আপনার জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

সকল মাসায়েল একত্রে দেখুন

প্রশ্নঃ ১০০১৭. আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আমি একজনকে পছন্দ করি, সেও আমাকে পছন্দ করে। সে বিবাহিত। আমি মাসনা হবার জন্যই তাকে পছন্দ করেছি। আমার মা বাবা এতে রাজি নয়। আমি যেখানে থাকি, সেখানে এক আপু বলে আমি অন্যজনের নাকি সংসার ভাংছি। এভাবে বিয়ে করা নাকি ইসলামে নিষেধ। মানে এক বউ থাকতে বিয়ে বসা। এতে নাকি সেই বউ এর অভিসাপে আমি ধ্বংস হয়ে যাবো। জীবনেও আমি সুখী হবো না। আসলেই কি আপুর কথা ঠিক? এটা যদি ইসলামের বিরোধী না হয় তাহলে, আমার মা বাবা ও তার পরিবার যেন মেনে এমন কোন আমল আছে কি?,

৭ নভেম্বর, ২০২১

ঢাকা

উত্তর

و علَيْــــــــــــــــــــكُم السلام ورحمة الله وبركاته

بسم الله الرحمن الرحيم





এভাবে পরপুরুষ-পরনারী একে অন্যকে পছন্দ-অপছন্দ করা শরীয়ত সমর্থন করে না। তাছাড়া অন্যের স্বামীর সাথে এভাবে গোপনে সম্পর্ক গড়াকে পরকীয়া বলে। ইসলাম এবং আমাদের সমাজে এটা একটা গর্হিত অন্যায়।

পবিত্র কুরআন শরিফ অপ্রয়োজনে পরপুরুষের সঙ্গে কথা বলতে নিষেধ করা হয়েছে। একান্ত প্রয়োজনে কথা বলতে হলেও সুরা আহজাবের ৩২ নং আয়াত
( আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
فلا تخضعن بالقول )
আল্লাহ তায়ালা পরপুরুষের সঙ্গে কোমল ও আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে কথা বলতে নিষেধ করেছেন। যাতে নারীদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে কোনো পুরুষ আকর্ষণবোধ না করেন।

শুধু নারীদেরই নয়, বরং সুরা নুরের ৩০ নম্বর আয়াতে প্রথমে আল্লাহ তায়ালা পুরুষদেরকে দৃষ্টি সংযত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। এরপর ৩১ নম্বর আয়াতে মহিলাদেরকে তাদের দৃষ্টি সংযত রাখার পাশাপাশি তাদের গোপন শোভা অনাবৃত করতে নিষেধ করা হয়েছে।
আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
قل للمؤمنين يغضوا من أبصارهم... وقل للمؤمنات يغضضن من ابصارهن...
অপাত্রে সৌন্দর্য প্রদর্শনকে হারাম করে সবটুকু সৌন্দর্য স্বামীর জন্য নিবেদনে উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। কারণ, স্বামী তার স্ত্রীর সৌন্দর্যে মোহিত হলে সংসারের শান্তিই বাড়বে। পক্ষান্তরে স্ত্রীর সৌন্দর্য দিয়ে অন্যকে মোহিত করার পথ অবারিত করলে তা কেবল বিপদই ডেকে আনবে।
পুরুষ-মহিলা সবাইকে চরিত্র সংরক্ষণের নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম।
আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
ولا تقربوا الزني انه كان فاحشة وساء سبيلا
‘তোমরা ব্যভিচারের নিকটবর্তী হয়ো না। এটা অশ্লীল কাজ এবং নিকৃষ্ট আচরণ।’ (সুরা বনি ইসরাইল, ৩২)
ব্যভিচারের শাস্তি হিসেবে
আল্লাহ বলেনঃ
الزانية والزاني فاجلدوا كل واحد منهما مائة جلدة
‘ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিণী উভয়কে এক’শ ঘা করে বেত্রাঘাত কর।’ (সুরা নুর, ২)

হাদিস শরিফে ব্যভিচারের ভয়ানক শাস্তির কথা বর্ণিত হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘হে মুসলমানগণ! তোমরা ব্যভিচার পরিত্যাগ কর।

★কেননা এর ছয়টি শাস্তি রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি দুনিয়াতে ও তিনটি আখেরাতে প্রকাশ পাবে।
★★★যে তিনটি শাস্তি দুনিয়াতে হয় তা হচ্ছে,

(০১)তার চেহারার ঔজ্জ্বল্য বিনষ্ট হয়ে যাবে,
(০২) তার আয়ুষ্কাল সংকীর্ণ হয়ে যাবে
(০৩) এবং তার দারিদ্রতা চিরস্থায়ী হবে।

★★★আর যে তিনটি শাস্তি আখেরাতে প্রকাশ পাবে তা হচ্ছে,
(০১) সে আল্লাহর অসন্তোষ,
(০২) কঠিন হিসাব
(০৩) ও জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করবে।’ (বায়হাকি, হা নং ৫৬৪)

হজরত সাহল ইবনে সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি মুখ ও লজ্জাস্থানের হেফাজতের জামিনদার হবে আমি তার বেহেশতের জামিনদার হবো।’ (বুখারিঃ ৭৬৫৮)

কখনো দেখা যায় দেবরের সাথে জমে ওঠে পরকীয়া। ইসলাম দেবরের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করার লাগামকেও টেনে ধরেছে। হজরত উকবা ইবনে আমের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সাবধান! তোমরা নির্জনে নারীদের কাছেও যেও না।’ এক আনসার সাহাবি বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! দেবর সম্পর্কে আপনার নির্দেশ কী? নবীজি (সা.) বললেন, ‘দেবর তো মৃত্যুর সমতুল্য।’ (মুসলিম, ২৪৪৫)

হাদিসের ব্যাখ্যায় হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানি রহ. ফতহুল বারিতে লিখেছেন, ‘এখানে মৃত্যুর সমতুল্যর অর্থ হলো হারাম।’ আর ইসলামে এসবের শাস্তি ভয়াবহ। এসবের শাস্তি হিসেবে রজম ও দোররার নির্দেশ এসেছে হাদিসে। যাতে কোনো নারী ও পুরুষ যেন এধরনের ভয়াবহ কর্মে লিপ্ত না হয়।

সুতরাং পরকিয়ার মোট ৬ টি শাস্তি।
★★★যে তিনটি শাস্তি দুনিয়াতে হয় তা হচ্ছে,
(০১)তার চেহারার ঔজ্জ্বল্য বিনষ্ট হয়ে যাবে,
(০২) তার আয়ুষ্কাল সংকীর্ণ হয়ে যাবে
(০৩) এবং তার দারিদ্রতা চিরস্থায়ী হবে।

আর যে তিনটি শাস্তি আখেরাতে প্রকাশ পাবে তা হচ্ছে,
(০১) সে আল্লাহর অসন্তোষ,
(০২) কঠিন হিসাব
(০৩) ও জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করবে।

বিবাহ-শাদীর মধ্যে যদিও প্রাপ্ত বয়স্ক বর-কণের বিষয়টাই গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু আমাদের সমাজের বাস্তবতা হচ্ছে যেই বিবাহে পারিবারিক সমর্থন যতো বেশী তুলনামূলক ওই দম্পতি তত সুখী।

কাজেই বিষয়টিকে ছেলে খেলা মনে না করে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা উচিত।

(সংগৃহীত ও সংযোজিত)

والله اعلم بالصواب

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি সাইদুজ্জামান কাসেমি
বাইতুল কুরআন মাদারাসা , মোহাম্মাদপুর

মন্তব্য ()

কোনো মন্তব্য নেই।

এ সম্পর্কিত আরও জিজ্ঞাসা/প্রশ্ন-উত্তর

৯১৩১৩

আমার স্বামী, আমার জামাই বা আমার বউ বলার দ্বারা কি বিবাহ সম্পন্ন হয়?


২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

ঢাকা ১২০৫

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতী আরিফুর রহমান

৩৮৫০০

সুন্নত তরিকায় বিয়ে হলে ৫টা ফযিলতের হাদীস সহীহ কিনা?


২০ আগস্ট, ২০২৩

বড়শালঘর

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুসলিম বাংলা ইফতা বিভাগ

৩৩৭৪০

তাওবা করার পরেও কি ভালো স্ত্রী পাওয়া যাবে না?


২৯ মে, ২০২৩

ঢাকা

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ শাইখ উমায়ের কোব্বাদী

৪১০৪১

একাধিক বিয়ে


২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

কেরানীগঞ্জ

question and answer icon

উত্তর দিয়েছেনঃ মুফতি মোহাম্মদ আমীর হোসাইন

Logoমুসলিম বাংলা
play storeapp store
TopOfStack Software © 2025 All rights reserved. Privacy Policy