আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত রজম ও দুধপানের আয়াত সম্পর্কিত হাদিস নিয়ে বিভ্রান্তির নিরসন
প্রশ্নঃ ১১৩৮০. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রজম সম্পর্কিত আয়াত এবং বয়স্ক লোকেরও দশ ঢোক দুধপান সম্পর্কিত আয়াত নাযিল হয়েছিল, যা একটি সহীফায় (লিখিত) আমার খাটের নিচে সংরক্ষিত ছিল। যখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইন্তিকাল করেন এবং আমরা তাঁর ইন্তিকালে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়লাম, তখন একটি ছাগল এসে তা খেয়ে ফেলে। [১৯৪৪]ফুটনোটঃ [১৯৪৪] মাজাহ ১৯৪৪ সহীহুল বুখারী ১৪৫২, নাসায়ী ৩৩০৭, ২০৬২, মুয়াত্তা মালেক ১২৯৩, দারেমী ২২৫৩, তা’লীক ইবনু মাজাহ। এই হাদিসের ব্যাখা কি?,
১১ অক্টোবর, ২০২৩
ঢাকা
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
প্রিয় প্রশ্নকারী!
আপনার প্রশ্নের উত্তরের জন্য এবং সকলের অবগতির জন্য আমরা একটি দীর্ঘ প্রবন্ধ তুলে ধরছি। আশা করে ধৈর্যের রাথে প্রবন্ধটি পাঠ করে আপনার উত্তর জেনে নিবেন।
রজম ও দুধপানের আয়াত ছাগলে খেয়ে ফেলায় কুরআন কি বিকৃত? নাস্তিকদের বিভ্রান্তির জবাব।
***************************************
রজম সম্পর্কিত অভিযোগের জবাব:
নাস্তিকরা যে হাদিসটি দেখিয়ে দাবি করে কুরআন বিকৃত তা নিচে দেয়া হলো:
حَدَّثَنَا أَبُو سَلَمَةَ يَحْيَى بْنُ خَلَفٍ حَدَّثَنَا عَبْدُ الْأَعْلَى عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ إِسْحَقَ عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ أَبِي بَكْرٍ عَنْ عَمْرَةَ عَنْ عَائِشَةَ و عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ الْقَاسِمِ عَنْ أَبِيهِ عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ لَقَدْ نَزَلَتْ آيَةُ الرَّجْمِ وَرَضَاعَةُ الْكَبِيرِ عَشْرًا وَلَقَدْ كَانَ فِي صَحِيفَةٍ تَحْتَ سَرِيرِي فَلَمَّا مَاتَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَتَشَاغَلْنَا بِمَوْتِهِ دَخَلَ دَاجِنٌ فَأَكَلَهَا.
আয়েশা (রা:) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, রজম সম্পর্কিত আয়াত এবং বয়স্ক লোকের দশ ঢোক দুধপান সম্পর্কিত আয়াত নাযিল হয়েছিল, যা একটি সহীফায় (লিখিত) আমার খাটের নিচে সংরক্ষিত ছিল। যখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইন্তিকাল করেন এবং আমরা তাঁর ইন্তিকালে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়লাম, তখন একটি ছাগল এসে তা খেয়ে ফেলে। (সুনান ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ১৯৪৪।)
নাস্তিকরা উপরোক্ত এই হাসান হাদিসটি দেখিয়ে দাবি করে যে, কুরআনের রজম ও দুধপানের আয়াত ছাগলে খেয়ে নিয়েছে এবং আয়াতগুলো বর্তমান কুরআনে নেই। কাজেই কুরআন বিকৃত (নাউজুবিল্লাহ)!!
পাঠক, আপনার কি মনে হয় যারা গোটা কুরআন মুখস্থ করে রাখতে পারে, তারা কেবল দুই একটা আয়াত মনে রাখতে পারবে না!? অসংখ্য সাহাবি রাসুলুল্লাহ (সা.) এর সাথে থাকতেন। কুরআনের কোনো অংশ অবতীর্ণ হলে লেখার আগে সঙ্গেসঙ্গে তা মুখস্থ করে নিতেন। রাসুল (সা.) এর যুগ থেকে আজ পর্যন্ত কোনো যুগই কুরআনের হাফেজ ছাড়া নেই। কেবল বাংলাদেশেই আছে ৬ লক্ষ হাফেজ (কুরআন মুখস্থকারী)। সারা বিশ্বে আরো লক্ষ লক্ষ হাফেজ আছে। রজমের আয়াত নাজিল হয়েছিলো সাময়িক সময়ের জন্য সাহাবিদের বিধান দিতে। ওই আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার সময়ই রাসুল (সা.) কুরআনের অংশ হিসেবে তা লিপিবদ্ধ করতে নিষেধ করেছিলেন।
কাসির বিন সালত (রহ.) থেকে বর্ণিত, জায়েদ ইবনে সাবিত (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি যে, “যখন কোন বিবাহিত পুরুষ অথবা মহিলা ব্যভিচার করে, তাদের উভয়কে রজম কর।”(এটি শুনে) আমর বলেন, “যখন এটি নাজিল হয়েছিল, আমি নবী (সা.)-এর নিকট আসলাম এবং এটি লিপিবদ্ধ করব কিনা তা জানতে চাইলাম। তিনি তা অপছন্দ করলেন। (আল মুসতাদরাক লি হাকিম, হাদিস নং ৮১৮৪) পরবর্তীতে এ বিধান সাহাবিদের অন্তরে গেঁথে গেল। সাহাবিরা অভ্যস্ত হয়ে যাওয়া পর রজমের আয়াতের তিলাওয়াত আল্লাহ রহিত করে দেন। কিন্তু বিধান বহাল রাখেন।
উমার (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট গিয়েছিলেন এবং জিজ্ঞেস করেছিলেন, “হে আল্লাহর রাসুল! আমাকে রজমের আয়াতটি লিখে দেওয়া হোক। নবী মুহাম্মাদ (সা.) বললেন,'আমি তা করতে পারব না। (সুনানুল কুবরা বাইহাকী ৮/২১১ এবং সুনানুল কুবরা নাসাঈ হাদিস নং ৭১৪৮) # তাহক্বীক আলবানী: সহীহ।
অর্থাৎ, রজমের আয়াতের তিলাওয়াত রহিত। এ কারণে এটি কুরআনে নেই।
রজমের আয়াত যে কুরআনের অংশ নয় তা নিন্মোক্ত হাদিস থেকে আরো ভালোভাবে বোঝা যায়।বরং রজমের আয়াত কুরআনে যোগ করলেই উল্টো কুরআনকে বিকৃত করা হয়,
حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ مَنِيعٍ، حَدَّثَنَا إِسْحَاقُ بْنُ يُوسُفَ الأَزْرَقُ، عَنْ دَاوُدَ بْنِ أَبِي هِنْدٍ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ الْمُسَيَّبِ، عَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ، قَالَ رَجَمَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَرَجَمَ أَبُو بَكْرٍ وَرَجَمْتُ وَلَوْلاَ أَنِّي أَكْرَهُ أَنْ أَزِيدَ فِي كِتَابِ اللَّهِ لَكَتَبْتُهُ فِي الْمُصْحَفِ فَإِنِّي قَدْ خَشِيتُ أَنْ تَجِيءَ أَقْوَامٌ فَلاَ يَجِدُونَهُ فِي كِتَابِ اللَّهِ فَيَكْفُرُونَ بِهِ . قَالَ وَفِي الْبَابِ عَنْ عَلِيٍّ . قَالَ أَبُو عِيسَى حَدِيثُ عُمَرَ حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ وَرُوِيَ مِنْ غَيْرِ وَجْهٍ عَنْ عُمَرَ .
উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রজমের আইন বাস্তবায়ন করেছেন, আবূ বাকর (রাঃ)-ও রজমের আইন বাস্তবায়ন করেছেন এবং রজমের আইন আমিও বাস্তবায়ন করছি। আল্লাহ তা‘আলার কিতাবের মধ্যে যদি কোন কিছু যোগ করাকে আমি নিষিদ্ধ মনে না করতাম তবে অবশ্যই এই বিধান মাসহাফে (কুরআনে) লিখে দিতাম। কেননা আমার ভয় হয় যে, পরবর্তী সময়ে মানব জাতির এমন দল আসবে যারা এই হুকুম আল্লাহ তা‘আলার কিতাবে না দেখতে পেয়ে তা অস্বীকার করবে। (জামে আত-তিরমিজি, হাদিস নং ১৪৩১)
এই হাদিস থেকে বোঝা যায় রজমের আয়াত কুরআনের অংশ নয়। আর একারণেই উমর (রা.) সেটি কুরআনে যোগ করেননি।
সুন্নি জামাত রজম অস্বীকার করে না। এর তিলাওয়াত রহিত হলেও রজমের বিধান কিয়ামত পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। কিন্তু খারেজী, মুতাজিলা ও আহলে কুরআন সম্প্রদায় কুরআনে রজমের আয়াত না থাকার কারণে রজমকে অস্বীকার করে থাকে। উমর (রা.) এদের ব্যাপারেই শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তিলাওয়াত রহিত হওয়া সত্ত্বেও কুরআনের সেই রজমের আয়াতটি মোটেও হারিয়ে যায়নি। আয়াতটি আলাদাভাবে সংরক্ষিত। রজমের আয়াতটি হলো:- الشيخ والشيخة إذا زنيا فارجموهما البتة. (ইবনে মাজাহ/২৫৫৩, মুস্তাদরাকে হাকিম/৮১৮৪) আর আয়াতটি একেবারে হারিয়ে গেলেও তা কুরআনের বিশুদ্ধতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতো না।
পাঁচ ঢোক দুধপানের আয়াত নিয়ে আপত্তি
নাস্তিকরা নিম্নোক্ত হাদিস দেখিয়ে দাবি করে থাকে যে, কুরআনে পাঁচ ঢোক দুধপানের আয়াত নেই। কাজেই কুরআন বিকৃত (নাউজুবিল্লাহ)।
حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ يَحْيَى، قَالَ قَرَأْتُ عَلَى مَالِكٍ عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي بَكْرٍ، عَنْ عَمْرَةَ، عَنْ عَائِشَةَ، أَنَّهَا قَالَتْ كَانَ فِيمَا أُنْزِلَ مِنَ الْقُرْآنِ عَشْرُ رَضَعَاتٍ مَعْلُومَاتٍ يُحَرِّمْنَ . ثُمَّ نُسِخْنَ بِخَمْسٍ مَعْلُومَاتٍ فَتُوُفِّيَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَهُنَّ فِيمَا يُقْرَأُ مِنَ الْقُرْآنِ
হজরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, কুরআনে এ আয়াতটি নাযিল হয়েছিল (আরবী) “দশবার দুধপানে হারাম সাব্যস্ত হয়”। অতঃপর তা রহিত হয়ে যায় (আরবী)-এর দ্বারা “পাঁচবার পান দ্বারা হারাম সাব্যস্ত হয়।” অতঃপর রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইন্তিকাল করেন অথচ ঐ আয়াতটি কুরআনের আয়াত হিসেবে তিলাওয়াত করা হত।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৩৪৮৯)
কিন্তু এই হাদিস থেকে কোনোভাবেই এটা প্রমাণিত হয় না যে, পাঁচ ঢোক দুধপানের আয়াত কুরআনের অংশ। বরং হাদিসের ব্যাখ্যাগ্রন্থগুলো খুলে দেখবেন, পাঁচ বার দুধপানের আয়াতও রহিত হয়েছিলো। অনেকেই সেই খবর জানতো না। কারণ তৎকালীন যুগে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত ছিলো না। একটা খবর ছড়াতে বহু সময় লাগতো। ফলে না জানার কারণে অনেক লোক রাসুল (সা.)-এর মৃত্যুর পরেও তা তিলাওয়াত করতো। রহিত হওয়ার খবর জানার পর তিলাওয়াত করে বাদ দিয়ে দেয়।
রহিত হওয়ার প্রমাণ
পাঁচ ঢোক দুধপানের আয়াতও যে রহিত হয়েছিলো, তা বিভিন্ন হাদিস থেকে প্রমাণিত হয়। যেমন:-
حَدَّثَنَا عَبْدُ الْوَارِثِ بْنُ عَبْدِ الصَّمَدِ بْنِ عَبْدِ الْوَارِثِ حَدَّثَنَا أَبِي حَدَّثَنَا حَمَّادُ بْنُ سَلَمَةَ عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ الْقَاسِمِ عَنْ أَبِيهِ عَنْ عَمْرَةَ عَنْ عَائِشَةَ أَنَّهَا قَالَتْ كَانَ فِيمَا أَنْزَلَ اللهُ مِنْ الْقُرْآنِ ثُمَّ سَقَطَ لَا يُحَرِّمُ إِلَّا عَشْرُ رَضَعَاتٍ أَوْ خَمْسٌ مَعْلُومَاتٌ.
হজরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, প্রথমদিকে কুরআনে এই বিধান ছিলো, যা পরে রহিত হয়ে যায়ঃ দশ ঢোক বা পাঁচ ঢোক দুধ পানের কমে নিষিদ্ধতা প্রতিষ্ঠিত হয়। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস ১৯৪২)
অতীতে বিধান ছিল দশ বা পাঁচ ঢোকের কম দুধ পান করলে বিবাহ হারাম হয় না। কিন্তু উপরোক্ত হাদিস অনুযায়ী এই বিধান রহিত হয়েছে। অর্থাৎ, এখন পাঁচ ঢোকের কম দুধ পান করলেও বা কোনোভাবে দুধ পেটে গেলেই বিবাহ হারাম হবে। সুতরাং, এই হাদিস দ্বারা পাঁচ ঢোকের বাধ্যবাধকতার বিধানও স্পষ্টভাবে রহিত প্রমাণিত হয়। এছাড়া ইমাম মালিক (রহ.) বলেন, পাঁচবারের উপর আমল নেই। দুগ্ধ পান অল্প হোক বা বেশি হোক বিবাহ সম্পর্ক হারাম করবে। (মুয়াত্তা ইমাম মালিক, হাদিস নং-১২৬৫) উম্মতের সকল আলেমগণ এ ব্যাপারে একমত।
নিম্নোক্ত হাদিস থেকেও প্রমাণিত হয় যে, দুধপান অল্প হোক বা বেশী- তা বিবাহ হারাম করে। অর্থাৎ পাঁচ ঢোকের কোনো বাধ্য বাধকতা নেই।
أَخْبَرَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ بَزِيعٍ، قَالَ: حَدَّثَنَا يَزِيدُ يَعْنِي ابْنَ زُرَيْعٍ، قَالَ: حَدَّثَنَا سَعِيدٌ، عَنْ قَتَادَةَ، قَالَ: كَتَبْنَا إِلَى إِبْرَاهِيمَ بْنِ يَزِيدَ النَّخَعِيِّ، نَسْأَلُهُ عَنِ الرَّضَاعِ، فَكَتَبَ أَنَّ شُرَيْحًا، حَدَّثَنَا أَنَّ عَلِيًّا، وَابْنَ مَسْعُودٍ، كَانَا يَقُولَانِ: «يُحَرِّمُ مِنَ الرَّضَاعِ قَلِيلُهُ وَكَثِيرُهُ» وَكَانَ فِي كِتَابِهِ، أَنَّ أَبَا الشَّعْثَاءِ الْمُحَارِبِيَّ، حَدَّثَنَا أَنَّ عَائِشَةَ، حَدَّثَتْهُ أَنَّ نَبِيَّ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَقُولُ: «لَا تُحَرِّمُ الْخَطْفَةُ وَالْخَطْفَتَانِ»
• কাতাদা (রহঃ) থেকে বর্ণিত: আমরা ইবরাহীম ইব্ন ইয়াযীদ নখঈকে (রহঃ) দুধপান সম্বন্ধে প্রশ্ন করে লিখেছিলাম। (উত্তরে) তিনি লিখলেন, শুরায়হ (রহঃ) আমাদেরকে বর্ণনা করেছেন, আলী (রাঃ) এবং ইব্ন মাসঊদ (রাঃ) বলতেন: দুধপান অল্প হোক অথবা অধিক হোক, তা (বিবাহ) হারাম করে। (সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ৩৩১১)
পাঁচবার দুধপানের বিধানটি যে একটি মানসুখ বা রহিত বিধান, এ ব্যাপারে স্বয়ং উম্মুল মু’মিনিনগণ থেকেও একটি বর্ণনা রয়েছে।
“ সাহলা বিনত সুহাইল (রা.) ছিলেন আমির ইবনে লুয়াই গোত্রের, তিনি রাসুল(ﷺ) এর কাছে আসলেন এবং বললেন, হে আল্লাহর রাসুল, সালিমকে আমরা পুত্ররূপে গ্রহন করেছিলাম। সে আমার কক্ষে প্রবেশ করে এই অবস্থায় যখন আমি একটি কাপড় পরিধান করে থাকি (অর্থ্যাৎ মাথা খালি থাকে)। আর আমার ঘরও মাত্র একটি। এ ব্যাপারে আপনার মতামত কী?তখন রাসুল(ﷺ) বললেন এ বিষয়ে আমাদের কথা হল তাকে পাঁচবার দুধপান করাও। নবী (ﷺ) এর অন্যান্য সহধর্মিণী এই প্রকার দুধপানের দ্বারা কোন পুরুষের তাদের নিকট প্রবেশ করাতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করতেন। তারা বলতেন আয়িশা (রা.)-কে উদ্দেশ্য করে আল্লাহর কসম, আমরা মনে করি রাসুল (ﷺ) সাহলা বিনতে সুহেইল (রা.)-কে যে অনুমতি দিয়েছিলেন তা কেবলমাত্র সালিম (রা.) এর জন্য রাসুল (ﷺ) এর পক্ষ থেকে রুখসত (বিশেষ অনুমতি) ছিল। কসম আল্লাহর, এইরূপ দুধপান করানোর দ্বারা কেউ আমাদের নিকট প্রবেশ করতে পারবেনা। নবী করীম(ﷺ) এর সকল সহধর্মিণী এই মতের উপর অটল ছিলেন। (সুনান আবু দাউদ: ২/২২৩, হাদিস ২০৬১)
অর্থাৎ, পাঁচবার দুধপানের বিষয়টিও রহিত। পাঁচঢোক দুধপানের আয়াতটি সূরা নিসার ২৩ নাম্বার আয়াত দ্বারা রহিত হয়, যেখানে দুধপানের বাধ্যবাধকতার কোনো সীমা নেই। এছাড়া উল্লেখ্য, যতদিন ধরে কুরআন সংকলন হয়েছে, আয়েশা (রা.) তাঁর পূর্ণ সময় জীবিত ছিলেন। আবু বকর (রা.) কর্তৃক সংকলন ও উসমান (রা.) কর্তৃক সংকলন উভয় সময়েই আয়িশা (রা.) একজন গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শদাতা ছিলেন। বিশেষত উসমান (রা.) কর্তৃক কুরআন সংকলনের সময়ে আয়িশা (রা.) এর নিকট থেকে সংকলন কর্ম যাচাই করা হত। (তারীখুল মাদীনাহ, ইবনে শাব্বা পৃ: ৯৯৭)
সত্যিই যদি কুরআনের আয়াত হারিয়ে যাবার মত এমন মহাদুর্ঘটনা ঘটতো, তাহলে আয়েশা (রা.) অবশ্যই সে ব্যাপারে সাহাবীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতেন। সে সময়ে প্রচুর পরিমাণে হাফিজ সাহাবী জীবিত ছিলেন যাঁরা স্বয়ং রাসুলুল্লাহ(ﷺ) এর কাছ থেকে কুরআন শিখেছেন। কিন্তু আয়েশা (রা.) কখনোই এমন কিছু করেননি। আজও যদি কুরআনের সকল লিখিত পাণ্ডুলিপি, পিডিএফ কপি, অনলাইন কুরআন, কুরআনের মোবাইল এ্যাপস—এসব কিছই ধ্বংস করে ফেলা হয়, তাহলেও কুরআনের একটি অক্ষর হারিয়ে যাবে না। কেননা কোটি কোটি কুরআনের হাফেজ সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে আছেন। তাঁদের স্মৃতি থেকে আবারও সম্পূর্ণ কুরআন পুনরুদ্ধার করা যাবে।
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
اِنَّا نَحۡنُ نَزَّلۡنَا الذِّکۡرَ وَ اِنَّا لَهٗ لَحٰفِظُوۡنَ
আমি স্বয়ং এ উপদেশগ্রন্থ (কুরআন) অবতীর্ণ করেছি এবং আমি নিজেই এর সংরক্ষক।" (সূরা: হিজর, আয়াত: ৯)
আল্লাহ তা’আলা প্রিয় নবী (ﷺ)-কে আরো বলেন:
وأنزلت عليك كتابا لا يغسله الماء
• “আমি তোমার উপর কিতাব নাজিল করেছি যা পানি যাকে ধুয়ে দিতে পারবে না। (সহীহ মুসলিম হাদিস নং ২৮৬৫)
পানি দ্বারা সেই জিনিস ধুয়ে দেওয়া সম্ভব যা কাগজের ওপর কালি দিয়ে লেখা হয়। যা স্মৃতিতে সংরক্ষিত থাকে, তা ধুয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। সুতরাং, কুরআন সর্ব-যুগেই অবিকৃত কিতাব তা প্রমাণিত।
লিখেছেন: Nabil Khan Nebuda.
والله اعلم بالصواب
বাইতুল কুরআন মাদারাসা , মোহাম্মাদপুর
মন্তব্য (০)
কোনো মন্তব্য নেই।
এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর
৫৬২৮০
২০+ দিন কি কারো হায়েজ হতে পারে?!!
২৮ মার্চ, ২০২৪
চট্টগ্রাম

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি
সাম্প্রতিক প্রশ্নোত্তর
মাসায়েল-এর বিষয়াদি
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে