আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

মসজিদের সুদখোর সভাপতি!

প্রশ্নঃ ১০৩১২৫. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আগে ব্যাংকার ছিলো..... এখন কি মসজিদের সভাপতি হতে পারবে?

২৮ জুলাই, ২০২৫
৩৪H৫+৬৪Q

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


মসজিদের কমিটি রাখা/না রাখা কোনো ইবাদত তথা সাওয়াব/গুনাহের বিষয় নয়। বরং যেভাবে সুচারুরূপে মসজিদ পরিচালিত হবে সেভাবে পরিচালনা করাই হলো কর্তব্য। সেক্ষেত্রে যদি কমিটির প্রয়োজন হয় তাহলে কমিটি রাখবে। যদি কোনো মসজিদ কমিটি ছাড়াই পরিচালিত হতে পারে তাহলে তাতেও শরীয়তের কোনো বাধা নাই।

তবে মসজিদ কমিটি অবশ্যই দ্বীনদার নামাজী পরহেজগার মানুষ হওয়া উচিত। যদি কোনো মসজিদের কমিটির লোকজন বেনামাজী হয় তাহলে তাতে মসজিদের বা তাতে নামাজ আদায়কারী মুসল্লিদের নামাজের কোনো ক্ষতি হবে না। কোনো কমিটি যদি যথাযথনিয়মে মসজিদ পরিচালনা করতে না পারে তাহলে স্থানীয় মুসল্লিগণই সিদ্ধান্ত নিবে যে, এই কমিটি বহাল রাখবেন না পরিবর্তণ করবেন।

এমনিভাবে সুদ, ঘুষ, প্রকাশ্যে গুনাহ এবং হারামের সাথে জড়িত এমন ব্যক্তিদেরও মসজিদ কমিটিতে রাখা উচিত নয়। কেননা বাস্তবতার নিরিখে দেখা যায় িএজতীয় লোকেরা মসজিদের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হয়েই খতিব, ইমাম-মুজ্জিনের ওপর অন্যায় হস্তক্ষেপ করা শুরু করে দেয়। ইমাম-খতিব সাহেবের বয়ানের ওপর বে-শরঈ কাউন্টার দেওয়া শুরু করে। কাজেই বিষয়টিকে বিবেচনায় রাখা উচিত।

اِنَّمَا یَعۡمُرُ مَسٰجِدَ اللّٰہِ مَنۡ اٰمَنَ بِاللّٰہِ وَالۡیَوۡمِ الۡاٰخِرِ وَاَقَامَ الصَّلٰوۃَ وَاٰتَی الزَّکٰوۃَ وَلَمۡ یَخۡشَ اِلَّا اللّٰہَ فَعَسٰۤی اُولٰٓئِکَ اَنۡ یَّکُوۡنُوۡا مِنَ الۡمُہۡتَدِیۡنَ

অর্থ: আল্লাহর মসজিদ তো আবাদ করে তারাই, যারা আল্লাহ ও পরকালে ঈমান এনেছে এবং নামায কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় করে না। এরূপ লোকদের সম্পর্কেই আশা আছে যে, তারা সঠিক পথ অবলম্বনকারীদের অন্তর্ভুক্ত হবে।
সূরা আত তাওবাহ্ ( আয়াত নং - ১৮)

উপরোক্ত আয়াতের তাফসীর: (অংশিক)
কতিপয় মাসায়েল: আয়াতে বলা হয় যে, মসজিদ আবাদ করার উপযুক্ততা কাফিরদের নেই। অর্থ হলো, কাফিররা মসজিদের মুতাওয়াল্লী ও ব্যবস্থাপক হতে পারবে না। আরও ব্যাপক অর্থে বলা যায়, কোন কাফিরকে কোন ইসলামী ওয়াক্ফ সম্পত্তির মুতাওয়াল্লী ও ব্যবস্থাপক পদে নিয়োগ করা জায়েয নয়। তবে নির্মাণ কাজে অমুসলিমের সাহায্য নিতে দোষ নেই ৷ (তফসীরে মুরাগী)

কোন অমুসলিম যদি সওয়াব মনে করে মসজিদ নির্মাণ করে দেয় অথবা মসজিদ নির্মাণের জন্য মুসলমানদের চাঁদা দেয় তবে কোন প্রকার দীনী বা দুনিয়াবী ক্ষতি তার উপর আরোপ করা অথবা খোঁটা দেওয়ার আশংকা না থাকলে তা গ্রহণ করা জায়েয রয়েছে। (শামী)

দ্বিতীয় আয়াতে যা বলা হয়, আল্লাহর মসজিদ আবাদ করার যোগ্যতা রয়েছে উপরোক্ত গুণাবলীসম্মত নেক্কার মুসলমানদের। এর থেকে বোঝা যায়, যে ব্যক্তি মসজিদের হিফাজত, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও অন্যান্য ব্যবস্থায় নিয়োজিত থাকে কিংবা যে ব্যক্তি আল্লাহর যিকির বা দীনী ইলমের শিক্ষা দান কিংবা শিক্ষা লাভের উদ্দেশ্যে মসজিদে যাতায়াত করে, তা তার কামিল মু’মিন হওয়ার সাক্ষ্য বহন করে। তিরমিযী ও ইবনে মাজা শরীফে বর্ণিত আছেঃ রাসূলে করীম (সা) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তিকে তোমরা মসজিদে উপস্থিত হতে দেখ, তোমরা তার ঈমানদার হওয়ার সাক্ষ্য দেবে। কারণ আল্লাহ্ নিজেই বলেছেনঃ إِنَّمَا يَعْمُرُ مَسَاجِدَ اللَّهِ مَنْ آمَنَ بِاللَّهِ "আল্লাহর মসজিদগুলো আবাদ করে, যারা ঈমান এনেছে আল্লাহর প্রতি ……… ।"

বুখারী ও মুসলিমের হাদীসে আছে; নবীয়ে করীম (সা) ইরশাদ করেছেন, “যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যা মসজিদে উপস্থিত হয়, আল্লাহ্ তাঁর জন্যে জান্নাতের একটি মাকাম প্রস্তুত করেন।” হযরত সালমান ফারসী (রা) থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেছেন, “মসজিদে আগমনকারী ব্যক্তি আল্লাহর যিয়ারতকারী মেহমান, আর মেজবানের কর্তব্য হলো মেহমানের সম্মান করা।”—–(মাযহারী, তাবরানী, ইবনে জারীর ও বায়হাকী শরীফ প্রভৃতি)।

কাযী সানাউল্লাহ পানিপথী (র) বলেন, মসজিদের উদ্দেশ্য-বহির্ভূত কার্যকলাপ থেকে মসজিদকে পবিত্র রাখাও মসজিদ আবাদ কারার শামিল। যেমন মসজিদে ক্রয়-বিক্রয়, দুনিয়াবী কথাবার্তা, হারানো বস্তুর সন্ধান, ভিক্ষাবৃত্তি, বাজে কবিতা পাঠ, ঝগড়া-বিবাদ ও হৈ-হুল্লোড় প্রভৃতি মসজিদের উদ্দেশ্য-বহির্ভূত কাজ। —(মাযহারী)

والله اعلم بالصواب

সাইদুজ্জামান কাসেমি উস্তাজুল ইফতা ওয়াল হাদিস, জামিয়া ইমাম বুখারী, উত্তরা, ঢাকা।

মন্তব্য (0)

কোনো মন্তব্য নেই। প্রথম মন্তব্য করুন!

মন্তব্য করতে লগইন করুন