আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

সুদী প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করা

প্রশ্নঃ ১১৪৯৭. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আমার আব্বু একটি এনজিও (ব্রাক) তে চাকরি করেন। আব্বু এখন শাখা ব্যাবস্থাপক পদে আছেন। এনজিও-র কাজ, মানুষ কে লোন দেয়া এবং তারপর তা আদায় করা। এক্ষেত্রে হয়ত সুধ ও নেয়া হয়। আব্বুর কাজ এনজিও-র হয়ে এগুলো দেখাশোনা করা। এক্ষেত্রে আমার আব্বুর কী পাপ হবে?উল্লেখ্য, আমার আব্বুর বাবা অর্থাৎ আমার দাদার অবস্থা বেশ ভালো ছিলো আলহামদুলিল্লাহ। কিন্তু নদী ভাঙ্গনে সবকিছু নদীগর্ভে চলে যায়। তারপর পরিবারের পাশে দাড়ানোর জন্য আব্বু চাকরি তে প্রবেশ করেন আলাদা একটি প্রকল্পে খুবই ছোট পদে। সেখান থেকে আস্তে আস্তে এখন এই পর্যায়ে আছেন। নদী ভাঙ্গার পর আব্বু পড়াশোনা ও করতে পারেন নি আর। তার আগে যা পড়া তা দিয়ে আরেকটা চাকরি পাওয়া কঠিন ছিলো। তাই এক প্রকার বাধ্য হয়েই এখনও এই চাকরি করতে হচ্ছে। আমাদের অন্য কোনো উপার্জন নেই যার ফলে চাকরি ছাড়া ও সম্ভব না।আমার প্রশ্ম হচ্ছে এমতাবস্থায় কী আমার আব্বু পাপী? এনজিওর সুধের ব্যাবস্থা সামলানোর জন্য আমার আব্বু পাপী? আর যদি হন ও তাহলে তিনি এখন কিভাবে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবেন।,

১৮ অক্টোবর, ২০২৩

শেরপুর

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


আরবি রিবা শব্দের অর্থ সুদ। ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায় মূলধনের অতিরিক্ত কিছু গ্রহণ করাই সুদ। ইসলামে এ সুদ খাওয়া হারাম তথা কবিরা গুনাহসমূহের মধ্যে অন্যতম। সুদ এত মারাত্মক ঘৃণিত অপরাধ যে, যার সর্বনিম্নটি হচ্ছে নিজ মায়ের সঙ্গে জেনা করা। (নাউজুবিল্লাহ)

সুদের অপরাধ কত মারাত্মক তা বোঝার জন্য বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটি হাদিসই যথেষ্ট। তাহলো- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘সুদের সত্তর প্রকার গুনাহ রয়েছে। এর নিম্নটি হলো নিজ মায়ের সঙ্গে ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার সমপর্যায়ের গুনাহ।’ (মুসতাদরেকে হাকেম, আন-নিহায়া ফি গারিবিল হাদিস)


সুদ খাওয়া হারাম। আল্লাহ তাআলা সুদ খাওয়াকে শুধু হারামই ঘোষণা করেননি, সুদের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তির অবস্থান কেমন তা উপমাসহ কোরআনুল কারিমে উল্লেখ করেছেন। একাধিক আয়াতে সুদের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন-

১. الَّذِينَ يَأْكُلُونَ الرِّبَا لاَ يَقُومُونَ إِلاَّ كَمَا يَقُومُ الَّذِي يَتَخَبَّطُهُ الشَّيْطَانُ مِنَ الْمَسِّ ذَلِكَ بِأَنَّهُمْ قَالُواْ إِنَّمَا الْبَيْعُ مِثْلُ الرِّبَا وَأَحَلَّ اللّهُ الْبَيْعَ وَحَرَّمَ الرِّبَا فَمَن جَاءهُ مَوْعِظَةٌ مِّن رَّبِّهِ فَانتَهَىَ فَلَهُ مَا سَلَفَ وَأَمْرُهُ إِلَى اللّهِ وَمَنْ عَادَ فَأُوْلَـئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ

‘যারা সুদ খায়, তারা কেয়ামতের দিন দণ্ডায়মান হবে, যেভাবে দণ্ডায়মান হয় ওই ব্যক্তি; যাকে শয়তান আসর করে মোহাবিষ্ট করে দেয়। তাদের এ অবস্থার কারণ এই যে, তারা বলেছে, ক্রয়-বিক্রয়ও তো সুদ নেয়ারই মতো! অথচ আল্লাহ তাআলা ক্রয়-বিক্রয় বৈধ করেছেন এবং সুদ হারাম করেছেন। এরপর যার কাছে তার পালনকর্তার পক্ষ থেকে উপদেশ এসেছে এবং সে বিরত হয়েছে, আগে যা হয়ে গেছে, তা তার। তার ব্যাপার আল্লাহর ওপর নির্ভরশীল। আর যারা পুনরায় সুদ নেয়, তারাই জাহান্নামে যাবে। তারা সেখানে চিরকাল অবস্থান করবে।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২৭৫)

২. يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ لاَ تَأْكُلُواْ الرِّبَا أَضْعَافًا مُّضَاعَفَةً وَاتَّقُواْ اللّهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ

হে ঈমানদারগণ! তোমরা চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ খেয়ো না। আর আল্লাহকে ভয় করতে থাক, যাতে তোমরা কল্যাণ অর্জন করতে পারো।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৩০)

৩. يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ اتَّقُواْ اللّهَ وَذَرُواْ مَا بَقِيَ مِنَ الرِّبَا إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ

হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সুদের যে সব বকেয়া আছে, তা পরিত্যাগ কর, যদি তোমরা ঈমানদার হয়ে থাক।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২৭৮)

৪. يَمْحَقُ اللّهُ الْرِّبَا وَيُرْبِي الصَّدَقَاتِ وَاللّهُ لاَ يُحِبُّ كُلَّ كَفَّارٍ أَثِيمٍ

আল্লাহ তাআলা সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দান খয়রাতকে বর্ধিত করেন। আল্লাহ পছন্দ করেন না কোনো অবিশ্বাসী পাপীকে।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ২৭৬)


মনে রাখা জরুরি
সুদ খাওয়া, সুদ দেওয়া এবং সুদের লেনদেনে সাহায্য-সহযোগিতা করা; সবই হারাম এবং অভিশপ্ত কাজ। এ সম্পর্কে হাদিসে পাকে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এভাবে সতর্ক করেছেন-
হজরত জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লানত করেছেন- সুদখোর, সুদের হিসাবরক্ষক এবং তার সাক্ষীদ্বয়ের প্রতি। তিনি আরও বলেছেন, (সুদের সঙ্গে জড়িত) তারা সবাই সমান অপরাধী।’ (বাইহাকি, মিশকাত)

প্রিয় প্রশ্নকারী আশা করছি উপরের আলোচনা থেকে আপনি আপনার উত্তর পেয়েছেন। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সুদের মতো মারাত্মক হারাম কাজ ও কবিরা গুনাহ থেকে মুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন। সুদমুক্ত জীবন গড়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

(সংগৃহীত)

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি
বাইতুল কুরআন মাদারাসা , মোহাম্মাদপুর

প্রসঙ্গসমূহ:

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

৯১৩৮৬

প্রজেক্টর বা ডিজিটাল পর্দার মাধ্যমে বক্তাকে দেখা মহিলাদের কতটুকু শরীয়তসম্মত?


২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

নওগাঁ

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ আল কাউসার

৭৭৫৮৪

দুই জোড়া মেয়ে/ ছেলে/ একজন ছেলে একজন মেয়ে যাদেরকে অপারেশন করে পৃথক করা যায় না? বিবাহের বিধান কি?


৪ নভেম্বর, ২০২৪

ঢাকা

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী

৩৯০৭৮

ঘৃণার কারণে কোনো মুসমানের জানাযায় শরীক না হওয়া


১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

ঢাকা

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy