আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

বিটকয়েন বা ক্রিপ্টোকারেন্সি: হালাল না হারাম?

প্রশ্নঃ ১০১৮৬. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আচ্ছা ভাই! বিটকয়েন বা ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে যদি কিছু বলতেন! এটা কি হালাল না হারাম? যদি হারাম হয়ে থাকে তাহলে আমরা কি করবো? করন সামনে ক্রিপ্টোকারেন্সি অসতে যাচ্ছে!,

৫ নভেম্বর, ২০২৩

ঢাকা

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


অনলাইনে যেসব কারেন্সি রয়েছে, যেমন বিটকয়েন ইত্যাদি।
সেসব বিষয়ে শরয়ী মাসয়ালা হলো,

ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক মানের কয়েকটি ইসলামিক প্রতিষ্ঠান থেকে বিটকয়েন বিষয়ে শরঈ পর্যালোচনা পেশ করা হয়েছে। তন্মধ্যে অন্যতম হল,
১. তুরস্কের ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রনালয়,
২. মিশরের কেন্দ্রীয় ফতোয়া বিভাগ,
৩. ফিলিস্তিনের কেন্দ্রীয় ফতোয়া বিভাগ,
৪. আন্তর্জাতিক ইসলামী বিদ্যাপিঠ দারুল উলূম দেওবন্দের ফতোয়া বিভাগ ও
৫. ইসলামিক ইকনোমিক ফোরাম নামক শারিয়াহ স্কলারদের একটি অনলাইন গ্রুপ।
শেষোক্ত ফোরাম এ বিষয়ে ফকীহদের নিয়ে মতবিনিময় মজলিস অনুষ্ঠিত করেছে। এরপর ফোরামের পক্ষ থেকে বিটকয়েন বিষয়ে যৌথ শরঈ পর্যালোচনা পেশ করা হয়েছে।

৩১ পৃ. ব্যাপী তাঁদের গবেষণামূলক যৌথ শরঈ পর্যালোচনাটি আরবী ভাষায় গত ১১/১/২০১৮ইং তারিখে ‘ইন্টারন্যাশনাল শরীয়াহ্ রিসার্চ একাডেমী ফর ইসলামিক ফিন্যান্স (ISRA)’ মালয়েশিয়ার অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে (https://www.isra.my/) ও অনলাইন ভিত্তিক ‘ইসলামিক ইকনোমিকস এন্ড ফিন্যান্স পিডিয়া’-এর ওয়েব সাইটে (http://iefpedia.com/arab/?p=40129) প্রকাশ হয়েছে।
উক্ত গবেষণাটি ইসলামী অর্থনীতি জগতে এ বিষয়ে বিশদ প্রথম সম্মিলিত শরঈ আলোচনা । বক্ষ্যমাণ লেখার একটি প্রধান উৎস উক্ত গবেষণা।
উল্লেখ্য, ইতোমধ্যে বিভিন্ন ভাষায় গবেষণাটির অনুবাদের কাজ চলছে। আমাদের জানামতে এর মূল আরবীর উপর নির্ভর করে প্রথম অনুবাদটি সম্পন্ন হয়েছে বাংলা ভাষায় । অনুবাদটি করেছে বাংলাদেশের ইসলামিক ফাইন্যান্স একাডেমি এন্ড কনসালটেন্সি (আই. এফ. এ. সি.)।

বর্তমান পর্যন্ত বিটকয়েন বিষয়ে শরঈ যে মতামতগুলো প্রকাশিত হয়েছে, এগুলো মোট তিন ধরনের। যথা-
ক. বিটকয়েনের ব্যবহার বৈধ নয়, ঠিক নয়। (যথাক্রমে মিশরের কেন্দ্রীয় ফতোয়া বিভাগ, দেওবন্দের ফতোয়া ও তুরস্কের ধর্ম মন্ত্রনালয়) কেউ হারামও বলেছেন (ফিলিস্তিনের কেন্দ্রীয় ফতোয়া বিভাগ)
খ. বিটকয়েনের ব্যবহার শর্তসাপেক্ষে মৌলিকভাবে বৈধ। (ইসলামিক ইকনোমিক ফোরামের পূর্বোক্ত গবেষণায় অজ্ঞাতভাবে নাম ছাড়া এ মতামত উল্লেখ করা হয়েছে)
গ. এর থেকে বেঁচে থাকাই সতর্কতা। (এটি মালেকী মাযহাবের আন্তর্জাতিক কনফারেন্সের কতকের মত)

উপরোক্ত শরঈ পর্যালোচনায় বিটকয়েনের যে প্রসঙ্গগুলো গুরুত্বের সাথে আলোচনায় এসেছে, সংক্ষেপে তা হল-
১.বিটকয়েন প্রকাশকের অজ্ঞতা।
২.এর ভবিষ্যত বিষয়ে অজ্ঞতা।
৩.এর প্রাতিষ্ঠানিক কোন প্রকাশক নেই। যিম্মাদারও নেই।
৪.রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তত্ত্বাবধান ও পর্যবেক্ষণ নেই।
৫.এতে ব্যাপকভাবে স্প্যাকুলেশন হয়। এর মূল্য স্থীর থাকে না।
৬.আইন বহির্ভূত কাজে অধিক ব্যবহার হওয়া।
৭.উপরোক্ত বৈশিষ্ট্যের কারণে এটি শরীয়তের দৃষ্টিতে মূল্যমান বিশিষ্ট (মালে মুতাকাওয়্যিম) হবে কি না।
যারা একে নাজায়েয বলেন, তাদের মতে বিটকয়েনে উপরোক্ত ১-৬টি বৈশিষ্ট্য থাকায় সেটি শরীয়তের দৃষ্টিতে মূল্যমান বিশিষ্ট (মালে মুতাকাওয়্যিম) কিছু নয়। তাই এটি জায়েয নয়। বর্তমান পর্যন্ত এ মতের প্রবক্তার সংখ্যাই অধিক।

আরো সংক্ষেপে বললে, তাঁদের আলোচনায় বিটকয়েন শরঈভাবে নিষিদ্ধ হওয়ার মৌলিক কারণ তিনটি। যথা-
১.গারার (Uncertainty), জাহালাহ (অজ্ঞতা) ও গ্যামব্লিং। মূলত বিটকয়েনের প্রকাশকের অজ্ঞতা, এর ভবিষ্যত বিষয়ে অজ্ঞতা, এটি সেন্ট্রালাইজড না হওয়া, তত্ত্বাবধান ও পর্যবেক্ষণ না হওয়া থেকেই এসব গারার ও জাহালাহ-এর সৃষ্টি।
২. নিষিদ্ধ কাজের মাধ্যম হওয়া।
৩.উপরোক্ত বৈশিষ্ট্যসমূহের কারণে শরীয়তের দৃষ্টিতে এটি মূল্যমান বিশিষ্ট সম্পদ না হওয়া।

অপরদিকে যারা বিটকয়েনকে বৈধ বলতে চান, তাঁদের মূল যুক্তি হল-
১.প্রত্যেক জিনিষের মূল হল মুবাহ হওয়া।
২.বিটকয়েনের মাধ্যমে কেনা-বেচা হয়। এর মাধ্যমে অন্যান্য পণ্যের মালিকানা অর্জন হয়। সুতরাং এটি শরীয়তের দৃষ্টিতে মূল্যমান বিশিষ্ট (মালে মুতাকাওয়্যিম) হবে।
৩.এর মধ্যে সাধারণ কারেন্সি হওয়ার যে গুণ থাকা দরকার তা আছে। যদিও তা সরকারের পক্ষ থেকে প্রকাশিত নয়।

প্রথমোক্ত বক্তব্যের জবাবে তারা বলেন, এসব মৌলিক সমস্যা নয়। নিষিদ্ধ কাজ অন্যান্য কারেন্সির মাধ্যমেও হতে পারে। আর সরকারের তত্ত্বাবধান ও সেন্ট্রালাইজড-এর মূল লক্ষ্য হল, নিরাপত্তা দান। ব্লক চেইন প্রযুক্তি এক্ষত্রে সেই নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
আমাদের দৃষ্টিতে এখানে যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ, তা হল, বিটকয়েন শরঈ দৃষ্টিতে কারেন্সি কি না। অর্থনীতিবিদ ও ফকীহদের দৃষ্টিতে মুদ্রার চারটি বৈশিষ্ট্য ও অর্থনৈতিক কাজ (Economic Activities) রয়েছে। যথা-
১। Medium of Exchange: এর সারকথা হল, যে জিনসটি মুদ্রা হবে তার প্রধান বৈশিষ্ট্য হবে-যেকোন কিছু ক্রয়-বিক্রয়ে বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে তা কাজ করবে।
২। Widely Acceptable: এর সারকথা হল, যে জিনিষটি মুদ্রা হবে সেটার জন্য জরুরী হল-তা ব্যাপকভাবে কোনও প্রকার দলীল-প্রমাণ ছাড়া গ্রহণযোগ্য হওয়া। এর বিপরীতে কাংখিত বস্তু দিতে প্রস্তুত হওয়া। এর জন্য একটি অন্যতম শর্ত হল, দেশীয় আইনে তা অস্বীকার না করা।
৩। Standard of Value/Measure of Value: এর সারকথা হল, কাপড়ে দীর্ঘতা মিটার বা গজে মাপা হয়। চাউল-গমের পরিমাণ ওযনের মাধ্যমে জানা যায়। তেমনি এসব বস্তুর ভেল্যু পরিমাপ করার মাধ্যম হল মুদ্রা। অর্থাৎ যে জিনিষটি মুদ্রা হবে তার মধ্যে এই গুণ থাকতে হবে যে, এর মাধ্যমে বস্তুসমূহের ভ্যল্যু সহজেই নির্ণয় করা সম্ভব হবে। যেমন, বলা হয় ঘড়িটির মূল্য দুইশত টাকা। বইটির মূল্য তিনশত টাকা।
৪। Store of Value: এর সারকথা হল, মানুষ সম্পদ সঞ্চয় করে। ভবিষ্যতে তা কাজে আসে। সম্পদ সঞ্চয়ের জন্য এমন কিছু দরকার, যার মূল্যমান সাধারণত হ্রাস হবে না। নষ্ট হবে না। এর দ্বারা নিজ সম্পদের ভ্যাল্যু সংরক্ষণ করা যাবে। এটি করার মাধ্যম হল-মুদ্রা। এক লক্ষ টাকা আপনার কাছে থাকার অর্থই হল, এ পরিমাণ সম্পদের ভ্যাল্যু আপনার কাছে আছে। অর্থাৎ যে জিনিষটি মুদ্রা হবে তার মধ্যে এই গুণ থাকতে হবে যে, এর মাধ্যমে বস্তুসমূহের ভ্যাল্যু সহজেই সংরক্ষণ করা যায়।

সারকথা, এ আলোচনা থেকে স্পষ্ট যে, কোন কিছুকে মুদ্রা বলতে হলে আগে দেখতে হবে তার মধ্যে উপরোক্ত বৈশিষ্ট্যগুলো আছে কি না। কোন একটা বৈশিষ্ট্য না থাকলে সেটা মুদ্রা হবে না।
আলোচিত বিটকয়েনে-অন্তত আমাদের দেশে-দ্বিতীয় গুণটি নেই। কারণ এটি ব্যাপকভাবে গৃহিত নয়। সরকারীভাবেও অনুমোদিত নয়। সুতরাং একে আমাদের দেশে শরঈ ও অর্থনীতি কোন দৃষ্টিকোণ থেকেই কারেন্সি বা মুদ্রা বলা যায় না।

বিশেষত সরকারীভাবে এর লেনদেন আমাদের দেশে নিষিদ্ধ। শরীয়তের মাসয়ালা হল, বৈধ বিষয়ে রাষ্ট্রের আনুগত্য করা ওয়াজিব। এর জন্য রাষ্ট্র ইসলামী হওয়া জরুরী নয়। এছাড়া দেশের প্রতিটি নাগরিকই বক্তব্য বা কর্মে একথার স্বীকারোক্তি দিয়েছে যে, সে বৈধ বিষয়ে সরকারের আইন মানবে।

অতএব উপরোক্ত দুই কারণে, যতক্ষণ অবৈধ কাজে বাধ্য না করা হবে ততক্ষণ সরকারী আইন মানা জরুরী। (দেখুন, বুহুস,১:১৬৩/১৬৮,শরহু সিয়ারিল কাবীর, ১/১৬৮;তাকমিলাতু ফাতহিল মুলহিম ৩/৩২৩)

সুতরাং বিটকয়েনের লেনদেন, টাকায় কনভার্ট করা থেকে বিরত থাকা উচিত। যদি কখনো তাতে পূর্বোক্ত দ্বিতীয় গুণটি পাওয়া যায়, তবে তখন সেটা কারেন্সির মর্যাদা পাবে। ডলার ও টাকার মত এটিও স্বতন্ত্র একটি মুদ্রা হিসেবে বিবেচিত হবে। এর সাথে ডলার/টাকার কমবেশি লেনদেন বৈধ হবে। যেমন, টাকার সাথে ডলারের লেনদেন কমবেশিতে বৈধ।

এছাড়া যে কাজগুলো বিটকয়েনে সবসময়ই নিষিদ্ধ ও নাজায়েয, তা হল-ফরেক্সের মত ফিউসার বা ফরওয়ার্ড সেল এতে করা যাবে না। বিটকয়েন হ্যাকিং করা জায়েয নয়। এটি চুরির নামান্তর। বাকিতে বিটকয়েন ক্রয় করা হলে, আদায়ের দিন যে মূল্য হবে সেটা পর করবে।
অনলাইন যেসব কারেন্সি রয়েছে, যেমন বিটকয়েন ইত্যাদি।
এসব বিষয়ে শরয়ী মাসয়ালাঃ
ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক মানের কয়েকটি ইসলামিক প্রতিষ্ঠান থেকে বিটকয়েন বিষয়ে শরঈ পর্যালোচনা পেশ করা হয়েছে। তন্মধ্যে অন্যতম হল, তুরস্কের ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রনালয়, মিশরের কেন্দ্রীয় ফতোয়া বিভাগ, ফিলিস্তিনের কেন্দ্রীয় ফতোয়া বিভাগ, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিদ্যাপিঠ দারুল উলূম দেওবন্দের ফতোয়া বিভাগ ও ইসলামিক ইকনোমিক ফোরাম নামক শারিয়াহ স্কলারদের একটি অনলাইন গ্রুপ।
শেষোক্ত ফোরাম এ বিষয়ে ফকীহদের নিয়ে মতবিনিময় মজলিস অনুষ্ঠিত করেছে। এরপর ফোরামের পক্ষ থেকে বিটকয়েন বিষয়ে যৌথ শরঈ পর্যালোচনা পেশ করা হয়েছে।

৩১ পৃ. ব্যাপী তাঁদের গবেষণামূলক যৌথ শরঈ পর্যালোচনাটি আরবী ভাষায় গত ১১/১/২০১৮ইং তারিখে ‘ইন্টারন্যাশনাল শরীয়াহ্ রিসার্চ একাডেমী ফর ইসলামিক ফিন্যান্স (ISRA)’ মালয়েশিয়ার অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে (https://www.isra.my/) ও অনলাইন ভিত্তিক ‘ইসলামিক ইকনোমিকস এন্ড ফিন্যান্স পিডিয়া’-এর ওয়েব সাইটে (http://iefpedia.com/arab/?p=40129) প্রকাশ হয়েছে।
উক্ত গবেষণাটি ইসলামী অর্থনীতি জগতে এ বিষয়ে বিশদ প্রথম সম্মিলিত শরঈ আলোচনা । বক্ষ্যমাণ লেখার একটি প্রধান উৎস উক্ত গবেষণা।
উল্লেখ্য, ইতোমধ্যে বিভিন্ন ভাষায় গবেষণাটির অনুবাদের কাজ চলছে। আমাদের জানামতে এর মূল আরবীর উপর নির্ভর করে প্রথম অনুবাদটি সম্পন্ন হয়েছে বাংলা ভাষায় । অনুবাদটি করেছে বাংলাদেশের ইসলামিক ফাইন্যান্স একাডেমি এন্ড কনসালটেন্সি (আই. এফ. এ. সি.)।

বর্তমান পর্যন্ত বিটকয়েন বিষয়ে শরঈ যে মতামতগুলো প্রকাশিত হয়েছে, এগুলো মোট তিন ধরনের। যথা-
ক. বিটকয়েনের ব্যবহার বৈধ নয়, ঠিক নয়। (যথাক্রমে মিশরের কেন্দ্রীয় ফতোয়া বিভাগ, দেওবন্দের ফতোয়া ও তুরস্কের ধর্ম মন্ত্রনালয়) কেউ হারামও বলেছেন (ফিলিস্তিনের কেন্দ্রীয় ফতোয়া বিভাগ)
খ. বিটকয়েনের ব্যবহার শর্তসাপেক্ষে মৌলিকভাবে বৈধ। (ইসলামিক ইকনোমিক ফোরামের পূর্বোক্ত গবেষণায় অজ্ঞাতভাবে নাম ছাড়া এ মতামত উল্লেখ করা হয়েছে)
গ. এর থেকে বেঁচে থাকাই সতর্কতা। (এটি মালেকী মাযহাবের আন্তর্জাতিক কনফারেন্সের কতকের মত)

উপরোক্ত শরঈ পর্যালোচনায় বিটকয়েনের যে প্রসঙ্গগুলো গুরুত্বের সাথে আলোচনায় এসেছে, সংক্ষেপে তা হল-
১.বিটকয়েন প্রকাশকের অজ্ঞতা।
২.এর ভবিষ্যত বিষয়ে অজ্ঞতা।
৩.এর প্রাতিষ্ঠানিক কোন প্রকাশক নেই। যিম্মাদারও নেই।
৪.রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তত্ত্বাবধান ও পর্যবেক্ষণ নেই।
৫.এতে ব্যাপকভাবে স্প্যাকুলেশন হয়। এর মূল্য স্থীর থাকে না।
৬.আইন বহির্ভূত কাজে অধিক ব্যবহার হওয়া।
৭.উপরোক্ত বৈশিষ্ট্যের কারণে এটি শরীয়তের দৃষ্টিতে মূল্যমান বিশিষ্ট (মালে মুতাকাওয়্যিম) হবে কি না।
যারা একে নাজায়েয বলেন, তাদের মতে বিটকয়েনে উপরোক্ত ১-৬টি বৈশিষ্ট্য থাকায় সেটি শরীয়তের দৃষ্টিতে মূল্যমান বিশিষ্ট (মালে মুতাকাওয়্যিম) কিছু নয়। তাই এটি জায়েয নয়। বর্তমান পর্যন্ত এ মতের প্রবক্তার সংখ্যাই অধিক।
.
আরো সংক্ষেপে বললে, তাঁদের আলোচনায় বিটকয়েন শরঈভাবে নিষিদ্ধ হওয়ার মৌলিক কারণ তিনটি। যথা-
১.গারার (Uncertainty), জাহালাহ (অজ্ঞতা) ও গ্যামব্লিং। মূলত বিটকয়েনের প্রকাশকের অজ্ঞতা, এর ভবিষ্যত বিষয়ে অজ্ঞতা, এটি সেন্ট্রালাইজড না হওয়া, তত্ত্বাবধান ও পর্যবেক্ষণ না হওয়া থেকেই এসব গারার ও জাহালাহ-এর সৃষ্টি।
২. নিষিদ্ধ কাজের মাধ্যম হওয়া।
৩.উপরোক্ত বৈশিষ্ট্যসমূহের কারণে শরীয়তের দৃষ্টিতে এটি মূল্যমান বিশিষ্ট সম্পদ না হওয়া।

অপরদিকে যারা বিটকয়েনকে বৈধ বলতে চান, তাঁদের মূল যুক্তি হল-
১.প্রত্যেক জিনিষের মূল হল মুবাহ হওয়া।
২.বিটকয়েনের মাধ্যমে কেনা-বেচা হয়। এর মাধ্যমে অন্যান্য পণ্যের মালিকানা অর্জন হয়। সুতরাং এটি শরীয়তের দৃষ্টিতে মূল্যমান বিশিষ্ট (মালে মুতাকাওয়্যিম) হবে।
৩.এর মধ্যে সাধারণ কারেন্সি হওয়ার যে গুণ থাকা দরকার তা আছে। যদিও তা সরকারের পক্ষ থেকে প্রকাশিত নয়।

প্রথমোক্ত বক্তব্যের জবাবে তারা বলেন, এসব মৌলিক সমস্যা নয়। নিষিদ্ধ কাজ অন্যান্য কারেন্সির মাধ্যমেও হতে পারে। আর সরকারের তত্ত্বাবধান ও সেন্ট্রালাইজড-এর মূল লক্ষ্য হল, নিরাপত্তা দান। ব্লক চেইন প্রযুক্তি এক্ষত্রে সেই নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
আমাদের দৃষ্টিতে এখানে যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ, তা হল, বিটকয়েন শরঈ দৃষ্টিতে কারেন্সি কি না। অর্থনীতিবিদ ও ফকীহদের দৃষ্টিতে মুদ্রার চারটি বৈশিষ্ট্য ও অর্থনৈতিক কাজ (Economic Activities) রয়েছে। যথা-
১। Medium of Exchange: এর সারকথা হল, যে জিনসটি মুদ্রা হবে তার প্রধান বৈশিষ্ট্য হবে-যেকোন কিছু ক্রয়-বিক্রয়ে বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে তা কাজ করবে।
২। Widely Acceptable: এর সারকথা হল, যে জিনিষটি মুদ্রা হবে সেটার জন্য জরুরী হল-তা ব্যাপকভাবে কোনও প্রকার দলীল-প্রমাণ ছাড়া গ্রহণযোগ্য হওয়া। এর বিপরীতে কাংখিত বস্তু দিতে প্রস্তুত হওয়া। এর জন্য একটি অন্যতম শর্ত হল, দেশীয় আইনে তা অস্বীকার না করা।
৩। Standard of Value/Measure of Value: এর সারকথা হল, কাপড়ে দীর্ঘতা মিটার বা গজে মাপা হয়। চাউল-গমের পরিমাণ ওযনের মাধ্যমে জানা যায়। তেমনি এসব বস্তুর ভেল্যু পরিমাপ করার মাধ্যম হল মুদ্রা। অর্থাৎ যে জিনিষটি মুদ্রা হবে তার মধ্যে এই গুণ থাকতে হবে যে, এর মাধ্যমে বস্তুসমূহের ভ্যল্যু সহজেই নির্ণয় করা সম্ভব হবে। যেমন, বলা হয় ঘড়িটির মূল্য দুইশত টাকা। বইটির মূল্য তিনশত টাকা।
৪। Store of Value: এর সারকথা হল, মানুষ সম্পদ সঞ্চয় করে। ভবিষ্যতে তা কাজে আসে। সম্পদ সঞ্চয়ের জন্য এমন কিছু দরকার, যার মূল্যমান সাধারণত হ্রাস হবে না। নষ্ট হবে না। এর দ্বারা নিজ সম্পদের ভ্যাল্যু সংরক্ষণ করা যাবে। এটি করার মাধ্যম হল-মুদ্রা। এক লক্ষ টাকা আপনার কাছে থাকার অর্থই হল, এ পরিমাণ সম্পদের ভ্যাল্যু আপনার কাছে আছে। অর্থাৎ যে জিনিষটি মুদ্রা হবে তার মধ্যে এই গুণ থাকতে হবে যে, এর মাধ্যমে বস্তুসমূহের ভ্যাল্যু সহজেই সংরক্ষণ করা যায়।

সারকথা, এ আলোচনা থেকে স্পষ্ট যে, কোন কিছুকে মুদ্রা বলতে হলে আগে দেখতে হবে তার মধ্যে উপরোক্ত বৈশিষ্ট্যগুলো আছে কি না। কোন একটা বৈশিষ্ট্য না থাকলে সেটা মুদ্রা হবে না।
আলোচিত বিটকয়েনে-অন্তত আমাদের দেশে-দ্বিতীয় গুণটি নেই। কারণ এটি ব্যাপকভাবে গৃহিত নয়। সরকারীভাবেও অনুমোদিত নয়। সুতরাং একে আমাদের দেশে শরঈ ও অর্থনীতি কোন দৃষ্টিকোণ থেকেই কারেন্সি বা মুদ্রা বলা যায় না।

বিশেষত সরকারীভাবে এর লেনদেন আমাদের দেশে নিষিদ্ধ। শরীয়তের মাসয়ালা হল, বৈধ বিষয়ে রাষ্ট্রের আনুগত্য করা ওয়াজিব। এর জন্য রাষ্ট্র ইসলামী হওয়া জরুরী নয়। এছাড়া দেশের প্রতিটি নাগরিকই বক্তব্য বা কর্মে একথার স্বীকারোক্তি দিয়েছে যে, সে বৈধ বিষয়ে সরকারের আইন মানবে।

অতএব উপরোক্ত দুই কারণে, যতক্ষণ অবৈধ কাজে বাধ্য না করা হবে ততক্ষণ সরকারী আইন মানা জরুরী। (দেখুন, বুহুস,১:১৬৩/১৬৮,শরহু সিয়ারিল কাবীর, ১/১৬৮;তাকমিলাতু ফাতহিল মুলহিম ৩/৩২৩)

সুতরাং বিটকয়েনের লেনদেন, টাকায় কনভার্ট করা থেকে বিরত থাকা উচিত। যদি কখনো তাতে পূর্বোক্ত দ্বিতীয় গুণটি পাওয়া যায়, তবে তখন সেটা কারেন্সির মর্যাদা পাবে। ডলার ও টাকার মত এটিও স্বতন্ত্র একটি মুদ্রা হিসেবে বিবেচিত হবে। এর সাথে ডলার/টাকার কমবেশি লেনদেন বৈধ হবে। যেমন, টাকার সাথে ডলারের লেনদেন কমবেশিতে বৈধ।

এছাড়া যে কাজগুলো বিটকয়েনে সবসময়ই নিষিদ্ধ ও নাজায়েয, তা হল-ফরেক্সের মত ফিউসার বা ফরওয়ার্ড সেল এতে করা যাবে না। বিটকয়েন হ্যাকিং করা জায়েয নয়। এটি চুরির নামান্তর। বাকিতে বিটকয়েন ক্রয় করা হলে, আদায়ের দিন যে মূল্য হবে সেটা পরিশোধ করবে।

আল্লাহ তাআলা ভালো জানেন।

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ ইসহাক মাহমুদ
মুফতী ও মুহাদ্দিস, জামিআ মুহাম্মাদিয়া আরাবিয়া, মোহাম্মদপুর

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

৩৪০৫৪

ব্যাংকে পিয়ন পদে চাকরি করা কি হারাম?


২২ জুন, ২০২৩

ঢাকা

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ শাইখ উমায়ের কোব্বাদী

৭৫৭৪৯

মানুষ ক্বলব দ্বারা চিন্তা করে? নাকি আকল দ্বারা?


২০ অক্টোবর, ২০২৪

৯M৮F+P৯২

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী শাহাদাত হুসাইন ফরায়েজী

৭৬৪৭৫

মসজিদের টাকা দিয়ে আজীবন সদস্যদের খাবারের ব্যবস্থা করা


২০ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

ঢাকা

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী নাঈম সিদ্দীকী বিন আব্দুস সাত্তার

৬১১২৩

সুদখোরের টাকায় মসজিদের উন্নয়ন


১৩ মে, ২০২৪

৮F৫৮+G৯R

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy