আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

জুমার দিনে ৮০ বার দুরুদের বিশেষ ফজিলত !

প্রশ্নঃ ১০৬৭৯. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেব বলেছেন যে,"জুমার দিন আসরের নামাজের পরে ৮০ বার দুরুদ পড়লে নাকি ৮০ বছরের নফল ইবাদাতের সওয়াব পাওয়া যায়।"এই হাদিসটা কতটা সহিহ।জাজাকাল্লাহ খাইরান।,

২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪

Khulna

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


এক হাদীসে নবী করিম সা. ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি জুমার দিন আসরের নামাজের পর নিজ স্থান থেকে ওঠার আগে ৮০ বার এই দরুদ শরিফ পাঠ করে-

দরুদের আরবী উচ্চারণঃ
‘আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিনিন নাবিইয়্যিল উম্মিইয়ি ও’আলা আলিহি ওআস হাবিহি ওয়াসাল্লিম তাসলিমা’

তার ৮০ বছরের পাপ ক্ষমা হয়ে যায় এবং ৮০ বছরের ইবাদতের সওয়াব তার আমলনামায় লেখা হয়। -আফজালুস সালাওয়াত : ২৬, আত-তারগীব ফি ফাযায়িলিল আ’মাল- ১৪ পৃ:।

হাদীসের শাস্ত্রীয় বিধান মতে হাদীসটির সনদ যঈফ বা দুর্বল। কারণ, এ হাদিসের সনদে তিনজন বর্ণনাকারী জয়ীফ। তবে ফযিলত বিষয়ের হাদিসের ওপর আমল করাতে সমস্যা নেই বলে অভিমত দেন হাদিস বিশারদ আলেমগণ।

উল্লেখ্য, দরূদ শরীফ প্রতিদিনের আমল এবং জুমার দিন বেশি বেশি দরূদ শরীফ পড়ার কথা সহীহ হাদীসে এসেছে। এবং একটি শক্তিশালী মত হিসেবে জুমার দিন আসরের পরের সময়টুকু হল ‘সাআতুল ইজাবাহ’ বা দুআ কবুলের সেই বিশেষ মুহূর্ত। তাই এ সময়ে দরূদ শরীফের আমল, আশিবার, একশবার করা যে একটি সওয়াবের কাজ তাতে তো কোনো সন্দেহই নেই। অতএব ঐ বিশেষ সওয়াব সম্বলিত বর্ণনাটি যঈফ হলেও এই আমল ছেড়ে দেওয়ার তো কোনো যুক্তি হতে পারে না।

হযরত আওস ইবনে আউস রা. থেকে বর্ণিত, একটি হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-

إن من أفضل أيامكم يوم الجمعة ... فأكثروا علي من الصلاة فيه، فإن صلاتكم معروضة علي ...

নিশ্চয়ই জুমার দিন শ্রেষ্ঠতম দিনগুলোর অন্যতম। ... সুতরাং সেদিন তোমরা আমার উপর বেশি বেশি দরূদ পড়। নিশ্চয় তোমাদের দরূদ আমার কাছে পেশ করা হয়। ... (সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ১০৪৭; মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১৬১৬২; সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস : ৯১০, হাদীসটি সহীহ)

অন্য হাদীসে হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-

أكثروا الصلاة علي يوم الجمعة وليلة الجمعة، فمن صلى علي صلاةً صلى الله عليه عشراً.

তোমরা জুমার রাত ও জুমার দিনে আমার উপর বেশি বেশি দরূদ পাঠ কর। যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরূদ পাঠ করে আল্লাহ তাআলা তার উপর দশবার রহমত নাযিল করেন। (আসসুনানুল কুবরা, বায়হাকী ৩/২৪৯; ফাযাইলুল আওকাত, বায়হাকী ২৭৭; আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লাইলাহ, ইবনুস সুন্নী ৩৭৯, এর সনদ হাসান পর্যায়ের।)

অন্য হাদীসে আছে-

أكثروا علي من الصلاة في كل يوم جمعة، فإن صلاة أمتي تعرض علي في كل يوم جمعة، فمن كان أكثرهم علي صلاة كان أقربهم مني منزلة.

প্রত্যেক জুমার দিনে তোমরা আমার উপর অধিক পরিমাণে দরূদ পাঠ কর। কারণ আমার উম্মতের দরূদ প্রতি জুমার দিন আমার কাছে পেশ করা হয়। আর তাদের মধ্য থেকে যে ব্যক্তি আমার উপর সবচে বেশি দরূদ পাঠ করে সে অন্যদের তুলায় আমার বেশি নিকটবর্তী। (সুনানে বায়হাকী ৩/২৪৯, এর সনদটি হাসান)

সাখাবী রাহ. বলেন-

رواه البيهقي بسند حسن لا بأس به، إلا أن مكحولا قيل : لم يسمع من أبي أمامة في قول الجمهور.

আলকওলুল বাদী, পৃষ্ঠা : ৩২০

সাধারন যঈফের হুকুমঃ

কিছু বিষয়ে ‘যয়ীফ’ হাদীস বলা এবং আমল করাকে মুহাদ্দেসীনে কিরাম অনুমোদন করেছেন:
(১) কুরআনের ‘তাফসীর’ বা ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে,
(২) ইতিহাস বা ঐতিহাসিক বর্ণনার ক্ষেত্রে এবং
(৩) বিভিন্ন নেক আমলের ‘ফযীলত’-এর ক্ষেত্রে।

এক্ষেত্রে তাঁরা নিম্নরূপ শর্তগুলো উল্লেখ করেছেন।
(১) হাদীসটি ‘‘সাধারন দুর্বল’ হবে, হাদীসের দুর্বলতা যেন অধিক না হয়,যদ্দরুন সেটি মুনকার কিংবা জাল হবার পর্যায়ে পৌছে।
(২) যয়ীফ হাদীসটি এমন হতে হবে যেটি শরীয়তের কোন স্বীকৃত মুলনীতির আওতাধীন হবে।
(৩) যয়ীফ হাদীসকে রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর কথা বলে বিশ্বাস করা যাবে না। সাবধানতামূলকভাবে আমল করতে হবে।
আমল করার সময় এর সুপ্রমানিত হবার বিশ্বাস না করে বরং বর্ণিত ফজিলতের আশা করতঃ আমল করা। ইমাম ইবনে আব্দুল বার রহঃ (৪৬৩হি.)তার আত-তামহিদ গ্রন্থে (৬:৫৪-৫৫) একটি দুর্বল হাদীস উল্লেখ করে বলেন, হাদিসটি বাহ্যত সুন্দর হলেও (অর্থাৎ হাদিসটি দুর্বল)এর থেকে প্রাপ্ত বরকতের আশা করা যায়, ইনশাআল্লাহ।
অতএব, এ সব শর্তাদি অনুযায়ী হলে যঈফ হাদীস অবশ্যই আমলযোগ্য বিবেচিত হবে।
এবং এ বিষয়ে প্রতি যুগের বড় বড় হাদীস বিশারদগন একমত পোষন করেছেন।
সুতরাং,
দুর্বলতার ধরন না জেনে, তা যাচাই না করে,তার তাহকীক না করে শুধু দুর্বলতা শুনেই ঢালাও ভাবে হাদীসকে আমল পরিত্যাজ্য আখ্যা দিয়ে দেওয়া উসুলে হাদীসের পরিপন্থী এবং নবীজীর সাঃ এর হাদীস-সুন্নাহ থেকে উম্মাহকে দূরে সরানোর এক সুগভীর চক্রান্ত।
আল্লাহ আমাদের হেফাযত করেন।

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ মুসলিম বাংলা ইফতা বিভাগ

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

৯০৭৩৭

ফরয নামাযের সিজদায় অতিরিক্ত দু‘আ করা


২৩ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

মনাইর কান্দি

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী মাহমুদুল হাসান

২৬৫০০

দ্রুত বিয়ে হওয়ার কতিপয় আমল ও দোয়া


১৪ ডিসেম্বর, ২০২২

ঢাকা ১২০৪

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ শাইখ উমায়ের কোব্বাদী

৩৯৩৮০

ফরয নামাযের পর আয়াতুল কুরসী ও অন্যান্য দোয়া পড়ার নিয়ম


২৬ আগস্ট, ২০২৩

সাতক্ষীরা

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি জাওয়াদ তাহের

৮৫৬৭১

মুমূর্ষু ব্যক্তির পাশে করনীয় আমাল


২০ জানুয়ারী, ২০২৫

ঢাকা

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী আবু সাঈদ

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy