আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

জিনের কাছে ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য যাওয়া

প্রশ্নঃ ১২৯৪৩. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আসসালামুয়ালাইকুম,অনেক টা বড়ো.. প্রথম এখনে বলার মতো জাগা পেলাম.. পড়বেন দয়া করে....আমার জীবনের সমস্যা আমি একবার 6 বছর আগে এক মহিলার কাছে জিনের সাহায্য নিয়ে ভাগ্য পরিবর্তন করতে চেয়েছিলাম.(সেই সময় আমি হতাশ ছিলাম.. পার্টনারের কাছে প্রতারিত হয়ে নিঃস হয়ে গেছিলাম)উনি আমাকে কিছু তাবিজ দিয়াছিলো, কিছু হাতে বাঁধা, কিছু মাটিতে পুঁতে দিতে বলে.. তার মধ্যে একটা তাবিজ মসজিদের পিছনে বা দিকে পুঁতে দিতে বলে.. আমি এক বন্ধুর সাহায্য নিয়ে কাজ টা করি.. কিছুদিনের মধ্যে আমার মধ্যে বোধ আসে যে এতো বড়ো শির্ক করে বড়ো ভুল করি... আল্লাহর কাছে মাফ চাই,,, নতুন ব্যবসা শুরু করি, কিন্তু আমি ব্যাবসায় উন্নতির জায়গায় অবনতি দেখছি.. এই 6 বছরে আমার এক কোটি ঋণ, প্রতি মাসে ইন্টারেস্ট দিতে হয় মোটা অংকের, আমার ব্যবসা হলো সরকারি ঠিকেদার,.. এখন ইনকাম নেই একটুও.. ঋণ বেড়ে চলেছে,,, আর একটা কথা ব্যবসা শুরু করেছিলাম সুদের উপর 50 হাজার টাকা নিয়ে,, পরে জানতে পারি সুদ দেয়া আর নেয়া মারাত্মক হারাম.. আমি জানতাম শুধু সুদ নেয়া হারাম.. যাইহোক আমি আমার ঘরে দু একবার অন্য রকম কিছু অনুভব করি.. এখন আমার শেষ রাস্তা মৃত্যু মনে হয়..2 বছরের একটা মেয়ে আছে,,6 বছর হলো বিয়ে করেছি,,, আগে অনেক ব্যবসা করেছিলাম সবগুলোতেই সাকসেস পেয়েছি.. কিন্তু এই ব্যাবসাটাই আমার কোনদিকের ভুল বুজতে পারছি না... আমার উপরে কী জিনের প্রভাব?? নাকি সুদের টাকায় ব্যবসা শুরু করেছিলাম বলে.. না কিসের জন্য বুজতে পারছি না,,, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে আল্লাহর কাছে সব কিছুর জন্য মাফ চাই.. তবুও কিছুই ঠিক হচ্ছে না,, দিন দিন পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে, পাওনাদেররা এখন মরিয়া হয়ে বিচার করে টাকা আদায় করতে চাইছে..যদি কোনো সুরাহা থাকে বলবেন.. আমার এতো কথা এই প্রথম এখানে বললাম.. আর আল্লাহ জানে...,

১৮ অক্টোবর, ২০২৩

West Bengal ৭৪২১৪৭

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


সম্মানিত ভাই!
মনযোগের সাথে দীর্ঘ সময় নিয়ে একাধিক বার আপনার প্রশ্নটি আমরা পাঠ করেছি। আমাদের কাছে মনে হয়েছে আপনার বর্তমান হতাশা এবং মানসিক ও অর্থণৈতিক বিপর্যয়ে প্রধান কারণ দুইটি। এক. আপনি আল্লাহ তায়ালার দিকে রুজু না গিয়ে জিনের কাছে ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য গিয়েছেন। যা আল্লাহ তায়ালার অবাধ্যতার সামিল। কাজেই দ্রুত এর থেকে তাওবা করে পুতপবিত্র হয়ে যান। কেননা ভাগ্য পরিবর্তনের একমাত্র মালিক আল্লাহ তায়ালা। এই বিষয়ে কারও বিন্দু পরিমাণ সন্দেহ থাকলেও সে মুমিন হতে পারবে না।

لا يؤمن عبد حتى يؤمن بأربع: يشهد أن لا إله إلا الله وأني محمد رسول الله بعثني بالحق، ويؤمن بالموت, وبالبعث بعد الموت, ويؤمن بالقدر

দ্বিতীয় বিষয় হলো, আপনি সুদের ব্যবসায় জড়িত হয়েছেন। অথচ শরিয়তের দৃষ্টিতে সুদ হারাম। মহান আল্লাহ তাআলা সুদকে হারাম করেছেন এবং ব্যবসাকে হালাল করেছেন। ব্যবসা-বাণিজ্য করে অর্থ উপার্জন করা সুন্নাহ আর সুদের কারবার করে অর্থ উপার্জন করা সম্পূর্ণ হারাম। আল্লাহ তাআলা বলেছেন-

اَلَّذِیۡنَ یَاۡکُلُوۡنَ الرِّبٰوا لَا یَقُوۡمُوۡنَ اِلَّا کَمَا یَقُوۡمُ الَّذِیۡ یَتَخَبَّطُهُ الشَّیۡطٰنُ مِنَ الۡمَسِّ ؕ ذٰلِکَ بِاَنَّهُمۡ قَالُوۡۤا اِنَّمَا الۡبَیۡعُ مِثۡلُ الرِّبٰوا ۘ وَ اَحَلَّ اللّٰهُ الۡبَیۡعَ وَ حَرَّمَ الرِّبٰوا

‘যারা সুদ খায়, তারা তার ন্যায় (কবর থেকে) উঠবে, যাকে শয়তান স্পর্শ করে পাগল বানিয়ে দেয়। এটা এ জন্য যে, তারা বলে, ব্যবসা তো সুদের মতই। অথচ আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল করেছেন এবং সুদকে করেছেন হারাম।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২৭৫)

এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা তাদেরকে (সুদের কারবারিকে) পাগল বা উন্মাদ বলেছেন; যারা বলে, ব্যবসা তো সুদের মতোই। যেমন- ‘মানুষকে জিন আক্রমণ করলে যেমন মানুষ জ্ঞানহীন বা উন্মাদ হয়ে যায়; ঠিক তেমনই যারা সুদ গ্রহণ করে তারা শয়তানের স্পর্শের কারণে পাগল বা উন্মাদ হয়ে যায়।’
কাজেই যারা সুদের সাথে জড়িত তাদের জীবনে প্রকৃত শান্তি তো দূরের কথা বাহ্যিক সুখ- শান্তি থেকেও তারা বঞ্চিত হবে।

-আল্লাহ তাআলা কত সুন্দরভাবেই না ঘোষণা করেছেন

یَمۡحَقُ اللّٰهُ الرِّبٰوا وَ یُرۡبِی الصَّدَقٰتِ ؕ وَ اللّٰهُ لَا یُحِبُّ کُلَّ کَفَّارٍ اَثِیۡمٍ

‘আল্লাহ সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দানকে বৃদ্ধি করে দেন। আল্লাহ কোনো অকৃতজ্ঞ পাপীকে ভালবাসেন না।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২৭৬)

মহান আল্লাহ এ আয়াতে বান্দাদের সুদ থেকে বিরত থাকার প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি সুদকে ধ্বংসশীল হিসেবে ঘোষণা করেছেন। সুদকে পরিহার করার কথা বলেছেন। কারণ সুদে বরকত আসে না। সুদ গ্রহণকারী উপর নেমে আসে আল্লাহর পক্ষ থেকে অভিশাপ। পাশাপাশি দানের প্রতি উৎসাহিত করেছেন। কারণ দান করলে সম্পদে বরকত লাভ হয়। দানশীল ব্যক্তিকে আল্লাহ তাআলা পছন্দ করেন।

সুদের ভয়াবহতা ও শাস্তি

সুতরাং সুদ থেকে বিরত থাকা ঈমানদারের একান্ত আবশ্যক কাজ। সুদের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের অবস্থা খুবই ভয়াবহ। হাদিসের একাধিক বর্ণনা থেকে তা প্রমাণিত-

১. হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা সুদ খায়, সুদ দেয়, সুদের হিসাব লেখে এবং সুদের সাক্ষ্য দেয় তাদের উপর আল্লাহর লানত এবং এ অপরাধের ক্ষেত্রে প্রত্যেকে সমান অপরাধী।’ (বুখারি, মুসলিম, তিরমিজি)

২. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, সুদের গুনাহ ৭০ প্রকার; তন্মধ্যে সবচেয়ে কম ভয়ংকর বা ছোটটি হলো- একজন লোকের তার আপন মায়ের সঙ্গে ব্যভিচারের সমান।’ ( ইবনে মাজাহ, বায়হাকি)

৩. নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা ৪ ধরনের লোকদের জান্নাতে প্রবেশের অনুমতি দেবেন না-

#যারা অভ্যাসগতভাবে মাতাল (মাদকাসক্ত) ।
#সুদ গ্রহণকারী।
#অন্যায়ভাবে ইয়াতিমের সম্পদ আত্মসাৎকারী;
# বাবা-মার প্রতি অবাধ্যতাকারী/অমনোযোগী।’

প্রিয় ভাই! আশা করি নিচের পরামর্শগুলো গ্রহন করবেন।
তাহলে নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা জীবনে সুখ-শান্তি এবং আখেরাতে কামিয়াবী দান করবেন।

> ‘সুদ’কে ‘না’ বলুন। ব্যবসাকে ‘হ্যাঁ’ বলুন।
> কল্যাণের জীবিকা পেতে সাধ্যমতো অধিক পরিমাণে দান করুন।
>কষ্ট যত বেশিই হোক না কেন; প্রয়োজন যত বেশিই হোক না কেন; নিজের প্রয়োজন ও কষ্টের কথা মহান আল্লাহকে বলুন। তিনিই সব সমস্যার সমাধান করে দেবেন। ধারণাতীত জায়গা থেকে দান করবেন সাহায্য ও রিজিক।

>নিজে পর্দা করুন। পরিবারস্থ সকলকে বিশেষত অধিনস্তদের স্ত্রী, কন্যা, মা, বোনদের পর্দার বিধানে নিয়ে আসুন।
>সকল প্রকারের হারাম সম্পর্ক, হারাম অভ্যাস, গুনাহের বস্তু, গুনাহের সম্ভব্যতা পরিহার করুন। নিজের মূল্যবান সময় থেকে কিছু সময় ব্যয় করে দাওয়াত ও তাবলিগের মেহনতের সাথে যুক্ত থাকুন।
>শিরিক বিদয়াত মাজারপুজা, দরগাপূঁজা পীরপূঁজা, কবরপূঁজা। পরিহার করে চলুন।
>নিজের অত্মিক উন্নতি এবং ইসলাহে নফসের উদ্দেশ্যে যেকোনো হক্কানি আল্লাহ ওয়ালার সাথে ইসলাহী সম্পর্ক গড়ুন। কেননা আল্লাহ ওয়ালার সোহবত ছাড়া গুনাহ ত্যাগ করা, হারাম বর্জন করা অসম্ভব। আল্লাহ ওয়ালা চেনার সবথেকে সহজ উপায় হলো ‍যিনি যতবেশী সুন্নতের অনুসারী তিনি ততোবেশী আল্লাহ প্রেমী।
মোট কথা পরিপূর্ণ ইমান ও ইসলামের পথে চলে আসুন। ইনশাআল্লাহ সকল পেরেশানী দূর করে দিবেন। আল্লাহ তায়ালা আমাদের আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

(সংগৃহীত ও সংযোজিত)

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি
বাইতুল কুরআন মাদারাসা , মোহাম্মাদপুর

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

৪১২২৭

নাপাক অবস্থায় নামাজ পড়লে কি মানুষ মুরতাদ হয়ে যায়?


২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

আশুলিয়া

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

৬৬৮৫৫

যিনাকারীর শাস্তি


৯ জুলাই, ২০২৪

ঢাকা

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী সিরাজুল ইসলাম

৩৬৮৯২

বেনামাজীর হাতের রান্না কি শুকরের মাংসের সমান?


২৭ জুলাই, ২০২৩

সিলেট

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

৯৪৯১৯

মোবাইলের ব্লুটুথে মাগরিবের আজান চালিয়ে দিয়ে ইফতার করতে চাওয়া


১১ মার্চ, ২০২৫

সিন্দুর পুর

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ ইসহাক মাহমুদ

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy