চেষ্টা করেও কম খেতে পারছেন না!
প্রশ্নঃ ১১৪৯৯. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আমি দৈনিক চিন্তা করি যে আমি কম খাবো, কম কম খাওয়া-দাওয়া করবো, আমার প্রিয় নবি মুহাম্মদ সাঃ এর সুন্নত কম খাওয়া। কিন্তু আমার রিযিক আল্লাহতায়ালা এত বেশি দিয়েছেন যে আমি যত কম খাওতে চাই তত বেশি খাবার খাওয়া হয়। এত পরিমানে আমার খাবার খাওয়া হয় যে, আমি এই বিষয়টি নিয়ে খুবই চিন্তিত। যে আমার আল্লাহ কি এর জন্য হাশরের ময়দানে আমাকে আটকে দিবেন কিনা।এখন আমি কি করতে পারি? সঠিক পরামর্শ চাই দয়া করে। জাজাকাল্লাহ খাইরান,
২৩ জুন, ২০২৪
কেরানীগঞ্জ
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
জীবনধারণের জন্য খাদ্যের প্রয়োজন। জীব মাত্রেই পানাহারে অভ্যস্ত। পানাহার ব্যতীত জীবনধারণ অসম্ভব। মহান স্রষ্টা তাই প্রত্যেক প্রাণী সৃষ্টির সাথে সাথে প্রাণ ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য ও পানীয়ের ব্যবস্থা করেছেন। ইসলামী পরিভাষায় এটাকে বলা হয় ‘রিজিক’। প্রত্যেক সৃষ্টির জন্যই স্রষ্টার পক্ষ থেকে রিজিকের ব্যবস্থা রয়েছে। যিনি স্রষ্টা, তিনিই রিজিকদাতা। তাই স্রষ্টার এক নাম ‘রাজ্জাক’। রাজ্জাক শব্দের অর্থ রিজিকদাতা।
মানুষের জন্য রিজিকের ব্যবস্থা মহান স্রষ্টা দুইভাবে করেছেন। প্রথমত, প্রকৃতি থেকে আলো-হাওয়া পানি ইত্যাদির জোগান যেভাবে অন্যসব প্রাণী পেয়ে থাকে, মানুষ সেভাবে অনায়াসে ঐসব ভোগ করে। অন্যসব প্রাণী প্রকৃতি থেকে যেসব রিজিক পায়, সেভাবেই তারা সেগুলো ভোগ করে। কিন্তু মানুষ প্রকৃতি থেকে প্রাপ্ত রিজিক ছাড়াও তার ইচ্ছা-রুচি ও আকাক্সা অনুযায়ী রিজিক উৎপাদন করে। এজন্য তাকে কিছুটা পরিশ্রম করতে হয়। যেমন ভূমিকর্ষণ করে কৃষিকাজের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন ও বিভিন্ন ধরনের খাদ্যবস্ত ও ফল উৎপাদন, উৎপাদিত খাদ্যবস্তু রুচি অনুযায়ী বিভিন্নভাবে রন্ধনপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভক্ষণের ব্যবস্থা করা ইত্যাদি। এটি মানুষের বিশেষ রুচি, চাহিদা ও স্বাদ গ্রহণের তাগিদে করা হয়। এ কারণে অন্যসব প্রাণী থেকে মানুষের পানাহারের ধরন ও উপকরণ বহুলাংশে ভিন্ন।
ইসলাম স্রষ্টা-প্রদত্ত দ্বীন। ‘দ্বীন’ অর্থ সামগ্রিক জীবনব্যবস্থা। জন্ম থেকে মৃত্যু, শৈশব থেকে বৃদ্ধত্ব, সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত জীবনের আদি-অন্ত, সব ক্রিয়া-কর্ম, চিন্তা-ভাবনা-আচরণ, জ্ঞান-বিজ্ঞান-সাধনা ইত্যাদি সব ক্ষেত্রে ইসলাম সুষম, সুন্দর ও মানুষের জন্য এক সুসঙ্গত বিধান প্রদান করেছে। স্রষ্টা-প্রদত্ত এ বিধান শুধু মুসলমানদের জন্য নয়, সমগ্র মানবজাতির জন্য। পানাহারের ব্যাপারে আল-কুরআনে তিনটি মূলনীতির কথা বলা হয়েছে। প্রথমটি হলোÑ
‘খাও, পান করো, কিন্তু প্রয়োজনের অতিরিক্ত নয়। প্রয়োজনাতিরিক্ত খরচ করা আল্লাহ পছন্দ করেন না।’ (সূরা ৭ : আয়াত : ৩১)।
জীবনধারণের জন্য পানাহার অপরিহার্য। কিন্তু উপরি উক্ত আয়াতে মহান স্রষ্টার পক্ষ থেকে অতিরিক্ত পানাহার করতে নিষেধ করা হয়েছে। কারণ অতিরিক্ত পানাহার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, নৈতিকতার দৃষ্টিতেও তা অন্যায় ও গর্হিত। কারণ পৃথিবীতে খাদ্য উৎপাদন, খাদ্যের জোগান ও সরবরাহ সীমাবদ্ধ বা পরিমিত। সামর্থ্যবান ও সুবিধাভোগী মানুষ প্রয়োজনাতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ করলে সমাজের অপেক্ষাকৃত দুর্বল ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষ অবশ্যই অভুক্ত থাকবে বা প্রয়োজনীয় খাদ্যের জোগান থেকে বঞ্চিত হবে। তা ছাড়া ‘অতিরিক্ত’ অর্থ অপচয় করা। কোনো কিছু অপচয় করা নৈতিকতার দৃষ্টিতে অপরাধ। অপচয়কারীকে কেউ পছন্দ করে না। আল্লাহ নিজেও পছন্দ করেন না। আল-কুরআনের অন্যত্র আল্লাহ বলেন, ‘অপচয়কারী শয়তানের বন্ধু’। এর দ্বারা অপচয় করা কতটা খারাপ বা আল্লাহর কাছে অপছন্দনীয় তা সহজেই আন্দাজ করা যায়।
অথচ দেখা যায়, একশ্রেণীর বিত্তবান লোক যে পরিমাণ খায়, তার চেয়ে বেশি নষ্ট করে। সমাজে ধনী-দরিদ্র সবশ্রেণীর মানুষ বসবাস করে। ধনীরা যেখানে অতিরিক্ত আহার গ্রহণ অথবা খাদ্যের অপচয় করে থাকে, তাদের প্রতিবেশী অনেকে হয়তো ক্ষুধা নিবারণের উপযুক্ত খাদ্য সংগ্রহ করতে পারে না। তারা অভুক্ত থাকে। এটা শুধু বৈষম্য নয়, নিতান্ত অমানবিক। বেশি বেশি রান্না করা, প্রয়োজনাতিক্ত খাদ্য প্লেটে নিয়ে তা থেকে কিছুটা খেয়ে, বাকিটা ফেলে দেয়া ধনীদের জন্য একটি ফ্যাশন বা ভদ্রতা প্রদর্শনের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ তাদের প্রতিবেশী অনেকে হয়তো ক্ষুধার জ্বালায় ছটফট করছে। এজন্য আল্লাহর রাসূল (সা:) বলেনÑ ‘প্রতিবেশীকে অভুক্ত রেখে যে ব্যক্তি পেট পুরে খায়, সে ঈমানদার নয়।’ (বুখারি শরিফ)।
পবিত্র কুরআনে অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ ও খাদ্যের অপচয় না করার যে নির্দেশ রয়েছে তার সমর্থনে আরো একটি আয়াত উদ্ধৃত হলোÑ ‘অপচয় করো না, প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ অপচয়কারীকে পছন্দ করেন না’ (সূরা ৬ : আয়াত ১৪১)।
পানাহারের ক্ষেত্রে ইসলামের দ্বিতীয় মূলনীতি সম্পর্কে আল্লাহ বলেন ‘পৃথিবীতে যা কিছু আমি তোমাদের প্রদান করেছি, তা থেকে উত্তম জিনিসগুলো তোমরা ভক্ষণ কর, তবে অনধিকার চর্চা করো না। অনধিকার চর্চাকারীদের ওপর আল্লাহর ক্রোধ, আর কারো ওপর আল্লাহর ক্রোধ নিপতিত হলে, সে অবশ্যই ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।’ (সূরা ২০ : আয়াত-৮১)।
পানাহারের ক্ষেত্রে ইসলামের তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি সম্পর্কে মহান আল্লাহর ঘোষণা ‘হে ঈমানদারগণ, তোমরা পবিত্র বস্তুসামগ্রী আহার করো, যেগুলো আমি তোমাদেরকে রুজি হিসেবে দান করেছি এবং শুকরিয়া আদায় করো আল্লাহর, যদি তোমরা তাঁরই বন্দেগি করো। তিনি তোমাদের ওপর হারাম করেছেন, মৃত জীব, রক্ত, শূকরের মাংস এবং সেসব জীব-জন্তু যা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নামে উৎসর্গ করা হয়। অবশ্য অনন্যোপায় হয়ে এবং নাফরমানি ও সীমালঙ্ঘন না করে যদি কেউ (প্রয়োজনের তাগিদে সামান্য পরিমাণে) ভক্ষণ করে, সেজন্য কোনো পাপ নেই। নিঃসন্দেহে আল্লাহ মহান, ক্ষমাশীল, অত্যন্ত দয়ালু।’ (সূরা বাকারা, আয়াত : ১৭২-৭৩)।
পানাহারের ক্ষেত্রে ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ দু’টি প্রধান মূলনীতির মধ্যে প্রথমটি হলোÑ ভালো, পবিত্র ও হালাল খাবার গ্রহণ এবং দ্বিতীয়টি হলো পরিমিত খাদ্য গ্রহণ, অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ না করা ও অপচয় করা থেকে বিরত থাকা।
والله اعلم بالصواب
মন্তব্য (০)
কোনো মন্তব্য নেই।
এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর
৬৯৪২৮
সন্দেহযুক্ত/ হারাম টাকায় নির্মিত মসজিদে নামাযের বিধান কি?
২৪ নভেম্বর, ২০২৪
ঢাকা

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী
৭১৩২১
গ্যাসের ফি বিলম্বে দেয়া কি জায়েজ? নাকি সুদ?
২৪ নভেম্বর, ২০২৪
Nayakanda

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী
৭০৭৬৬
সাউন্ড ইফেক্ট (Sound Effect) ব্যবহার করা জায়েজ?
২৮ আগস্ট, ২০২৪
কেরাণীগঞ্জ

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী
৬১৫৯২
বাবার হারাম সম্পত্তি কি সন্তানদের জন্য হালাল হয়ে যাবে?
১৮ মে, ২০২৪
ঢাকা

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি
সাম্প্রতিক প্রশ্নোত্তর
মাসায়েল-এর বিষয়াদি
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে