প্রবন্ধ

নেয়ামত ও হুকুম - পুরনোদের জোড়, টঙ্গী ২রা ডিসেম্বর,২০২৪

লেখক:মাওলানা ইবরাহীম দেউলা
২ ডিসেম্বর, ২০২৪
৮৭৩৬ বার দেখা হয়েছে
মন্তব্য

[পুরনোদের জোড়ে টঙ্গীতে দুআর আগের দিন (২রা ডিসেম্বর,২০২৪) মাগরিব বাদ বয়ান থেকে সংগৃহীত]

মূল বয়ানের লিঙ্কঃ- https://muslimbangla.com/lecture/3299/


আল্লাহ ﷻ এর হামদ ও সালাতের পর…


১. দাওয়াত ও তাবলীগের মেহনত। জান, মাল ও সময় ইত্যাদি আল্লাহ ﷻ ই দিয়েছেন। এই দায়িত্বকে বুঝা ও পুরা করা।


২. দুটি বিষয়- নেয়ামত ও হুকুম।


যাকের- হুকুমের জন্যে যিকিরকারী হও। অর্থাৎ আল্লাহ ﷻ এর হুকুমের সাথে এর সম্পর্ক। যাকেরের বিপরীত হলো গাফলত।


শাকের- নেয়ামতের জন্যে শুকরিয়াকারী হও। অর্থাৎ আল্লাহ ﷻ এর নেয়ামতের সাথে এর সম্পর্ক। 


এদুটি বিষয়ই সর্বদা আমাদের উপর আসে। 


রাসূল ﷺ একটি দুআ শিখিয়েছেন- 


উমর [রদ্বিয়াল্লাহু আনহু] বলতেন- ❝ নিজেকে নেয়ামত থেকে এমনভাবে বাঁচাও, যেভাবে গুনাহ থেকে বেঁচে থাকো। ❞


কারণ যখন মানুষ নেয়ামতে অভ্যস্ত হয়ে যায়, তখন আল্লাহ ﷻ এর যিকির ছুটে যায়। অর্থাৎ গাফলত পয়দা হয়।


৩. উলামায়ে কেরাম বলেন, ❝ যাকের কে? যে আল্লাহ ﷻ এর হুকুমকে স্মরণ করে তাঁর আনুগত্য প্রকাশ করে। এর সীমার বাহিরে সে যায় না। সে ই আল্লাহ ﷻ এর যিকিরকারী অর্থাৎ যাকের। শুধুই তাসবীহ পড়ার মধ্যেই যিকির সীমাবদ্ধ নয়। ❞


৪. আমরা আল্লাহ ﷻ এর হুকুম পালন তথা ইবাদাত করি ইখলাসের সহিত। 


৫. এতায়াতের জন্যই নবীদের পাঠানো হয়েছে। যাতে তাঁরা আল্লাহ ﷻ এর হুকুক মানুষের কাছে পৌঁছে দেন।


৬. রাসূল ﷺ হযরত মুয়ায [রদ্বিয়াল্লাহু আনহু]কে আল্লাহ ﷻ এর হুকুক সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। তারপর বলেন আল্লাহ ﷻ এর হক্ব হলো তাঁর ইবাদাতে কাউকে শরীক না করা।


৭. জীবন কিভাবে পরিচালিত হবে? এই প্রশ্নের উত্তরই আনুগত্য। ঈমান, ইসলাম ও আনুগত্য পরস্পর পরিপূরক। 


৮. আল্লাহ ﷻ কে না দেখে বিশ্বাস করা ঈমান। এবং তাঁর কথার উপর নিজের জীবনের প্রতিটি কাজ করাই আনুগত্য।


৯. ঈমানের রুকনগুলোর পরিপূর্ণ হক্ব জানা। এটা আল্লাহ ﷻ এর আনুগত্য। আল্লাহ, নবী-রাসূল, আসমানী কিতাব, ফেরেশতা, মৃত্যু, হাশরের ময়দান, জান্নাত ও জাহান্নামকে হক্ব জানা ও বিশ্বাস করা।


আল্লাহ ﷻ ওয়াদা করেছেন তাঁর ইবাদাতের বিনিময়ে আমাদের জান্নাত দিবেন। আর আল্লাহ ﷻ এর বন্দেগী না করলে জাহান্নামের ওয়াদা করেছেন। 


আল্লাহ ﷻ এর সাক্ষাৎ করা ছাড়া কেউ বেঁচে যাবে না। অবশ্যই প্রত্যেককে আল্লাহ ﷻ এর সামনে উপস্থিত হতে হবে। 


১০. হে মানুষ শুনে নাও! আল্লাহ ﷻ এর ওয়াদা সত্য। আল্লাহ আমাদের উপর শর্ত দিয়েছেন, সেটা পুরা করার দায়িত্ব আমাদের। আর আল্লাহ ﷻ এর ওয়াদা অর্থাৎ পুরষ্কার আমাদের জন্যে, তা পুরা করার দায়িত্ব আল্লাহর।


উদাহরণ- বাজারের কেনা-বেচা। পয়সার বিনিময়ে পন্য দেয়া।


আমাদের উপর আল্লাহ ﷻ এর পক্ষ থেকে শর্ত- তাঁর উপর ঈমান, আনুগত্য, ইনসাফ করা, তাক্বওয়া অবলম্বন করা। 


আর আল্লাহ ﷻ এর ওয়াদা- আমাদের ঈমান ও আমলের বিনিময়ে জান্নাত দিবেন। 


১১. আল্লাহ ﷻ বলেন, ‘তাঁর চেয়েও সত্য কথা বলনেওয়ালা আর কে আছেন’? 


১২. এই দুনিয়ার সমস্ত কিছু আল্লাহ ﷻ আমাদের জন্যে সৃষ্টি করেছেন। মানুষ যখন দুনিয়াতে আসে তখন সে আরাম ও কষ্ট নিজেই অনুভব করে। এর জন্যে নবী রাসূল পাঠানো হয়নি। নবী-রাসূলদের আখেরাতের আরাম ও কষ্টের ব্যাপারে মানুষকে জানানো। এজন্যই তাদেরকে পাঠানো হয়েছে। 


১৩. আখেরাত দুনিয়ার চেয়ে উত্তম। এজন্যই আল্লাহ ﷻ আমাদেরকে দুনিয়ায় পাঠালেও আখেরাতের জন্যই বানিয়েছেন। 


দুই রকমের মানুষ-

এক. নেয়ামতওয়ালা মানুষ- যারা আখেরাতে আরামে থাকবে। যারা আল্লাহ ﷻ এর হুকুম দুনিয়াতে পুরা করেছে। 

দুই. কষ্ট মুসিবতওয়ালা মানুষ- যারা আখেরাতে কষ্টে থাকবে। যারা আল্লাহর নিষেধকৃত জিনিস থেকে বিরত থাকেনি।


ঈমানদার ও মুত্তাকীদের সাথে আল্লাহ ﷻ এর আখেরাতের মুআমেলাহ আলাদা হবে। 


১৪. ঈমান ও তাক্বওয়ার তাকাযা-


ঈমানের তাকাযা- আল্লাহ ﷻ এর হুকুম পালন করা, আনুগত্য করা। আল্লাহ ﷻ এর হুকুমের সীমারেখায় জীবন যাপন করে।


তাক্বওয়ার তাকাযা- নফসকে গুনাহ থেকে দূরে রাখা। আল্লাহ ﷻ এর নিষেধকৃত কাজ থেকে দূরে থাকা। 


দুই জিনিস শিখানোর জন্যই নবীরা আসছেন। আল্লাহ ﷻ এর হুকুম পালন করা এবং তাঁর নিষেধকৃত বস্তু থেকে দূরে থাকা। কুফর ও কুফরি আমল থেকে বাঁচানোই নবীদের দাওয়াত। এটার উপরই আল্লাহ ﷻ এর ওয়াদা।


১৫. আল্লাহ ﷻ এর কুদরত ও খাজানা অফুরন্ত। যে পরিপূর্ণভাবে তাঁর অনুসরণ করে, আল্লাহ ﷻ তাঁর খাজানা (ভান্ডার) থেকে তাদের কুদরতের ফায়সালা করেন। যারা আল্লাহ ﷻ কে ভয় করবে, আল্লাহ ﷻ এর কুদরত তাদের সঙ্গী হয়ে যাবে। যারা আমলকে সুন্দরভাবে করে, আল্লাহ ﷻ তাদের মহব্বত করেন। নবীদের দাওয়াত- ঈমান, ইবাদাত ও আনুগত্য।


১৬. যে আল্লাহ ﷻ কে ভয় করে, নিজেকে নাফরমানী থেকে বাঁচায় এবং নিজের করা আমলের ব্যাপারে খুঁতখুঁতে স্বভাবের হয় অর্থাৎ নিজের আমলের দোষত্রুটি খুঁজে বের করে। 


এর প্রথম শর্ত- নিয়ত ঠিক করা। ঈমানও ইখলাস একই বিষয়। 


১৭. আল্লাহ ও বান্দার হক্বের ব্যাপারে এতেদাল-


আল্লাহর ব্যাপারে- ইখলাস। আমলের সৌন্দর্য। যে ব্যক্তি মুখলিস, সে হেদায়েতের চেরাগ বা নূর। তার দ্বারা বহু ফেতনা দূর হয়। ফেতনার সাথে দুনিয়ার স্বার্থ যুক্ত হওয়া আগ্রাজ জন্ম দেয়। ইখলাস আল্লাহ ﷻ ছাড়া কেউ জানেন না। ইখলাস থাকলে অল্প আমলই যথেষ্ট। 


ঘটনা- হযরত আবু হুরায়রা [রদ্বিয়াল্লাহু আনহু] একবার নিজ শাগরেদদের জিজ্ঞেস করেন, এক ওয়াক্ত নামাজ না পড়েও জান্নাতে যাওয়া ব্যক্তি কে?


লোকেরা উত্তর দিলো আমরা জানিনা।


তখন আবু হুরায়রা [রদ্বিয়াল্লাহু আনহু] বলেন, আনসারদের একটি কবিলা বনু আব্দুল আশহালের যুবক উসাইরিম [রদ্বিয়াল্লাহু আনহু]। যিনি নিজে নিজেই ঈমান আনার পরে উহুদের ময়দানে শহীদ হয়ে যান। অথচ তখন এক ওয়াক্ত নামাজও তার উপর ফরজ হয়নি।


বান্দার ব্যাপারে- ইনসাফ, ইহসান।


১৮. উমর [রদ্বিয়াল্লাহু আনহু] বলতেন, ‘আমাকে আল্লাহ ﷻ তাক্বওয়া দিয়েছেন’।  তাক্বওয়ার কারণে পেরেশানি দূর হয়ে যায়। আমাদের উপরে থাকবে হেদায়েত কিন্তু ভিতরে থাকবে তাক্বওয়া। 


১৯. ইলম ও যিকিরের তাকাযা- 


ইলমের তাকাযা- আল্লাহ ﷻ এর হুকুম জানা। জিজ্ঞেস করাও দ্বীন। প্রথমে ফাযায়েলের ইলম জানা। যে ফাযায়েলের ইলম জেনেছি সেটার দাওয়াত দেয়া।


যিকিরের তাকাযা- আল্লাহ ﷻ এর হুকুমকে জেনে নবী ﷺ এর তরিকায় আমল করা। যে আমল জেনেছি তার উপর নবীর সুন্নাহ অনুযায়ী আমল করা।


২০. যে কাজই করিনা কেন, সেটার ইলম আলেমদের জিজ্ঞেস করা। দুনিয়ার সব কাজ মানুষ কিছু পাওয়ার আশাতেই করে। সেজন্যই প্রথমেই ফাযায়েলের ইলম হাসিল করা।


২১. মোবাইল ইনফেরাদি সময় আপদ হিসেবে ধরা দেয়। কারণ তখন শয়তান মানুষকে প্রভাবিত করে।


২২. হযরত আবু হুরায়রা [রদ্বিয়াল্লাহু আনহু] ইবনে উমার [রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা] কে জানাযার নামাজের ফজিলত শুনালে তিনি আফসোস করেন। কারণ ইতিপূর্বে ইবনে উমার [রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা] শুধুই জানাযার নামাজ পড়তেন কিন্তু দাফন কাজে শরীক হতেন না। পরে দাফনের ফজিলত শুনে আফসোস করেন।


২৩. আমাদের মেহনত শুধুই আল্লাহর রাস্তায় ঘুরাফেরা করা নয়। বরং এই মেহনতের দ্বারা দ্বীন, ঈমান, তাক্বওয়া ইত্যাদিকে শিখা। পূর্ণাঙ্গ দ্বীনকে জেনে আমল করা। উলামায়ে কেরামদের জিজ্ঞেস করে করে চলা। শুধুই খুরুজই মেহনতের উদ্দেশ্য না। সামগ্রিকভাবে ইসলামকে ধারণ করা।

মন্তব্য (...)

এ সম্পর্কিত আরও প্রবন্ধ

নামায খুবই তাৎপর্যপূর্ণ ইবাদত

...

শাইখুল হাদীস আল্লামা আব্দুল কুদ্দুস দাঃ
১০ নভেম্বর, ২০২৪
৪৬৬৮ বার দেখা হয়েছে

চারটি মহৎ গুণ

...

শাঈখুল ইসলাম মুফতি তাকী উসমানী
১০ নভেম্বর, ২০২৪
৩৪৬৬ বার দেখা হয়েছে

লেখকবৃন্দ

সকল লেখক →

আল্লামা শাব্বীর আহমাদ উসমানী রহঃ

শাহ আব্দুল আযীয দেহলভী রহঃ

শাইখুল ইসলাম আল্লামা কাসেম নানুতুবী রহঃ

মাওঃ উবাইদুল্লাহ সিন্ধী রহঃ

সায়্যিদ সাবেক রহঃ

আল্লামা আব্দুল মজীদ নাদীম রহঃ

মাওলানা আসলাম শাইখুপুরী

শাইখুল ইসলাম হুসাইন আহমাদ মাদানী রহঃ

মাওঃ আবু আম্মার যাহেদ রাশেদী

মাওঃ নুরুল হাসান রাশেদ কান্ধলভী

মুফতী হাবীবুর রহমান খাইরাবাদী

আল্লামা আবুল কালাম আযাদ রহঃ

মাওলানা সাঈদ আহমদ

মাওলানা মুহাম্মদ হেমায়েত উদ্দীন দাঃ

হযরত মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমী রহঃ

মাওলানা হাবীবুর রহমান খান

মাওলানা সাঈদ আহমাদ বিন গিয়াসুদ্দীন

মাওঃ আবু বকর সিরাজী

শায়েখ আবু মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ ইবনে উমার [রহ.]

মাওঃ এনামুল হাসান

নেয়ামত ও হুকুম - পুরনোদের জোড়, টঙ্গী ২রা ডিসেম্বর,২০২৪ | মুসলিম বাংলা