আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

প্রশ্নঃ ১১৯৬৫. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, সদকায়ে জারিয়া কী,

২৫ ডিসেম্বর, ২০২১

ঢাকা

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم






সঠিক পদ্ধতি ও সহিহ নিয়তে করা মুমিনের কোনো নেক আমলই বৃথা যায় না। আল্লাহতায়ালার কাছে এর বিনিময় সংরক্ষিত থাকে। কিন্তু মৃত্যুর পর যেহেতু কোনো আমল করা সম্ভব নয়, তাই সওয়াব ‘কামাই করা’ও অসম্ভব। তবে এমন কিছু আমল আছে, যা জীবদ্দশায় করে গেলে মৃত্যুর পরও সওয়াব ও উপকারিতার ধারা অব্যাহত থাকে। এগুলোকে সদকায়ে জারিয়া বলে।

‘সদকা’ শব্দের অর্থ দান করা। আর ‘জারিয়া’ অর্থ অব্যাহত। অর্থাৎ আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষে শরিয়তসম্মত এমন কল্যাণকর কাজে দান করা। ইসলামের বিধান মতে, সদকামাত্রই উপকারী ও বিরাট সওয়াবের কাজ। এর বহু প্রকার ও ধরন রয়েছে। কিছু সদকা আছে অস্থায়ী। যেমন কাউকে খাদ্যদ্রব্য দান করা। আর কিছু সদকা আছে স্থায়ী। যেমন মসজিদ নির্মাণ করা।

সদকায়ে জারিয়ার কারণে মৃত্যুর পরও দানকারীর ‘সওয়াব সঞ্চয়’ সমৃদ্ধ হতে থাকে। এর স্রোতধারা তার ‘পুণ্য তরি’কে চলমান রাখে। এটা আল্লাহতায়ালার বিশেষ নিয়ামত ও রহমত। মৃত্যুর মধ্য দিয়ে আমলের ধারা বন্ধ হয়ে গেলেও জীবদ্দশায় নির্দিষ্ট কিছু আমল করে গেলে মৃত্যুর পরও সওয়াব জারি থাকে। অর্থাৎ মানুষ নিজেই নিজের জন্য সওয়াব পৌঁছার ব্যবস্থা করে যেতে পারে এবং চাইলে অন্য কেউও তাকে সওয়াব পৌঁছাতে পারে। এ উভয় পদ্ধতিই আল্লাহতায়ালার একান্ত দয়া ও অনুগ্রহ।

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, মানুষ যখন মৃত্যুবরণ করে, তখন তার সব আমলের পথ বন্ধ হয়ে যায়; শুধু ৩টি পথ খোলা থাকে। (যেগুলোর মাধ্যমে মৃত ব্যক্তির আমলনামায় নেক পৌঁছে থাকে)। তাহলো-
> সাদকায়ে জারিয়া।
> উপকারি ইলম বা জ্ঞান।
> নেককার সন্তান-সন্ততি; যে তার মৃত্যুর পর দোয়া করে।’ (মুসলিম)


এমনই কিছু ভালো কাজের কথা উল্লেখ করা হোল, যা সদকায়ে জারিয়া হিসেবে খুব সহজেই আমল করা সম্ভব। কাজগুলো হলো-

১. একটি জায়নামাজ কিনে মসজিদে রেখে দিন, যে ব্যক্তি তাতে নামাজ আদায় করবে, ইনশাআল্লাহ আপনি সেই আমলের জন্য পুরস্কৃত হবেন।

২.সন্তানদের উত্তম সন্তান হিসেবে গড়ে তুলুন। দ্বীন এবং মানবতা শিক্ষা দিন। তাদের দোয়া কবর পর্যন্ত পৌঁছাবে, আপনার থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা তাদের সঠিক মানুষ হতে সাহায্য করবে।

৩.সামর্থ্য থাকলে মসজিদ, মাদরাসা, হাসপাতাল স্থাপনে সহায়তা করুন। গাছ লাগান, টিউবওয়েল বা পান করার পানির ব্যবস্থা করুন। আপনার মৃত্যুর পরেও মদজিদ-মাদরাসায় দ্বীন শিক্ষা চালু থাকবে, হাসপাতালে রোগীরা সেবা পেতে থাকবে, গাছ থেকে মানুষ অক্সিজেন এবং খাবার পাবে, পান করার পানি পান করতে পারবে আপনার ব্যবস্থা করে দেওয়া পানির উৎস থেকে। এ সব কিছু সদকায়ে জারিয়া। এগুলো মৃত্যুর পরেও আপনাকে পরকালের জন্য ধনী করতে থাকবে।


৪.কাউকে এক অক্ষর হলেও দ্বীন শিক্ষা দিন। সেই ব্যক্তি যখন তার সন্তান-সন্ততি, বন্ধু-বান্ধব কিংবা তার সন্তানদের মাধ্যমে তার পরের প্রজন্ম এই দ্বীন অর্জন করবে, সে সব সওয়াব মৃত্যুর পরেও আপনার কবরে পৌঁছাবে- ইনশাআল্লাহ।


৫.ততক্ষণ পর্যন্ত ঘুমাবেন না, যতক্ষণ পর্যন্ত আপনাকে যারা কষ্ট দিয়েছে তাদের ক্ষমা করেছেন।

৬.বাড়িতে প্রবেশ ও বের হওয়ার পথে দোয়া লিখে রাখুন একটি কাগজে। যে এই দোয়াগুলো দেখতে পেয়ে পাঠ করবে- ইনশাআল্লাহ আপনি সেজন্য পুরস্কৃত হবেন। একইভাবে ঘরের এমন কোনো স্থানে দোয়া লিখে রাখতে পারেন- যেটা সবার নজরে আসে।

৭.আপনার হাত খরচের টাকা দিয়ে একজন এতিমকে সাধ্যমতো সহায়তা করুন। মাসের কোনো একদিন নাস্তা না করে এতিম কোনো শিশুকে খাবার খাইয়ে দিন।



৮. কোনো মসজিদে কোরআন মজিদ রেখে দিন, যেকোনো ব্যক্তি যখন অন্তত একটি অক্ষর তেলাওয়াত করবে, তার জন্য ১০ গুণ সওয়াব লিখিত হবে আপনার আমলনামায়।

৯. আপনার পান করা গ্লাসের অবশিষ্ট পানি কোনো ফুলদানির পাত্রে রেখে দিন, অপচয় করবেন না।

১০. আপনার মুসলমান ভাইবোনদের উৎসাহ দিন, দুর্দিনে সাহায্য করুন, সহানুভূতিশীল হোন, কারণ এ সময়টায় তারা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত থাকে।

১১. অসুস্থ আত্মীয় কিংবা পরিচিতদের দেখে আসুন। একটু হাসুন, কথা বলুন; এটাও সদকা। মৃদু হাসি বিনিময় করাও সদকা।

১২.আপনার বাড়ির আশপাশে যদি কোনো নির্মাণ কাজ চলে কিংবা শ্রমিকেরা কাজ করে, তবে কিছু ঠাণ্ডা পানি বা খাবার তাদেরকে দিতে পারেন।

১৩.আপনার রুমে একটি বক্স রাখুন এবং যখনই আপনি মনে করবেন যে আপনি কোনো অন্যায় করেছেন, তখনই তাতে সাধ্যমতো টাকা-পয়সা রাখুন। মাস শেষে তা খুলে দেখুন এবং তা দান করে দিন। এতে নিজের ভুলগুলোর পরিমাণ বুঝতে পারবেন এবং অনুতপ্ত হয়ে নিজেকে সংশোধনের জন্য এটা সুন্দর একটি পন্থা।
১৪.আপনার পুরাতন অথবা ব্যবহার হচ্ছে না এমন পোশাক গরিবকে দান করুন। সুযোগ থাকলে নতুন জামা যেদিন কিনবেন, সেদিনই এক সেট পুরাতন জামা দান করুন।
১৫. একটি বাটি বা গ্লাসে কিছু পানি ঘরের জানালায় রেখে দিন পাখিদের জন্য, এটাও এক ধরনের সদকা।

১৬. রক্ত দান করা ।

১৭. এতিমের লালন-পালনের দায়িত্ব নেওয়া।

১৮. মসজিদ নির্মাণ কিংবা মসজিদের প্রয়োজনীয় আসবারের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখা।


১৯. অসহায়-দুঃস্থ মানুষের চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থায় হাসপাতাল নির্মাণ কিংবা চিকিৎসা সামগ্রীর ব্যবস্থা করে দেওয়া।



২০. মুসলমানদের কল্যাণে আসে এমন ইসলামি বই-তাফসির, হাদিস, ফিকাহ শাস্ত্রের বই-পুস্তক মুদ্রণ কিংবা বিতরণে সহায়তা করা।

২১. অত্যাচারিত মুসলমান সম্প্রদায়ের পাশে দাঁড়ানো।

২২. এই সদকার পন্থাগুলো মানুষের সঙ্গে শেয়ার করুন, আলোচনা করুন; তাদের শিক্ষা দিন। কেউ যদি কোন একটির উপর আমল করে এটিও আপনার জন্য সদকায়ে জারিয়ার অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ মুসলিম বাংলা ফাতওয়া বিভাগ

প্রসঙ্গসমূহ:

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

২৩৯৩৬

ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে এবং পুজা উপলক্ষে সহযোগিতা করা


১৫ নভেম্বর, ২০২২

নরসিংদী

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ শাইখ উমায়ের কোব্বাদী

২৩৯৩৫

সুদের টাকা গরিবদের কিংবা মসজিদ উন্নয়নের কাজে দেয়া যাবে কি?


১৫ নভেম্বর, ২০২২

চট্টগ্রাম

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ শাইখ উমায়ের কোব্বাদী

৩২৭৫৭

সাদকা ও হাদীয়ার মধ্যে পার্থক্য ?


১৮ এপ্রিল, ২০২৩

JKUA৩৮৬৪، ৩৮৬৪ المظفر ابن سعد الله، ৬৯৩৩، حي ام السلم، Jeddah ২২৩৭৪

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুসলিম বাংলা ইফতা বিভাগ

২৪২০০

মসজিদ-মাদরাসার কালেকশন করতে গিয়ে মিথ্যা ও প্রতারণার আশ্রয় নেওয়া


১ নভেম্বর, ২০২২

Bishnandi

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ শাইখ উমায়ের কোব্বাদী

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy