সুন্নতী বিবাহ
প্রশ্নঃ ১০৪৬০. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, ইসলামীক বিয়ের নিয়মটা জানাবেন কী? যেটাতে খরচ অনেক কম ও বরকত অনেক বেশি !,
৬ ডিসেম্বর, ২০২৪
যশোর
উত্তর
و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
সুন্নত তরিকায় বিবাহ সম্পাদন বরকতময় হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন: নিশ্চয় সে বিয়ে বেশি বরকতপূর্ণ হয়, যে বিয়েতে খরচ কম হয়। (মুসনাদে আহমাদ ও মুস্তাদরাকে হাকিম)। এ ছাড়া বিয়ের সংশ্লিষ্ট আরও কিছু সুন্নত রয়েছে। যেমন: বিবাহ সাদাসিধে ও অনাড়ম্বর হওয়া; অপচয়, অপব্যয় ও বিজাতীয় অপসংস্কৃতিমুক্ত হওয়া, যৌতুকের শর্ত না থাকা এবং সামর্থ্যের অধিক দেনমোহর ধার্য বা শর্ত না করা। (তাবারানি আওসাত, হাদিস নং-৩৬১২)। (আবু দাউদ: ২১০৬)।
কনেপক্ষ থেকে অলংকারের শর্ত করা নিষেধ এবং ছেলেপক্ষ থেকে যৌতুক চাওয়া হারাম। (আহসানুল ফাতাওয়া, খণ্ড: ৫, পৃষ্ঠা: ১৩)। সৎ ও খোদাভীরু পাত্র-পাত্রীর সন্ধান করা এবং কোনো সুযোগে পাত্রী দেখা সম্ভব হলে দেখে নেওয়া। আনুষ্ঠানিকভাবে ঘটা করে পাত্রী দেখানোর যে প্রথা আমাদের সমাজে প্রচলিত, তা সুন্নতের পরিপন্থী ও পরিত্যাজ্য। (বুখারি, হাদিস নম্বর-৫০৯০; ইমদাদুল ফাতাওয়া, খণ্ড: ৪, পৃষ্ঠা: ২০০)।
বিয়ের পর ছেলের পক্ষে আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, শুভাকাঙ্ক্ষী ও গরিব-মিসকিনদের তৌফিক অনুযায়ী আপ্যায়ন করাকে ‘ওয়ালিমা’ বলে। বাংলায় ওয়ালিমাকে বউভাত বলা হয়ে থাকে। বিয়ের পরদিন বা পরবর্তী সময়ে সুবিধামতো নিকটতম সময়ের মধ্যে ওয়ালিমা করা বিধেয়। তবে তিন দিনের মধ্যে করা উত্তম। যেকোনো প্রকার খাদ্যদ্রব্য দিয়ে ওয়ালিমা করা যায়। ওয়ালিমা একটি ইবাদত। এক দিন ওয়ালিমা করা সুন্নত, দুই দিন ওয়ালিমা করা মুস্তাহাব, তিন দিন ওয়ালিমা করা জায়েজ। (মুসলিম: ১৪২৭)।
ওয়ালিমা করা এক গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত। রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজে ওয়ালিমা করেছেন এবং সাহাবিদের করতে বলেছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) জয়নব বিনতে জাহাশ (রা.)-কে বিয়ে করার পরদিন ওয়ালিমা করেছিলেন। (বুখারি, হাদিস নম্বর-৫১৭০)। রাসুলুল্লাহ (সা.) ছাফিয়াহ (রা.)-কে বিয়ের পর তিন দিন যাবৎ ওয়ালিমা খাইয়েছিলেন। (মুসনাদে আবু ইয়ালা, হাদিস নম্বর-৩৮৩৪)।
হজরত আনাস (রা.) বলেন, নবী (সা.) আবদুর রহমান ইবনে আওফের গায়ে হলুদ রঙের চিহ্ন দেখে জিজ্ঞেস করলেন, এটা কী? তিনি বললেন, আমি এক খেজুর আঁটির ওজন স্বর্ণ দিয়ে একজন মহিলাকে বিবাহ করেছি। রাসুল (সা.) বললেন, ‘আল্লাহ তোমার বিবাহে বরকত দান করুক। একটি ছাগল দ্বারা হলেও তুমি ওয়ালিমা করো।’ (বুখারি: ৫১৫৫; মুসলিম ও মিশকাত, হাদিস নম্বর-৩২১০)।
হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) জয়নব (রা.)-কে বিয়ে করার পর যত বড় ওয়ালিমা করেছিলেন, তত বড় ওয়ালিমা তিনি তাঁর অন্য কোনো স্ত্রীর বেলায় করেননি। (বুখারি: ৫১৬৮; মুসলিম: ২৫৬৯; মিশকাত, হাদিস নম্বর-৩২১১)। হজরত আনাস (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন জয়নব বিনতে জাহাশকে বিবাহ করলেন, তখন ওয়ালিমা করলেন এবং মানুষকে রুটি-গোশত দিয়ে তৃপ্তিসহকারে খাওয়ালেন। (বুখারি: ৪৭৯৪; মিশকাত, খণ্ড: ২, হাদিস নম্বর-৩২১১)।
হজরত আনাস (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ছাফিয়াহ (রা.)-কে মুক্ত করে বিবাহ করলেন এবং তাঁর মোহর নির্ধারণ করলেন তাঁর মুক্তিপণ। তিনি তাঁর বিবাহের ওয়ালিমা করেছিলেন ‘হায়স’ নামক খাদ্য দিয়ে, যা খেজুর, পনির ও ঘি দ্বারা তৈরি ছিল। (বুখারি: ৫১৬৯; মুসলিম: ২৫৬২; মিশকাত, খণ্ড: ২, হাদিস নম্বর-৩২১৩)।
ওয়ালিমায় অতিরিক্ত ব্যয় করা কিংবা খুব উঁচু মানের খানার ব্যবস্থা করা জরুরি নয়। বরং সামর্থ্য অনুযায়ী খরচ করাই সুন্নত আদায়ের জন্য যথেষ্ট। যে ওয়ালিমায় শুধু ধনী ও দুনিয়াদার লোকদের দাওয়াত দেওয়া হয়, দ্বীনদার ও গরিব-মিসকিনদের দাওয়াত দেওয়া হয় না, সেই ওয়ালিমাকে হাদিসে নিকৃষ্টতম ওয়ালিমা বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। (আবু দাউদ:)
ছাফিয়্যা বিনতে শায়বা (রা.) বলেন, নবীজি (সা.
বিবাহের ক্ষেত্রে ছেলের জন্য ওয়ালিমা করা সুন্নত। আজকাল মেয়ের বাড়িতে যে ভোজের আয়োজন করা হয়, তা শরিয়তসম্মত নয়। বিয়েতে মেয়েপক্ষের কোনোরূপ খরচ করার কথা নয়। এরপরও যেটা করা হয়, সেটা সৌজন্যমূলক আপ্যায়নমাত্র। (বুখারি, হাদিস নম্বর-৬০১৮)।
অথচ বর্তমান যুগে ওয়ালিমার এই সুন্নত বর্জনের প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা বাঞ্ছনীয় নয়। বিশেষত মেয়েপক্ষের ওপর আপ্যায়নের যে চাপ সৃষ্টি করা হয়, তা সম্পূর্ণ হারাম। সর্বোপরি শর্ত আরোপ করে বরযাত্রীর নামে বরের সঙ্গে অধিকসংখ্যক লোক নিয়ে যাওয়া এবং কনের বাড়িতে মেহমান হয়ে কনের পিতার ওপর বোঝা সৃষ্টি করা আজকের সমাজের একটি জঘন্য কুপ্রথা, যা সম্পূর্ণরূপে পরিত্যাগ করা আবশ্যক। (মুসনাদে আহমাদ: ২০৭২২, বুখারি: ২৬৯৭)।
والله اعلم بالصواب
শাইখ আবু সাঈদ ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, মোহাম্মাদপুর।
মন্তব্য (০)
কোনো মন্তব্য নেই।
এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর
২৫১০০
তাওহিদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি ও পুরস্কার
১৩ নভেম্বর, ২০২২
ঢাকা ১২১৪

উত্তর দিয়েছেনঃ শাইখ উমায়ের কোব্বাদী
১৯০৮৫
৮ জুন, ২০২২
ফেনী

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি
১৮৫৫৩
১৭ মে, ২০২২
দাশুড়িয়া

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী মুহাম্মাদ রাশেদুল ইসলাম
১৮৫২৪
১৭ মে, ২০২২
ঢাকা

উত্তর দিয়েছেনঃ মোহাম্মদ আমীর হোসাইন, মুফতি ও মুহাদ্দীস,
সাম্প্রতিক প্রশ্নোত্তর
মাসায়েল-এর বিষয়াদি
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে
মাসায়েল-এর বিষয়াদি লোড হচ্ছে