প্রবন্ধ

বালা-মুসীবত ও মহামারী: সীরাতে মুস্তাকীমের পথনির্দেশ

লেখক:মুফতী মনসূরুল হক দাঃ বাঃ
২০ নভেম্বর, ২০২০
২৩২০ বার দেখা হয়েছে
মন্তব্য

বর্তমান বিশ্বে করোনা নামে একটা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঘটেছে। গোটা বিশ্বের মানুষ এর ভয়ে আতঙ্কিত। দুনিয়াদাররা তো এই ভাইরাসকে আল্লাহর চেয়ে বেশি ভয় পাচ্ছে। তারা মৃত্যুর ভয়ে অস্থির হয়ে বাঁচার জন্য প্রাণপণ ছুটোছুটি করছে; কিন্তু শেষরক্ষা হচ্ছে কী? হচ্ছে না। দুনিয়াদাররা এ জন্য পেরেশান যে, তাদের দৃষ্টিতে দুনিয়াই সব; মরে গেলো তো সব হাতছাড়া হয়ে গেলো। পক্ষান্তরে যারা খাঁটি মুসলমান তারা পেরেশানীমুক্ত; মৃত্যুর ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে না। কারণ তারা জানে, মুসলমানদের জন্য দুনিয়াটাই শেষ নয়। দুনিয়ার যিন্দেগীর পর তাদের জন্য রয়েছে এক শান্তিময় জীবন।

وما هذه الحياة الدنيا إلا لهو ولعب وإن الدار الآخرة لهي الحيوان

অর্থ: 'আখেরাতের জীবনই প্রকৃত জীবন।' (সূরা আনকাবৃত-৬৪) 

সে হিসেবে একজন মুমিন বান্দা আল্লাহ তা'আলার রহমতের প্রতি এই আশা রাখে যে, সে এই মুসীবতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে বিনা হিসাবে জান্নাতে চলে যাবে। প্রশ্ন হতে পারে, মুমিন-মুসলমান আর দুনিয়াদার তথা কাফের-মুশরিক সবাই তো মানুষ, তাহলে চিন্তাধারায় এই পার্থক্য কেন? বস্তুত পার্থক্যকারী বস্তু হচ্ছে তাকদীরের প্রতি ঈমান। কাফের- মুশরিকগণ যেমন পরকালে বিশ্বাস রাখে না, তেমন তাকদীরেও বিশ্বাস রাখে না। তাদের ধারণা হল, যা-কিছু হয়, প্রাকৃতিক কারণে হয়। আর এর প্রতিকার বা আত্মরক্ষা নিজেদের প্রচেষ্টা, সাবধানতা ও উপায়-উপকরণের মধ্যে নিহিত। ফলে যে কোন দুর্যোগ ও মুসীবতে তারা স্রেফ বাহ্যিক উপায়- উপকরণের দিকে ছুটতে থাকে। পক্ষান্তরে মুমিন বান্দা বিশ্বাস করে, আল্লাহ তা'আলা মাখলুকাতকে সৃষ্টি করার পঞ্চাশ হাজার বছর পূর্বেই তাদের ভাগ্য নির্ধারণ করে রেখেছেন। কে কতদিন হায়াত পাবে, কে কখন মৃত্যুবরণ করবে, কে কী পরিমাণ রিযিক প্রাপ্ত হবে সব লেখা হয়ে গেছে এবং এই লেখায় পরিবর্তন-পরিবর্ধন হবে না। (মুসনাদে আহমাদ; হা.নং ২৬৫৩) 

অতএব প্রকৃত মুমিন বান্দা করোনা ভাইরাস নিয়ে পেরেশান হবে না। কেননা কেউ নির্দিষ্ট সময়ের দশ বছর আগেই মারা যাবে এমনটি ঘটার কোন আশংকা নেই। প্রত্যেকের মৃত্যু নির্দিষ্ট দিনে নির্দিষ্ট মিনিটের নির্দিষ্ট সেকেন্ডেই হবে; এক সেকেন্ড আগেও হবে না, পরেও হবে না।

মহামারী কেন আসে?

হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, যখন অশ্লীলতা, বেহায়াপনা, যিনা-ব্যাভিচার ব্যাপক হয়ে যায় তখন মহামারী দেখা দেয়। (সুনানে ইবনে মাজাহ; হা.নং ৪০১৯)

এ জাতীয় গুনাহ একসময় প্রকাশ্যে ব্যাপক আকারে সংঘটিত হতো ইউরোপ আমেরিকায়। এখন বৃটিশ সিলেবাসের হাত ধরে আমাদের দেশেও চলে এসেছে। একজন মহিলার সব চেয়ে বড় সম্পদ তার সতীত্ব। বর্তমানে ইংরেজী শিক্ষিত মেয়েদের অধিকাংশের কাছে এই মহামূল্য সম্পদের কোন কদর নেই। রাস্তা-ঘাটে, পার্কে-পার্টিতে যেখানে সেখানে তারা ব্যবহৃত হচ্ছে। এভাবে যখন যিনা-ব্যাভিচার বিশ্বব্যাপী ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ল, তখন আল্লাহর আযাবও আসল বিশ্বব্যাপী। আজ পৃথিবীর প্রতিটি দেশের প্রতিটি জনপদে পৌঁছে গেছে করোনা ভাইরাসের কঠিন আযাব। 


আল্লাহ মুমিনদের পরম বন্ধু। বিপদাপদে ভরসা কেবল তারই উপর থাকবে 

আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন,

قل لن يصيبنا إلا ما كتب الله لنا هو مولانا وعلى الله فليتوكل المؤمنون

অর্থ: 'হে নবী! আপনি বলে দিন, আল্লাহ তা'আলা আমাদের জন্য যা লিখে রেখেছেন, তা ছাড়া অন্য কোন বিপদ আমাদেরকে স্পর্শ করবে না। তিনিই আমাদের অভিভাবক। আর মুমিনরা যেন সবকিছুতে তারই উপর ভরসা রাখে।' (সূরা তাওবা-৫১)

সুতরাং আল্লাহ আমাদের ভাগ্যে যা লিখে রেখেছেন তার বাইরে কোন কিছু ঘটবে না। অন্যত্র বলেছেন,وَاللَّهُ وَلِيُّ الْمُؤْمِنِينَ অর্থ: 'আর তিনি মুমিনদের পরম বন্ধু।' (সূরা আলে ইমরান-৬৮) 

নিয়ম হল, যিনি পরম বন্ধু তিনি বন্ধুর জন্য ক্ষতিকর কিছু লিখতে পারেন না। কিন্তু অনেক সময় আমরা নিজেরাই নিজেদের ক্ষতি করে বসি; যদিও আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূল কোন ক্ষতি করেন না। আল্লাহ তা'আলা এমন পরাক্রমশালী ও সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী, যার হুকুম ছাড়া গাছের একটি পাতাও নড়ে না। তিনিই এই সুবিশাল আসমান ও যমীন মাত্র দেড় অক্ষরবিশিষ্ট 'কুন্‌' শব্দ দ্বারা সৃষ্টি করেছেন। সেই তিনি নিজেই বলে দিয়েছেন- وَعَلَى اللَّهِ فَلْيَتَوَكَّلِ الْمُؤْمِنُونَ অর্থাৎ হে বান্দা! তুমি যখন কালিমা পড়ে মুমিন হয়েছো, তোমার কর্তব্য হল, সকল ব্যাপারে একমাত্র আমারই উপর ভরসা রাখা, সবকিছু আমারই উপর ছেড়ে দেয়া, অন্য কারও প্রতি আশা না রাখা এবং অন্যদিকে ছোটাছুটি না করা। কাজেই করোনা সংক্রমণের ভয়ে কাবাঘর বন্ধ করার এবং মসজিদ-মাদরাসা বন্ধ রাখার কোন প্রয়োজন নেই। বরং কর্তব্য হল, এগুলো সম্পূর্ণ খোলা রেখে দলবদ্ধভাবে আল্লাহ তা'আলার দরবারে ফরিয়াদ করা। কিন্তু অভিশপ্ত ইয়াহুদীরা আমাদেরকে মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে সেই পরম বন্ধু আল্লাহ থেকে দূরে রাখার অপচেষ্টায় অনেকটাই সফল হয়েছে। 


দুনিয়া পরীক্ষাগার, এখানে নেয়ামত-মুসীবত উভয়টি দিয়েই পরীক্ষা করা হয় 

দুনিয়া পরীক্ষার স্থান, বিচারের স্থান নয়। বিচারের জন্য আলাদা দিন ধার্য রয়েছে। তবে দুই-একটা বিচার আল্লাহ তা'আলা দুনিয়াতেও করে থাকেন। অর্থাৎ অন্যায় করার সাথেসাথেই পাকড়াও করে ফেলেন। এটা অনেকটা প্রচলিত মোবাইল-কোর্টের মতো। উদাহরণস্বরূপ ফেরআউন, নমরূদ, কারূন, আবু জাহাল, আবু লাহাবদেরকে আল্লাহ তা'আলা দুনিয়াতেই ধ্বংস করেছেন।

অতঃপর আখেরাতের আসল শাস্তি তো রয়েছেই।

তো দুনিয়া বিচারের স্থান নয়, পরীক্ষার স্থানমাত্র। এখানকার পরীক্ষা-পদ্ধতি সম্পর্কে আল্লাহ তা'আলা বলেছেন, وَبَلَوْنَاهُمْ بِالْحَسَنَاتِ وَالسَّيِّئَاتِ لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ অর্থ: 'আমি তাদেরকে ভালো ও মন্দ অবস্থার দ্বারা পরীক্ষা করেছি। যাতে তারা সঠিক পথের দিকে ফিরে আসে।' (সূরা আরাফ-১৬৮)

দেখা যাচ্ছে, দুনিয়াতে আল্লাহ তা'আলা নেয়ামত দিয়েও পরীক্ষা করেন, মুসীবত দিয়েও পরীক্ষা করেন। মজার বিষয় হল, আল্লাহ তা'আলা যে সকল মুসীবত দ্বারা বান্দাদেরকে পরীক্ষা করেন, সেগুলো বাহ্যিকভাবে মুসীবত মনে হলেও মুমিন বান্দার জন্য বিলকুল মুসীবত নয়। কেননা দেখতে মুসীবত হলেও এর আড়ালে লুকানো থাকে বড় নেয়ামত। অর্থাৎ মুসীবতে পড়ে আল্লাহর ফায়সালায় সন্তুষ্ট থাকলে এবং সবরের পথ অবলম্বন করলে বান্দা এমন কল্পনাতীত নেয়ামতের অধিকারী হয়, যার কিছু অংশ তাকে দুনিয়াতেই প্রদান করা হয়, আর অবশিষ্ট পুরোটা দেয়া হয় আখেরাতে। হাদীসে এসেছে, কিয়ামত দিবসে মুসীবতের পরকালীন বিনিময় দেখে বান্দা আফসোস করে বলবে, আল্লাহ! দুনিয়াতে মুসীবতের মাধ্যমে আমার শরীর কেঁচি দ্বারা কাটা হয়নি কেন? অর্থাৎ সে হতভম্ব হয়ে পড়বে যে, সামান্য সামান্য মুসীবতের বিনিময়ে এমন এমন বড় পুরস্কার! বোঝা গেলো, দেখতে মুসীবত মনে হলেও মুমিনের জন্য তা নেয়ামত। 


মুমিনের উপর মুসীবত কেন আসে?

প্রশ্ন হতে পারে, মুমিন যখন আল্লাহ তা'আলার বন্ধু এবং মুমিনের জন্য মুসীবতও নেয়ামতস্বরূপ তাহলে মুমিনের উপর বিপদাপদ ও বালা-মুসীবত কেন আসে? উল্লিখিত আয়াতেই আল্লাহ তা'আলা এর উত্তর প্রদান করেছেন যে, لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ অর্থাৎ তাদেরকে মুসীবতে লিপ্ত করা হয়, যেন তারা সীরাতে মুস্তাকীমের উপর ফিরে আসে।

দুনিয়াতে মুসীবত আসলে কাফের-মুমিন সবাই আক্রান্ত হবে। তবে পার্থক্য হল, কাফেরদের উপর মুসীবত আসে তাদেরকে ধ্বংস করার জন্য আযাবস্বরূপ। আর মুমিনের উপর মুসীবত আসে তাকে সীরাতে মুস্তাকীমের উপর ফিরিয়ে আনার জন্য। মুমিন বান্দা যখন দুনিয়ার ধোঁকায় ও ধান্ধায় পড়ে এদিক- সেদিক চলে যায় তখন তাকে সীরাতে মুস্তাকীমের দিকে ফিরিয়ে আনার জন্য মুসীবত দেয়া হয়।

মুসীবত আসলে করণীয় হল তাওবা করা, শিক্ষা গ্রহণ করা


আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন,

أولا يرون أنهم يفتنون في كل عام مرة أو مرتين ثم لا يتوبون ولا هم يذكرون

অর্থ: 'তারা কি লক্ষ্য করে না, প্রতিবছর তারা দু'-একবার পরীক্ষার সম্মুখীন হয়, তথাপি তারা তাওবাও করে না এবং উপদেশও গ্রহণ করে না।' (সূরা তাওবা- ১২৬)

এ আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, মুসীবত আসলে আমাদের দায়িত্ব দু'টি-

এক. অতীতের গুনাহের জন্য তাওবা করা।

দুই. মুসীবত থেকে ভবিষ্যতের জন্য শিক্ষা গ্রহণ করা।

অর্থাৎ যে ভুল হয়ে গেছে তার জন্য খুব অনুশোচনা ও কান্নাকাটি করা এবং সামনে যেন না হয় সে ব্যাপারে সচেতন থাকা।

সাধারণত কাফেররা উল্টাপাল্টা করলে আল্লাহ তেমন ভ্রুক্ষেপ করেন না। কিন্তু মুমিন হয়ে ভণ্ডামী করলে আল্লাহ তা'আলা বরদাশত করেন না। আমরা আজ কাফেরদের মতো হয়ে গেছি। বৃটিশ সিলেবাসের মাধ্যমে ইংরেজরা আমাদের মধ্যে এই ধ্যানধারণার অনুপ্রবেশ ঘটিয়েছে যে, জাতি হিসেবে তারাই অগ্রসর ও উন্নত। সুতরাং অন্যরা রীতি-নীতি ও বেশভূষায় যতো বেশি তাদের অনুকরণ করতে পারবে ততো বেশি উন্নতি করতে পারবে। ইংরেজদের এই ধোঁকায় পড়ে আমরা মুসলমানরা যতোই তাদের দিকে অগ্রসর হচ্ছি ততোই খোদার গযবে পতিত হচ্ছি। মনে রাখতে হবে, ইয়াহুদী-খৃস্টানদের জীবনপদ্ধতি আমাদের উন্নতির পন্থা নয়। আমাদের উন্নতির পথ ও পন্থা কিয়ামত পর্যন্ত সেটাই নির্ধারিত, যে পথ ও পন্থায় সাহাবায়ে কেরাম উন্নতি করেছিলেন। সেই পথ হল- ঈমানের পথ, আমলের পথ এবং দাওয়াত ও মুজাহাদার পথ। এই পথে অগ্রসর না হয়ে কাফেরদের কথা মতো নামায-রোযা বাদ দিয়ে, মসজিদ মাদরাসা বন্ধ করে আমরা কিছুতেই বিপদাপদ থেকে রক্ষা পাবো না।

আজ আমরা কাফেরদের গোলামী করছি। আরবদেশগুলো ইয়াহুদীদের ইশারায় পরিচালিত হচ্ছে। এর প্রভাব পড়ছে সারাবিশ্বের মুসলমানদের উপর। ইয়াহুদ-নাসারাদের এ গোলামীর জিঞ্জির আমাদের পা থেকে দ্রুত খুলে ফেলা দরকার। 


মুসীবত থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার উপায়

বিপদ আসলে আমাদের কাজ হল, আল্লাহ তা'আলার চাহিদা কি তা জানা এবং মানা। বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদেরকে কয়েকটি কাজ করতে হবে। 

এক. তাকদীরে বিশ্বাস মজবুত করতে হবে যে, ভালো-মন্দ যা-কিছু হয়, সব আল্লাহরই হুকুমে হয়। 

দুই. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার প্রতি যত্নবান হতে হবে। হাদীস শরীফে পরিষ্কার- পরিচ্ছন্নতাকে অর্ধেক ঈমান বলা হয়েছে। 

তিন. বেশি বেশি দু'আ করতে হবে। বিশেষ করে এই দু'আটি নিয়মিত পড়তে হবে- اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْبَرَصِ وَالْجُنُونِ وَالْجُذَامِ وَمِنْ سَيِّئَ الْأَسْقَامِ অর্থ: 'হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট শ্বেত-রোগ, উন্মাদনা, কুষ্ঠ এবং সব ধরনের দুরারোগ্য ব্যাধি হতে আশ্রয় কামনা করছি।'

চার. মসজিদ ও বাসা-বাড়িতে দিনের কোন একটা সময় সীরাত তথা নবীজীর জীবনীগ্রন্থ হতে কিছু অংশ তা'লীম করতে হবে।

এই আমলগুলো মুসীবত থেকে বাঁচার পরীক্ষিত উপায়।


করোনাকালীন অবসর সময়ের আমল 

নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,نِعْمَتَانِ مَغْبُونٌ فِيهِمَا كَثِيرٌ مِنْ النَّاسِ الصَّحَةُ وَالْفَرَاغُ অর্থ: 'দু'টি নেয়ামত এমন, যার ব্যাপারে মানুষ উদাসীন থাকে। একটি হচ্ছে সুস্থতা আরেকটি হচ্ছে অবসরতা।' (সহীহ বুখারী; হা.নং ৬৪১২)

স্বাস্থ্য ভালো থাকলে মানুষ ইবাদত করে না। অসুস্থ হওয়ার পর ইচ্ছা থাকলেও সম্ভব হয় না; শরীরে কুলায় না, উযূ ধরে রাখা যায় না। অর্থাৎ নানা রকম সমস্যা সৃষ্টি হয়। তাই যৌবনকালে সুস্থ অবস্থায় ইবাদতের অভ্যাস গড়তে হবে। এর ফায়দা হল, অসুস্থ কিংবা বৃদ্ধ হওয়ার কারণে পূর্বে কৃত কোন ইবাদত করতে সক্ষম না হলেও 'পেনশন' পাওয়া যায়। অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলা পূর্বের আমলগুলোর সাওয়াব জারি রাখেন, যা এখন করতে অক্ষম হয়ে পড়েছে। আর অবসরতাকেও গনীমত মনে করে কাজে লাগাতে হবে। ব্যস্ততা এসে গেলে ইবাদতের সুযোগ থাকে না। বর্তমানে করোনাকালীন অনেকে অবসর সময় কাটাচ্ছে। কাজ নেই বা থাকলেও কম। এই অবসর সময়গুলো টেলিভিশন, নাচ- গান, নাটক-সিনেমা ইত্যাদি দেখে বা মোবাইলে গেমস খেলে পার করবে না। অন্য সময় এতোটা অবসর সচরাচর পাওয়া যায় না। কাজেই এটাকে কুরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে, দীনী কিতাবাদি পড়ার মাধ্যমে, পরিবারের সদস্যদেরকে নিয়ে দীনী মুযাকারার মাধ্যমে, বেশি বেশি নফল নামায পড়ে এবং বেশি বেশি নফল রোযা রেখে কাটাবে। ফালতু কাজে কিংবা গুনাহের কাজে কাটাবে না। 


মহামারীতে আতংক নয় আশান্বিত হওয়া উচিৎ

আমরা তো মহামারীর কথা শুনলে মৃত্যুর ভয়ে পালাই। অবশেষে পালানোর জায়গাও পাই না। অথচ সাহাবায়ে কেরাম মহামারীতে আক্রান্ত হওয়ার জন্য দু'আ পর্যন্ত করেছেন। কেননা সাহাবায়ে কেরামের অনেকেই জিহাদে অংশগ্রহণ করা সত্ত্বেও শহীদ হওয়ার সুযোগ লাভ করেননি। অথচ মহামারীতে মারা গেলেও হাদীসের বর্ণনা অনুযায়ী শাহাদাতের মর্যাদা লাভ হয়, জীবনের গুনাহ-খাতা মাফ হয়ে যায়, বিনা হিসেবে জান্নাতে যাওয়া যায়।

হযরত উমর রাযি.-এর যামানায় একবার মহামারী দেখা দিয়েছিল। ঐ মহামারীর আলামত ছিল, আক্রান্তের শরীরে বিশেষ ধরনের ফোড়া উঠতো। তো একসাহাবীর হাতেও ঐ আলামত দেখা দিল। তিনি বললেন, সারা দুনিয়ার চেয়েও এই ফোড়াটি আমার কাছে অধিক মূল্যবান। কারণ, হয়তো এর মাধ্যমে আল্লাহ তা'আলা আমাকে শাহাদাতের মর্যাদা দান করবেন। অর্থাৎ তাদের অন্তরে এই বিশ্বাস বদ্ধমূল ছিল যে, মৃত্যু নির্ধারিত সময়েই ঘটবে; এক সেকেন্ড আগেও না, পরেও না। কিন্তু এই মহামারীর উসিলায় যদি মৃত্যু ঘটে তাহলে বড়ই খোশনসীব! সুবহানাল্লাহ, কী বিস্ময়কর ঈমানী জযবা! 


করোনার শিক্ষা

করোনা ভাইরাসের কারণে আমাদের অনেক কষ্ট হয়েছে বটে, তবে ফায়দাও হয়েছে বেশ। লকডাউনের কারণে মানুষ ব্যাপকভাবে ঘর থেকে বের হতে পারেনি। ফলে ঘর থেকে বের হয়েই যারা গুনাহের আড্ডায় লেগে যেতো তারা গুনাহ থেকে বেঁচে গেছে। চুলের সঙ্গে দাড়িকাটা যাদের অভ্যাস ছিল, সেলুন বন্ধ থাকায় কিছুদিনের জন্য হলেও এই গুনাহ থেকে বিরত থেকেছে। মদের বার, পতিতালয়, সিনেমা-হল, নাট্যশালা ও নারী-পুরুষের সহাবস্থানকেন্দ্রগুলো বন্ধ থাকায় লাখো মানুষ অগণিত গুনাহ থেকে বেঁচে গেছে। তাছাড়া পরিবেশগত কিছু উন্নতিও হয়েছে। কল-কারখানার বিষাক্ত ধোঁয়ায় আবহাওয়া মাত্রারিতিক্ত দূষিত হয়ে পড়েছিল। সবকিছু বন্ধ থাকায় আবহাওয়ারও কিছুটা উন্নতি হয়েছে। অনুরূপভাবে নদীর পানিও কিছুটা দূষণমুক্ত হয়েছে। গবেষকগণ চিন্তা- ভাবনা করলে আরও বহুবিধ বাহ্যিক উপকার অনুধাবন করতে পারবেন। করোনার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি শিক্ষা এই- 

শিক্ষা-১: দুনিয়াতে সুপার পাওয়ার বা পরাশক্তি বলতে কিছু নেই। সর্বময় ক্ষমতার মালিক জগৎসমূহের অধিপতি একমাত্র আল্লাহ

সামান্য করোনাভাইরাসের সামনে সুপার পাওয়ার দাবীদাররা জিরো পাওয়ারে পরিণত হয়েছে। যে যতো বড় পরাশক্তির দাবীদার করোনায় সে ততো বেশি বিপর্যস্ত। বিশ্বের সর্বোচ্চ ক্ষমতার দাবীদার ব্যক্তিও অকপটে স্বীকার করছে যে, আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি, কঠিন সময় পার করছি। করোনা আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, দুনিয়াতে আমরা যে বিভিন্ন শক্তিকে ভয় পাই এটা অমূলক ও অহেতুক। আল্লাহর কুদরতের সামনে তাদের কোন শক্তি নেই। আল্লাহ যে কোন মুহূর্তে তুচ্ছাতিতুচ্ছ জিনিস দ্বারা ক্ষমতার সকল দম্ভ মিসমার করে দিতে পারেন।

পৃথিবীতে আজ বড় বড় কতো বাহিনী, কতো যুদ্ধজাহায, কতো যুদ্ধবিমান এবং কতো ট্যাংক-কামান ও গোলা-বারুদ বিদ্যমান। কিন্তু করোনার মোকাবেলায় এগুলো কোন কাজে আসছে না। আল্লাহ তা'আলা কথিত পরাশক্তির দুর্বলতা ও অসহায়ত্ব চাক্ষুষ দেখিয়ে দিলেন। সুতরাং আমাদের আকীদা-বিশ্বাস ঠিক করে নিতে হবে যে, أَنَّ الْقُوَّةَ لِلَّهِ جَمِيعًا অর্থ: 'সর্বময় ক্ষমতার অধিপতি একমাত্র মহান আল্লাহ।' (সূরা বাকারা-১৬৫) 

অনেকে মনে করে, জনগণই ক্ষমতার উৎস। এটা ভ্রান্তধারণা, ফালতু বিশ্বাস। যদি তাই হবে, তাহলে ক্ষমতার উৎস জনগণ নিজেরাই বেঘোরে মরছে কেন এবং নিজেদের শাসককেই-বা রক্ষা করতে পারছে না কেন?

মূলত বাতাস-পানি, খরা-ভাইরাস এগুলো আল্লাহর এক-একটা বাহিনী। তিনি যখন ইচ্ছা করেন, কোন এক বাহিনীকে হুকুম করেন- ব্যস মুহূর্তেই সে সবকিছু লণ্ডভণ্ড করে দেয়। দুনিয়ার কোন ক্ষমতা ও ক্ষমতাদর্পী তার মোকাবেলা করতে সক্ষম হয় না।


শিক্ষা-২: দুনিয়াতেই কিয়ামতের দৃশ্য; কেউ কারো নয়

কুরআনে কারীমে ইরশাদ হয়েছে, 

فَاِذَا جَآءَتِ الصَّآخَّۃُ ۫ یَوۡمَ یَفِرُّ الۡمَرۡءُ مِنۡ اَخِیۡہِ ۙ وَاُمِّہٖ وَاَبِیۡہِ ۙ وَصَاحِبَتِہٖ وَبَنِیۡہِ ؕ

অর্থ: 'অতঃপর যখন আসবে সেই মহাবিপর্যয়। সেদিন মানুষ পলায়ন করবে নিজ ভাই থেকে, নিজ মাতা ও পিতা থেকে, নিজ স্ত্রী ও সন্তান থেকে।' (সূরা আবাসা-৩৩-৩৬)

কিয়ামতের দিন যে বিভীষিকাময় দৃশ্যের অবতারণা হবে, করোনা-পরিস্থিতি তার একটা নমুনা ও ঝলক। করোনা পজেটিভ জানা গেলে প্রিয়তমা স্ত্রী, কলিজার টুকরো সন্তান কেউ কাছে ভিড়ছে না; বদ্ধঘরে একাকী ফেলে রাখছে। গর্ভধারীণী মা-কে সন্তানেরা জঙ্গলে ফেলে আসছে। এই যখন অবস্থা তখন আমরা যে মহব্বতের দাবী করি তার কী অর্থ রইল? বলুন, এই স্ত্রী- সন্তানদের জন্য নামায-রোযা বাদ দিয়ে, হালাল-হারাম না মেনে, দিন-রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে এতো কিছু কেন করছি? যাদের জন্য আল্লাহকে ভুলে গিয়ে এতো কিছু করছি বিপদের সময় তো তারা আমার পাশে থাকছে না। দুনিয়ার এই সামান্য বিপদে যখন এই অবস্থা, তাহলে আখেরাতের কঠিন বিপদে কী অবস্থা হবে? হ্যাঁ, করোনা ভাইরাসের এই চরম ক্রান্তিকালেও শুধুমাত্র দীনদার- পরহেজগার লোকজন পরের সেবায় এগিয়ে এসেছে। করোনায় মৃতদের কাফন-দাফনের ইন্তেজাম করেছে। এর দ্বারা বোঝা গেলো, দীনদার-পরহেজগার লোকেরাই প্রকৃত আপনজন। দুনিয়াতেও তারা এর প্রমাণ পেশ করেছে। ইনশা- আল্লাহ আখেরাতেও তারা সুপারিশ করবে।

শিক্ষা-৩: لا عدوى তথা সংক্রামক ব্যাধি বলতে কোন কিছু নেই

কুরআন-সুন্নাহ সংক্রমণের ব্যপারটি সমর্থন করে না। কোন কোন হাদীসে যে বলা হয়েছে- فِرَّ مِنْ الْمَجْذُومِ فِرَارَكَ مِنْ الْأَسَدِ অর্থ: 'কুষ্ঠরোগী থেকে এমনভাবে পলায়ন করো যেমন সিংহ দেখলে পলায়ন করে থাকো।' (মুসনাদে আহমাদ; হা.নং ৯৭২২)- এটা দুর্বল ঈমানদারদের জন্য বলা হয়েছিল। যেন সে আল্লাহর হুকুমে আক্রান্ত হয়ে এ কথা মনে না করে যে, আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে যাওয়ার কারণে আমি আক্রান্ত হয়েছি, না গেলে আক্রান্ত হতাম না। কেননা এমনটি মনে করার কারণে তার ঈমান ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে। পক্ষান্তরে অন্য হাদীসে এসেছে, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন কুষ্ঠরোগীকে নিজের সঙ্গে বসিয়ে একই পাত্র থেকে খানা খেয়েছেন। এই কর্মপদ্ধতি দ্বারা বুঝিয়েছেন যে, সংক্রমণ বলতে কিছু নেই। বর্তমান বাস্তবতাও তাই। যদি সংক্রামক রোগের অস্তিত্ব থাকতো তাহলে করোনা চিকিৎসায় নিয়োজিত একজন ডাক্তার-নার্সও করোনা-নেগেটিভ থাকার কথা নয় এবং কোন পরিবারের একজন করোনায় আক্রান্ত হলে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের কেউ সুস্থ থাকার কথাও নয়। 


শিক্ষা-৪: সর্বদা উযূ অবস্থায় থাকা এবং নামাযী হওয়া।

করোনার আরেকটি শিক্ষা হল, সবাই নামাযী হও। নামায পড়তে হলে উযূ করতে হয়। নিয়মিত পাঁচবার উযূ করলে জীবাণু থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। ডাক্তাররা এখন বারবার শুধু হাত ধোয়া শেখাচ্ছে। কিন্তু আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উযূর মাধ্যমে হাত- পা-চোখ-নাক-মুখ তথা শরীরে ভাইরাস প্রবেশের যতগুলো পথ আছে সবগুলো ধোয়া শিখিয়েছেন। কাজেই বর্তমান সময়ে উযূ করা, সর্বদা উযূর সঙ্গে থাকা আত্মরক্ষার বড় হাতিয়ার।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, 'ভাইরাস বাতাসে ভেসে বিভিন্ন পথ দিয়ে শরীরে প্রবেশ করতে পারে।' কাজেই শুধু হাত ধোয়ার চলমান পদ্ধতি অসম্পূর্ণ। পক্ষান্তরে উযূ করার নববী পদ্ধতি যথার্থ ও পরিপূর্ণ কার্যকর।

বিজ্ঞানীরা এক-এক সময় এক-এক কথা বলছেন। একদল সবসময় মাস্ক পরে থাকতে বলছেন; আই প্রটেক্টর ব্যবহার করতে বলছেন। আরেকদল বলছেন, সবসময় মাস্ক পরে থাকলে শ্বাস-প্রশ্বাস বাধাগ্রস্ত হয়, ফুসফুস দুর্বল হয়ে যায়। আবার চোখে আলো-বাতাস না লাগলে চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু নববী পদ্ধতি উযূ অবলম্বন করলে এসব অসুবিধা নেই। তাছাড়া উযূ শুধু নামাযের জন্য নয়, সর্বদা উযূ অবস্থায় থাকারও ফযীলত রয়েছে। তাই বারবার হাত ধোয়ার পরিবর্তে উযূ করে নিন। কারণ এটা মুমিনের হতিয়ার। হতিয়ার সঙ্গে থাকলে শত্রু যেমন অতর্কিত হামলা করতে পারে না, উযূ অবস্থায় থাকলেও রোগ-জীবাণু সহজে আক্রমণ করতে পারবে না, ইনশাআল্লাহ।


শিক্ষা-৫: কুদরতী নেযামই কার্যকর, ডাক্তারদের মনগড়া নীতি অযথা হয়রানী। সেবার মানসিকতা রাখতে হবে।

ডাক্তারদের খেদমতের মানসিকতা থাকতে হবে। ডাক্তারী পেশার মর্মই হচ্ছে খেদমত। কিন্তু আজকাল ডাক্তারদের মাঝে দীনী শিক্ষা ও চেতনা না থাকার কারণে বেশিরভাগেরই খেদমতের মনোভাব নষ্ট হয়ে গেছে। তারা এটাকে পয়সা কামানোর হাতিয়ার বানিয়ে নিয়েছে। অনেক সময় তারা বেশি টাকা কামানোর জন্য বিনা প্রয়োজনে রোগীকে আইসিইউতে পাঠিয়ে দেয়। আবার দেখা গেছে, নিছক বিল বাড়ানোর জন্য রোগী মারা যাওয়ার পরও এক-দুই দিন আইসিইউতে আটকে রেখেছে। আমার এক আত্মীয়ের হার্টের সমস্যা ছিল। ডাক্তার বলেছে, দু'টি রিং পরাতে হবে এবং তার কাছ থেকে দু'টি রিং-এর টাকাও নিয়ে নিয়েছে। কিছুদিন পর যখন আবার সমস্যা দেখা দিল, অন্য হাসপাতালে পরীক্ষা করে দেখা গেল, হার্টে রিং পরানো হয়েছে একটি। আগের ঐ ডাক্তারকে ধরা হল যে, একটি রিং পরিয়ে দু'টি রিং-এর বিল নিলেন কেন? বলল, এটা অনেক দামী রিং; একটাই দু'টোর সমান কার্যকারী, এজন্য দু'টির বিল নেয়া হয়েছে। কি রকম বর্বরতা ও জালিয়াতি!

বর্তমানে বেশিরভাগ ডাক্তারের ধ্যান- ধারণা হল- সন্তান প্রসবের সময় বাধ্যতামূলক সিজার করতে হবে। লকডাউনকালীন আমার পরিবারস্থ একজনের ডেলিভারীর সময় ঘনিয়ে আসল। রোগীকে ভর্তি করার জন্য বিভিন্ন হাসপাতালে যোগাযোগ করা হল। সব হাসপাতালের একই প্রশ্ন- সিজার করবেন? সিজার হলে আছি, নরমালে হলে পারবো না। আশ্চর্য! রোগীর অবস্থা না দেখেই তারা সিজারের সিদ্ধান্ত দিয়ে দিচ্ছে! রোগীকে জবাই করতে সামান্য দ্বিধাবোধ করছে না! এর নাম মানবসেবা!? যাহোক, পরে আমরা আল্লাহর উপর ভরসা করে রোগীকে বাসায় রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং আল্লাহর শোকর, তারই মেহেরবানীতে নরমালে সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়েছে!

করোনার ভয়ে অধিকাংশ হাসপাতাল বন্ধ ছিল। গাইনী ডাক্তাররা রোগী দেখা বন্ধ রেখেছিল। এই সময়ে লক্ষ লক্ষ সন্তান বিনা সিজারে ভূমিষ্ঠ হয়েছে; কোন ডাক্তারের প্রয়োজন হয়নি। এর মাধ্যমে আল্লাহ তা'আলা আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন যে, এটাই কুদরতী নেযাম, এটাই আসল পদ্ধতি; গণহারে সিজার করার প্রয়োজন নেই। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেছেন,ثُمَّ السَّبِيلَ يَسَّرَهُ অর্থ: 'অতঃপর তিনি তার ভূমিষ্ঠ হওয়ার পথকে সুগম করে দিয়েছেন।' (সূরা আবাসা-২০)

বলুন তো, হযরত আদম আলাইহিস সালাম থেকে শুরু করে এই 'পেটকাটা বিদ্যা' আবিষ্কার হওয়ার আগ পর্যন্ত কারো কি সিজার করার প্রয়োজন হয়েছে? গরু- ছাগলসহ অন্যান্য প্রাণীর সন্তান জন্ম দেয়ার জন্য কখনও কি সিজারের দরকার পড়েছে? পড়েনি। তাহলে এখন এসে সিজার বাধ্যতামূলক হয়ে গেল কেন? এটা ডক্তারদের ভুল সিদ্ধান্ত। একান্ত অসুবিধা দেখা দিলে ভিন্ন কথা। ব্যতিক্রম থাকবেই; কিন্তু গণহারে সিজার করা কিছুতেই বোধগম্য নয়! সিজার করা হলে একজন মহিলা সারা জীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে যায়। দু'-তিনটির বেশি সন্তান জন্ম দিতে অপারগ হয়ে পড়ে। অথচ নবীয়ে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, تزوجوا الودود الولود فإني مكاثر بكم الأمم অর্থ: 'তোমরা অধিক সন্তান জন্মদাত্রী স্ত্রীলোককে বিবাহ করো, কেননা কিয়ামতের ময়দানে আমি উম্মতের আধিক্য নিয়ে গর্ব করবো।' (সুনানে আবু দাউদ; হা.নং ২০৫০) 


যে কাজে আল্লাহ বান্দার উপর খুশি হন 

আল্লাহ তা'আলা বান্দার কাছে বিরাট কিছু চান না, শতভাগ নিখুঁত ইবাদত- বন্দেগীও চান না। কেননা সকল বান্দার পক্ষে তা সম্ভবও হবে না। আল্লাহ চান বান্দার বিনয়, কান্নাকাটি আর চোখের পানি। তিনি চান বান্দা নিজেকে খুব ছোট করে তার সামনে পেশ করুক। আল্লাহর খাযানায় কোন কিছুর অভাব নেই; নেই শুধু বিনয় বা ছোট হওয়া। কেননা তিনি সকলের বড়, সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা ও সকল কিছুর মালিক; সুতরাং তিনি কার কাছে ছোট হবেন? আর নিয়ম হল, যার কাছে যেটা নেই তাকে সেটা দিলে বেশি খুশি হন। এজন্য আমরা যদি আল্লাহর কাছে আমাদের বিনয় ও কান্নাকাটি পেশ করতে পারি তাহলে তিনি আমাদের ত্রুটিযুক্ত আমলগুলো দয়া করে কবুল করে নিবেন। পক্ষান্তরে বিনয় প্রকাশ করতে না পারলে তিনি আমাদের বাহ্যিক নিখুঁত আমলও বাতিল করে দিতে পারেন। এজন্য শুধু বেশি পরিমাণে ইবাদত করলেই যথেষ্ট হবে না; পাশাপাশি বিনয়ের সাথে খুব কান্নাকাটিও জরুরী। যেন তিনি আমাদের কষ্ট করে কৃত ইবাদতগুলো কবুল করে নেন, ফিরিয়ে না দেন। দেখা গেছে, যে বুযুর্গ যতো বেশি ইবাদতগুযার ছিলেন, তিনি ততো বেশি বিনয়ী ছিলেন এবং ততো বেশি কান্নাকাটি করতেন। আল্লাহ তা'আলা সকলকে তাওফীক দান করুন। আ-মীন।

মন্তব্য (...)

এ সম্পর্কিত আরও প্রবন্ধ

লেখকবৃন্দ

সকল লেখক →