আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

সহশিক্ষা কি জায়েয?

প্রশ্নঃ ৫২৫৯৫. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আমি একজন মেয়ে, বর্তমানে একটি সহশিক্ষার পরিবেশের ভার্সিটিতে পড়ছি। আমি আমার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে বলছি, আমি কি মাজুর? পড়া যাবে? নাকি ছেড়ে দিতে হবে জানাবেন ইংশাআল্লহ। অফলাইনে ফতোয়া কিভাবে পাবো আমার উপায় জানা নেই, তাই অনলাইনে জিজ্ঞেস করছি। সাহায্যের আশা করছি। (আমি খুলনা সদরে থাকি তাই অফলাইনে কিভাবে ফতোয়া পাবো এটা জানালেও উপকৃত হব) আমরা ২ ভাই বোন, আব্বু বেসরকারি চাকরি করে কিন্তু বেশিদিন করতে পারবেন না, ভাইয়া ব্যাবসা শুরু করেছে বেশিদিন হয়নি, আলহামদুলিল্লাহ, কিন্তু পরিবার চালানোর মতো ইনকামও হয় না, আরও সিজনাল ব্যাবসা, যা ইনকাম হয় তার দ্বিগুণেরও বেশি খরচ, তাই আব্বুর চাকরি ছাড়ার পর এই ব্যাবসা দিয়ে হয়তো পরিবারের খরচ উঠবে না, বর্তমান অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে এটা বুঝেছি, অবশ্যই আল্লাহ ভালো জানেন। আর ভাইয়ার একাডেমিক পড়াশোনা কম আর ও সিরিয়াস না পরিবারের দায়িত্ব যে নিতে হবে এই ব্যাপারে। আল্লাহ সঠিক বুঝ দান করুক। আমাদের জমি আছে, বেচার চেষ্টা চলছে কয়েক বছর ধরে কিন্তু হচ্ছে না, একটু সমস্যা ও আছে জমিতে, তাই জমি বিক্রি করে পরিবার চলতে পারবে কিনা এটারও কোনো ভরসা নেই। এমন পরিস্থিতিতে আমি পড়ালেখা ছাড়বো কি না বুঝতে পারছি না, জরুরত না পড়লে আমি চাকরি করবো না ইংশাআল্লহ, কিন্তু পরিবারের ভরণ পোষণের দায়িত্ব যদি নিতে হয় তখন কি করবো? এটা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছি, এরজন্য জানতে চাইছি আমি কি সত্যিই মাজুর, না কি আমার জন্য সহশিক্ষা হারাম? আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করি ভার্সিটিতে কোনো হারাম কাজে যুক্ত না হতে, প্রয়োজন ছাড়া কোনো পুরুষের সাথে কথা বলি না। পর্দা নিয়েও সমস্যা হয় না আলহামদুলিল্লাহ। তাও যা হারাম তা তো হারাম। আমাকে জানাবেন দয়া করে ইংশাআল্লহ আমার করনীয় কি।,

৪ মে, ২০২৪

খুলনা

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


এক. যে সব প্রতিষ্ঠানে ছেলে ও মেয়ে একত্রে একই স্থানে, একই বেঞ্চিতে পড়াশোনা করা হয়, সে সব প্রতিষ্ঠানে অপারগ না হলে পড়াশোনা করা জায়েয নয়। যেমন, এ ব্যাপারে আরব বিশ্বের সর্বোচ্চ ফতোয়া কমিটিকে জিজ্ঞাসা করা হলে তাঁরা উত্তর দিয়েছেন,

اختلاط الطلاب بالطالبات والمدرسين بالمدرسات في دور التعليم محرم لما يفضي إليه من الفتنة وإثارة الشهوة والوقوع في الفاحشة ، ويتضاعف الإثم وتعظم الجريمة إذا كشفت المدرسات أو التلميذات شيئاً من عوراتهن ، أو لبسن ملابس شفافة تشف عما وراءها ، أو لبسن ملابس ضيقة تحدد أعضاءهن ، أو داعبن الطلاب أو الأساتذة ومزحن معهم أو نحو ذلك مما يفضي إلى انتهاك الحرمات والفوضى في الأعراض

বিদ্যালয়গুলোতে পাঠদানকালীন ছাত্র-ছাত্রী শিক্ষক-শিক্ষিকার সহাবস্থান হারাম। কেননা, এটি ফেতনা, অবাধ যৌনতা ও অশ্লীলতার দিকে ধাবিত করে। এক্ষেত্রে যখন শিক্ষিকারা কিংবা ছাত্রীরা নিজেদের সতরের কোনো অংশ খোলা রাখে কিংবা অন্যের সামনে পিনপিনে পোশাক, অঙ্গভঙ্গী প্রকাশক আঁটসাঁট জামা পরিধান করে কিংবা তারা যখন ছাত্র-শিক্ষকদের সঙ্গে হাসি-ঠাট্রা ইত্যাদি করে তখন পাপাচার আরো বৃদ্ধি পায় এবং অপরাধ আরো বিশাল হয়ে ওঠে; যা সম্ভ্রমহানি ও ইজ্জত লুণ্ঠন পর্যন্ত গড়ায়। (ফাতাওয়া লাজনাতিদ্দায়িমা ১৭/৫৩)

দুই. সুতরাং সর্বতোভাবে একে পরিহার করার চেষ্টা করতে হবে। ছেলেরা ছেলেদের প্রতিষ্ঠানে এবং মেয়েরা মেয়েদের প্রতিষ্ঠানে পড়বে। বিশেষত মেয়েদের ক্ষেত্রে এর প্রতি সর্বোচ্চ লক্ষ রাখা ও গুরুত্ব দেয়া আবশ্যক। কেননা, আল্লাহ তাআলা বলেন,

زُيِّنَ لِلنَّاسِ حُبُّ الشَّهَوَاتِ مِنَ النِّسَاء

মানবকূলকে মোহগ্রস্ত করেছে নারী…। (সূরা আলি ইমরান ১৪)

রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,

مَا تَرَكْتُ بَعْدِي فِتْنَةً أَضَرَّ عَلَى الرِّجَالِ مِنْ النِّسَاءِ

আমি আমার পরে মানুষের মাঝে পুরুষদের জন্য নারীদের চাইতে অধিকতর ক্ষতিকর কোন ফিতনা রেখে যাই নি।(বুখারী ৪৮০৮ মুসলিম ২৭৪০)

ফাতাওয়া লাজনাতিদ্দায়িমাতে এসেছে,

فلا يجوز للمرأة أن تَدرس أو تعمل في مكان مختلط بالرجال والنساء ، ولا يجوز لوليها أن يأذن لها بذلك

সুতরাং মেয়েদের জন্য এমন প্রতিষ্ঠানে পড়া-লেখা কিংবা চাকরি করা জায়েয হবে না যেখানে নারী-পুরুষের সহাবস্থান রয়েছে এবং অভিবাকের জন্য জায়েয হবে না তাকে এর অনুমতি দেয়া। (ফাতাওয়া লাজনাতিদ্দায়িমা ১২/১৫৬)

তিন. একান্ত অপারগ অবস্থায় বা বিকল্প কোন পথ না পেলে এসব প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করা জায়েয আছে। কেননা, الضرورات تبيح المحظورات জরুরত নিষিদ্ধ কাজকে সিদ্ধ করে দেয়। (আলআশবাহ ওয়াননাযাইর ১/৭৮)

তবে সবোর্চ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি, যাতে পর্দা লঙ্ঘন বা আল্লাহর অসন্তুষ্টি মূলক কার্যক্রম সংঘটিত না হয়।

কেননা, আল্লাহ তাআলা বলেন,

فَاتَّقُوا اللَّهَ مَا اسْتَطَعْتُمْ

অতএব তোমরা যথাসাধ্য আল্লাহকে ভয় কর। (সূরা তাগাবুন ১৬)

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ শাইখ উমায়ের কোব্বাদী
সিনিয়র মুহাদ্দিস, মাদরাসা দারুর রাশাদ, মিরপুর
খতীব, বাইতুল ফালাহ জামে মসজিদ, মিরপুর

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

৮৭২৭৪

আনসার বাহিনীতে চাকুরিরত ব্যক্তির জন্য বিশেষ লোন নেওয়া কি জায়েয?


২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

ব্রাহ্মণবাড়িয়া

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী নাঈম সিদ্দীকী বিন আব্দুস সাত্তার

৭৭৭৮৭

জিমেইল ফেসবুক আইডি বিক্রি প্রসঙ্গ


২১ ডিসেম্বর, ২০২৪

গাজীপুর

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

৬৫৮২১

ডিমের বিনিময়ে ডিম কম বেশি করে বিক্রি করার হুকুম


২ জুলাই, ২০২৪

ঢাকা

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ আবু সাঈদ

৫৫২৫৫

হালাল হারাম


১৮ মার্চ, ২০২৪

টঙ্গী

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি মোহাম্মদ আমীর হোসাইন

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy