আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

প্রশ্নঃ ১১১৪৯. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, জান্নাতের হূর কী পুরুষ???,

৫ ডিসেম্বর, ২০২১

ঢাকা

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم





حُورٌ مَقْصُورَاتٌ فِي الْخِيَامِ * فَبِأَيِّ آلاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ * لَمْ يَطْمِثْهُنَّ إِنسٌ قَبْلَهُمْ وَلا جَانٌّ * فَبِأَيِّ آلاءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ} [الرحمن:72 - 75].

আল্লাহতায়ালা সূরা আর রাহমানের ৭২ নম্বর আয়াতে হুর শব্দের বিশেষণ এনেছেন মাকসুরাত

হুর শব্দটি হাওরা শব্দের বহুবচন। আরবি ভাষায় হাওরা শব্দটি একটি স্ত্রীবাচক শব্দ। যার অর্থ নারীসঙ্গী। স্ত্রীবাচক একবচন শব্দের বহুবচন কখনও উভয়লিঙ্গ হতে পারে না। বরং স্ত্রীবাচক একবচনের বহুবচনও স্ত্রীবাচকই হয়।

অতএব, হুর শব্দের অর্থ শুধু ‘সঙ্গী’ নয়। যা নর-নারী উভয়ের জন্য ব্যবহার করা যায়।
বরং হুর শব্দের অর্থ হবে বহু নারীসঙ্গী। আল্লাহতায়ালা সূরা আর রাহমানের ৭২ নম্বর আয়াতে হুর শব্দের বিশেষণ এনেছেন মাকসুরাত
এই শব্দটিও একটি স্ত্রীবাচক বহুবচন।
আর আরবি ভাষায় বিশেষণ ব্যবহৃত হয় বিশেষ্যের লিঙ্গ অনুযায়ী।
সে হিসেবে বলা চলে, হুর একটি স্ত্রীবাচক শব্দ।
তদুপরি আল্লাহতায়ালা কোরআনে কারিমে হুরদের দৈহিক অবয়বের যে সব বিবরণ দিয়েছেন, তা পুরুষের অবয়বের জন্য প্রযোজ্য নয়।

সে সব বিবরণ নারীর অবয়বের জন্য শোভনীয়। যেমন, ‘তাদের (হুর) করেছি কুমারি, সোহাগিনী, সমবয়ষ্কা। ’ –সূরা ওয়াকিয়া: ৩৬-৩৭
‘মুত্তাকিদের জন্য রয়েছে সাফল্য, উদ্যান, আঙ্গুর এবং স্ফীত স্তনবিশিষ্টা সমবয়সী বালিকা। ’ –সূরা আন নাবা: ৩১-৩৩

বর্ণিত আয়াতের আলোকে বলা যায়, পবিত্র কোরআনে জান্নাত লাভকারী মানুষদের পুরস্কারের বিবরণ দিতে যেয়ে আল্লাহতায়ালা যে সব হুরের কথা বলেছেন, তারা হবে মানুষ সাদৃশ্য জান্নাতি নারী। সুস্থ, পরিচ্ছন্ন ও শালীন রুচিবোধ থেকে এ কথা আর বলার অপেক্ষা রাখে না যে, যেহেতু হুররা জান্নাতি নারী হবে তাই পুরস্কারস্বরূপ তাদের পাবে একমাত্র জান্নাত লাভকারী পুরুষরা।

এখন প্রশ্ন হলো, পরকালে পুনরুত্থান তো শুধু আত্মার হবে না। বরং পুনরুত্থান হবে আত্মা ও দেহের। মানুষের শুধু আত্মা জান্নাতে প্রবেশ করবে না। বরং আত্মার সঙ্গে তার দেহও জান্নাতে প্রবেশ করবে। দেহের পরিতৃপ্তির জন্য পানাহারের দরকার হয়, দরকার হয় যৌন সম্ভোগেরও। জান্নাতে এ দরকার যেমন পুরুষের হবে, তেমনি নারীর জন্যও প্রযোজ্য। আবার যে সব নারী জান্নাতে যাবেন তারা তো পুরুষদের মতোই ঈমান-আমলের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে পুরস্কারস্বরূপ জান্নাত লাভ করবেন। আল্লাহতায়ালা দুনিয়ার জীবনে তাদের যে সব দায়িত্ব অর্পণ করেছেন, সে সব দায়িত্ব পালন করেই তো তারা জান্নাতে প্রবেশ করবেন। সেক্ষেত্রে পুরুষরা জান্নাতে প্রবেশ করে হুর পাবেন। কিন্তু নারীরা কী পাবেন?

এ প্রশ্নের উত্তর স্পষ্ট ভাষায় কোরআন ও হাদিসের কোথাও উল্লেখ করা হয়নি। তবে ঈমান ও নেক আমলের সুবাদে যে সব নারী পরকালে জান্নাতে প্রবেশ করবেন- তারা ঠকবেন না। তারা কোনো ধরণের বঞ্চনার শিকার হবেন না, কোনো ধরণের অবিচারের সম্মুখিন হবেন না- তা সুনিশ্চিত এবং অবধারিত সত্য।

কেননা, জান্নাতের পুরস্কারের মূলনীতি বলতে যেয়ে আল্লাহতায়ালা বলেছেন, ‘সেখানে তোমাদের জন্য রয়েছে যা কিছু তোমাদের মন চাবে এবং যা কিছু তোমরা ফরমায়েশ করবে। এগুলো পাবে ক্ষমাশীল পরম দয়ালুর পক্ষ থেকে আতিথেয়তাস্বরূপ। ’ –সূরা হা মিম সিজদা: ৩১

‘সেখানে রয়েছে যা কিছু মন চায় এবং যা কিছুতে নয়ন তৃপ্ত হয়। তোমরা সেখানে চিরস্থায়ী হবে। ’ –সূলা আয যুখরুফ: ৭১

বর্ণিত আয়াতদ্বয় থেকে দ্ব্যর্থহীনভাবে প্রমাণিত হয়, যে সব নারী জান্নাতে প্রবেশের মহাসৌভাগ্য অর্জন করবেন; তাদের কোনো ইচ্ছা বা কোনো চাওয়া সেখানে অপূর্ণ থাকবে না। তারা সেখানে যা কামনা করবেন, যা ফরমায়েশ করবেন- দয়াময় প্রভু সেখানে তাদের তাই দিয়ে তুষ্ট করবেন, তাদের নয়ন তৃপ্ত করবেন।

তবে বেহেশতে প্রবেশের পর নারীরা কী চাবেন- তা আমরা জানি না। সম্পূর্ণ ভিন্ন এক নতুন পরিবেশের সেই দূর ভবিষ্যতে একজন নারী তার প্রভুর কাছে কী কামনা করবেন- তা এখন দুনিয়ার জীবনে কল্পনা করা সম্ভব নয়।

কেননা- বয়স, শিক্ষা, অভিজ্ঞতা, বুদ্ধি ও পরিবেশের ভিন্নতায় মানুষের চাওয়া-পাওয়ায় ভিন্নতা থাকে। একই মানুষের ৪ বছরের শৈশবের চাওয়া, ১২ বছরের বয়সঃসন্ধিক্ষণের চাওয়া, ২১ বছরের তারুণ্যের চাওয়া, ৪০ বছরের পরিণত বয়সের চাওয়া আর ৬০ বছরের বার্ধক্যের চাওয়া এক হয় না। মোটকথা নারীরা জান্নাতে যেয়ে যা কামনা করবেন- তাই পাবেন।

এবারে নতুন প্রশ্ন, পুরুষদের প্রাপ্তিকে যেমন বিস্তারিতভাবে বলা হলো; নারীদের প্রাপ্তিকে তেমন বিস্তারিত বলা হলো না কেন? এর কারণ সম্ভবত এমন- যৌন বিষয়ে দুনিয়াতে পুরুষরা যথেষ্ট খোলামেলা। কিন্তু নারীরা প্রকৃতিগতভাবে রক্ষণশীল মনোবৃত্তির ও যথেষ্ট লাজুক। পুরুষদের প্রাপ্তির আলোচনাকে যেমন বিস্তারিত কোরআনে কারিমে করা হয়েছে, নারীদের প্রাপ্তিকে তেমন বিস্তারিত আলোচনা করলে নারীরা চরম লজ্জায় পড়ে যেতো কিংবা বিব্রতবোধ করত। হয়তো আল্লাহতায়ালা বিশ্ববাসীর সামনে নারীদের লজ্জায় ফেলতে চাননি, সবার সামনে তাদের বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলতে চাননি- তাই নারীদের প্রাপ্তির বিস্তারিত আলোচনাকে সযত্নে এড়িয়ে গেছেন।

তথাপি সূরা হা-মিম সিজদার ৩১ ও সূরা যুখরুফের ৭১ নম্বর আয়াতের দ্বারা নারীদের ইচ্ছামাফিক প্রাপ্তিকে সুনিশ্চিত করে রেখেছেন।

প্রাচীন ও আধুনিক ইসলামি স্কলারদের অনেকেই জান্নাতি নারীর স্বামী কে হবে এ ব্যপারে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। কিন্তু সে সব আলোচনা দলিলহীন এবং তাদের অনুমাননির্ভর।

বস্তুত জান্নাত-জাহান্নামের বিষয়ে দলিলহীনভাবে শুধুমাত্র অনুমাননির্ভর হয়ে কোনো আলোচনা করা অনুচিত। আল্লাহতায়ালা ও তার রাসূল যেখানে নীরব থেকেছেন, সেখানে আমাদেরও উচিৎ নীরব থাকা।

এ প্রসঙ্গে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের অবতারণা না করলেই নয়। তা হলো- যৌন তৃপ্তি কিন্তু জান্নাতের প্রধান প্রাপ্তি নয়। বরং এটা জান্নাতের অভাবনীয় বিশাল নেয়ামতরাজির মধ্যে অনেক পরের বিষয়। আল্লাহতায়ালা জান্নাতের আলোচনাগুলোতে হুরের আলোচনা কোথাও শুরুতে করেননি। বরং প্রথমে করেছেন জান্নাতের নয়নভিরাম সবুজ-শ্যামল পরিবেশ ও প্রকৃতির আলোচনা, দৃষ্টিনন্দন জলাধার, জলপ্রপাত ও ঝর্ণার আলোচনা, মনমাতানো সুরম্য প্রাসাদের আলোচনা। এরপর আলোচনা করেছেন জান্নাতের হরেক রকমের সুস্বাদু খাদ্যদ্রব্য ও বিচিত্র স্বাদের পানীয়ের। তৃতীয় ধাপে আলোচনা করেছেন হুর নিয়ে। তাই এটা জান্নাতের অনেক পরের বিষয়। জান্নাতের প্রধান আকর্ষণ হলো- আল্লাহতায়ালার দিদার লাভ বা দর্শন। জান্নাতে যারা প্রবেশ করবেন তারা হুরের জন্য উদগ্রীব হবেন না। তারা জান্নাতে প্রবেশের পর থেকেই অধীর আগ্রহে প্রতিটি মূহুর্তে অপেক্ষার প্রহর গুণতে থাকবেন- কখন আসবে সেই স্বপ্নীল সময়, কখন সাক্ষাৎ পাবেন মহান মালিকের। কখন তার মুখ থেকে সরাসরি শুনতে পারবেন- তিনি তাদের ওপর খুশি।

কেননা- তারা দুনিয়ার জীবনে যত কষ্ট সহ্য করেছেন, ধৈর্যধারণ করেছেন; সবইতো করেছেন মাওলাকে খুশি করার জন্য। হুর লাভের জন্য তো তারা রাত জেগে নামাজ পড়েননি, হুরের উষ্ণ সান্নিধ্য লাভের লোভে তো সারাদিন অনাহারে থেকে রোজা পালন করেননি। তারা দুনিয়ার জীবনে যা কিছু করেছেন, সবই করেছেন শুধু আল্লাহকে পাওয়ার জন্য।

হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, ‘অন্য কোনো কিছুই জান্নাতবাসীদের নিকট মহান আল্লাহর দর্শন লাভের চেয়ে অধিক প্রিয় হবে না। ’ -সহিহ মুসলিম: ৪৬৭

মোটকথা, দিদারে মাওলা অর্থাৎ আল্লাহতায়ালা দর্শন লাভই হলো- জান্নাতের সবচেয়ে বড়ো পুরস্কার। যা নর-নারী সবাই সমানভাবে লাভ করবেন।

অতএব, কোনো হুরের লোভে নয়; আবার হুর না পাওয়ায় আশাহত হয়েও নয়- বরং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় ঈমানের সঙ্গে সৎ কর্মে আত্মনিয়োগ করাই মানুষের কর্তব্য।

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ মুসলিম বাংলা ফাতওয়া বিভাগ

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

৯৫৩১৪

সালামের জবাবে পাল্টা সালাম দেয়া কি ঠিক?


১২ মার্চ, ২০২৫

মুরাদনগর

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী

৮৮৪৩৯

ভাড়াটিয়ার দায়


৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

ফুলতলা

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

৬৬৪৩৬

তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস করে ফেললে!


৪ জুলাই, ২০২৪

ঢাকা

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি জাওয়াদ তাহের

৮৫৯৭৬

স্ত্রীর সাথে কথা বন্ধ রাখা


২২ জানুয়ারী, ২০২৫

১৭০২

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী আবু সাঈদ

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy