আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

দান খয়রাতের উত্তম পন্থা

প্রশ্নঃ ১১৪৬৫. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, দান খয়রাত কাদের কাদের করা যাবে। আপন আত্মীয় স্বজন দের মধ্যে কাদের দেওয়া যাবে। সদকা কাদের দেওয়া যাবে আর যাদের দিব তাদের এটা কি বাবদ দিলাম সেটা না জানিয়ে দেওয়া যাবে কি,,

২৩ জুন, ২০২৪
Brahmanbaria

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


( দান করার সময় এটা না বলাই ভালো যে তাকে এই অর্থ কেন দিচ্ছেন বা কি বাবদ দিচ্ছেন।)

দান মানুষের ভালো আমলগুলোর মধ্যে একটি। যে আমলের মাধ্যমে মানুষ আল্লাহর অতি আপন হয়ে যেতে পারে। তাই দান করার আগে অবশ্যই নিয়তকে ঠিক করে নিতে হবে। যাতে দানের একমাত্র উদ্দেশ্য হয় আল্লাহকে খুশি করা। মানুষের প্রশংসা পাবার জন্য নয়। কম হোক বেশি হোক দান-সদকা সবাই করে থাকে। তবে তা করতে হবে বৈধ উপায়ে অর্জিত সম্পদ দিয়ে। কেউ যদি হারাম উপায়ে অর্জিত সম্পদ দিয়ে দান করেন আর মনে করে আমি অনেক সওয়াবের অধিকারী হয়েছি তাহলে তিনি ভুল করবেন। মনে রাখতে হবে, আল্লাহ পবিত্র। আর তিনি পবিত্র জিনিস ছাড়া অন্য কিছু গ্রহণ করেন না।

যেভাবে দান করা উচিত : সামর্থ্য অনুযায়ী দান করতে হবে। অনেক সময় অনেকেই দানের পরিমাণ অল্প হওয়ায় দান করতে আগ্রহী হন না বা দান করতে লজ্জা পান। এটা ঠিক নয়। কারণ বান্দার অন্তরের কথা আল্লাহর চেয়ে ভালো আর কেউ জানে না। যদি দানের পরিমাণ অল্পও হয় আর সেখানে বান্দার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা থাকে, তাহলে আল্লাহ অবশ্যই তার দানে খুশি হয়ে যাবেন। তাই সওয়াবের নিয়তে খুশি মনে নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী নিয়মিত দান করার চেষ্টা করতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে, শয়তান যেন আমাদের ধোঁকায় ফেলে আমাদের উত্তম দানকে নষ্ট করে না দেয়। এজন্য আমাদের দান-সদকাকে সবসময় দুনিয়াবী স্বার্থের বাইরে রাখতে হবে।

যাদের দান করা উচিত : দান করতে গেলে সবার আগে আপনজনকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। কারণ তাদের দান করলে দ্বিগুণ সওয়াব পাওয়া যায়। এক. দানের সওয়াব, দুই. আত্মীয়স্বজনের হক আদায় হয়ে যায়। নিজের আপনজনের পরে পাড়া-প্রতিবেশীদের দিকেও নজর রাখতে হবে। কারণ প্রতিবেশী হিসেবে আমার উপর তাদেরও হক রয়েছে। অনেক সময় আমরা ভিন্ন ধর্মাবলম্বী দেখে তাদের সাহায্যে এগিয়ে যাই না। মনে করি, এ দানে কোনো সওয়াব নেই। এটি একটি ভুল ধারণা। আমাদের প্রতিবেশী সে যদি ভিন্ন অন্য ধর্মেরও হয় তবুও সে সাহায্যপ্রার্থী হলে তার দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। যাদের অভাব-অনটন রয়েছে তাদের দিকে আমাদের সবসময় খেয়াল রাখতে হবে। সবার আগে আমার দান হক রয়েছে আপনজনের। কিন্তু যদি দেখা যায় সে অতটা গরিব নয়। এর চেয়ে বরং এই দানটা যদি আমি অন্য একজন প্রতিবেশীকে করি যে আমার আপনজন নয় অথচ খুব দরিদ্র তাহলে সে খুব উপকৃত হবে। এমন ক্ষেত্রে যার প্রয়োজন বেশি তাকেই অগ্রাধিকার দিতে হবে।

দান করার উত্তম পদ্ধতি : মনে রাখতে হবে, গোপনে দান আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়। তবে প্রকাশ্যেও দান করা যায়। যে দানের মাধ্যমে অন্যরা উদ্বুদ্ধ হয়। মহৎ কাজের দিকে এগিয়ে আসে। এজন্য দানকারীর মনে কোনো প্রকার অহংকার থাকতে পারবে না। তার একমাত্র কাম্য হবে আল্লাহর সন্তুষ্টি।

যে বিষয়ে সতর্ক থাকা উচিত : এমন ব্যক্তিকে কখনোই দান করা যাবে না যে ব্যক্তি দানের মাধ্যমে প্রাপ্ত অর্থসম্পদ হারাম ও পাপের কাজে ব্যয় করবে। দান করা পুণ্যের কাজ, কিন্তু দানকারী যদি দানের পরে খোঁটা দেয় তাহলে দানের ফজিলত নষ্ট হয়ে যায়। এ কারণে ভুলেও এ ধরণের কাজ করা যাবে না। আর দান করে তা পুনরায় ফিরিয়ে নেওয়াও একেবারে নিষিদ্ধ।

অনেক সময় মানুষ স্বভাব দোষে নয়, অভাবে অন্যায়ের দিকে ধাবিত হয়। যদি দানের মাধ্যমে এমন ব্যক্তিদের ভালো পথে ফিরিয়ে আনা যায় তাহলে তাদেরও দান করা যাবে। প্রতিবেশী না হলেও ইসলামের দিকে আকৃষ্ট করার জন্য অমুসলিমকেও দান করা যায়।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে দান : কোরআন-হাদিসের শিক্ষা ও প্রচার-প্রসারের জন্য যে সকল দ্বীনি প্রতিষ্ঠান রয়েছে সেখানেও দান করা যায়। এই দান সদকায়ে জারিয়াহ হিসেবে কেয়ামত পর্যন্ত জারি থাকবে। এছাড়াও মসজিদ, মাদ্রাসা ও বিভিন্ন ধর্মীয় সামাজিক প্রতিষ্ঠান যারা মানুষ ও মানবতার খেদমকে কাজ করে আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে।

যেখানে দান করা উচিত নয় : কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য যারা শিরক ও বিদআতের সাথে লিপ্ত এমন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে কখনোই দান করা যাবে না। এতে কোনো রকমের সওয়াব হবে না, বরং এই কাজের সাহায্যকারী হিসেবে গুনাহগার হতে হবে।

মৃত ব্যক্তির নামে দান : অনেকে দেখা যায় মা-বাবা বা মৃত অন্য আত্মীয়স্বজনের রূহের মাগফিরাতের জন্য দান করে থাকেন। এতে ঐ ব্যক্তি দানের সওয়াব পেয়ে যান। এক্ষেত্রে সদকায়ে জারিয়ামূলক কাজ দান করাই উত্তম। যেমন মসজিদ, মাদ্রাসা নিমার্ণ। যে কোনো বৈধ ও সওয়াবমূলক সামাজিক কাজে সেই ব্যক্তির নামে কোনো অবদান রাখলে তাতেও সে দীর্ঘমেয়াদে সওয়াব লাভ করতে পারবেন।

দানের বিশেষ সময় : সারাবছর দান করা গেলেও রমজান মাসে দান করলে অধিক পরিমাণে সওয়াব লাভ করা যায়। এ কারণে রাসূল (সা.) রমজান মাসে অধিক পরিমাণে দান করতেন।

আমাদের সমাজের একটা কুসংস্কার হয়ে দাঁড়িয়েছে মানুষ দানকারীর দরজায় ভিড় জমায়। আর দানকারী নিজের বড়ত্ব প্রকাশের সবরকম আয়োজন করে থাকে। এটি দানের সঠিক পদ্ধতি নয়, বরং দারকারীর উচিত নিজেকেই পাড়া, মহল্লা ও সমাজের অভাবী মানুষদের খুঁজে বের করে গোপনে তাদের সাহায্য করা। এতে যেমন দানকারী অনেক সওয়াব পায় তেমনি যাকে দান করা হয় সেও মানসিকভাবে ও সামাজিকভাবে ছোট হয় না। আর প্রকৃত অভাবীরা বেরিয়ে আসে। দেখা যায়, একশ্রেণির মানুষ আছে যাদের অনেক থাকার পরেও নিজেদের অভাবী বানিয়ে রাখে, আরেক শ্রেণির মানুষ যাদের কিছু না থাকার পরেও লোক লজ্জার ভয়ে মানুষের দ্বারে যেতে পারে না। এরাই সবচেয়ে অসহায় হয়ে পড়ে থাকে। তাই প্রকৃত অভাবী ও দান গ্রহণের হকদার ব্যক্তিকে বাছাই করে গোপনে তাকে দান করতে হবে। এতেই বান্দার জন্য অধিক কল্যাণ নিহিত।

والله اعلم بالصواب

মুসলিম বাংলা ফাতওয়া বিভাগ
প্রসঙ্গসমূহ:

মন্তব্য (0)

কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!

মন্তব্য করতে লগইন করুন