প্রবন্ধ

ওলী হওয়ার মাপকাঠি ঈমান ও তাকওয়া

লেখক:শাঈখুল ইসলাম হযরত আব্দুল মালেক
১৫ মে, ২০২৪
১৭৯০ বার দেখা হয়েছে
মন্তব্য

হামদ ও সানার পর...

আল্লাহ তাআলা বলেন-

وَ مَا تَكُوْنُ فِیْ شَاْنٍ وَّ مَا تَتْلُوْا مِنْهُ مِنْ قُرْاٰنٍ وَّ لَا تَعْمَلُوْنَ مِنْ عَمَلٍ اِلَّا كُنَّا عَلَیْكُمْ شُهُوْدًا اِذْ تُفِیْضُوْنَ فِیْهِ وَ مَا یَعْزُبُ عَنْ رَّبِّكَ مِنْ مِّثْقَالِ ذَرَّةٍ فِی الْاَرْضِ وَ لَا فِی السَّمَآءِ وَ لَاۤ اَصْغَرَ مِنْ ذٰلِكَ وَ لَاۤ اَكْبَرَ اِلَّا فِیْ كِتٰبٍ مُّبِیْنٍ،  اَلَاۤ اِنَّ اَوْلِیَآءَ اللهِ لَا خَوْفٌ عَلَیْهِمْ وَ لَا هُمْ یَحْزَنُوْنَ، الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا وَ كَانُوْا یَتَّقُوْنَ، لَهُمُ الْبُشْرٰی فِی الْحَیٰوةِ الدُّنْیَا وَ فِی الْاٰخِرَةِ لَا تَبْدِیْلَ لِكَلِمٰتِ اللهِ ذٰلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِیْمُ، وَ لَا یَحْزُنْكَ قَوْلُهُمْ ۘ اِنَّ الْعِزَّةَ لِلهِ جَمِیْعًا هُوَ السَّمِیْعُ الْعَلِیْمُ، اَلَاۤ اِنَّ لِلهِ مَنْ فِی السَّمٰوٰتِ وَ مَنْ فِی الْاَرْضِ  وَ مَا یَتَّبِعُ الَّذِیْنَ یَدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللهِ شُرَكَآءَ  اِنْ یَّتَّبِعُوْنَ اِلَّا الظَّنَّ وَ اِنْ هُمْ اِلَّا یَخْرُصُوْنَ.

(হে নবী!) তুমি যে-অবস্থায়ই থাক এবং কুরআনের যে-অংশই তিলাওয়াত কর এবং (হে মানুষ!) তোমরা যে-কাজই করতোমরা যখন তাতে লিপ্ত থাকতখন আমি তোমাদের দেখতে থাকি। তোমার প্রতিপালকের কাছে অণু-পরিমাণ জিনিসও গোপন থাকে না- না পৃথিবীতেনা আকাশে এবং তার চেয়ে ছোট এবং তার চেয়ে বড় এমন কিছু নেইযা এক স্পষ্ট কিতাবে লিপিবদ্ধ নেই।

স্মরণ রেখযারা আল্লাহর বন্ধু তাদের কোনো ভয় থাকবে না এবং তারা দুঃখিতও হবে না। তারা সেইসব লোকযারা ঈমান এনেছে এবং তাকওয়া অবলম্বন করেছে। তাদের দুনিয়ার জীবনেও সুসংবাদ আছে এবং আখেরাতেও। আল্লাহর কথায় কোনো পরিবর্তন হয় না। এটাই মহাসাফল্য। (হে নবী!) তাদের কথা যেন তোমাকে দুঃখ না দেয়। নিশ্চয়ই সমস্ত শক্তিই আল্লাহর। তিনি সব কথার শ্রোতা সব কিছুর জ্ঞাতা।

স্মরণ রেখআকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যত প্রাণী আছেসব আল্লাহরই মালিকানাধীন। যারা আল্লাহ ছাড়া অন্যকে ডাকেতারা আল্লাহর (প্রকৃত) কোনো শরীকের অনুসরণ করে না। তারা কেবল ধারণারই অনুসরণ করে। আর তাদের কাজ কেবল আনুমান-নির্ভর কথা বলা। -সূরা ইউনুস (১০) : ৬১-৬৬

এসকল আয়াতে অনেকগুলো শিক্ষা রয়েছে। একটা বড় শিক্ষা হচ্ছে মুরাকাবা। ফার্সিতে বলে- ইয়াদদাশতস্মরণ রাখামনে রাখা।

কী মনে রাখবসেটা এই আয়াতে বলা হয়েছে।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলছেনতোমরা যে হালতেই থাকযে আমলেই থাককুরআন তিলাওয়াত বা অন্য কোনো নেক আমল কিংবা কোনো গুনাহের কাজ করছসর্বাবস্থায়-

كُنَّا عَلَیْكُمْ شُهُوْدًا.

আমি হাজিরআমি সবকিছু দেখছি।

শুধু আমল দেখছেন তাই নয়বরং-

اِذْ تُفِیْضُوْنَ فِیْهِ .

আমলের মধ্যে বান্দা কতটুকু মনোযোগীকীভাবে সে আমলে ধাবিত হচ্ছেসবকিছুর বিস্তারিত ইলম আল্লাহ তাআলার আছে। নামায কতটা মনোযোগের সাথে পড়ছেতাও আল্লাহ দেখছেন। আবার কোনো গুনাহের কাজ করলে তা বান্দা কত তৎপরতা ও উদ্যমের সাথে করছেআল্লাহ তাও দেখছেন।

বান্দার আমল আল্লাহ শুধু এজমালীভাবে হালকা হালকা জানেন- এমন নাবিস্তারিতআমলের মান ও পরিমাণও তিনি জানেনশোনেন এবং দেখেন।

আল্লাহ তাআলা অনুগ্রহ করে আমাদের এ বিষয়টি জানিয়ে দিলেন- বান্দাআমি তোমার সঙ্গে আছিতোমার কাছে আছি। সব দেখছিশুনছি।

কারো হুকুম যদি কেউ লঙ্ঘন করেআর ভাবেতিনি তো দেখছেন না। তাহলে বিষয়টা তার কাছে হালকা মনে হয়। আর যদি বোঝে যেতিনি দেখছেনপরে এর হিসাবও হবেতাহলে তার কাছে সংকোচ লাগবেগুনাহের কাজটা থেকে সে বিরত থাকবে।

বান্দার অনুভূতিতে যা-ই থাকুকবাস্তবতা এটাইআল্লাহ তাআলা সব দেখছেন। ছোট থেকে ছোট বিষয় দেখছেন। আয়াতের সামনের অংশে এটাই বলা হয়েছে-

وَ مَا یَعْزُبُ عَنْ رَّبِّكَ مِنْ مِّثْقَالِ ذَرَّةٍ فِی الْاَرْضِ وَ لَا فِی السَّمَآءِ وَ لَاۤ اَصْغَرَ مِنْ ذٰلِكَ وَ لَاۤ اَكْبَرَ اِلَّا فِیْ كِتٰبٍ مُّبِیْنٍ.

একেবারে কণা থেকে কণা সব আল্লাহ দেখেন- এই বাস্তবতা আমাদের উপলব্ধিতে আসলেই মুরাকাবার আমল সার্থক হবে।

বর্তমানে বিভিন্ন জায়গায় সিসি ক্যামেরা লাগানো থাকে। আল্লাহর দেখার সামনে এ ক্যামেরা কিছুই না। অথচ অনেক স্থানে শুধু লেখা থাকেসিসি ক্যামেরার মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তা দেখে সকলে সতর্ক হয়ে যায়। কারণযদিও এখানে কোনো লোক নেইকিন্তু স্ক্রিনের সামনে বসে তাকে কেউ না কেউ ঠিকই দেখছে।

তো দুনিয়ার যাবতীয় প্রযুক্তি সবই আল্লাহর মাখলুকের তৈরি। সেগুলোর পর্যবেক্ষণই যদি এমন হয়তাহলে আল্লাহ তাআলার নিজের জানা-দেখা-শোনা কত সূক্ষ্ম হবে- তা সহজেই বোঝা যায়। আল্লাহ আমাদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যেতিনি আমাদের দেখেন ও শোনেন। যাতে ইবাদতের মধ্যেও মনে থাকেআল্লাহ আমায় দেখছেনতাঁর কাছে ভালো লাগছে আমার তিলাওয়াতআমার নামায। আল্লাহ এটা দেখে খুশি হচ্ছেন যেআমি আল্লাহ্কে রাজি করানোর জন্যআল্লাহর ভয়ে অমুক গুনাহ থেকে দূরে ছিলাম।

এভাবে যদি নেক কাজ করার সময় এটা মনে আসে যেআল্লাহ দেখছেনতাহলে নেক কাজটা করতে ভালো লাগবে। তেমনিভাবে গুনাহের কাজেও যদি এ অনুভূতি জাগ্রত থাকে যেআল্লাহ দেখছেনতিনি অসন্তুষ্ট হচ্ছেননারাজ হচ্ছেন। তাহলে গুনাহ করতে সংকোচ হবে- না এটা করা যাবে না। এর থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আগে করে থাকলেও আর করা যাবে না।

এটা মুরাকাবার ফায়েদা। এই কাজে যে যত দক্ষ হবেসে তত আল্লাহর ওলী হতে পারবে। পরের আয়াতেই আল্লাহ তাআলা বলেন-

اَلَاۤ اِنَّ اَوْلِیَآءَ اللهِ لَا خَوْفٌ عَلَیْهِمْ وَ لَا هُمْ یَحْزَنُوْنَ، الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا وَ كَانُوْا یَتَّقُوْنَ.

(মনে রেখোযারা আল্লাহর বন্ধু তাদের না কোনো ভয় ভীতি আছেনা তারা চিন্তিত হবে। যারা ঈমান এনেছে এবং ভয় করতে থেকেছে।)

যারা আল্লাহর ওলীতাদের কোনো ভয় নেই।

কারা আল্লাহর ওলীআল্লাহ বলেন-

الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا وَ كَانُوْا یَتَّقُوْنَ.

ওলীর পরিচয় হলযারা ঈমান এনেছে এবং তাকওয়া অবলম্বন করেছে।

এটি হলকুরআন-হাদীস অনুযায়ী বেলায়েত বা আল্লাহর ওলী হওয়ার মানদণ্ড। যার ঈমান ও তাকওয়া যত বেশিসে তত বড় ওলী।

কারো মধ্যে এ মানদণ্ড না থাকলে অন্য যত সিফাতই থাকুকসে আল্লাহর ওলী হতে পারবে না। কুরআন কারীমের অনেক জায়গাতেই এ সিফাতের কথা এসেছে।

ঈমান ও তাকওয়া নাজাতের মানদণ্ডআল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মানদণ্ডতেমনি ওলী হওয়ারও মানদণ্ড।

ঈমান আর তাকওয়া না থাকলে ওলী হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই। ঈমান-তাকওয়া সামান্য আছেতাহলে যতটুকু আছে ততটুকু ওলী। তবে সামান্য দিয়ে তো আর ওলী নাম হবে না। ওলী হওয়ার বিভিন্ন স্তর রয়েছে।

আল্লাহর যেকোনো বান্দার মধ্যে যদি ঈমান থাকেতাহলে সামান্য হলেও তাকওয়া থাকবে।

তাকওয়া হল- শিরক ও কুফর থেকে বাঁচাবদ অভ্যাস ও গুনাহ থেকে বাঁচা। আল্লাহর নাফরমানী থেকে বাঁচা।

তো যার মধ্যে ঈমান আছেযদি সত্যিই ঈমান থেকে থাকেতাহলে তার মধ্যে কুফর থাকবে নাশিরক থাকবে না। মুমিন মানেই হলসে শিরক ও কুফর থেকে বেঁচেছেমুনাফিকী থেকে বেঁচেছে। তবেই তো মুমিন হবে। অন্যথায় তো সে মুমিন হতে পারবে না।

তেমনিভাবে যে মুমিন তার মধ্যে কিছু না কিছু তাকওয়া থাকবেই। তাই যে মুমিনসে একেবারে প্রাথমিক স্তরের হলেও আল্লাহর ওলী। তবে এতটুকু স্তর দিয়ে কারো নাম ওলী হয় না।

উদাহরণস্বরূপ- ধনী ও গরিব। গরিব ব্যক্তির কাছে যে কিছুই নেইতা তো নয়। তার ঘর আছেমোটামুটি চলার মতো অর্থও আছে। তবু সে গরিব বলে বিবেচিত। কারণধনী বলতে যে পরিমাণ ধন-সম্পদ থাকা দরকারতা তার কাছে নেই।

ওলী শব্দ আরবী বেলায়াহ (الوِلاَيَةُ) শব্দ থেকে এসেছে। ওলী শব্দের বহুবচন আউলিয়া। বেলায়েতের বিভিন্ন স্তর রয়েছে। একেবারে স্বাভাবিক স্তরের কারণে কাউকে ওলী বলা হয় না। কিন্তু সেটাও একটা স্তর।

ঈমান ও তাকওয়া এই দুই গুণে অগ্রসর হওয়ার কারণে আল্লাহর খাস বান্দাদের ওলী বলা হয়।

আমাদের সমাজে ওলীর মানদণ্ড নিয়ে অনেক বিভ্রান্তি আছে। যেমনকেউ বাস্তবে আল্লাহর ওলীকিন্তু তাকে আল্লাহর ওলী মনে করা হয় না। অবশ্য এতে তার কোনো সমস্যা নেই।

বিপরীতও দেখা যায়বাস্তবে ওলী নাকিন্তু সমাজে তাকে ওলী মনে করা হচ্ছে।

পীর’ ফার্সী শব্দ। কুরআন-হাদীসে এ শব্দ নেই। আরবীতে বলা যায়- ‘শায়েখ। শায়েখ অর্থ যিনি মুরব্বিমুরশিদ। মানুষকে সঠিক পথের রাহনুমায়ী করেন। তাই তাকে শায়েখ বলা হয়।

শায়েখ একটা পরিভাষা। কাকে শায়েখ বানাবেনতার মানদণ্ড ঠিক করতে হবে কুরআন-হাদীস থেকে। কে আমার মুর্শিদ হতে পারেন এবং একজন মুর্শিদের মধ্যে কী কী গুণাবলি থাকা আবশ্যক- এ সম্পর্কে কুরআন-হাদীসের বিভিন্ন জায়গায় আলোচনা আছে। যদিও মুর্শিদ বা শায়েখ শব্দে নেইতবে মূল বিষয়টি বর্ণিত আছে।

কুরআনের নিজস্ব ভাষা-পরিভাষা আছেসেটা বুঝতে হবে। তাহলে আপনি কুরআনে এগুলো পাবেনঅন্যথায় পাবেন না।

যেমন এখানে ওলী হওয়ার মানদণ্ড বলা হয়েছেঈমান ও তাকওয়া। কিন্তু মানুষ তো অনুবাদ পড়ে পড়ে চলে যায়। এখানে যে এটা বলা হলতা অনেকেই খেয়াল করে না।

ওলী নাম হলেই যে আল্লাহর ওলী- এমন না। আবার ওলী নাম না হলেও যে সে আল্লাহর ওলী না- এমনও নয়। কারণ এখানে মূল বিষয় হলশরীয়তের মানদণ্ড। ওলী হওয়ার যে মানদণ্ড কুরআন-হাদীসে বর্ণিত হয়েছে তা যার মধ্যেই থাকবে সে আল্লাহর ওলী। আর এই মানদণ্ড যার মধ্যে থাকবে না তার নাম ওলী হলেও সে ওলী নয়।

সে জন্য মানদণ্ডটা মাথায় রাখতে হবে। কারণঅনেক সময় অনেকের হালত পরিবর্তন হয়ে যায়। এমন হয়কেউ আগে ভালো ছিলেনকিন্তু পরে তার মধ্যে অনেক গোমরাহী চলে এসেছে।

তখন কিন্তু তার কাছ থেকে দ্বীনী রাহবারি গ্রহণ করা আর জায়েয হবে না।

নিজামুদ্দীন মারকায থেকে আমরা তাবলীগের হেদায়েত গ্রহণ করতাম। কেনসেটা কি কেবল নিজামুদ্দীন হওয়ার কারণেনাএজন্য যেসেখানে যারা কথা বলতেন তারা সুন্নাহ-শরীয়তের অনুসারী এবং হেদায়েতের কথা বলতেনকিন্তু যদি মিম্বর এমন লোকের হাতে যায়যে আয়াত-হাদীসের বিকৃতি করেনবীদের সমালোচনা করেনতুন নতুন বিধান বানিয়ে সেগুলোকে সুন্নত ও শরীয়ত নাম দেয়তাহলে কি আপনি তা গ্রহণ করবেনকিছুতেই না।

কিন্তু যে ব্যক্তি ইলিয়াস রাহ.-এর খান্দানকেনিজামুদ্দীনকে হক ও এতাআতের মানদণ্ড’ মনে করেসে তো নতুন এ লোকের কথা সবই মানবে। যেমনএ দেশে সাদপন্থী এতাআতী ভাইয়েরা সব গ্রহণ করে। বলেনিজামুদ্দীনই আমাদের মারকায।

কিন্তু নিজামুদ্দীন কি শুধু নিজামুদ্দীন হওয়ার কারণে মারকায হয়েছিলএটা তো মূলত বাংলাওয়ালী মসজিদ! মারকাযের পাশেই নিজামুদ্দীন রাহ.-এর মাজার আছে। ওখানে গেলে দেখা যায়কত ধরনের শিরক হয়। যদি নিজামুদ্দীনের কারণেই মারকায হততাহলে তো কেউ বলতে পারেআসল নিজামুদ্দীন তো বাংলাওয়ালী মসজিদের পাশে- ঐদিকে। সেখানে গিয়ে দেখে আসবেনকী হয় সেখানে।

তো সঠিক হওয়ার মানদণ্ড কোনো স্থান’ নয়। কেউ যদি মনে করেনিজামুদ্দীনই আসল। নিজামুদ্দীন নিজামুদ্দীন হওয়ার কারণেই মানদণ্ডসেটা ভুল হবে।

ঠিক তেমনিশায়েখের অনুসরণ করতার কথা অনুযায়ী চল- এটা কেন বলা হচ্ছেএটি কি শুধু শায়েখ হওয়ার কারণেনাকি তিনি সুন্নত-শরীয়তের অনুসরণ করার কারণেএখন যদি শায়েখ সুন্নত-শরীয়তের খেলাফ বলেনখেলাফ চলেনতখন আর তাকে মানা হবে নাতিনি আর গ্রহণযোগ্য থাকবেন না।

তবে এখানে একটা বিষয় বুঝতে হবে। কেউ আছেখামোখাই শায়েখের বিরুদ্ধাচরণ করেঅযথাই শায়েখের বদনাম করে। বলে বেড়ায়শায়েখ গলদ কথা বলেগোমরাহীর কথা বলে। আসলে এটা ঐ ব্যক্তির বাড়াবাড়ি।

এরকম আরো কিছু বিষয় আছে। মানুষ যখন এধরনের কথা শোনেতখন পেরেশান হয়ে যায়। অথচ এখানে পেরেশানির কিছু নেই।

এখন অনেক ভেজাল দিয়ে দুনিয়া ভরাঅনেক জাল-প্রতারণা-ধোঁকা রয়েছে। দুনিয়াবী ক্ষেত্রে এসবকিছুর ভেতর দিয়েই মানুষ খুব সচেতন-সতর্কতার সাথে চলে। কিন্তু দ্বীনের বিষয়ে যখন এধরনের কিছু শোনেখুব পেরেশান হয়ে যায়। বলেআমরা তাহলে কোথায় যাব?

এটি পেরেশানীর বিষয় না। আপনি যদি শরীয়তের সঠিক মানদণ্ড মাথায় রাখেনতাহলে সঠিক রাস্তায় চলতে পারবেন। শরীয়ত দলীলকে মানদণ্ড বানিয়েছে আর দলীলের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণদলীলকে বোঝার জন্য মানদণ্ড বানিয়েছেন হক্কানী ওলামায়ে কেরামকে। ইরশাদ হয়েছে-

اَلَاۤ اِنَّ اَوْلِیَآءَ اللهِ لَا خَوْفٌ عَلَیْهِمْ وَ لَا هُمْ یَحْزَنُوْنَ، الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا وَ كَانُوْا یَتَّقُوْنَ.

(স্মরণ রেখযারা আল্লাহর বন্ধু তাদের কোনো ভয় থাকবে না এবং তারা দুঃখিতও হবে না। তারা সেইসব লোকযারা ঈমান এনেছে এবং তাকওয়া অবলম্বন করেছে।)

তো মানদণ্ড হলশরীয়ত-সুন্নতকুরআন-হাদীস।

তো ওলী হওয়ার মানদণ্ড কুরআন দিয়ে দিয়েছে- ঈমান ও তাকওয়া।

ঈমান ও তাকওয়া যত কম হবেতত তার ওলী হওয়া দুর্বল হতে থাকবে। একপর্যায়ে গিয়ে একেবারে সব শেষ হয়ে যাবে।

আমি বলেছিওলীর বিভিন্ন স্তর রয়েছে। এখন নিজের ইসলাহের জন্য কার সোহবতে থাকা যাবেঈমান আছেশিরক নেইমুনাফিকী নেই- এটি এক স্তরের মুত্তাকীএক প্রকারের ওলী। একেবারে প্রথমিক স্তর। এমনও হতে পারেসে না জানার কারণে গুনাহে লিপ্ত। কিন্তু কাঁটায় কাঁটায় ঈমান আছেযতটুকু থাকলে কাফের বলা যাবে না। এমন লোকের সোহবত  গ্রহণ করা যাবে না।

তাহলে আমার ঈমান-আমল ঠিক করার জন্য কার সোহবতে থাকবমানদণ্ড তো ঈমান ও তাকওয়া। তবে তা এমন এক স্তরে থাকতে হবেযাতে তার সোহবতে গেলে আমার ইসলাহ হয়।

এটিও শরীয়তে বলে দেওয়া হয়েছে। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে-

أَيُّ جُلَسَائِنَا خَيْر يا رَسُولَ الله؟

হে আল্লাহর রাসূল! আমরা যার সোহবতেযার মজলিসে যেতে পারি- তিনি কেমন লোক হতে হবে?

উত্তরে তিনি বলেন-

مَنْ ذَكَّرَكُمْ بِاللهِ رُؤْيتُهُ، وَزَادَ فِي عِلْمِكُمْ مَنْطِقُهُ، وَذَكَّرَكُمْ بِالْآخِرَةِ عَمَلُهُ.

قال الهيثمي : رواه أبو يعلى، وفيه مبارك بن حسان، وقد وثق، وبقية رجاله رجال الصحيح.

যাকে দেখলে আল্লাহর কথা স্মরণ হয়যার আলোচনায় বা কথায় তোমাদের ইলম বাড়ে। যার আমল তোমাদেরকে আখেরাত স্মরণ করিয়ে দেয়। -শুআবুল ঈমানবায়হাকীহাদীস ৯০০০মুসনাদে আবু ইয়ালাহাদীস ২৪৩৭আলআহাদীসুল মুখতারাহযিয়া মাকদিসীহাদীস ২০৯আলমুনতাখাব মিন মুসনাদি আবদ ইবনু হুমাইদহাদীস  ৬৩১মাজমাউয যাওয়ায়েদহাদীস ১৭৬৮৬

এখন যার আলোচনায় গোমরাহী থাকেতার সোহবতে গেলে ইলম বাড়বেনাকি গোমরাহী বাড়বেগোমরাহী বাড়বে। এটা অনেক বড় শর্ত।

তাকে দেখলে আল্লাহর কথা স্মরণ হয়’ -এর অর্থ হলতার মাধ্যমে আমার দুনিয়া-বিমুখতা সৃষ্টি হবেদুনিয়ার মহব্বত কমবেআল্লাহর হুকুম-আহকাম মেনে চলার তাওফীক হবে। এজন্য তাকে দেখে আল্লাহর কথা স্মরণ হয়। শুধু চেহারা দেখে মুগ্ধ হয়েছেন- এরূপ নয়। আল্লাহর কথা স্মরণ হবে। অর্থাৎ আল্লাহ আমার খালিকমালিক। আমি আল্লাহর বিধান মতো চলি কি না। ঈমান আর তাকওয়ার পথে অগ্রসর হওয়ার জন্য তার চেহারায় এত নূর। আমিও যদি ঈমান ও তাকওয়ার পথে অগ্রসর হতে পারিতাহলে আমার আমলও ভালো হবে।

وَزَادَ فِي عِلْمِكُمْ مَنْطِقُهُ، وَذَكَّرَكُمْ بِالْآخِرَةِ عَمَلُهُ.

তার আলোচনায় তোমাদের ঈমান বাড়বে। তার আমল তোমাদেরকে আখেরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দেবে।

যার আমল দেখলে মনে হবেএটি সুন্নাহ মোতাবেকভারসাম্যপূর্ণ।

প্রান্তিকতাবাড়াবাড়ি ও সীমালঙ্ঘনমুক্ত হবে তার আমল।

খাঁটি মুমিন এমনতার আমলে কোনো বাড়াবাড়ি নেইবরং সুন্নাহসম্মত।

বলছিলামমাপকাঠি হল ঈমান ও তাকওয়া। আর সুন্নতের অনুসরণ এবং সহীহ ইলম ছাড়া তাকওয়া হয় না। একারণে মানদণ্ডের ইলম থাকা দরকার। নতুবা সে ভাববে,  ইলিয়াস রাহ.-এর খান্দানে যেই হবেসেই আমাদের অনুসরণীয় হবে। কারণতার কাছে মূল মানদণ্ড স্পষ্ট না। মূল মানদণ্ড কি ইলিয়াস রাহ.?

নাতিনিও যেহেতু সুন্নতের অনুসারী ছিলেনহেদায়েতের ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিলেনতাঁর উস্তাযগণ ছিলেন আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ্র বড় বড় ব্যক্তিত্ব। তাঁদের সাহচর্যে থেকে তাবলীগ-দাওয়াত ইত্যাদির কাজ বুঝেছেন। এজন্য মানুষ তাঁর অনুসরণ করেছিল।

এখন তাঁর খান্দানে এমন একজন এসেছেযে পড়াশোনাও ঠিকমতো করেনিতবে আলোচনা করতে পারে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। কিন্তু যাকে বলে দ্বীনের সমঝ- সেটা তার মধ্যে নেই। তার কথা বলার যোগ্যতা আছে। এজন্য সাধারণ মানুষ তার আলোচনা শুনে মুগ্ধ হয়ে যায় আর বলেআলেমরা সাদ সাহেবকে বোঝে না। তার জ্ঞান অনেক ঊর্ধ্বেরতিনি অনেক গভীরের কথা বলেন।

একবার এক সাদপন্থী ভাই এসেছিল। বললহুজুর! আপনারা শুধু বলেনসমস্যা! আমি তো নিজামুদ্দীন ঘুরে এসেছিকোনো সমস্যা তো নেই। দেখেছিঠিকমতো পাঁচ ওয়াক্ত নামায হয়বয়ান হয়তালীম হয়। কোনো সমস্যা তো দেখলাম না।

বয়ান তো হয়কিন্তু বয়ানের মধ্যে কী বলা হয়তুমি তো সাদ সাহেবের বয়ান শোনো এভাবে যেতিনি যা বলছেন সব কুরআন-হাদীসের কথাই বলছেন।

একজন বিজ্ঞ আলেমই বুঝতে পারেনতিনি কতটুকু সঠিক বলছেন! সঠিক বলছেননাকি কুরআন-হাদীসের বিকৃতি করছেন! শুধু হাদীস বলছেননাকি নিজের থেকে কিছু কথা বাড়িয়ে বলছেন!

আগে তো হাদীস বলতেনতাতে একটা কথা বাড়িয়ে দিতেন। কিন্তু এখন কী করেনসরাসরি হাদীস বানিয়ে ফেলেন নাউযুবিল্লাহ।

গত ডিসেম্বর ২০২৩ -এ ভূপালে যে ইজতেমা হল সেখানেও এ কাণ্ড ঘটেছে। তার ভূপালের বয়ান আমি পুরোটা পড়েছি। যারা এ বয়ানে উপস্থিত ছিলেন তাদের কারো কারো সাথেও আমার কথা হয়েছে। বয়ানের রেকর্ডও সংরক্ষিত আছে আবার লিখিতও আছে।

কিন্তু এটা কি একজন সাধারণ মানুষ বুঝবেরোগীর অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য যদি আরেকজন সাধারণ রোগীই যায়তাহলে সে আর কী বুঝবে?

তো এভাবে মানুষ মানদণ্ড পরিবর্তন করে ফেলছে। হকের মানদণ্ড হয়ে যাচ্ছেইলিয়াস রাহ.-এর খান্দাননিজামুদ্দীন মারকায!

কারো ব্যাপারে কোনো আপত্তি উঠলে তা তো যাচাই করবে বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিবর্গ। সাধারণ কেউ তার কী বুঝবে?

আমাদের মানদণ্ড বুঝতে হবে।

ওলীর মানদণ্ড হল-

اَلَاۤ اِنَّ اَوْلِیَآءَ اللهِ لَا خَوْفٌ عَلَیْهِمْ وَ لَا هُمْ یَحْزَنُوْنَ، الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا وَ كَانُوْا یَتَّقُوْنَ.

(স্মরণ রেখযারা আল্লাহর বন্ধু তাদের কোনো ভয় থাকবে না এবং তারা দুঃখিতও হবে না। তারা সেইসব লোকযারা ঈমান এনেছে এবং তাকওয়া অবলম্বন করেছে।)

এ মানদণ্ড দিয়ে বুঝতে হবেকে আল্লাহর ওলী আর কে গোমরাহ! কুরআন-হাদীসের এসব মানদণ্ড সামনে রেখে উলামায়ে কেরাম কিতাব লিখেছেন। তেমন একটা কিতাব আছেনাম-

الفرقان بين أولياء الرحمن و أولياء الشيطان.

কে রহমানের ওলী আর কে শয়তানের ওলীতোমাকে পার্থক্য করতে হবে। কীভাবে পার্থক্য করবে?

শরীয়তের এ মানদণ্ড দিয়ে পার্থক্য করা যাবেকে আল্লাহর ওলী আর কে শয়তানের ওলী।

তো কিছু শয়তানের ওলী আছেযাকে দেখলে মানুষ মুগ্ধ হয়ে যায়তার কথায়তার আখলাকে মুগ্ধ হয়ে যায়। এভাবে এগুলো দেখে মুগ্ধ হওয়া শরীয়তের মানদণ্ড না। শরীয়তের মানদণ্ড হলঈমান ও তাকওয়া। এর সাথে আরো কিছু থাকলে ভালো। যেমনঈমান ও তাকওয়ার সাথে কারো আখলাকও ভালো। তো মুত্তাকী মানুষের আখলাক ভালো হওয়াই তো স্বাভাবিক। যদি আখলাক ভালো না হয়তবে বুঝতে হবেতাকওয়া ও ঈমানের কমতি আছে। কিন্তু ঈমান আর তাকওয়া নেইঅথচ আখলাক খুব ভালোআল্লাহর  কাছে এর কোনো মূল্য নেই।

অনেকে পশ্চিমাদের প্রশংসা করে বলেওখানে ভেজাল নেইমিথ্যা নেইদুর্নীতি নেই। এসব প্রশংসা করবেন না। আল্লাহর সাথে যে দুর্নীতি করে আর মানুষের সাথে স্বার্থের কারণে দুর্নীতি থেকে দূরে থাকেআপনি তার প্রশংসা করবেন কীভাবে?

আল্লাহর প্রতি যার ঈমান নেইসে কি দুর্নীতিবাজ নাখালিকরাব্বুল আলামীনের সাথে দুর্নীতি করছেবেয়াদবি করছে। আপনি তার প্রশংসা করছেন!

আমি অস্বীকার করি না যেতাদের গুণ নেই। তবে এ গুণও তো আল্লাহরই দেওয়া। সে তো আল্লাহর দেওয়া এ নিআমতেরও শোকর আদায় করছে না! আল্লাহর ওপর ঈমান আনছে নাআল্লাহ্কে মানেই নাতাঁর সাথে শিরক করছে। অনেকে তো অস্বীকারই করে। তাহলে মূলে তো সে বেয়াদবই রয়ে গেল!

আমি একথা বলছি না যেআপনি কোনো অমুসলিমকে দেখলে বেয়াদব বলবেন। ইসলাম এ শিক্ষা দেয় না। কিন্তু বাস্তবে সে আল্লাহর সাথে গাদ্দারি করেবেয়াদবি করে।

এটা ইসলামের সৌন্দর্য যেএসমস্ত কাফেরমুনাফিকদের সাথেও ইসলাম একটা সাধারণ ভালো আচরণের অনুমতি দেয়। এটা ইসলামের উদারতা। ইসলাম বলেতারা আল্লাহর সাথে বেয়াদবি করলেও তারা তো তোমার রক্তের ভাইরক্তের সম্পর্কে সে-ও বনী আদমতুমিও বনী আদম। মানুষ হিসেবে সাধারণ আচরণ করখারাপ আচরণ কর না।

কিন্তু আবার প্রশংসার অনুমতি দেয়নি শরীয়ত। বরং নিজের কমতির কথা চিন্তা করিআমি আল্লাহর বান্দা হয়েতাঁর ওপরআখেরাতের ওপর ঈমান এনেও আল্লাহর একজন নেক বান্দার যেমন আখলাক হওয়া উচিত ছিলতেমন আখলাক আমি বানাতে পারিনি।

এটা আমাদের দোষতাই আমরা  নিজেদের ভর্ৎসনা করব। ওদের তারিফ কেন করবআমাদের মুসলিম সমাজকে উন্নত করতে হবেইসলাম মাফিক বানাতে হবে।

তারা ইসলামের ঈমান না শিখে অন্য শিক্ষাগুলো গ্রহণ করে নিজেদের সমাজ উন্নত করছে। আমাদের কাছে ইসলামের পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা আছে। তা সত্ত্বেও এ বিষয়ে আমাদের কোনো ফিকির নেই। সেজন্য আমরা নিজেদের ইসলাহের বিষয়ে যত্নবান হই। আর ওদের প্রশংসা করা থেকে বিরত থাকি এবং ওদের সঙ্গে মুসলিম সমাজের তুলনা না করি।

খোলাসা কথা হল-

الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا وَ كَانُوْا یَتَّقُوْنَ.

(আল্লাহর ওলী তারাযারা ঈমান এনেছে এবং তাকওয়া অবলম্বন করেছে।)

যাহোক আলোচনা চলছিলঈমান ও তাকওয়া নিয়ে। ঈমানের জন্য লাগবে ইসলামী আকীদা এবং আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের মাসলাক।

কারো ইসলামী আকীদায় সমস্যা আছেতাহলে ঈমান তো শেষ। তেমনি কেউ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত থেকে ছুটে যাচ্ছেতাহলে তার আকীদা সহীহ থাকলেও সে গোমরাহ!

যার ঈমানের মৌলিক আকীদাতেই সমস্যাতার থেকে তো কিছু নেওয়াই যাবে না। যে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত থেকে ছুটে যাচ্ছে তার থেকেও কিছু নেওয়া যাবে না।

দ্বীন নিতে হবেইসলাহ নিতে হবে এমন ব্যক্তির কাছে এসেযার মধ্যে ইসলামী আকীদা যথাযথ আছে এবং যিনি আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের মাসলাকের ওপর যথাযথ আছেন।

তো ঈমান ও তাকওয়া যার মধ্যে আছে তিনি হলেন আল্লাহর ওলী। তাঁর সোহবতে যেতে হবে।

যার আকীদায় সমস্যাসেখানে গিয়ে গোমরাহ হওয়া ছাড়া কোনো পথ নেই।

আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের সহজ ও সংক্ষিপ্ত পরিচয় হল-

এক. তারা কখনো কোনো নবী-রাসূলের সমালোচনা  করে না।

দুই. তারা কোনো সাহাবীর সমালোচনা করে নাআহলে বাইতের মুত্তাবিয়ে সুন্নত কোনো ব্যক্তির সমালোচনা করে না।

তিন. আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের কোনো ফকীহ-ইমামমাযহাবের কোনো ইমামের সমালোচনা করে না। তেমনিভাবে হাদীসের ইমামতাফসীরের ইমামইসলাহের লাইনের ইমাম- কোনো ইমামেরই সমালোচনা করে না।

চার. আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত ঢালাওভাবে উলামায়ে কেরামের সমালোচনা করে না।

সমাজে কিছু লোক আছেযারা আলেমদের দেখতে পারে না। তারা বলেআলেমরা কী বোঝেতারাই সব শেষ করল।

এটা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের তরীকা না।

ব্যক্তিপর্যায়ে সমালোচনা আলাদা জিনিস। যেমনকেউ বললএত বড় হুজুরের দ্বারা কীভাবে এ কাজটা হল। এটাও দলীল ছাড়া এমনি আন্দাযে খামোখা বলা গলতঅন্যায়।

ব্যক্তির সমালোচনা এক জিনিস আর গোটা আলেম সমাজের সমালোচনা ভিন্ন জিনিস। তো আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের লোকেরা আলেম সমাজের সমালোচনা করে না। যারা আলেমদের কটাক্ষ করে কথা বলেতারা সঠিক রাস্তায় নেই।

যাদের দেখবেনঢালাওভাবে আলেমদের সমালোচনা করে এবং সাহাবায়ে কেরামেরএমনকি নবী-রাসূলের সমালোচনা করেবুঝবেন সে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের তরীকায় নেই। তাদের সাথে বন্ধুত্ব করতে যাবেন নামসিবতে পড়বেন।

সাধারণ মুসলমান হিসেবে একটা সম্পর্ক রাখাসেটা ভিন্ন জিনিস। কিন্তু ঈমানআমলইসলাহের নেসবতেদ্বীনী কাজ শেখার নেসবতে তাদের সাথে সম্পর্ক রাখা যাবে না।

আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন। আমলের তাওফীক দান করুন- আমীন।

[মাসিক দ্বীনী মজলিস, ৫ জানুয়ারি ২০২৪ ঈ.

মারকাযুদ দাওয়াহ জামে মসজিদ, হযরতপুরকেরাণীগঞ্জ

মুসাজ্জিলা থেকে শ্রুতিলিখন :

কামরুল আনাম খান ও খালিদ সাইফুল্লাহ]

মন্তব্য (...)

এ সম্পর্কিত আরও প্রবন্ধ

দুআ একটি ইবাদতঃ দুআ কেন কবুল হয় না?

...

শাঈখুল ইসলাম হযরত আব্দুল মালেক
১০ নভেম্বর, ২০২৪
৩৬৫৭ বার দেখা হয়েছে

আল্লাহর নিকট ইসলাহের তাওফীক প্রার্থনা করুন

...

শাঈখুল ইসলাম মুফতি তাকী উসমানী
৯ নভেম্বর, ২০২৪
১১৬৩ বার দেখা হয়েছে

লেখকবৃন্দ

সকল লেখক →