অত্যন্ত দয়ার্দ্র ও স্নেহশীল ছিলেন। উম্মতের কল্যাণে তিনি সদা ব্যাকুল থাকতেন। উম্মত কীভাবে নাজাত ও মুক্তি লাভ করতে পারে এ ফিকিরে তিনি ছিলেন সদা বিভোর। সর্বোপরি এই উম্মতের উপর রয়েছে তাঁর অবারিত ইহসান-অনুগ্রহ, পার্থিব-অপার্থিব উভয় বিবেচনায়। তাই উম্মতের কর্তব্য হল, নবীজীর সেই ইহসানের দাবি রক্ষা করা।

উম্মতের উপর নবীজীর যে সীমাহীন ইহসান রয়েছে, এর অন্যতম দাবি হচ্ছে নবীজীর প্রতি দরূদ ও সালামের নাযরানা পেশ করা। এটা আমাদের উপর নবীজীর হক। নতুবা নবীজীর প্রতি দরূদ পেশ করার আমরা কে! যেখানে স্বয়ং আরহামুর রাহিমীন ও তাঁর ফিরিশতাগণ নবীজীর প্রতি দরূদ প্রেরণ করেন সেখানে আমাদের মতো নগণ্য উম্মতের দরূদের কোনোই প্রয়োজন নেই প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের। যেখানে খোদ রাব্বুল আলামীন স্বীয় হাবীবকে দান করেছেন মাকামে মাহমুদ-জান্নাতের সর্বোচ্চ মর্যাদা, সেখানে তাঁর জরুরত নেই আমাদের কারো দরূদ ও সালামের।

কিন্তু তবুও কেন এই নির্দেশ- দরূদ ও সালাম পাঠ করতে হবে তাঁর প্রতি? হাঁ, এতীম এ উম্মতীকে নিজের স্বার্থেই নিবেদন করতে হবে আখেরী নবী হযরত মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি দরূদ ও সালাম- ভক্তি, শ্রদ্ধা ও ভালবাসার সবটুকু দিয়ে। নবীজীর প্রতি আমাদের মহব্বত এমন কিছুই দাবি করে।

আল্লাহ তাআলা বলেন-

اِنَّ اللهَ وَ مَلٰٓىِٕكَتَهٗ یُصَلُّوْنَ عَلَی النَّبِیِّ یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا صَلُّوْا عَلَیْهِ وَ سَلِّمُوْا تَسْلِیْمًا.

নিশ্চয় আল্লাহ ও তাঁর ফিরিশতাগণ নবীর প্রতি ‘সালাত’ প্রেরণ করেন। হে যারা ঈমান এনেছ, তোমরা তার প্রতি ‘সালাত’ পৌঁছাও এবং অধিক পরিমাণে সালাম পেশ কর। -সূরা আহযাব (৩৩) : ৫৬

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি সালাত ও সালাম পেশ করাকেই আমরা দরূদ বলে অভিহিত করে থাকি। বস্তুত আল্লাহ রাব্বুল আলামীন স্বীয় শান অনুযায়ী নিজ হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরূদ বর্ষণ করেন। ফিরিশতাগণও আপন আপন পর্যায় থেকে দরূদ প্রেরণ করেন নবীজীর প্রতি। আর তাই উম্মতেরও কর্তব্য হচ্ছে স্বীয় অবস্থান থেকে মহান মুহসিন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি সালাত ও সালাম নিবেদন করা।

আল্লাহ তাআলা নবীজীর উপর দরূদ বর্ষণ করেন- এর অর্থ কী? এর অর্থ হচ্ছে আল্লাহ তাআলা নিজ হাবীবের উপর রহমত বর্ষণ করেন। তার গুণগান ও মর্যাদা বর্ণনা করেন ফিরিশতাদের নিকট। তিনি তাঁর বন্ধুর শ্রেষ্ঠত্ব, বড়ত্ব ও মহত্ত্ব বয়ান করেন এবং তার সম্মান ও মর্যাদা বৃদ্ধি করতে থাকেন।

আর ফিরিশতাগণ দরূদ প্রেরণ করেন- এর অর্থ হল, ফিরিশতাগণ আল্লাহ তাআলার নিকট নবীজীর মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব তলব করতে থাকেন। বরকতের দুআ করতে থাকেন নবীজী ও তাঁর পুত পবিত্র পরিবারের জন্য।

আর মুমিনগণ যে দরূদ পেশ করেন- এর অর্থ হল, তারা নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শেখানো পদ্ধতিতে দরূদ পাঠ করতে থাকেন। মুমিনগণ আল্লাহ তাআলার নিকট দরখাস্ত করতে থাকেন, ইয়া রব! আপনি আপনার হাবীবের শান ও মান বৃদ্ধি করতে থাকুন। দুনিয়াতে তাঁর আলোচনা সমুন্নত করুন। তাঁর আনীত শরীয়তকে প্রতিষ্ঠিত করুন। তাঁর দ্বীনকে আপনি বুলন্দ করে দিন। আখেরাতে তাঁকে শ্রেষ্ঠ প্রতিদানে ভূষিত করুন। উম্মতের জন্য তার শাফাআত কবুল করুন। তাঁকে মাকামে মাহমূদ দান করে সর্বোচ্চ মর্যাদা প্রদান করুন। এভাবে ঊর্ধ্বজগৎ ও ইহজগতের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বের মহিমা। (দ্রষ্টব্য : ফাতহুল বারী, হাফেয ইবনে হাজার ১১/ ১৫৫, ১৫৬; আলকওলুল বাদী, হাফেয সাখাবী, পৃ. ৫১-৫৭)

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ মুসলিম বাংলা ফাতওয়া বিভাগ

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

২৬৫০০

দ্রুত বিয়ে হওয়ার কতিপয় আমল ও দোয়া


১৪ ডিসেম্বর, ২০২২

ঢাকা ১২০৪

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ শাইখ উমায়ের কোব্বাদী

৯০৭৩৭

ফরয নামাযের সিজদায় অতিরিক্ত দু‘আ করা


২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

মনাইর কান্দি

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী মাহমুদুল হাসান

২৭৭৫৮

কীভাবে নিজেকে আত্মবিশ্বাসী ও সাহসী হিসেবে গড়ে তুলব?


১২ জানুয়ারী, ২০২৩

চট্টগ্রাম

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ শাইখ উমায়ের কোব্বাদী

৩৯৮৫৪

তিন কুলের আমল


৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

শাহজীবাজার

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি মোহাম্মদ আমীর হোসাইন

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy