আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

হালখাতা করা কি বৈধ? এ ব্যাপারে ইসলাম কি বলে

প্রশ্নঃ ১০৪১৯৪. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, হালখাতা করা কি বৈধ? এ ব্যাপারে ইসলাম কি বলে

২২ মে, ২০২৫
উত্তরগাঁও - পানিয়া সড়ক

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


হালখাতা মূলত ব্যবসায়ীদের একটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রথা, যা বাংলা নববর্ষ (পয়লা বৈশাখ) উপলক্ষে পালন করা হয়। এটি মূলত পুরাতন হিসাব শেষ করে নতুন হিসাব খোলার একটি উপলক্ষ। অনেক সময় এতে দেনাদারদের আমন্ত্রণ করে মিষ্টি খাওয়ানো, নতুন খাতা খোলা, উপহার দেওয়া, এমনকি কিছু দোয়া-দরূদ পাঠ করা হয়।

এটি জায়েজ কি না? নির্ভর করে উদ্দেশ্যের উপর।
হালখাতার প্রধানতম উদ্দেশ্য হচ্ছে, ঋণ/কর্জ আদায়। প্রথমত ঋণ বিষয়ক কথা হচ্ছে, আমরা ঋণ আদায়ে খুব গড়িমসি করি। এর ফলে বর্তমানে কাউকে করজ বা ঋণ দিতে আমরা কার্পণ্য করি। অথচ হাদীসে এর ফযীলত আকাশ্চুম্বি।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " مَنْ أَنْظَرَ مُعْسِرًا أَوْ وَضَعَ لَهُ أَظَلَّهُ اللَّهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ تَحْتَ ظِلِّ عَرْشِهِ يَوْمَ لاَ ظِلَّ إِلاَّ ظِلُّهُ "
আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেছেন, কোন ব্যক্তি যদি কোন অভাবগ্রস্ত ব্যক্তিকে অবকাশ দেয় বা তার নিকট পাওনা মাফ করে দেয় আল্লাহ্ তাআলা কিয়ামতের দিন তাঁর আরশের ছায়ায় তাকে ছায়া দিবেন। সে দিন আল্লাহর ছায়া ছাড়া আর কোন ছায়া থাকবে না। (সুনানে তিরমিযি, হাদীস নং ১৪০৬)

বর্তমানে বাকি/কর্জে হাসানা পাইনা কেন?
এর বড় কারণ আমরাই। বাকিতে পণ্য নেয়া সত্বেও ইচ্ছাকৃত মাসের পর মাস টাকা বাকি রাখা।
হাদীসে ইরশাদ হয়েছে,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَنْ أَخَذَ أَمْوَالَ النَّاسِ يُرِيدُ أَدَاءَهَا أَدَّى اللَّهُ عَنْهُ، وَمَنْ أَخَذَ يُرِيدُ إِتْلاَفَهَا أَتْلَفَهُ اللَّهُ»
আবু হুরায়রা (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, নবী (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি মানুষের মাল (ধার) নেয় পরিশোধ করার উদ্দেশ্যে আল্লাহ তা‘আলা তা আদায়ের ব্যবস্থা করে দেন। আর যে তা নেয় বিনষ্ট করার নিয়তে আল্লাহ তা‘আলা তাকে ধ্বংস করেন।
(সহীহুল বুখারী, ২৩৮৭)
এজন্য ঝণ আদায়ে গড়িমসি করা উচিত নয়। কেননা নবীজি (ﷺ) বলেন, ধনী ব্যক্তির (ঋণ আদায়ে) গড়িমসি করা যুলুম। (সহিহ বুখারী, হাদিস নং ২৪০০)
বিস্তারিত: https://muslimbangla.com/article/772

প্রিয়প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই! হালখাতার মূল উদ্দেশ্য যদি হয়,
১-হিসাব-নিকাশ পরিস্কার করা।
২-দেনা-পাওনার হিসাব নবায়ন করা।
৩-নতুন বছরের হিসাবের খাতা খোলা।
৪-এবং এতে কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী কোনো আকীদা বা বিশ্বাস না থাকা (যেমন, এটি কোনো বরকতের উৎস মনে করা বা পয়লা বৈশাখকে “নতুন বছর” হিসেবে ধর্মীয় তাৎপর্য দেওয়া।
৫-হারাম লেনদেন বা সুদের সংমিশ্রণ না থাকা।
৬-গান-বাজনা, ছবি তোলা, নারী-পুরুষের মিশ্রতা, বা বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুকরণ না থাকা।
৭-এবং একে কোনো ধর্মীয় ইবাদত বা সাওয়াবের কাজ মনে না করা হয়।
তাহলে এমন হালখাতা শরীয়তে নাজায়েজ নয়।

والله اعلم بالصواب

মুফতী শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী খতীব, রৌশন আলী মুন্সীবাড়ী জামে মসজিদ, ফেনী জিম্মাদার, 'মুসলিম বাংলা' ইফতা বিভাগ

মন্তব্য (0)

কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!

মন্তব্য করতে লগইন করুন