আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

প্রশ্নঃ ১০৫৪৩. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আমার প্রশ্ন হল:১. মৃত ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে দোয়া করি যদি মিষ্টি দেওয়া হয় অথবা খিচুড়ি খাওয়ানো হয় তাহলে সেই মিষ্টি বা খিচুড়ি খাওয়া জায়েজ আছে কিনা এবং হাদিয়া দিলে ওই হাদিয়া নেওয়া জায়েজ হবে কিনা?দয়াকরে কোরআন হাদিসের দলিল সহ উত্তর দিলে খুব উপকৃত হব। জাযাকাল্লাহু খায়রান।

১৫ নভেম্বর, ২০২১
নবাবগঞ্জ

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم





ঈসালে সওয়াবের উদ্দেশে কোরআন খতম করে বা অন্য কোনো দোয়া-দরূদ পড়ে বিনিময়ে টাকা-পয়সা বা কোনো কিছু আদান-প্রদান করা নাজায়েজ।

সুতরাং বর্তমান সমাজের প্রচলিত ঈসালে সওয়াবের উদ্দেশ্যে দোয়া-দরূদ ও কোরআন খতম করিয়ে বিনিময়ে টাকা-পয়সা আদান-প্রদানের যে প্রথা চালু আছে তা নাজায়েজ ও কু-প্রথার অন্তর্ভুক্ত।


এটা থেকে বিরত থাকা জরুরি।
তবে হ্যাঁ, খতমে কোরআন, খতমে ইউনুস, খতমে বোখারি বা অন্য কোনো দোয়া-দরূদের খতম যদি কেবলমাত্র দুনিয়াবী উদ্দেশ্যে করা হয়- যেমন, রোগমুক্তি, বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্যে উন্নতি ইত্যাদির ক্ষেত্রে বিনিময় দেওয়া-নেওয়া জায়েজ।

অবশ্য এক্ষেত্রেও অনেক ইসলামি স্কলার বিনিময়ে কোনো কিছু না নেওয়াই শ্রেয় বলে মত দিয়েছেন।

তবে, কারও জন্য এভাবে খতম পড়াকে পেশা হিসাবে অবলম্বন করা কিছুতেই সমীচীন নয়।

উল্লেখ্য যে, মুসলমানদের কর্তব্য হলো- অসুখ-বিসুখ, বিপদ-আপদ ও প্রয়োজনের মুহূর্তে নিজেই নফল নামাজ, দোয়া-দরূদ ও ইস্তিগফার দ্বারা আল্লাহতায়ালার সাহায্য প্রার্থনা করা, সম্ভব হলে সদকা করা। প্রয়োজনে পরিবারের সদস্যদেরও দোয়া করতে বলা। আলেম, বুজুর্গদের থেকে দোয়া চাওয়া। সর্বোপরি সবর (ধৈর্য) ও তাকওয়ার (আল্লাহভীতি) মাধ্যমে আল্লাহর রহমত কামনা করা।

আমাদের দেশে মৃত ব্যক্তি নামে তিন দিনের দিন কুলখানী নামে এবং চল্লিশ দিনের দিন চল্লিশা নামে যে খানার আয়োজন করা হয়, তা হিন্দুয়ানী রুসুম। তা পরিত্যাগ করা সকল মুসলমানের উপর কর্তব্য।

হ্যাঁ, মৃত ব্যক্তির কবরে ঈসালে সওয়াবের নিয়তে গরীবকে খাওয়ানো বৈধ আছে।
আর লোক দেখানোর জন্য প্রতিযোগিতামূলক যে আয়োজন করা হয়ে থাকে এরকম খানা খেতে হাদীসে নিষেধাজ্ঞা এসেছে।

ابْنُ عَبَّاسٍ يَقُولُ: «إِنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَهَى عَنْ طَعَامِ الْمُتَبَارِيَيْنِ أَنْ يُؤْكَلَ»

ইবনু আব্বাস (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’ প্রতিদ্বন্দ্বি অহংকারীর খাদ্য গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন। [সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৩৭৫৪]

তাই এসব দাওয়াত পরিত্যাগ করাই উচিত।

وَيُكْرَهُ اتِّخَاذُ الضِّيَافَةِ مِنْ الطَّعَامِ مِنْ أَهْلِ الْمَيِّتِ لِأَنَّهُ شُرِعَ فِي السُّرُورِ لَا فِي الشُّرُورِ، وَهِيَ بِدْعَةٌ مُسْتَقْبَحَةٌ: وَرَوَى الْإِمَامُ أَحْمَدُ وَابْنُ مَاجَهْ بِإِسْنَادٍ صَحِيحٍ عَنْ جَرِيرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ قَالَ ” كُنَّا نَعُدُّ الِاجْتِمَاعَ إلَى أَهْلِ الْمَيِّتِ وَصُنْعَهُمْ الطَّعَامَ مِنْ النِّيَاحَةِ “. اهـ. وَفِي الْبَزَّازِيَّةِ: وَيُكْرَهُ اتِّخَاذُ الطَّعَامِ فِي الْيَوْمِ الْأَوَّلِ وَالثَّالِثِ وَبَعْدَ الْأُسْبُوعِ وَنَقْلُ الطَّعَامِ إلَى الْقَبْرِ فِي الْمَوَاسِمِ، وَاِتِّخَاذُ الدَّعْوَةِ لِقِرَاءَةِ الْقُرْآنِ وَجَمْعُ الصُّلَحَاءِ وَالْقُرَّاءِ لِلْخَتْمِ أَوْ لِقِرَاءَةِ سُورَةِ الْأَنْعَامِ أَوْ الْإِخْلَاصِ. وَالْحَاصِلُ أَنَّ اتِّخَاذَ الطَّعَامِ عِنْدَ قِرَاءَةِ الْقُرْآنِ لِأَجْلِ الْأَكْلِ يُكْرَهُ. وَفِيهَا مِنْ كِتَابِ الِاسْتِحْسَانِ: وَإِنْ اتَّخَذَ طَعَامًا لِلْفُقَرَاءِ كَانَ حَسَنًا اهـ وَأَطَالَ فِي ذَلِكَ فِي الْمِعْرَاجِ. وَقَالَ: وَهَذِهِ الْأَفْعَالُ كُلُّهَا لِلسُّمْعَةِ وَالرِّيَاءِ فَيُحْتَرَزُ عَنْهَا لِأَنَّهُمْ لَا يُرِيدُونَ بِهَا وَجْهَ اللَّهِ تَعَالَى. (رد المحتار، باب صلاة الجنازة، مطلب فى كراهة الضيافة من اهل الميت-3/148)

والله اعلم بالصواب

মুসলিম বাংলা ফাতওয়া বিভাগ

মন্তব্য (0)

কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!

মন্তব্য করতে লগইন করুন