প্রবন্ধ
দা'য়ীর সাথে আল্লাহ তা'আলা আছেন
[প্রদত্ত বয়ান থেকে সংগৃহীত]
হামদ ও সালাতের পর...
আহলে ইলমের ওয়াদা
রূহের জগতে আল্লাহ তা'আলা সাধারণ লোকদের ওয়াদা নিয়ে তাদের থেকে পরওয়ারদিগারের প্রভুত্বের স্বীকারোক্তি নিয়েছিলেন। ইরশাদ হয়েছে,
وإذ أخذ ربك من بني آدم من ظهورهم ذريتهم وأشهدهم على أنفسهم ألست بربكم قالوا بلى شهدنا
অর্থ: হে রাসূল! লোকদেরকে স্মরণ করিয়ে দিন ঐ সময়ের কথা, যখন আপনার প্রতিপালক আদম সন্তানদের পৃষ্ঠদেশ থেকে তাদের সন্তানদেরকে বের করেছিলেন এবং তাদেরকে তাদের নিজেদের সম্পর্কে সাক্ষী বানিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলেন, আমি কি তোমাদের রব নই? সকলে বলেছিলো, অবশ্যই, আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমরা আপনাকে রব হিসেবে স্বীকার করি। (সূরা আরাফ- ১৭২)
এই ওয়াদা ছাড়াও আল্লাহ তা'আলা আম্বিয়ায়ে কেরাম থেকে ভিন্ন একটা ওয়াদা নিয়েছিলেন।
'আমি তোমাদেরকে রাসূল বানাতে চাই। তবে তোমাদের অনেক কুরবানী পেশ করতে হবে। অনেক ঝক্কি-ঝামেলা পোহাতে হবে। অনেক ফিতনা মোকাবেলা করতে হবে। তোমরা কি এর জন্য রাজি আছো? সমস্ত আম্বিয়ায়ে কেরাম বলেছিলেন, দীনের জন্য কুরবানী করতে আমরা রাজি আছি।' (সূরা আলে ইমরান-৮১)
এই আয়াতটিতে আম্বিয়ায়ে কেরামের সাথে ওয়ারাসায়ে আম্বিয়াও অন্তর্ভুক্ত। ওয়ারিসে নবী হওয়ার কারণে নবীর দায়িত্ব তাদেরও দায়িত্ব। আল্লাহ তা'আলা যে নবীদের সাথে সাথে ওয়ারাসায়ে আম্বিয়া থেকেও আলাদাভাবে ওয়াদা নিয়েছেন তা এই আয়াত দ্বারা স্পষ্টভাবে বোঝা যায়,
وَإِذْ أَخَذَ اللَّهُ مِيثَاقَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ لَتُبَيِّنَنَّهُ لِلنَّاسِ وَلَا تَكْتُمُونَهُ.
অর্থ: স্মরণ করো ঐ সময়ের কথা, যখন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আহলে ইলমদের থেকে অঙ্গীকার নিয়েছিলেন যে, তোমরা আমার কিতাব খুলে খুলে বয়ান করবে এবং গোপন করবে না। (সূরা আলে ইমরান- ১৮৭)
অনেক আলেম নিজেদের চাকরি- ইমামতি বাঁচানোর জন্য মাসআলা বা হক কথা বলতে সাহস পায় না। তারা এই আয়াত অনুযায়ী 'কিতমানে ইলম' তথা সত্য গোপন করছে। যার ভয়াবহ পরিণামের ঘোষণায় অন্য আয়াতে আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন,
إِنَّ الَّذِينَ يَكْتُمُونَ مَا أَنزَلْنَا مِنَ الْبَيِّنَاتِ وَالْهُدَىٰ مِن بَعْدِ مَا بَيَّنَّاهُ لِلنَّاسِ فِي الْكِتَابِ ۙ أُولَٰئِكَ يَلْعَنُهُمُ اللَّهُ وَيَلْعَنُهُمُ اللَّاعِنُونَ
অর্থ : আমি আমার নাযিলকৃত কিতাবে মানুষের জন্য সুস্পষ্ট প্রমাণাদী ও হিদায়াতের কথা খুলে খুলে বর্ণনা করা সত্ত্বেও যে সকল আলেম তা গোপন করে, নিশ্চয় তাদের উপর আল্লাহর লা'নত, নবীগণের লা'নত, ফেরেশতাগণের লা'নত এবং অন্য সকল লা'নতকারীর লা'নত। (সূরা বাকারা- ১৫৯)
আমরা কি লা'নতের ভাগীদার হতে আলেম হয়েছি? কাজেই আমাদের প্রত্যেকের বুকে হক কথা বলা ও বাস্তব সত্য প্রকাশের হিম্মত এবং সৎসাহস অবশ্যই থাকতে হবে।
দা'য়ীর কথার বৈশিষ্ট্য
আমাদের আকাবিরগণ বলেছেন, দা'য়ীর কথায় তিনটা হক একত্রিত হওয়া অপরিহার্য। হক নিয়তে হক তরীকায় হক কথা বলতে হবে। যদি এই তিনটি শর্ত একত্রিত হয় তবে সে দা'য়ীর কথায় ফিতনার উৎপত্তি হবে না। ফিতনা নির্মূল হবে। তবে শর্ত হল, তিনটি হক একত্রিত হতে হবে। নিয়ত হক তথা খালেস হতে হবে এবং কথা বা বক্তব্যও হক হতে হবে। আর তরীকা হক হওয়ার উদ্দেশ্য হলো, কোনো ব্যক্তিবিশেষকে ঘায়েল করে প্রতিপক্ষ না বানিয়ে, দরদী মনে ব্যাপকভাবে সকলকে সম্বোধন করা।
অনেক সময় এমন হয়, আমাদের পাশে কোনো দাড়ি কাটা লোক থাকে। তখন একজন হঠাৎ প্রশ্ন করে বসে, হুযূর! দাড়ির হুকুম কী? রাখতে হবে, নাকি কাটতে হবে? এ ধরনের প্রশ্নের উদ্দেশ্যই হলো ঐ লোকটাকে ঘায়েল করা। ঘায়েল করে কথা বললে হিদায়াত আসবে না। বরং ফিতনা হবে। এজন্য কথা বলার তরীকা জানতে হবে এবং শিখতে হবে।
কথা বলার তরীকা শিখানোর জন্যই ছাত্রদেরকে জোর করে হলেও তাবলীগে পাঠানো হয়। তখন বুঝে না আসলেও পরে খিদমতে লাগার পর তাদের বুঝে আসে, কেন তাদের ওখানে পাঠানো হয়েছিলো।
নেক কাজে জবরদস্তি
নেক কাজে কোনো 'ইজবার' (জবরদস্তি) নেই- একথার অর্থ এটা নয় যে, নেক কাজের জন্য জবরদস্তি করা যাবে না। এর অর্থ হলো, নেক কাজে জোর-জবরদস্তি করা হলেও শরীয়তে সেটা 'ইজবার' বা জবরদস্তি হিসেবে গণ্য হয় না।
বুখারী শরীফের 'কিতাবুত তাফসীরে' كنتم خير أمة (অর্থ: তোমরাই সর্বশ্রেষ্ঠ উম্মত। সূরা আলে ইমরান- ১১০) এর তাফসীরে হযরত আবূ হুরাইরা রাযি. এর বক্তব্য বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, 'তোমাদেরকে সর্বশ্রেষ্ঠ উম্মত সাব্যস্ত করার কারণ হলো, যারা জান্নাতে যেতে রাজি নেই তাদেরকে তোমরা শিকলবন্দী করে জান্নাতে নিয়ে যাবে।' যুদ্ধশেষে যেসব কাফেরদের শিকলবন্দী করে আনার পর পরবর্তীতে তারা মুসলমান হয়ে যায়, তারা এই হাদীসের অন্তর্ভুক্ত। শিকলবন্দী করে আনার কারণেই তারা জান্নাতের পথিক হতে পেরেছে। তাবলীগের সাথীরা মানুষকে নামাযী বানানোর জন্য, হিদায়াতের পথে আনার জন্য বারবার তাদের দুয়ারে যায়। লাঞ্ছিত-অপমানিত করার পরও যায়। এরপর মানুষটা অনিচ্ছা সত্ত্বেও যখন মসজিদে এসে তাদের কথাবার্তা শোনে ও আচার আচরণ দেখে তখন সে চিল্লার জন্যও নাম লেখায়। এমনকি তিনচিল্লাও দেয়। দা'য়ীর মনের ব্যথা আর আচরণের নম্রতার কারণে এভাবে অনেক মানুষ হিদায়াত পেয়ে যায়। শুরুতে তাবলীগের সাথীরা পীড়াপীড়ি করার কারণেই শেষ পর্যন্ত মানুষগুলো জান্নাতী পথের পথিক বনে যায়।
ছাত্রদেরকে জোরপূর্বক তাবলীগে পাঠানোর কারণেই ফারাগাতের পর তারা দাওয়াতের মেহনত হক তরীকা অনুযায়ী কাজ করতে পারে। অন্যথায় এই তরীকাগুলো শেখা না থাকলে পদে পদে হোঁচট খেতে হতো। জানতোড় মেহনত করা সত্ত্বেও কোনো ফলই আসতো না। এমনকি তরীকা না জানার কারণে মানুষ হিদায়াত পাওয়ার পরিবর্তে আরো গোমরাহ হতো। এই অবস্থা থেকে বাঁচানোর জন্যই আসাতিযায়ে কেরাম ছাত্রদেরকে জোর করে হলেও তাবলীগে পাঠিয়ে থাকেন।
বিধর্মীদের প্রতি সহানুভূতি ও সহমর্মিতা
উপরোক্ত হাদীস থেকে বোঝা গেলো যে, বিধর্মীদের জন্যও আমাদের অন্তরে দয়া এবং দরদ থাকতে হবে। তাদের জন্য বদদু'আ নয়; হিদায়াতের দু'আ আসতে হবে এবং এর জন্য চেষ্টা-মেহনতও করতে হবে। কেননা যে কোনো মানুষ চাই সে মুসলিম হোক বা অমুসলিম, সবার বাবা-মা এক। সকলেই হযরত আদম আ. এর সন্তান। আমরা যে নবীর উম্মত তারাও সেই নবীরই উম্মত। একই বাবা-মায়ের ঘরের আপন ভাই- বোন খারাপ পথে চললে অন্য ভাইদের উচিত তাকে ভালো পথে আনার আন্তরিক প্রচেষ্টা করা। হিন্দু বাবার ঘরে আগুন লেগে গেলে তা নিভাতে সব সন্তানের সাথে মুসলমান সন্তানও ঝাঁপিয়ে পড়বে। এটাই স্বাভাবিক দায়িত্ব। বিধর্মী বাবা-ভাই দুনিয়ার আগুনে জ্বলে-পুড়ে কষ্ট পাক- এটা যদি মেনে নেয়া না যায় তবে যে বিধর্মী ভাইগুলো জাহান্নামের দিকে ছুটছে তাদের বাঁচানোর জন্য অন্তরে দরদ থাকা কতটা বেশি জরুরী। বিধর্মী কাফের মুশরিকদের জন্য নবীজী কতো কষ্ট বরদাশত করেছেন। নবীজীর দিলে তাদের জন্য কত বেশি দরদ ছিলো যে, নবীজীকে অতটা বেশি উৎকণ্ঠিত হতে বারণ করা হয়েছে। কুরআনে আয়াত নাযিল হয়েছে,
لَعَلَّكَ بَاخِعٌ نَفْسَكَ أَلَّا يَكُونُوا مُؤْمِنِينَ
অর্থ: তারা ঈমান না আনার কারণে সম্ভবত আপনি নিজের জান বরবাদ করে দিবেন। (সূরা শু'আরা- ৩) নবীজীর এমন অবস্থার বিপরীতে আমাদের হালাত হলো, বিধর্মীদের দাওয়াত দিতে এবং তাদের জন্য ফিকির করতেও আমরা প্রস্তুত নই। অথচ নায়েবে রাসূল হিসেবে আমাদের দিলের দরদ সবারই পাওনা; যেমন মুসলিম ভাই-বোনদের, তেমনি অমুসলিম ভাই- বোনদেরও। কাজেই মুসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষে সবাইকে দাওয়াত দিতে হবে।
উম্মতের ত্রাণকর্তা উলামায়ে উম্মত : দুনিয়ায়ও আখিরাতেও
নবুওয়াতের ধারা শেষ হওয়ার পর কিয়ামত পর্যন্ত মুসলিম জাতির কর্ণধার হলেন আম্বিয়ায়ে কেরামের ওয়ারিস উলামায়ে কেরাম। এই উত্তরাধিকারের সূত্রে দুনিয়া এবং আখিরাতে জাতিকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচানোর দায়িত্বও উলামায়ে উম্মতের।
হযরত ইউসুফ আ. নবুওয়ত লাভ করার পূর্বে মিশরবাসীকে দুর্ভিক্ষের কবল থেকে বাঁচিয়েছিলেন। মিশরবাসী তাঁর বাবা- ভাই বা আপনজন ছিলো না। মিশর তাঁর স্বদেশও ছিলো না। তাদের জন্য দিলে দরদ ছিলো বলেই বিপর্যয়ের হাত থেকে তাদেরকে বাঁচানোর জন্য তিনি এগিয়ে গিয়েছিলেন। মিশরবাসীদের অনাগত কষ্ট বরদাশত করতে না পেরে আগ বাড়িয়ে বাদশাহর কাছে প্রস্তাব দিয়েছিলেন- 'রাষ্ট্রীয় কোষাগারের দায়িত্বভার আমাকে অর্পণ করুন'। (সূরা ইউসুফ- ৫৫)
কাজেই আম্বিয়ায়ে কেরামের ওয়ারিস হিসেবে উম্মতকে দুনিয়া এবং আখিরাতের সব ধরনের বিপদাপদ থেকে রক্ষা করা আলেমদেরই দায়িত্ব। আলেমরা কবীরা গুনাহের ক্ষতি বর্ণনা করে সতর্ক করতে থাকলে সমাজের মানুষ সচেতন হবে। গুনাহে কবীরার কারণে আখেরাতের ক্ষতির পাশাপাশি দুনিয়াবী বালা-মুসীবতেরও শিকার হতে হয়। আল্লাহ তা'আলা কাফেরদেরকে মুসলমানদের উপর আধিপত্য দিয়ে তাদের ঘরের ভেতর পর্যন্ত পৌঁছে দেন। ভূমিকম্প, জলোচ্ছ্বাস, দুর্ভিক্ষ, মহামারী ইত্যাদি সব ধরনের বিপদ-দুর্যোগে নিপতিত করেন। আলেমরা যদি মসজিদে মসজিদে এই বিষয়ে আলোচনা শুরু করেন তাহলে ধীরে ধীরে জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা আসবে। আলেমদের তারগীবের ফলে কবীরা গুনাহ বর্জন করলে মানুষ দুনিয়াবী আযাব থেকেও বাঁচতে পারবে। মোটকথা, উলামায়ে কেরাম যথাযথভাবে তাদের যিম্মাদারী পালন করলে মানুষ আখেরাতের ক্ষতির পাশাপাশি দুনিয়াবী ক্ষতি থেকেও বেঁচে যাবে।
এই ক্ষতিগুলোর কথা মুসলমানরা জানে না। অথচ ইহুদী-খ্রিস্টান আর তাদের এজেন্ট এনজিও-মিশনারীরাও এগুলো বোঝে। তারা এভাবে মুসলমানদের মারাত্মক বিপদে ফেলার জন্য সূক্ষ্ম থেকে সূক্ষ্ম ষড়যন্ত্রও বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। তাদের সমস্ত চেষ্টা এবং পরিশ্রমের উদ্দেশ্যই হলো, কোন পন্থায় এবং কতো দ্রুততার সাথে মুসলমানদের ধ্বংস করা যায়। এর জন্য তারা মুসলমান নামধারী কিছু বিশ্বাসঘাতককে হাত করে তাদেরকে ব্যাপকভাবে কাজে লাগাচ্ছে। অথচ মুসলমানরা না বুঝে তাদের এসব চক্রান্তের শিকার হয়ে একের পর এক মুসীবতে জড়াচ্ছে। এসব ষড়যন্ত্রের নীলনকশা মুসলিম জাতির সামনে খুলে খুলে বর্ণনা করা উলামায়ে উম্মতের দায়িত্ব। কাফেরদের চক্রান্ত থেকে মুসলিম উম্মাহকে রক্ষা করা উলামায়ে কেরামেরই যিম্মাদারী।
দা'য়ীর সাথে আল্লাহর নুসরত
দা'য়ীর মোকাবেলায় যেই আসুক কেউ তার ক্ষতি করতে পারবে না। বরং সে-ই ধ্বংস হবে। কারণ, দা'য়ীর সাথে আল্লাহ তা'আলা আছেন। ইস্তিকামাতওয়ালা দা'য়ী পাহাড়ের মতো; তার সাথে যে-ই টক্কর খাবে সে-ই টুকরো টুকরো হয়ে যাবে।
হযরত মূসা আ. ফিরআউনের পিছুধাওয়ার মুখে যখন সাগর পর্যন্ত এসে আটকা পড়লেন তখন তিনি বলেছিলেন, 'নিশ্চয় আমার সাথে রব আছেন। তিনি আমাকে পথের দিশা দিবেন' (সূরা শু'আরা- ৬২)। তিনি এভাবে বলেননি- 'আমাদের সাথে রব আছেন'। কারণ, তিনি ছাড়া তাঁর অনুসারী বনী ইসরাঈলের কেউ দা'য়ী ছিলো না। এর বিপরীতে আমাদের নবীজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হিজরতের প্রাক্কালে 'গারে সাওর'-এ যখন কাফেরদের নজরে পড়ার আশঙ্কা হলো তখন তিনি বলেছিলেন, 'আমাদের সাথে আল্লাহ আছেন' (সূরা তাওবা- ৪০)।
কারণ, তাঁর সাথে তাঁর উম্মতকেও দা'য়ী বানানো হয়েছে। আর দা'য়ীর জন্য আল্লাহর নুসরত অনিবার্য।
কাজেই সকল ফিতনার মোকাবেলায় টিকে থাকতে হলে এবং জয়ী হতে হলে দা'য়ী হতে হবে। চাই তাবলীগের দা'য়ী হোক, বিধর্মীদেরকে ইসলামের দাওয়াত দেয়ার দা'য়ী হোক কিংবা দাওয়াতুল হকের দা'য়ী হোক। যত কঠিন থেকে কঠিন ষড়যন্ত্রই হোক না কেন, সমস্ত ষড়যন্ত্র নিমিষেই ধূলিসাৎ করে দিতে তাঁর একটিমাত্র ইশারাই যথেষ্ট।
কিন্তু আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে ধ্বংস তখনই করবেন যখন আমরা দাওয়াতের কাজে অবতীর্ণ হবো।
দাওয়াতের এই মেহনতে তোমাদের আরো কর্মঠ-উদ্যমী হতে হবে। এখন যৌবনের তেজ আছে। আয়ুষ্কাল অনেক সংক্ষিপ্ত। বয়স হয়ে গেলে এই তেজ আর উদ্দীপনা থাকবে না। শারীরিক শক্তি তখন অল্পতেই তোমার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়ে উঠবে। পুরাতন গাড়ি কিছুক্ষণ চলতেই ইঞ্জিন গরম হয়ে যায়। তখন গাড়ি থামিয়ে ইঞ্জিন ঠাণ্ডা করে আবার চালাতে হয়। তেমনি মানুষের বয়স হয়ে গেলে অল্প মেহনতেই কাহিল-ক্লান্ত হয়ে পড়ে। তখন আর মেহনত করার সুযোগ থাকে না। সুতরাং এখনই তোমাদের সময়। অলসতা না করে এই যৌবনের সময়টুকু গনীমত মনে করে যত বেশি সম্ভব কাজে লাগাও। মসজিদ-মাদরাসার দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি এই তিন দাওয়াতে যথাসম্ভব বেশি বেশি মেহনত করো।
তবে এসব দাওয়াতকে ফলপ্রসূ করার জন্য প্রথম শর্ত হলো নিজের তাযকিয়া বা আত্মশুদ্ধি করা। কারণ, তাযকিয়া ছাড়া দা'য়ীর কথায় তাসীর বা প্রভাব থাকে না। সেটা কেবলই চাপাবাজি আর গলাবাজি হয়। এজন্য তাযকিয়া বা আত্মশুদ্ধির জন্য কোন হক্কানী আল্লাহওয়ালার কাছে নিজেকে মিটানো যারপরনাই জরুরী। এই শর্তগুলোর সাথে তিন ধরনের দাওয়াতে নিজেদের নিয়োজিত করলে সকল চক্রান্তের মোকাবেলায় আল্লাহ তা'আলা আমাদের হয়ে যাবেন এবং তিনিই সমস্ত ষড়যন্ত্র ধ্বংস করে দিবেন।
আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে,তোমাদেরকে এবং সকলকে দাওয়াত- তা'লীম-তাযকিয়ার সকল ক্ষেত্রে সহীহ মেহনত করার তাওফীক দান করুন। আমীন।
মন্তব্য (...)
এ সম্পর্কিত আরও প্রবন্ধ
শরয়ী বিধানে প্রাণীর ছবি (পর্ব দুই)
ইমাম নববী রহ.বলেন, قال الزهري: النهي في الصورة على العموم وكذلك استعمال ما هي فيه ইমাম যুহরী রহ. বলে...
পর্দা নারীর আভিজাত্য ও মর্যাদার প্রতীক
দু'টি চিত্র লক্ষ্য করুন। প্রথমটি ইসলামের স্বর্ণযুগের। আর দ্বিতীয়টি তথাকথিত প্রগতি-যুগের। চিত্র-১ খলী...
আলোকময় কুরআন
আজ জুমু'আর দিন। এ দিনে সূরা কাহাফ তিলাওয়াতের বিশেষ ফযীলত রয়েছে। এটা পনের পারায় শুরু হয়ে ষোল পারায় শে...
শরীয়তের দৃষ্টিতে ফেসবুক ব্যবহার
সামাজিক যোগাযোগের অতি জনপ্রিয় মাধ্যম হিসেবে ডিজিটাল জগতে আগমন ঘটেছিল ফেসবুকের। কিন্তু ইতোমধ্যে ফেসব...