রাজস্ব আদায় করলে কি সম্পদের যাকাত রহিত হয়ে যাবে?
প্রশ্নঃ ১০৬৩৭. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, হযরত,ইসলামে মালের যাকাত আড়াই পার্সেন্ট। সরকার মালের যাকাত (টেক্স) আদায় করে 15 থেকে 18 শতাংশ। তদুপরি কোন কোন মালে ভ্যটও দিতে হয়। আমরা কোনটি পরিশোধ করব।
২৯ ডিসেম্বর, ২০২৩
ঢাকা
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
যাকাত আল্লাহ তা'আলার দেয়া ফরজ বিধান। যে হুকুম লংঘন করার কোনো সুযোগ নেই।
জাকাত ইসলামী শরিয়তের একটি গুরুত্বপুর্ণ পরিভাষা। এটি ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম একটি। রাসুল (স.) ৬২২ খ্রিস্টাব্দে মদিনায় ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা চালু করার এক বছর পর থেকেই দ্বিতীয় হিজরিতে জাকাত ব্যবস্থা চালু হয়েছে। অদ্যাবধি ধর্মপ্রাণ সামর্থ্যবান মুসলিম জনগোষ্ঠী নির্দিষ্ট হারে জাকাত দিয়ে আসছে।
বিশ্বের অনেক মুসলিম দেশেই রাষ্ট্রীয়ভাবে জাকাত উত্তোলনের ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে অনেক আধুনিক রাষ্ট্রেই জনগণ কর্তৃক সরকারকে আয়কর দিতে হয়। এর মধ্যে কেউ কেউ আবার আয়করকে জাকাতের বিকল্প হিসেবে ভাবতে শুরু করেছে। কারও কারও ধারণা বর্তমানে যেহেতু আয়কর দিতে হচ্ছে, তাই জাকাত দেয়া ততটা বাধ্যতামূলক নয়। অথচ প্রকৃতপক্ষে জাকাত ও আয়কর একই বিষয়বস্তু নয়। দুটির মধ্যে রয়েছে বিস্তর পার্থক্য।
তাই আয়কর দিলে জাকাত দিতে হবে কিনা কিংবা আয়কর দিলে জাকাত থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে কিনা? এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনার আগে আমাদের জানতে হবে জাকাত ও আয়কর কি?
জাকাত: আরবি এই শব্দটির বাংলায় দুটি পরিভাষা রয়েছে। এর একটি হচ্ছে- বৃদ্ধি, অন্যটি পরিশুদ্ধকরণ। পরিভাষায়, ‘ধন-সম্পদে আল্লাহ কর্তৃক সুনির্দিষ্ট ও ফরজকৃত অংশই হলো জাকাত’ (ইসলামের জাকাত বিধান, ১ম খণ্ড)।
অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে একটা নির্দিষ্ট সময় তথা পূর্ণ এক বছর নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদ, সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ অথবা সাড়ে ৫২ তোলা রুপা, ব্যবসায়ী পণ্য কিংবা নগদ অর্থ কারও মালিকানায় থাকলে তার ওপর জাকাতের হুকুম বর্তায়। এ ক্ষেত্রে জাকাতের হার হলো সঞ্চিত সম্পদের ১/৪০ অংশ বা ২ দশমিক ৫ শতাংশ।
আয়কর: আয়কর মানে হচ্ছে- আয় থেকে কর। কোনো ব্যক্তি বা সত্তার ওপর সরকার কর্তৃক আরোপিত কর, যা আয় বা লভ্যাংশের পরিমাণভেদে পরিবর্তিত হয়। এটি রাষ্ট্রের সব জনসাধারণের স্বার্থে রাষ্ট্রের ব্যয় নির্বাহের জন্য সরকারকে প্রদত্ত বাধ্যতামূলক অর্থ।
সরকারি-বেসরকারি, নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী এবং কর্মকর্তাদের ওপর সাধারণত বিধিসম্মত উপায়ে আয়কর আরোপ করা হয়।
আয়কর দিলে জাকাত দিতে হবে কি?
জাকাত প্রত্যেক স্বাধীন সুস্থ মস্তিষ্ক প্রাপ্তবয়স্ক নিসাব পরিমাণ সম্পদের অধিকারী মুসলিম নর-নারীর জন্য আল্লাহর নির্দেশিত অন্যতম ফরজ ইবাদত। জাকাত মানুষকে পাপ-পংকিলতা থেকে মুক্তিদানের লক্ষ্যে প্রবর্তিত হয়েছে। কোনো স্থানে বা কোনো সময়ে জাকাত গ্রহণকারী লোকের সন্ধান পাওয়া না গেলেও ধনীদের ওপর জাকাত প্রদানের আদেশ সমভাবে বহাল থাকে।
জাকাতের অর্থ শুধু আল-কোরআনে নির্দেশিত খাতেই ব্যয় করতে হবে। এটি প্রত্যেক মুমিনের জন্য আর্থিক ফরজ ইবাদত। জাকাতের সম্পর্ক আল্লাহ ও বান্দার সঙ্গে। ট্যাক্স হলো সরকারি কর। সরকার এই কর যেকোনো কাজেই ব্যয় করতে পারে। ট্যাক্সের সঙ্গে সম্পর্ক হচ্ছে সরকার ও জনগণের। এর সঙ্গে জাকাতের কোনো সম্পর্ক নেই।
‘রাষ্ট্রকে যে পরিমাণ ট্যাক্সই দেয়া হোক না কেন, তাতে জাকাত আদায় হবে না। বরং ট্যাক্স পরিশোধের পর সম্পদ নিছাব পরিমাণ থাকলে এবং তা এক বছর অতিবাহিত হলে তাতে জাকাত দিতে হবে’ (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা ৯/২৮৫)।
জাকাত দেয়ার মাধ্যমে জাকাত প্রদানকারীদের ধন- সম্পদ বৃদ্ধি পায় এবং দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থাও সুদৃঢ় হয়। ফলে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের আর্থিক উন্নতি ঘটে। যারা অভাবি হিসেবে জাকাত গ্রহণ করে তারাও একসময় জাকাত দাতারূপে পরিবর্তিত হয়।
ইসলামের ইতিহাস থেকে জানা যায়- সাহাবি, তাবেঈন, তাবে-তাবেঈনদের যুগে জাকাতভিত্তিক অর্থনীতি বাস্তবায়নের ফলে মুসলমানদের সম্পদ ও আর্থিক অবস্থা এত বেশি সচ্ছল হয়েছিল যে, তখন জাকাত নেয়ার মতো মানুষ খুঁজে পাওয়া যেত না।
ইসলামী অর্থব্যবস্থায় আয়করের বাধ্যবাধকতা না থাকলেও জাকাতের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তাই ইসলামী চিন্তাবিদরা মনে করেন, গত দেড় হাজার বছরে পৃথিবীতে রাষ্ট্রব্যবস্থায় অনেক কিছুর পরিবর্তন হয়ে থাকলেও ইসলামের দৃষ্টিতে জাকাতের মূল দর্শনে কোনো পরিবর্তন হয়নি। তাই ইসলামের দৃষ্টিতে আয়কর এবং জাকাত এ দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়।
অতএব রাষ্ট্রীয় বিধান মেনে আয়কর দিলেও জাকাত দিতে হবে। এতে জাকাতের বিধান কোনোক্রমেই রহিত কিংবা বাতিল হবে না।
والله اعلم بالصواب
ইসহাক মাহমুদ
মুফতী ও মুহাদ্দিস, জামিআ মুহাম্মাদিয়া আরাবিয়া, মোহাম্মদপুর
মন্তব্য (0)
কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!
মন্তব্য করতে লগইন করুন
এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর
মাসায়েল-এর বিষয়াদি
আল কুরআনুল কারীম
৪
হাদীস ও সুন্নাহ
৬
তাসাউফ-আত্মশুদ্ধি । ইসলাহী পরামর্শ
৩
শরীআত সম্পর্কিত
১৪
ফিতনাসমুহ; বিবরণ - করণীয়
২
আখিরাত - মৃত্যুর পরে
৩
ঈমান বিধ্বংসী কথা ও কাজ
৬
ফিরাকে বাতিলা - ভ্রান্ত দল ও মত
২
পবিত্রতা অর্জন
৮
নামাযের অধ্যায়
১৯
যাকাত - সদাকাহ
৫
রোযার অধ্যায়
৬
হজ্ব - ওমরাহ
২
কাফন দাফন - জানাযা
৫
কসম - মান্নত
১
কুরবানী - যবেহ - আকীকা
৪
বিবাহ শাদী
৮
মীরাছ-উত্তরাধিকার
২
লেনদেন - ব্যবসা - চাকুরী
৯
আধুনিক মাসায়েল
৬
দন্ড বিধি
২
দাওয়াত ও জিহাদ
৩
ইতিহাস ও ঐতিহ্য
৬
সীরাতুন নবী সাঃ । নবীজীর জীবনচরিত
৩
সাহাবা ও তাবেঈন
৩
ফাযায়েল ও মানাকেব
৩
কিতাব - পত্রিকা ও লেখক
৩
পরিবার - সামাজিকতা
৭
মহিলা অঙ্গন
২
আখলাক-চরিত্র
২
আদব- শিষ্টাচার
১২
রোগ-ব্যধি। চিকিৎসা
২
দোয়া - জিকির
২
নাম। শব্দ জ্ঞান
৩
নির্বাচিত
২
সাম্প্রতিক
১
বিবিধ মাসআলা
১