প্রবন্ধ
আদর্শ শ্রোতা হওয়া শিষ্টাচার অন্তর্ভুক্ত
এক. আদর্শ শ্রোতা হওয়া। শোনার সর্বপ্রথম শোনার হক হচ্ছে, চুপ থাকা এবং আলোচনাকারীর আলোচনার মন দিয়ে শোনা। এর মাধ্যমে যিনি আলোচনা করছেন তার সম্মানও বহিঃপ্রকাশ হয়। এজন্য ওলামায়ে কেরাম বলেন, ইলমের প্রথম পাঠ হচ্ছে, মনোযোগ লাগিয়ে শোনা। আপনার সাথে যিনি কথা বলছে, আপনি হন তার মনোযোগী শ্রোতা। সে যখন যা বলছে অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে তার সমর্থন জানান। আনন্দের বিষয় আলোচনা করলে আনন্দিত হওয়া। অনুভ‚তি প্রকাশের কোনো শব্দ ব্যবহার করার প্রয়োজন হলে ব্যবহার করা। অর্থাৎ আপনার শরীরের ভাষায় যেন বুঝা যায় যে আপনি তার প্রতি প‚র্ণ মনোযোগী। আপনার সঙ্গী কথা বলছে আর আপনি একবার এদিক সেদিক তাকাচ্ছেন, কিংবা মোবাইল স্ক্রল করছেন। এটা কখনো আদর্শ শ্রোতার বৈশিষ্ট্য হতে পারে না। এজন্য আল্লাহ তাআলা কুরআনে কারিমে কোরআন মনোযোগ লাগিয়ে শোনার কথা বলেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, যখন কুরআন পড়া হয় তখন তা মনোযোগ দিয়ে শোন এবং চুপ থাক, যাতে তোমাদের প্রতি রহমত হয়। (সুরা : আরাফ, আয়াত : ২০৪) পবিত্র কোরআনের বড় আদব হলো, তেলাওয়াতের সময় কান লাগিয়ে নিশ্চুপ থাকা এবং এর হুকুম আহকামের উপর আমল করার চেষ্টা করা।
যারা মনোযোগী শ্রোতা তাদের প্রশংসা কোরআনে কারিমে এসেছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যারা কথা শোনে মনোযোগ দিয়ে, অতঃপর তার মধ্যে যা-কিছু উত্তম তার অনুসরণ করে,তারাই এমন লোক, যাদেরকে আল্লাহ হেদায়াত দান করেছেন এবং তারাই বোধশক্তিসম্পন্ন।’ (সুরা : জুমার, আয়াত : ১৮)
তাই অন্যের কথার সময় নিশ্চুপ থাকাই শিষ্টাচার অন্তর্ভুক্ত। কোনো মন্তব্য থাকলে তার জন্য তাড়াহুড়ো না করে অপেক্ষা করা। কথা পূর্ণ করার পর মন্তব্য করা। এর মাধ্যমে পরস্পর ভালোবাসা, ঘনিষ্ঠতা ও অন্তরঙ্গতা গড়ে উঠবে।
দুই. কথা শোনার সময় হাস্যজ্জল থাকা শোনার আদব। আবু জার (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, নবী (সা.) আমাকে বললেন, ‘তুমি পুণ্যের কোনো কাজকে তুচ্ছ মনে করো না। যদিও তুমি তোমার (মুসলিম) ভাইয়ের সঙ্গে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করতে পার।’ (অর্থাৎ হাসিমুখে সাক্ষাৎ করাও পুণ্যের কাজ)। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৬২৬)
তিন. পারস্পরিক কথোপকথনের সময় কোনো গোপন কথা থাকলে তা কারো কাছে প্রকাশ না করা। আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার নবী (সা.) কাছে একটি বিষয় গোপনে বলেছিলেন। আমি তাঁর পরেও কাউকে তা জানাইনি। এটা সম্পর্কে উম্মু সুলায়ম (রা.) আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন। কিন্তু আমি তাঁকেও বলিনি। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬২৮৯)
আরেক বর্ণনায় এসেছে, জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, কোনো ব্যক্তি কোনো কথা বলার পর মুখ ঘুরালে (কেউ শুনেছে কিনা তা দেখলে) তা আমানতস্বরূপ। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৪৮৬৮)
চার. পরনিন্দা গিবত-শিকায়াত না শোনা। যেভাবে আল্লাহ তাআলা কারো গিবত করা হারাম করেছেন তেমনি অপরের গিবত, দোষ-ত্রæটি শুনাও হারাম করেছেন। আবুদ দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, যে লোক তার কোন ভাইয়ের মান-সম্মানের উপর আঘাত প্রতিরোধ করে, কিয়ামত দিবসে আল্লাহ তাআলা তার মুখমণ্ডল হতে জাহান্নামের আগুন প্রতিরোধ করবেন। (জামে তিরমিজি, হাদিস : ১৯৩১)
মন্তব্য (...)
এ সম্পর্কিত আরও প্রবন্ধ
সাহাবায়ে কিরামের ভ্রাতৃত্ব, মতভেদ ও আদর্শিক আচরণ: একটি শিক্ষনীয় চিত্র
নবী করীম ﷺ গভীরভাবে এ বাস্তবতা উপলব্ধি করতেন যে, উম্মতের টিকে থাকা ও অগ্রগতির একমাত্র উপায় হলো—পারস্...