বেরলভী মানে কি? এবং তাদের আকীদাসমূহ কি?
প্রশ্নঃ ১০৭৩৫৯. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, মুহতারাম মুফতী সাহেব, বেরলভী মানে কি? এবং তাদের আকীদা কি? তাদেরকে কি অনুসরণ করা যাবে?
২৭ জুন, ২০২৫
ঢাকা ১২০৭
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
“বেরলভী” একটি ভ্রান্ত মতবাদ। "বেরলভী" নামটি এসেছে ভারতের উত্তরপ্রদেশের "বেরেলি" শহরের নাম থেকে। এই মতবাদের প্রবর্তক ছিলেন আহমদ রেজা খান বেরলভী (মৃ. ১৯২১ খ্রি.) এ শহরেই বসবাস করতেন। এ মতবাদকে বিদআতও বলা হয়।
বেরলভীদের কিছু আকীদাসমূহ :
১) নবী ﷺ কে হাযির-নাযির (সবকিছু সরাসরি দেখতে পান) মনে করা।
অথচ হাযির নাযির একমাত্র আল্লাহ তাআলার বৈশিষ্ট্য। এটা বিশ্বাস করা শিরক।
হাদীসে বর্ণিত হয়েছে,
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ السَّائِبِ، عَنْ زَاذَانَ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " إِنَّ لِلَّهِ مَلاَئِكَةً سَيَّاحِينَ فِي الأَرْضِ يُبَلِّغُونِي مِنْ أُمَّتِي السَّلاَمَ "
অর্থ : আব্দুল্লাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, আল্লাহ তাআলার কতক ফিরিশতা এমনও রয়েছে, যারা পৃথিবীতে বিচরণ করে বেড়ায়, তাঁরা আমার উম্মতের সালাম আমার কাছে পৌছিয়ে থাকেন।
কিতাবুস সুনান (আলমুজতাবা) - ইমাম নাসায়ী রহঃ (সুনানে নাসায়ী)
হাদীস নং: ১২৮২
হাদীসের লিংকঃ https://muslimbangla.com/hadith/20813
অপর হাদীসে আছে,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " لاَ تَجْعَلُوا بُيُوتَكُمْ قُبُورًا وَلاَ تَجْعَلُوا قَبْرِي عِيدًا وَصَلُّوا عَلَىَّ فَإِنَّ صَلاَتَكُمْ تَبْلُغُنِي حَيْثُ كُنْتُمْ "
অর্থ : হযরত আবু হুরায়রা (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন যে, তোমরা তেমাদের গৃহকে কবরে (অর্থাৎ আল্লাহর যিক্র বা নামায হতে খালি) পরিণত করো না। আর তোমরা আমার কবরকে ঈদের স্থানে পরিণত করো না। বরং তোমরা আমার উপর সালাম পেশ করবে। কেননা তোমরা যেখানেই থাকো না কেন, তোমাদের নামায ও সালাম আমার নিকট পৌঁছে থাকে।
কিতাবুস সুনান - ইমাম আবু দাউদ রহঃ (সুনানে আবু দাউদ)
হাদীস নং : ২০৪২
হাদীসের লিংকঃ https://muslimbangla.com/hadith/16385
এ হাদীস দু’টি থেকে স্পষ্ট বুঝে আসে যে, রাসূল ﷺ হাযির নাযির নন। তিনি হাযির নাযির হলে তাঁর (ﷺ) কাছে সালাম পৌঁছানোর জন্য ফেরেশতা লাগতো না।
২) রাসূল ﷺ গায়েব তথা অদৃশ্যের কথা জানেন।
অথচ আল্লাহ তাআলা ছাড়া অন্য কেউ গায়েব জানে না। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন,
قُلۡ لَّا یَعۡلَمُ مَنۡ فِی السَّمٰوٰتِ وَالۡاَرۡضِ الۡغَیۡبَ اِلَّا اللّٰہُ
বলে দাও, আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে আল্লাহ ছাড়া কেউ গায়েব জানে না। [সূরা আন নাম্ল আয়াত নং ৬৫]
আয়াতের লিংক : https://muslimbangla.com/sura/27/verse/65
অন্য আয়াতে এরশাদ হয়েছে,
وَلَوۡ کُنۡتُ اَعۡلَمُ الۡغَیۡبَ لَاسۡتَکۡثَرۡتُ مِنَ الۡخَیۡرِ ۚۖۛ وَمَا مَسَّنِیَ السُّوۡٓءُ ۚۛ اِنۡ اَنَا اِلَّا نَذِیۡرٌ وَّبَشِیۡرٌ لِّقَوۡمٍ یُّؤۡمِنُوۡنَ
আমার যদি গায়েব সম্পর্কে জানা থাকত, তবে ভালো-ভালো জিনিস প্রচুর পরিমাণে সংগ্রহ করে নিতাম এবং কোনও রকম কষ্ট আমাকে স্পর্শ করত না। আমি তো কেবল একজন সতর্ককারী ও সুসংবাদদাতা সেই সকল লোকের জন্য, যারা (আমার কথা) মানে। [সূরা আল আ'রাফ, আয়াত নং ১৮৮]
আয়াতের লিংক : https://muslimbangla.com/sura/7/verse/188
এ সমস্ত আয়াতে স্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছে যে, আল্লাহ তাআলা ছাড়া আর কেউ গায়েব জানে না। সুতরাং রাসূল ﷺ গায়েব জানার বিশ্বাস করা শিরক।
৩) তারা বলেন রাসূল ﷺ নূরের তৈরি আমাদের মতো মানুষ নয়।
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের সহীহ আদিকা হলো, রাসূল ﷺ আমাদের আমাদের মতো মানুষ। অন্যান্য যেভাবে সৃষ্টি হয়ে দুনিয়াতে আসছে তিনিও সেভাবে দু্নিয়াতে আসছেন। তবে তিনি সাধারণ কোনো মানুষ নন। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানুষ। তাঁর মতো মহান ব্যক্তি পূর্বেও আসেনি ভবিষ্যতেও আসবে না।
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের এ বিশ্বাস কুরআন হাদীস থেকে স্পষ্ট ভাবে প্রমাণিত হয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন,
قُلۡ اِنَّمَاۤ اَنَا بَشَرٌ مِّثۡلُکُمۡ یُوۡحٰۤی اِلَیَّ اَنَّمَاۤ اِلٰـہُکُمۡ اِلٰہٌ وَّاحِدٌ ۚ فَمَنۡ کَانَ یَرۡجُوۡا لِقَآءَ رَبِّہٖ فَلۡیَعۡمَلۡ عَمَلًا صَالِحًا وَّلَا یُشۡرِکۡ بِعِبَادَۃِ رَبِّہٖۤ اَحَدًا
অর্থঃ বলে দাও, আমি তো তোমাদের মত একজন মানুষই। (তবে) আমার প্রতি এই ওহী আসে যে, তোমাদের মাবুদ কেবল একই মাবুদ। সুতরাং যে-কেউ নিজ মালিকের সাথে মিলিত হওয়ার আশা রাখে, সে যেন সৎকর্ম করে এবং নিজ মালিকের ইবাদতে অন্য কাউকে শরীক না করে। [সূরা কাহাফ, আয়াত নং ১১০]
আয়াতের লিংক : https://muslimbangla.com/sura/18/verse/110
অপর আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন,
قُلۡ سُبۡحَانَ رَبِّیۡ ہَلۡ کُنۡتُ اِلَّا بَشَرًا رَّسُوۡلًا
অর্থ : (হে নবী!) বলে দাও, আমার প্রতিপালক পবিত্র। আমি তো একজন মানুষ মাত্র, যাকে রাসূল করে পাঠানো হয়েছে। [সূরা বনী-ইসরাঈল, আয়াত নং - ৯৩]
এ জাতীয় তাদের অনেক ভ্রান্ত আকিদা ও কাজকর্ম আছে। যা এখানে আলোচনা করলে উত্তর অনেক বড় হয়ে যাবে। যেমন,
রাসূল ﷺ কে মুখতারে কুল তথা সকল ক্ষমতার অধিকারী।
রাসূল ﷺ প্রথম সৃষ্টি।
ওলী আওলিয়া, বুযুর্গদের কবরে গিয়ে সাহয্য চাওয়া।
মাজারে সিজদা করা।
ঈদে মিলাদুন্নবী পালান করা।
ওরস পালন করা।
ইত্যাদি অনেক ভ্রান্ত আকিদা ও কাজ রয়েছে।
তাই তাদের অনুসরণ থেকে অবশ্যই বেঁচে থাকতে হবে। হাদীসে বিদআত থেকে দূরে থাকার জন্য অনেক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এ সংক্রান্ত অনেক হাদীস বর্ণিত হয়েছে। নিচে একটি হাদীস দেওয়া হলো,
وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الأُمُورِ فَإِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ وَكُلَّ بِدْعَةٍ ضَلاَلَةٌ
অর্থ : তোমরা বিদ’আতের অনুসরণ ও অনুকরণ করা হতে দূরে থাকবে। কেননা, প্রত্যেক নতুন কথাই বিদ’আত এবং প্রত্যেক বিদ’আতই গুমরাহী। [সুনানে আব দাউদ, হাদীস নং ৪৬০৭]
পরিপূর্ণ হাদীসটি নিচের লিংক থেকে দেখে নিন।
হাদীসের লিংকঃ https://muslimbangla.com/hadith/18899
বিদআত সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য বেদআত সম্পর্কিত কিছু বই পড়ুন। মুসলিম বাংলা এ্যাপেও এ সম্পর্কিত বই আছে নিচে একটি বইয়ের লিংক দেওয়া হলো।
https://muslimbangla.com/book/6004/%E0%A6%B8%E0%A7%81%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%A4-%E0%A6%93%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%A6%E0%A6%86%E0%A6%A4-
অথবা কিছু বই কিনে পড়তে পারেন। নিচে এ সম্পর্কিত কিছু বইয়ের নাম দেওয়া হলো,
১) সুন্নাত ও বিদআত
লেখক: হযরত মাওলানা মুফতী মুহাম্মদ শফী (রহ.)
মুহম্মদ আবু বকর (অনুবাদক)
২) শরীয়তের দৃষ্টিতে ঈদে মীলাদুন্নবী
লেখক: হাকীমুল উম্মত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রহ.
অনুবাদক: মাওলানা আবু তাহের রাহমানী
৩) বেদআতিদের প্রতি ওপেন চ্যালেঞ্জ
লেখক: মুফতী মাওলানা রফিকুল ইসলাম
৪) ইসলামের দৃষ্টিতে বিদআত
লেখক: ড. মাওলানা মুশতাক আহমদ
ইত্যাদি এ সংক্রান্ত অনেক বই আছে। সেগুলো পড়তে পারেন।
والله اعلم بالصواب
মুফতী আবু সাঈদ
উস্তাজ, ইদারাতুত্ তাখাসসুস ফিল উলূমিল ইসলামিয়া, আজিমপুর
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন
এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর
মাসায়েল-এর বিষয়াদি
আল কুরআনুল কারীম
৪
হাদীস ও সুন্নাহ
৬
তাসাউফ-আত্মশুদ্ধি । ইসলাহী পরামর্শ
৩
শরীআত সম্পর্কিত
১৪
ফিতনাসমুহ; বিবরণ - করণীয়
২
আখিরাত - মৃত্যুর পরে
৩
ঈমান বিধ্বংসী কথা ও কাজ
৬
ফিরাকে বাতিলা - ভ্রান্ত দল ও মত
২
পবিত্রতা অর্জন
৮
নামাযের অধ্যায়
১৯
যাকাত - সদাকাহ
৫
রোযার অধ্যায়
৬
হজ্ব - ওমরাহ
২
কাফন দাফন - জানাযা
৫
কসম - মান্নত
১
কুরবানী - যবেহ - আকীকা
৪
বিবাহ শাদী
৮
মীরাছ-উত্তরাধিকার
২
লেনদেন - ব্যবসা - চাকুরী
৯
আধুনিক মাসায়েল
৬
দন্ড বিধি
২
দাওয়াত ও জিহাদ
৩
ইতিহাস ও ঐতিহ্য
৬
সীরাতুন নবী সাঃ । নবীজীর জীবনচরিত
৩
সাহাবা ও তাবেঈন
৩
ফাযায়েল ও মানাকেব
৩
কিতাব - পত্রিকা ও লেখক
৩
পরিবার - সামাজিকতা
৭
মহিলা অঙ্গন
২
আখলাক-চরিত্র
২
আদব- শিষ্টাচার
১২
রোগ-ব্যধি। চিকিৎসা
২
দোয়া - জিকির
২
নাম। শব্দ জ্ঞান
৩
নির্বাচিত
২
সাম্প্রতিক
১
বিবিধ মাসআলা
১