কারবালা কি? কারবালা দ্বারা কি বুঝায়? বিস্তারিত আলোচনা করলে ভালো হয়।
প্রশ্নঃ ১১১৮৬৬. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, কারবালা কি? কারবালা দ্বারা কি বুঝায়? বিস্তারিত আলোচনা করলে ভালো হয়।,
২১ জুলাই, ২০২৫
ঢাকা ১২০৭
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
ভূমিকা:
ইসলামের ইতিহাসে এমন কিছু ঘটনা রয়েছে, যা কেবল ইতিহাসের পাতা নয়, বরং কোটি মুসলমানের হৃদয়ে চিরস্থায়ী দাগ কেটে রেখেছে। এমনই এক বেদনাবিধুর অধ্যায় হলো কারবালার ঘটনা। এটি শুধু একটি যুদ্ধ বা রাজনৈতিক সংঘর্ষ নয়—বরং এটি ছিল হক ও বাতিলের মাঝে এক অসামান্য সংঘাত, ন্যায়বোধ, ত্যাগ, এবং আল্লাহর রাহে ধৈর্য ও সত্যের উপর অবিচল থাকার এক অমর দৃষ্টান্ত।
কারবালার প্রান্তরে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দৌহিত্র, জান্নাতের যুবকদের নেতা হযরত হুসাইন (রাদিয়াল্লাহু আনহু) তাঁর পরিবার-পরিজন ও সঙ্গীদের নিয়ে শাহাদাত বরণ করেন। তাঁদের এই আত্মত্যাগ কিয়ামত পর্যন্ত মুসলিম উম্মাহর জন্য এক অন্তঃপ্রাণ শিক্ষা হয়ে থাকবে। সত্যের পথে কোনো আপস নয়, অন্যায়ের সামনে কোনো মাথানত নয়।
আজকের এই অন্ধকারাচ্ছন্ন যুগে, যখন সত্য কথা বলাও দুঃসাহসিক হয়ে উঠেছে, তখন কারবালার শিক্ষা আমাদের বাতিঘরের মতো পথ দেখায়। সেই মহাবিপদের মুখেও হযরত হুসাইন ((রাযি.)) অন্যায়ের সাথে আপস করেননি। তাঁর রক্তে লেখা হয়েছে ইসলামের এক উজ্জ্বল ইতিহাস, যে ইতিহাস কেবল মুসলমানদের নয়, সমগ্র মানবতার জন্য এক চিরন্তন শিক্ষা।
মূল ঘটনা বুঝার পূর্বে সংক্ষেপে নবুওয়াতের পর খেলাফত সম্পর্কে সামান্য ধারণা রাখা জরুরী।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَمَاۤ اَرۡسَلۡنٰکَ اِلَّا رَحۡمَۃً لِّلۡعٰلَمِیۡنَ (হে নবী!) আমি তোমাকে বিশ্ব জগতের জন্য কেবল রহমত করেই পাঠিয়েছি। (সূরা আম্বিয়া, আয়াত: ১০৭)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমস্ত মানবজাতির জন্য রহমত স্বরূপ। এটি একটি স্বতঃসিদ্ধ বিষয়। তিনি ৪০ বছর বয়সে নবুয়ত লাভ করেন এবং ২৩ বছর নবুয়তের কাজ আঞ্জাম দেন। এরপর হিজরি ১১ সনে ইহজগৎ ত্যাগ করে রফিকে আলার ডাকে সাড়া দেন। ইন্তেকালের পূর্বে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম তার দায়িত্ব কিভাবে চলবে তার প্রতি ইঙ্গিতও করে দিয়েছেন। হাদীসে আসছে, : "الخلافة في أمتي ثلاثون سنة، ثم ملك بعد ذلك" (খিলাফতের সময়কাল হবে ৩০ বছর, এরপর হবে রাজত্ব)। (তিরমিযি, হাদীস: ২২২৬)
খেলাফতের সংক্ষিপ্ত বিবরণ:
নবীজির ওপাতের পর ‘‘বাই‘আতের মাধ্যমে আবু বকর (রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু) ১ম খলিফা নিযুক্ত হন। তিনি দীর্ঘ ২ বছর, ৩ মাস, ১০ দিন খিলাফতের দায়িত্ব আঞ্জাম দিয়ে ১৩ হিজরিতে রফিকে আ‘লার ডাকে সাড়া দেন। । এরপর আবু বকর (রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু) এর বিশেষায়িত হিসেবে ওমর (রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু) ২য় খলিফা নিযুক্ত হন। তিনি দীর্ঘ ১০ বছর ৬ মাস ১০ দিন খিলাফতের দায়িত্ব আঞ্জাম দিয়ে ২৩ হিজরীতে রফিকে আ‘লার ডাকে সাড়া দেন। ।
ওমর (রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু) মৃত্যুর পূর্বে খেলাফতের দায়িত্ব ৬ জন শূরার কাছে রেখে যান। শূরার পরামর্শক্রমে হযরত উসমান (রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু) ৩য় খলিফা নিযুক্ত হন। তিনি দীর্ঘ ১১ বছর ১১ মাস ২৮ দিন খেলাফতের দায়িত্ব আঞ্জাম দিয়ে ৩৫ হিজরিতে রফিকে আ‘লার ডাকে সাড়া দেন। ((উল্লেখ্য, সাবাঈদের পূর্ণরুপে উত্থান শুরু হয়েছিলো হযরত উসমান রাযি. এর খেলাফত কালে। এই ভদ্র ও নম্র স্বভাবের সাহাবী ও খলীফাকে তারা তার্গেট করেই শহীদ করে। তাদের এই হত্যাযজ্ঞ গড়াতে গড়াতে হযরত উসমান হত্যা, জঙ্গে জামাল, জঙ্গে সিফফিন, হযরত আলীর শাহাদাত, হযরত হুসাইন ও আহলে বাইতের শাহাদাত পর্যন্ত গড়ায়। খিলাফত ধ্বংসের প্রকৃত ইতিহাস নিয়ে পড়লে বিস্তারিত জানা যাবে।))
এরপর মুহাজির সাহাবাদের বাই‘আতের মাধ্যমে হযরত আলী (রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু) ৪র্থ খলিফা নিযুক্ত হন। তিনি দীর্ঘ ৪ বছর ৯ মাস খেলাফতের দায়িত্ব আঞ্জাম দিয়ে ৪০ হিজরিতে রফিকে আ‘লার ডাকে সাড়া দেন।
ওনার পর শিয়ানে আলীরা হযরত হাসান (রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু)কে ৫ম খলিফা নিযুক্ত করেন। তিনি ৬ মাস খেলাফতের দায়িত্ব আঞ্জাম দিয়ে নিজ দায়িত্ব হযরত মুয়াবিয়া (রাদিয়াল্লাহু আনহু) এর হাতে হস্তান্তর করে ৪৯ বা ৫০ হিজরিতে রফিকে আ‘লার ডাকে সাড়া দেন।
উনার ইন্তেকালের মাধ্যমে খেলাফতে রাশেদার যুগের অবসান হয়।
এরপর মুয়াবিয়া (রাদিয়াল্লাহু আনহু) দীর্ঘ ৪১ থেকে ৬০ হিজরী পর্যন্ত ২০ বছর খেলাফতের দায়িত্ব আঞ্জাম দিয়ে ৬০ হিজরিতে রফিকে আ‘লার ডাকে সাড়া দেন।
তিনি মৃত্যুর আগে একাধিক সাহাবার পরামর্শ মতে ইয়াযিদকে শাসন ক্ষমতায় ন্যস্ত করে যান (প্রায় ১০টি শর্ত দিয়ে)। এই শর্তগুলো মুয়াবিয়া ((রাযি.))–এর ইখলাস ও লিল্লাহিয়্যাতের পরিচয় বহণ করে। এবং ইয়াযিদকে পরবর্তী খলীফা মনোনয়নের ক্ষেত্রেও স্পষ্ট। মৃত্যুর আগে তিনি ইয়াযিদকে ১০টি গুরুত্বপূর্ণ অসিয়ত করেছিলেন, যাতে ছিল একটি শাসকের জন্য পথনির্দেশনা ও আত্মসংশোধনের আহ্বান।
১. আল্লাহকে ভয় করবে; খিলাফতের দায়িত্ব তোমাকে অর্পণ করেছি, এ এক মহান আমানত।
২. ভালোভাবে দায়িত্ব পালন করলে তা আমার সৌভাগ্য, আর ব্যর্থ হলে সেটা তোমার দুর্ভাগ্য।
৩. জনগণের সঙ্গে সদাচরণ ও নম্রতা অবলম্বন করবে।
৪. নিজের বিরুদ্ধে সমালোচনা ও নিন্দা শুনলে উপেক্ষা করবে।
৫. সমাজের প্রভাবশালী ও অভিজাতদের প্রতি কঠোর হবে না; তাদের সম্মান রক্ষা করে নিকটবর্তী রাখবে।
৬. প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অভিজ্ঞ, ধার্মিক ও পরহেযগারদের পরামর্শ গ্রহণ করবে এবং তাদের মতামত উপেক্ষা করবে না।
৭. একগুঁয়েমি থেকে দূরে থাকবে; একমাথার চিন্তা সঠিক সিদ্ধান্তের নিশ্চয়তা নয়।
৮. নিজের নফসের সংশোধনে সচেতন থাকবে, তাহলেই মানুষও তোমার সঙ্গে ভালো আচরণ করবে।
৯. এমন কিছু করবে না, যাতে মানুষের অভিযোগের সুযোগ থাকে; কারণ, মন্দ খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
১০. জামাতে নামায আদায়ে মনোযোগী থাকবে।
শেষে তিনি বলেছিলেন: “এই উপদেশগুলো অনুসরণ করলে জনগণ তোমার হক বুঝবে এবং তোমার শাসন সুদৃঢ় হবে।”
(আল-বিদায়া ওয়ান্-নিহায়া: ১১/৬৪৪–৬৪৫)
কারবালার সংক্ষিপ্ত ঘটনাঃ
কারবালা পরিচিতি:
‘‘كربلاء; কারবালা’’ ইরাকের অন্তর্গত একটি শহর। এটি বাগদাদের ১০০ কি.মি. (৬২ মাইল) দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত। শহরটি কারবালা প্রদেশের রাজধানী।
কারবালা মূলত ঐতিহাসিক কারবালার যুদ্ধের কারণে বেশি পরিচিত। ইয়াযিদের শাসন আমলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দৌহিত্র ও হযরত আলী রাযি. এর পুত্র হযরত হুসাইন ইবনে আলী এই শহরে নির্মমভাবে শাহাদাতবরণ করেন। এজন্য এই ঘটনার মূল বিষয় দুজনকে ঘিরে। ১. হযরত হুসাইন ইবনে আলী রাযি., ২. ইয়াযিদ ইবনে মুয়াবিয়া,
হযরত মুয়াবিয়া (রাযি.) যখন ইয়াযিদকে খেলাফতের দায়িত্বের জন্য মনোনিত করে ইন্তেকাল করেন, তিনি ছিলেন দামেস্কে ও ইয়াযিদ সিরিয়ার হিমস (Homs) প্রদেশের হাওয়ারীন দূর্গে এবং খেলাফতের কাজটি তিনি উপস্থিত সাহাবাদের পরামর্শে করেন। কারণ তখন তাকওয়া ও খোদাভীতির দিক থেকে যদিও অনেক যোগ্য যোগ্য সাহাবায়ে কেরামরা ছিলেন, কিন্তু নেতৃত্ব দেয়ার মতো এবং সাবাঈ খারেজীদের হাত থেকে মুসলিম খেলাফতকে আত্মরক্ষার জন্য বড় বড় সাহাবায়ে কেরামের তুলনায় ইয়াযিদ তখন যোগ্য ও চৌকশ ছিলো। যার প্রমান বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যের রাজধানী কনস্টান্টিনোপল (ইস্তাম্বুল) অভিযান ৫২ হিজরিতে। তাছাড়া ইতিহাস তালাশ করলে দেখা যায় তখন পর্যন্ত ইয়াযিদের নামে কোন খারাপ আলাপ আলোচনাও শুনা যায়নি।
“সুতরাং মুয়াবিয়া (রাযিয়াল্লাহু আনহু) যখন ইয়াযীদকে খিলাফতের দায়িত্ব প্রদানের ইচ্ছা প্রকাশ করেন, তখন তিনি তার বিভিন্ন গুণাবলিই বিবেচনায় নেন। তিনি ইয়াযীদের মাঝে খেলাফতের উপযুক্ততা যাচাই করেন এবং সাহাবায়ে কেরামের পরামর্শ মোতাবেকই এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। অতএব, মুয়াবিয়া (রাযি.) এর মতো একজন কাতিবে ওহী ও মহান সাহাবী সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্য করা কি কোনো প্রকৃত মুসলিমের কাজ হতে পারে? নিঃসন্দেহে, তাঁর ব্যাপারে কথা বলার সময় আল্লাহকে ভয় করা অপরিহার্য।”
ইয়াযিদের শাসন ও হুসাইন ((রাযি.))-এর অবস্থান:
হযরত মুয়াবিয়া (রাযি.) ৬০ হিজরিতে ইন্তেকাল করেন এবং তার ছেলে ইয়াযিদকে শাসনের জন্য মনোনীত করেন। তখন নেতৃস্থানীয় কিছু সাহাবী ইয়াযিদের হাতে বাইআ’ত হননি, যেমন:
আব্দুর রহমান ইবনে আবু বকর,
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস
আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর,
আব্দুল্লাহ ইবনে জুবায়ের,
হুসাইন ইবনে আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহুম)
অবশ্যই পরবর্তীতে মুয়াবিয়া (রাযি.) এর ইন্তেকালের পূর্বে তিনি যখন ইয়াযিদকে পরবর্তী খলীফা নির্বাচনের বাইয়াত গ্রহণ করছিলেন, তখন হযরত আব্দুল্লাহ বিন উমর (রাযি.) এবং হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রাযি.) বিরোধীতা করলেও ইয়াযিদ খলীফা হয়ে যাবার পর তারা তাকে খলীফা হিসেবে মেনে নেন। তার বিরোধীতা করাকে পছন্দ করতেন না। হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আবু বকর (রাযি.) এর কথা শুনা গেলেও তিনি ইয়াযিদের খিলাফতের দায়িত্বের পূর্বেই ইন্তেকাল করেন।
হুসাইন (রাযি.) বাইআ’ত না হওয়ার প্রধান কারণ:
১. শুরা পদ্ধতি পরিহার করে বংশানুক্রমিক রাজত্ব প্রবর্তন।
২. ইয়াযিদের চরিত্র নিয়ে বিভিন্ন আলাপ আলোচনা। লোক মুখে প্রচলীত কথা। তথা তিনি মদপান করেন, নামায ত্যাগ করেন, নারীবাজী করেন ইত্যাদী
৩. ইয়াযিদের খেলাফত পাঁকাপুক্ত হয়নি এমন মর্মে একাধিক চিঠি আসা। ইত্যাদী
হুসাইন ((রাযি.))-এর মক্কা গমন ও কুফার দাওয়াত:
হযরত হুসাইন (রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু) মদিনায় থাকাকালীন তার কাছে আমিরে মুআবিয়া (রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু) এর খেলাফতকাল থেকেই কূফা হতে একাধিকবার পত্র আসে। সেখানকার উম্মতে মুসলিমার দায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলে নেয়ার জন্য। না তিনি সেগুলোর জবাব দিয়েছেন, না ইয়াযিদের প্রতি, না রাষ্ট্রের প্রতি বিদ্রোহের মনোভাব ছিল।
ক্ষমতা পাওয়ার পর সবচেয়ে বড় ভুল যেটি ইয়াযিদ করেন, তা হল, ইয়াযিদ বাবার ওসিয়াত ভঙ্গ করে তথা মুরুব্বী ও নেতৃস্থানীয় সাহাবায়ে কেরাম যারা বাইআ’ত হননি তাদেরকে দ্রুত বাইআ’ত হতে চাপ সৃষ্টি করেন।
মুআবিয়া (রাদিআল্লাহু তা'আলা আনহু) এর আজাদকৃত গোলাম রুযাইকে মদিনার গভর্নর ওলিদ ইবনে উতবার নিকট প্রেরণ করেন, যাতে ওলীদ হুসাইন ও ইবনে জুবায়ের (রাদিয়াল্লাহু আনহুমা)কে ডেকে দ্রুত তার হাতে বায়াত গ্রহণ করে। চাপাচাপির কারণে উভয়ে মদিনা ছেড়ে মক্কায় চলে যাওয়ার মনস্থ করেন। প্রথমে ইবনে জোবায়ের চলে যান। ১/২ দিন পর হুসাইন (রাযি.) পরিবারসহ মক্কায় চলে যাওয়ার মনস্থ করলেন। যাওয়ার আগে ইবনে ওমরকে কূফা থেকে আসা সকল পত্র দেখান। ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, হুসাইন (রাযি.) আপনি কোথাও যাবেন না, কূফীদের কাছে যাবেন না। কিন্তু তিনি কারো কথা শুনলেন না। (কারণ তিনার ইজতেহাদে বিষয়টি সংশোধন করা ও মুসলিম উম্মাহর মাঝে খেলাফতের মতো উঁচু একটি বিষয়কে বিতর্ক ও খেয়ানতের হাত থেকে বাঁচানো জরুরী মনে হয়েছে।)
ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু বিদায় মুহূর্তে হুসাইন (রাযি.) এর গলা জড়িয়ে ধরে অনেক কাঁদলেন। কেঁদে কেঁদে বললেন হে শহীদ! তোমাকে আল্লাহর কাছে সোপর্দ করলাম। তিনি ২৭ বা ২৮ রজব মক্কায় রওনা করেন। মক্কায় দীর্ঘ ৪ মাস ৫ দিন (৬০ হিজরির ৮ জিলহজ পর্যন্ত) অবস্থান করেন।
আব্দুল্লাহ ইবনে জোবায়ের ও হুসাইন (রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুমা) মক্কায় চলে যাওয়াতে ইয়াযিদ ক্ষিপ্ত হয়ে মদিনার গভর্নর ওয়ালিদ ইবনে ওতবাকে বরখাস্ত করেন। তার স্থলে আব্দুল্লাহ সাঈদ আল আসদাক যে কট্টর স্বভাবের অধিকারী ছিল তাকে নিয়োগ দেন। এদিকে মদিনার গভর্নর মক্কায় যারা তাদেরকে আশ্রয় দিয়েছেন তাদের উপর হামলার ঘোষণা দিয়েছেন যদিও হজের মাস হওয়াতে হামলা করতে সাহস করেননি।
অন্যদিকে হুসাইন (রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু) এর কাছে কূফা থেকে একাধিক চিঠি আসে যাতে বক্তব্য ছিল পুরো ইরাক ইয়াজিদের নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত। শুধু কূফার মাঝে এক লাখ অস্ত্রধারী হুসাইন (রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু) এর সহযোগিতায় প্রস্তুত। শুধু তাই নয় স্থানীয়রা কূফার গভর্নর নোমান বিন বশিরের পিছনে জুমা পড়া ছেড়ে দিয়েছে। লোকেরা হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু এর অনুরুক্ত এবং তাঁকে ছাড়া কারো উপর ভরসা করছে না। তারা শুধুমাত্র চিঠি পাঠিয়ে ক্ষ্যান্ত হয়নি বরং প্রতিনিধি দল প্রেরণ করে।
হুসাইন (রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু) এসব বিশ্বাস না করে যাচাইয়ের জন্য চাচাতো ভাই মুসলিম বিন আকিলকে সরে জমিনে পরিস্থিতি যাচাই করতে পাঠান। কূফিরা বিশাল শোডাউনের মাধ্যমে তাকে বরণ করেন। অল্প কয়েকদিনে প্রায় ১৮ হাজার লোক হুসাইন (রাদিয়াল্লাহু আনহু) এর নামে তার হাতে বাইআ’ত হন। যাতে মুসলিম বিন আকিল কূফিদের বিষয়গুলো সত্য মনে করে। কিন্তু আসলে ছিল এসব তাদের প্রতারণা। কূফার গভর্ণর নোমান বিন বশির সবকিছু অবলোকন করছে। অ্যাকশন নিচ্ছে না। এদিকে মুসলিম বিন আকিল হুসাইন (রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু) এর কাছে ১২ হাজার লোক তার হাতে বাইআ’ত হওয়ার এবং আরো লোক বাইআ’ত হতে তিনার অপেক্ষায় আছেন মর্মে পত্র প্রেরণ করেন। অন্য বর্ণনায় সমস্ত কূফিরা আপনার সাথে আছে। আপনি চিঠি পাওয়া মাত্র চলে আসুন এমন কথা লিখেন। ৬০ হিজরির জিলকদ মাসের ১১ তারিখে পাঠানো হয়। চিঠি পাওয়ার পর হুসাইন (রাযি.) সেথায় যাওয়ার মনস্থ করলেন।
অন্যদিকে মুসলিম বিন আকিল কে হুকুমাতের লোকরা গ্রেফতার করে হত্যা করে দেয়। (বিশাল ঘটনার সংক্ষেপ)। মূলত হুসাইন (রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু) মুসলিম বিন আকিল কে সেখানের অবস্থা ইত্যাদি সম্পর্কে জানার জন্য একজন দূত হিসেবে প্রেরণ করেন কিন্তু এটা এমন একটি জুলুম যে দূতকে হত্যা করে দিয়েছে। হযরত হুসাইন (রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুর) কখনোই রাষ্ট্রের সাথে বিদ্রোহ করার ইচ্ছা ছিল না। কিন্তু কুফার গভর্নর ওবায়দুল্লাহ বিন জিয়াদ এবং তাদের খেয়াল ছিলো খেলাফতের আসল হকদার আসলেই হুসাইন (রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু)। এমন হচ্ছে না তো যে সে নিজে খলিফা হওয়ার জন্য চাচ্ছে, এমন একটি ভয় তাদের অন্তরে ঢুকে যায়। যখন মুসলিম বিন আকিলকে হত্যা করে দেয়া হয়েছে হুসাইন (রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু) সেখানে ওই সময় পথে ছিলেন শামের দিকে রওনা করেছিলেন। অনেক সাহাবায়ে কেরাম বিশেষ করে আবদুল্লাহ ইবনে ওমর, আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুমা নিষেধ করেন, শাম তথা সিরিয়া যেতে।
কোন কোন বর্ণনায় পাওয়া যায়, আবদুল্লাহ ইবনে ওমর হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুকে ধরে জড়াজড়ি করে কান্নাকাটি করেন।
কোন কোন সাহাবা বলেছিলেন যে আমরা আপনার শাহাদাত হওয়ার বিষয় নিশ্চিত করে বলতে পারি। কেননা যে অবস্থার মধ্যে আপনি যাচ্ছেন হুকুমত; রাষ্ট্র বুঝবে যে আপনি তাদের রাষ্ট্রের বিদ্রোহ করার জন্যই মূলত আসছেন। সুতরাং তারা আপনাকে হত্যা করে দিবে। তারা এই চিন্তা করবে না যে আপনি রাসূলের নাতি অথচ তারা মুসলমান, তারা আপনাকে হত্যা করবে এই বিবেচনায় যে আপনার নিয়তে রাষ্ট্র দ্রোহ ছিল আপনি রাষ্ট্রদ্রোহী, তারা আপনাকে রাষ্ট্রদ্রোহী প্রমান করার জন্য তাদের নিকট দলিল আছে, যে হুকুমাতের রাষ্ট্রের যারা বিদ্রোহ করবে তারা রাষ্ট্রদ্রোহী তাদেরকে হত্যা করার জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এরশাদ করেছেন যে, যখন মুসলমানরা কোন একজন আমিরের নেতৃত্বাধীন চলার উপর সম্মত হয়ে যায় তখন আমিরের রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যেই তলোয়ার উঠাবে তাকে হত্যা করে দাও তাই সে যেই হোক ভালো হোক বা খারাপ।
হযরত হুসাইন (রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুর) ধারণা ছিল যে, আমিতো এই হাদীসের অন্তর্ভুক্ত হবো না, কেননা আমি ইয়াজিদের খিলাফতের রাষ্ট্র নায়ক হিসেবে তাকে গণ্য করি না সুতরাং আমি হাদিসের অন্তর্ভুক্ত হবো না।
হযরত হুসাইন (রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু) যখন কারবালার প্রান্তর পর্যন্ত পৌঁছে তখন সেখানে হুসাইন (রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু)কে মুসলিম বিন আকিল এর শাহাদাত সম্পর্কে জানানো হয়। এখানে লম্বা ঘটনা সংক্ষেপেঃ হালাত তখন এমন ছিল না যা হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুর ধারণা ছিল।
ওবায়দুল্লাহ ইবনে যিয়াদ অত্যান্ত একজন খারাপ ব্যক্তি ছিল। সে হুসাইন (রাদিয়াল্লাহু আনহু)কে কোন প্রকারের অজুহাত ছাড়াই গ্রেফতার করে নিয়ে আসার জন্য এবং তার হাতে বাইআ’ত করার জন্য বাধ্য করে।
তার ধারণা এটা ছিলনা যে, তিনি একজন প্রিয় নবীজীর নাতি। এটা তাঁর জন্য কতটুকু লাঞ্ছনা এবং অপমানজনক (মাআযাল্লাহ)। এবং সে বলে তাকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে আসার জন্য এবং নিজের হাতে বাইআ’ত করানোর জন্য বাধ্য করে।
হযরত হুসাইন (রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুর) চিন্তাধারা ছিল যে আমি ওবায়দুল্লাহ ইবনে যিয়াদের হাতে বাইআ’ত হবো না। এই ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক হলো, হযরত হুসাইন (রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু) কূফা যাওয়ার ইচ্ছা বাদ দিয়ে দেন এবং কারবালা থেকে সামনে যাওয়ার ইচ্ছা করেন, এবং কোন কোন ইতিহাসবিদ লেখেন যে, হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু ফিরে আসতে চেয়েছিল। উনি যে রাস্তার উপর চলতে ছিলেন সেটা ছিল শামের রাস্তা। হুসাইন (রাযি.) ইয়াজিদের সাথে মোলাকাত করার জন্য, মুযাকারা করার জন্য তিনি প্রস্তুত ছিলেন, যে আমি সরাসরি স্ব-শরীরে তার সাথে মোলাকাত করে যদি অবস্থা সম্পর্কে আমার কাছে মিথ্যা মনে হয়, তাহলে আমি তার হাতে বাইআ’ত হবো। এর দ্বারা বুঝা যায় উনার উদ্দেশ্য রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ নয়। তাছাড়া রাষ্ট্রদ্রোহ না হওয়ার/ তিনি যুদ্ধের মানসিকতা নিয়ে না যাওয়ার আরও একটি বড় প্রমাণ হলো,
তিনি পুরো পরিবারসহ এমনকি ছোট দুধের বাচ্চাসহ সেখানে উপস্থিত হয়েছেন।
হযরত হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু এবং তার সাথে যতজন আহলে বাইত ছিল তাদের উপর এই বদবখত কমবখত ওবায়দুল্লাহ ইবনে যিয়াদ তাদেরকে সামনে যাওয়ার জন্য দেয়নি। তিনি সেটাকে অপমান জনক হিসেবে মনে করেছেন, তারা পুরা আহলে বাইতকে ঘিরে ফেলে। এদিকে হুসাইন (রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু) বলছেন যে, ইজ্জতের মৃত্যুকে জিল্লতের মৃত্যুতে আমি পরিণত হতে দেব না।
আল্লাহ তাআলা কুফার গভর্নর এর মাধ্যমে হযরত হুসাইন (রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু)কে শহীদ করিয়েছেন যাতে তার এই দুর্ব্যবহার নির্লজ্জ আচরণ সারা পৃথিবীর মানুষ জানতে পারে।
হুসাইন (রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু) সর্বপ্রথম তলোয়ার উঠাননি , কারণ তিনি সর্বপ্রথম তাদের কাছে মক্কা মদিনায় চলে যেতে দরখাস্ত করেছিলেন তারা তা মানে নাই। যদি হতো তাহলে তা হতো বিদ্রোহ বা জিহাদে একদামী। বরং তা ছিল জিহাদে দেফায়ী। তিনি যে কোন মুসলিম রাষ্ট্রে যাওয়ার অনুমতি চেয়েছিলেন তাও তারা মানেনি। সরাসরি ইয়াযীদের কাছে যেতে চেয়েছিলেন ওবাইদুল্লাহ ইবনে যিয়াদ তাতেও সম্মত হননি।
বাধ্য হয়ে নিজে এবং পরিবারকে রক্ষা করার জন্য হযরত হুসাইন তলোয়ার হাতে নেন। পরিশেষে তারা চারো দিকে আহলে বাইতদেরকে ঘিরে ফেলেন পুরুষদের মাঝে একমাত্র ইমাম জয়নুল আবেদীন যিনি হযরত হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুর ছেলে ছিলেন, তাকে ছাড়া সবাইকে হত্যা করে দেন এবং ইতিহাসের মাঝে এটি সবচাইতে নির্লজ্জ দুঃখ বেদনা ভরা ইতিহাস হিসেবে বিবেচিত হয়। এই কারণে সবচাইতে দুঃখের ইতিহাস যে একজন মুসলিম শাসক থাকা সত্ত্বেও মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম) এর নাতি এবং তাঁর পরিবারবর্গ কে এভাবে হত্যা করা হয়। শুধু হত্যাই নয় হযরত হুসাইন (রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহুর) মাথাকে আলাদা করে একটি জঘন্যতম হত্যা হিসেবে ইতিহাসে সংরক্ষিত করা হয়। পুরুষদের কে হত্যা করার পর ঘটনাটি যখন ইয়াজিদ শুনতে পায় তখন বাকি আলেমদেরকে আহলে বাইতদেরকে তার কাছে নেওয়া হয় এবং তিনি অনেক দুঃখ প্রকাশ করেন এবং কিছু হাদিয়া ইত্যাদি দিয়ে তাদেরকে সসম্মানে নিজ স্থানে পৌছিয়ে দেন।
জ্ঞাতব্য, ইয়াযিদ সরাসরি এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত না থাকলেও তার বিভিন্ন কার্যকালাপ মৌন সমর্থনকে স্পষ্ট করে। তাই সে একজন জালিম ও ফাসেক। অবশ্যই লানতের যোগ্য। তবে যেহেতু এটি শিয়া রাফেজীদের শেআরে পরিণত হয়েছে, তাই তাকে লানত করা থেকে বিরত থাকাই সতর্কতা। (এই পাপিষ্ট অবশ্যই তার প্রাপ্য বুঝে পাবে।) এটিই আহলুস সু্ন্নাহ ওয়াল জামাতের আকিদা।
উল্লেখ্য: কারবালার বয়ান, আলোচনা বা প্রবন্ধ যা আমাদের হাতের নাগালে রয়েছে, অধিকাংশ আলোচনাই শিয়া রাফেজীদের বিকৃত ইতিহাসে ভরা। তাই এবিষয়ে অথেন্টিক আলোচনা ছাড়া আলোচনা করা মিথ্যা প্রচারণার শামিল।
যেমন ১-উনাকে পানি দেয়া হয় নাই। ২- পরিবারের সদস্যদের ধর্ষণ করা হয়েছে। ৩- পরিবারের সদস্যদের যেতে দেয়া হয় নাই। ৪- বাচ্চাও নারীদের হত্য করা হয়েছে। ইত্যাদী
বিস্তারিত জানতে পড়ুন,
আলবিদায়া ওয়ান নিহায়া: ইমাম ইবনে কাসীর রহ. (অষ্টম খন্ড)
শহীদে কারবালা: মুফতী শফী রহ.
কারবালার শিক্ষা: মুফতী ফজলুল হক আমীনি রহ.
কারবালা কাহিনী ও তার প্রকৃত স্বরূপ: মুফতী লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
والله اعلم بالصواب
মুফতী, ফাতাওয়া বিভাগ, মুসলিম বাংলা
লেখক ও গবেষক, হাদীস বিভাগ, মুসলিম বাংলা
খতীব, রৌশন আলী মুন্সীবাড়ী জামে মসজিদ, ফেনী
মন্তব্য (০)
কোনো মন্তব্য নেই।
এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর
৭৬৩২
২৮ জুলাই, ২০২১
ঢাকা

উত্তর দিয়েছেনঃ মুসলিম বাংলা ইফতা বিভাগ
৭১৫৭
২৯ জুলাই, ২০২১
Savar Union

উত্তর দিয়েছেনঃ মুসলিম বাংলা ইফতা বিভাগ
৪১৭৪৫
বাদশাহ আওরঙ্গজেব আলমগীর সম্পর্কে কিছু আপত্তি ও তার নিরসন
৩ অক্টোবর, ২০২৩
ঢাকা

উত্তর দিয়েছেনঃ মুসলিম বাংলা ইফতা বিভাগ
সাম্প্রতিক প্রশ্নোত্তর
মাসায়েল-এর বিষয়াদি
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে