আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

সায়ীর পরিচয়, সায়ীর ফযীলত, সায়ী করার পদ্ধতি, এবং সায়ী করার শর্ত

প্রশ্নঃ ১০১৩৫৮. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, সায়ী কাকে বলে? সায়ীর ফযীলত কি? সায়ী করার পদ্ধতি কি? এবং সায়ী করার শর্ত কি?,

৩০ এপ্রিল, ২০২৫

ঢাকা ১২০৭

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم


সায়ী এর আভিধানিক অর্থ হলো- দৌড়ানো।
শরিয়তের পরিভাষায় সায়ী হলো- নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে মক্কার الصفا (সাফা) ও المروة (মারওয়া) পাহাড়দ্বয়ের মধ্যে সাতবার চক্কর সম্পন্ন করাকে।


সায়ীর ফযীলত
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেন, সাফা ও মারওয়ায় তোমার সাঈ করা ৭০ জন দাস মুক্ত করার সমতুল্য। বাযযার/কাশফুল আসতার, হাদীস : ১০৮২; ইবনে হিব্বান, হাদীস : ১৮৮৭


সায়ী করার পদ্ধতি
সাফা পাহাড়ের দিকে যাবে এবং তাতে আরোহন করতে পড়বে
إِنَّ الصَّفَا وَالْمَرْوَةَ مِنْ شَعَائِرِ اللَّهِ فَمَنْ حَجَّ الْبَيْتَ أَوِ اعْتَمَرَ فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِ أَنْ يَطَّوَّفَ بِهِمَا وَمَنْ تَطَوَّعَ خَيْرًا فَإِنَّ اللَّهَ شَاكِرٌ عَلِيمٌ
পাহাড় থেকে বাইতুল্লাহর দিকে মুখ করে আল্লাহু আকবার ও লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু বলবে। এরপর মারওয়ার দিকে আস্তে আস্তে আসবে এবং স্বাভাবিকভাবে চলবে। আর বাতনুল ওয়াদীতে আসার পর সবুজ বাতির এলাকা সাধারণভাবে দৌঁড়াবে। অতঃপর সাফায় যা যা আমল করা হয়েছে, মারওয়াতেও তা করবে। এ হলো ১ চক্কর। এভাবে ৭ চক্কর দিবে। সাফা থেকে শুরু করবে, মারওয়ায় গিয়ে শেষ করবে। আর প্রতি চক্করে বাতনুল ওয়াদীতে সবুজ বাতির এলাকা দৌঁড়ে পার হবে।
সায়ীর সময় অজু থাকা জরুরী নয়। তবে উত্তম। হায়েয নেফাস থাকা অবস্থায়ও মহিলারা সায়ী করতে পারবেন।
কিন্তু তাওয়াফ নাপাক অবস্থায় কিছুতেই জায়েয নয়।
সায়ী শেষ করার পর মাতাফ বা মসজিদে হারামের যেকোন স্থানে দুই রাকাত নামায পড়ার কথা কোন কোন হানাফী আলেম বলেছেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ ও সাহাবী থেকে এই নামায প্রমাণিত নয়।


সায়ী (সফা ও মারওয়ার মধ্যে সায়ী) করার ছয়টি শর্ত
প্রথম শর্ত: সায়ী নিজে করা, যদিও কাউকে কাঁধে নিয়ে বা কোনো জন্তুর পিঠে বসে অথবা হুইল চেয়ারে কোনো যানবাহনে চড়ে করা হোক। সায়ী করার জন্য অন্য কাউকে প্রতিনিধিত্ব দেওয়া বৈধ নয়। তবে যদি কোনো ব্যক্তি ইহরাম বাঁধার পরে অজ্ঞান হয়ে যায়, তাহলে অন্য ব্যক্তি তার পক্ষ থেকে সায়ী করতে পারে, তবে শর্ত হলো সায়ী শেষ হওয়া পর্যন্ত সেই ব্যক্তি অজ্ঞান অবস্থায় থাকতে হবে।
দ্বিতীয় শর্ত: সায়ী পুরো তাওয়াফ বা তাওয়াফের অধিকাংশ অংশ সম্পন্ন করার পর করতে হবে। এটি নফল তাওয়াফ হলেও বৈধ এবং তা পবিত্র বা অপবিত্র যেকোনো অবস্থায় করা যায়। যদি কেউ তাওয়াফ সম্পন্ন করার আগে বা চার চক্কর পূর্ণ করার আগেই সায়ী শুরু করে, তবে সেই সায়ী গ্রহণযোগ্য হবে না। তবে তাওয়াফের চার চক্কর পূর্ণ করার পর সায়ী করলে তা সঠিক হবে।
তৃতীয় শর্ত: সায়ী করার আগে হজ্ব বা উমরাহর ইহরাম বাঁধা আবশ্যক। যদি কেউ ইহরামের আগে সায়ী করে, তবে তা বৈধ হবে না, যদিও তাওয়াফের পর করা হয়।
তবে ইহরাম সায়ী পর্যন্ত স্থায়ী থাকা আবশ্যক নয়। এই ক্ষেত্রে কিছু বিস্তারিত নিয়ম রয়েছে:
যদি হজ্বের জন্য সায়ী করা হয় (কেরান, তামাত্তু বা ইফরাদ যে কোনো হজ্ব হোক), এবং আরাফাতে অবস্থানের আগে সায়ী করা হয়, তাহলে ইহরাম থাকা শর্ত।
আরাফায় অবস্থানের পর সায়ী করলে ইহরাম থাকা শর্ত নয়। তাওয়াফের পর মাথা মুণ্ডানোর পর সায়ী করা হলে দম (কুরবানির পশু) ওয়াজিব হবে। তবে সেই সায়ী বৈধ হবে।
চতুর্থ শর্ত: সায়ী সাফা থেকে শুরু করতে হবে এবং মারওয়াতে গিয়ে শেষ করতে হবে। যদি কেউ মারওয়া থেকে শুরু করে, তাহলে সেই চক্করটি গণ্য হবে না। সেক্ষেত্রে তাকে আবার সাফায় ফিরে গিয়ে সায়ী শুরু করতে হবে। এবং সাফা থেকে সায়ী করে সাত চক্কর পূর্ণ করতে হবে। মারওয়া থেকে শুরু করা সেই অতিরিক্ত চক্করটি গণনা করা হবে না।
পঞ্চম শর্ত: সায়ী করার বেশিরভাগ অংশ (সাত চক্করের মধ্যে বেশিরভাগ) সম্পন্ন করতে হবে। যদি সাতটির মধ্যে বেশিরভাগ চক্কর করা না হয়, তাহলে সায়ী বৈধ হবে না।
ষষ্ঠ শর্ত: সায়ী সঠিক সময়ে করতে হবে। এটি হজ্বের সায়ী করার জন্য শর্ত। উমরার সায়ী করার জন্য সময় শর্ত নয়। তবে যদি কিরান বা তামাত্তু হজ্বের অংশ হিসেবে উমরাহ করা হয়, তাহলে উমরাহর সায়ী করার জন্যও সময়ের শর্ত প্রযোজ্য।
হজ্বের সায়ী করার সময় হলো হজ্বের মাস শুরু হওয়া। হজ্বের মাস শুরু হওয়ার আগে সায়ী করা বৈধ নয়। হজ্বের মাস থেকে সায়ী বিলম্বিত করা মাকরূহ।

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ ইসহাক মাহমুদ
মুফতী ও মুহাদ্দিস, জামিআ মুহাম্মাদিয়া আরাবিয়া
খতীব, নবোদয় সি ব্লক জামে মসজিদ, মোহাম্মদপুর
ইমাম, বায়তুল ওয়াহহাব জামে মসজিদ, মোহাম্মদপুর

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

২৫১৯৯

ঋণ করে হজ্জ করা যায়?


১৩ নভেম্বর, ২০২২

ঢাকা

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ শাইখ উমায়ের কোব্বাদী

৪৮৩০৭

ইহরাম অবস্থায় দাঁড়ি ছিড়ে ফেললে করণীয় কি?


১০ ডিসেম্বর, ২০২৩

Dhaka

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

২৯৯৭০

বিদায়ী তাওয়াফের হুকুম


২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩

শিবচর

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy